গর্ভাবস্থায় ফল, শাক-সবজি এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যগুলি গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনি কারণটা জানেন যে, একটি সুষম আহার একটি শিশুকে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য সবসময়েই মা এবং শিশু উভয়কেই স্বাস্থ্যকর রাখতে পারে এবং তার সাথে আরও অনেক উপকার করে।তবে এমন কয়েকটি নির্দিষ্ট ফল এবং শাক- সবজি আছে যেগুলিকে গর্ভাবস্থাকালে মহিলাদের এড়িয়ে চলার কথাই বলা হয়।এই নিবন্ধে আমরা একটি নির্দিষ্ট অদ্ভুত ফল কাঁঠাল সম্পর্কেই কথা বলব।কাঁঠাল, বিশেষ করে কাঁঠালের আচার এবং চিপস সকলেই ভালবাসেন।কিন্তু আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, আপনি হয়ত বিস্মিত হবেন যে অন্তঃসত্ত্বাবস্থায় এটি সেবন করা নিরাপদ নাকি নিরাপদ নয় এই ভেবে।সুতরাং এ ব্যাপারে জেনে নিতে পড়তে থাকুন!
কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর।এর মধ্যে রয়েছে পরিমিত পরিমাণে ক্যালোরিঃ এক কাপ কাঁঠালে মোটামুটি প্রায় 155 ক্যালোরি পাওয়া যায়।তবে এর মাত্র 5 ক্যালোরি আসে এর ফ্যাট থেকে যা এটিকে বেশ স্বাস্থ্যকর একটি বিকল্প করে তুলেছে।কাঁঠাল হল ফোলেট, থিয়ামিন, নিয়াসিন, রাইবোফ্লাভিন এবং এমনকি ভিটামিন A ও ভিটামিন C এর একটি ভাল উৎস, যা এটিকে একটি স্বাস্থ্যকর পছন্দ করে তুলেছে।এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে একাধিক খনিজ যেমন ম্যাঙ্গানীজ, কপার, পটাসিয়াম, আয়রণ এবং ক্যালসিয়াম।আর সবচেয়ে ভালো দিকটি হলঃ এর মধ্যে খুব কম পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম থাকে।
কাঁঠালে উপস্থিত ফাইবার বা আঁশবহুল তন্তু হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এর মধ্যে শর্করার অনুপস্থিতি গর্ভকালীন ডায়বেটিস যুক্ত মহিলাদের জন্য এটিকে একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তুলেছে।
অনেক মহিলা, নির্দিষ্ট কিছু বিশেষজ্ঞ এবং এমনকি কিছু চিকিৎসকও গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত কাঁঠাল না খাওয়ারই পরামর্শ দেন, এর উপকারিতাগুলি প্রমাণ করার মত পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকার মত সাধারণ কারণের জন্যই।কিছু মহিলা আবার এটিও বিশ্বাস করেন যে গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খেলে তা গর্ভপাত ঘটার কারণ হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি সত্য নয়।যখন সংযমের সাথে একটি স্বাস্থ্যকর পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়া হয় তখন তা মা এবং শিশুর কোনওরূপ ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে না।
গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়ার ব্যাপারে যদি আপনার মনে কোনওরকম সন্দেহ থাকে, এর উপকারিতাগুলি পড়ুন।গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে কাঁঠাল সেবন করলে তা শরীরের জন্য প্রচুর পুষ্টি এবং উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে।এখানে কাঁঠালের কিছু উপকারিতা আলোচিত হলঃ
সঠিক পরিমাণে কাঁঠাল খেলে তা পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করতে পারে, যেমন গর্ভাবস্থাকালে পাকস্থলীর আস্তরণের উপর হয়ে থাকা পেটের ঘা বা আলসারের ক্ষেত্রে।
কাঁঠাল আপনাকে তার মধ্যে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রণ, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদিগুলি সরবরাহ করতে পারে।এই খনিজগুলি আপনার গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এটি আবার ভিটামিন A, C, ফোলেট এবং আয়রণের মত বিভিন্ন ভিটামিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস।এই সকল পুষ্টিকর পদার্থগুলি শিশুর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণুগুলির গঠণে সহায়তা করে।
একজন গর্ভবতী মহিলার বর্ধিত রক্তচাপের মাত্রা তার গর্ভস্থ ভ্রূণের জন্য হানিকারক হয়ে উঠতে পারে এবং পরিণাম স্বরূপ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।তবে কাঁঠালের ন্যায় স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করার দ্বারা রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করতে পারে এবং মা ও শিশু উভয়ের সুস্থ থাকাকেও নিশ্চিত করে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার কাছে খুবই ক্লান্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে, আপনার শিশুকে গর্ভের মধ্যে সমর্থন করার কারণে আপনি হয়ত ক্লান্তি এবং অবসন্ন বোধ করতে পারেন।কিন্তু কাঁঠালের মত স্বাস্থ্যকর ফল এবং সবজি সেবন করলে তা আপনাকে এনার্জি বা শক্তি সরবরাহ করতে পারে এবং আপনার ক্লান্তি ও অবসাদ প্রতিরোধ করতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং হজম সম্পর্কিত সমস্যাগুলি গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। আপনিও যদি কোষ্ঠকাঠিণ্য বা হজমের সমস্যা ভোগ করে থাকেন তবে হজম সম্পর্কিত সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনি আঁশ বহুল তন্তু সমৃদ্ধ ফল এবং শাক-সবজিগুলি খেতে পারেন যেমন এরকম একটি উদাহরণ হল কাঁঠাল।কাঁঠালের আঁশবহুল তন্তু জাতীয় উপাদানটি প্রতিদিনের মোট তন্তু গ্রহণের মোটামুটি প্রায় 10% পূরণ করতে পারে।এটি আপনার অন্ত্রের গতিবিধির প্রবাহরেখাকে সঠিকভাবে বজায় রাখতে, কোষ্ঠিকাঠিণ্য দূর করতে এবং পাচন প্রক্রিয়া অনুকূল রাখতে সহায়তা করবে।
নয় মাস ব্যাপী গর্ভাবস্থাকালটি আপনার কাছে সহজেই একটি চাপদায়ক অবস্থা হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এটি আপনার এবং আপনার শিশু কারুর পক্ষেই ভাল নয়।যদি আপনি মানসিক চাপে ভুগে থাকেন তবে আপনি ধ্যান অথবা এ সম্পর্কিত কিছু হালকা যোগ- ব্যায়ামগুলি করার চেষ্টা করতে পারেন।এছাড়াও মানসিক চাপ হ্রাস করতে আবার আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কয়েকটি নির্দিষ্ট খাদ্য সংযুক্তও করতে পারেন যার মধ্যে কাঁঠালও অন্তর্ভূক্ত।কাঁঠালের বীজগুলি বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এগুলির মধ্যে রয়েছে প্রোটিন এবং অন্যান্যবিভিন্নমাইক্রোনিউট্রিয়েন্টযা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য ভিটামিন C খুবই জরুরী, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার জন্য।অন্তঃসত্ত্বাকালে আপনি কাঁঠালের মত ফলটি সেবন করতে পারেন যা ভিটামিনে সমৃদ্ধ- এটি আপনার অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কাঁঠালের বীজও প্রচুর পুষ্টি নিয়ে আসে।কাঁঠালের বীজ খাওয়ার কিছু উপকারিতার উল্লেখ নিম্নে করা হলঃ
একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য কাঁঠাল যদিও বহুবিধ উপকারিতা নিয়ে আসে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এটি খাওয়ার পক্ষে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ।এখানে গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়ার বেশ কিছু ঝুঁকির উল্লেখ করা হলঃ
নানা ভাবে কাঁঠাল খাওয়া যেতে পারে, কাঁচা অথবা পাকা ফল হিসেবে অথবা সবজি হিসেবে এটিকে রান্না করে।গর্ভাবস্থায় কাঁঠালের চিপস খাওয়াও বেশ ভাল কিন্তু আপনার সেগুলি সিমীত পরিমাণে খাওয়া উচিত।এছাড়াও আবার আপনি কাঁঠালের কোঁয়াগুলি খেতে পারেন কিছু নারকেল কোঁড়ার সাথে গার্নিশ করে নিয়ে।
কাঁঠাল কেনার সময়, ঘন সবুজ এবং শক্ত কাঁটা যুক্ত ওজনে ভারী, তাজা এবং এখনও পাকে নি এমন একটিকে বেছে নিন।সঠিক পন্থায় খাওয়ার জন্য, নরম কাঁটা যুক্ত একটি পাকা কাঁঠাল পছন্দ করুন।যদি সেগুলিকে বায়ুনিরুদ্ধ পাত্রে হিমায়িত করে রাখেন তবে তা অনেকদিন পর্যন্ত মজুত রাখতে পারেন।
কাঁঠাল স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর এবং গর্ভাবস্থায় এটি আপনার জন্য প্রচুর উপকারিতা নিয়ে আসে।তবে তার সাথে আবার এটিও বলা হয় যে, আপনার তাই বলে এটি অত্যধিক মাত্রায় খাওয়া উচিত নয় কারণ সেক্ষেত্রে এটি আপনার স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।আপনি যাই খান না কেন যদি সেটি সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে খান তবে আপনি ভাল থাকবেন।আর তার থেকেও বড় ব্যাপার হল আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে যেকোনও খাদ্য সংযুক্ত করার আগে আপনার ডাক্তারবাবু বা একজন পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত আর তার ফলে আপনার মনে খাদ্য সম্পর্কিত আর কোনও সন্দেহ বা দ্বন্দ্ব থাকবে না।এভাবে একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!