গর্ভাবস্থায় কাশির জন্য 10 টি কার্যকর ঘরোয় প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কাশির জন্য 10 টি কার্যকর ঘরোয় প্রতিকার

অসুস্থ হয়ে পরাটা প্রকৃতই সবকিছুর আনন্দকে কেড়ে নেয়,এমনকি গর্ভাবস্থারও।কিছু ট্যাবলেট গ্রহণের প্রত্যাশা কারও কাছেই আবেদন যোগ্য নয় এবং গর্ভাবস্থার সময়,ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে গুরুতরভাবে বিবেচনা করতে হবে।গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি লাগায় ভয়ের কিছুই নেই যেহেতু এটির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে আপনার বাচ্চা যথেষ্ট সুরক্ষিত থাকে।তবে আপনার শরীরে যে পরিবর্তনগুলি ঘটে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির কার্যকরী গতিকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর ফলে ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণগুলি আরও বাড়িয়ে তোলে।যেহেতু সাধারণ সর্দি কাশির ওষুধগুলি যেমন টাইলেনল শিশুদের মধ্যে ADHD বৃদ্ধির ঝুঁকির সাথে যুক্ত থাকে,গর্ভাবস্থার সময় ঠাণ্ডা লাগার জন্য ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে চিন্তা করে নিতে হবে।

ভীত হবেন না,এর জন্য বেশ কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার আছে,প্রকৃতপক্ষে সেই সকল অমোঘ ওষুধগুলির পিছনে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক ভাল কারণ আছে যাতে ঠাকুমারা সর্বদাই প্রস্তুত থাকতেন সর্দি কাশির চিকিৎসায় সেগুলিকে ব্যবহার করতে।সুতরাং, আপনি যদি একজন মা হতে চলেন এবং কাশিতে ভুগতে থাকেন,এই বিশ্রী জীবাণুর সাথে লড়াই করতে কার্যকর কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিতে পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় কাশির চিকিৎসার জন্য 10 টি সাধারণ প্রাকৃতিক প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় কাশির চিকিৎসার জন্য 10 টি সাধারণ প্রাকৃতিক প্রতিকার

১. রসুন

রসুন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য আছে হিসেবে জানা যায়।অ্যালিসিন হল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যা রসুনকে থেঁতো করার পরে এবং গরম করার আগে মুক্ত হয়।সুতরাং আপনার যদি ঠাণ্ডা লেগে থাকে,কিছুটা কাঁচা রসুন খান।এটি সবচেয়ে সেরা স্বাদের না হতে পারে,কিন্তু এটি নিশ্চিতভাবে আপনার বুকে বসে যাওয়া সর্দি নিরাময়ের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।এর কাঁচা স্বাদে সাহায্য করতে রসুনটিকে কুঁচিয়ে নিয়ে,কিছুটা মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়ে এটিকে গ্রহণ করুন।দিনে কম করে দুই থেকে তিনবার পর্যন্ত এটি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

২. অ্যাপেল সীডার ভিনিগার

অ্যাপেল সীডার ভিনিগার গ্রহণ করলে তা দেহকে আরও বেশি ক্ষারীয় করে তোলে।যে দেহ বেশী ক্ষারীয় সেটি সর্দি এবং কাশি দ্বারা সৃষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশি কার্যকর। সুতরাং, এই সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর পানীয়টি গর্ভাবস্থায় প্রাকৃতিকভাবে কাশি নিরাময় করতে পারে। ঠাণ্ডা লাগার প্রথম কিছু উপসর্গে আপনি এটি পান করতে শুরু করতে পারেন এবং সেগুলি হ্রাস হওয়া পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে পারেন। কিছুটা জল বা কালো চা-এর সাথে 1-2 টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিন এবং দিনে দুই থেকে তিনবার করে পান করুন।

৩. মধু

মধু সর্দি-কাশির জন্য সর্বজনস্বীকৃত একটি প্রতিকার।এটি কাশি দমনকারী হিসেবে কাজ করে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং গলা ব্যথা প্রশমিত করে।এছাড়াও এটি সহজলভ্য এবং সুস্বাদু।সুতরাং,গর্ভাবস্থায় বাড়িতে কীভাবে কাশি নিরাময় করা যায় তার উপায় যদি খুঁজে থাকেন,মধুর সাহায্যে একটা প্রচেষ্টা চালান।এটি একটি পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত প্রতিকার।

৪. জল

আপনি ইতিমধ্যেই এটি জানেন।তবে আপনি যদি এই ঠাণ্ডা লাগা সর্দি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতে চান আপনার হাইড্রেট থাকাটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।সর্দি-কাশির সময়,স্বাভাবিকের তুলনায় শরীর অনেক বেশী জল হারায়।সুতরাং,প্রচুর পরিমাণে উষ্ণ জল পান ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং তার পাশাপাশি বুকে সর্দি না বসার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।পরিষ্কার সাধারণ ব্রথ বা ঝোল অথবা ঈষদুষ্ণ লেবুর জলও এক্ষেত্রে বেশ উপকারী।

৫. লেবু

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C আছে,যেটি হল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, এছাড়াও এর মধ্যে আছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি।লেবু পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ,যা কিডনির সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।কিডনি দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থগুলিকে অপসারিত করে দেয় যা আবার ঠাণ্ডা লাগা ও সর্দি থেকেও মুক্তি দিতে সাহায্য করে।লেবু শরীরকে ক্ষারীয় করে তোলে এবং ঠাণ্ডা লাগার সর্দি ভাইরাসের মোকাবিলায় আরও অধিকতর সাহায্য করে।

৬. লবণ জলের সহিত গার্গেল

উষ্ণ জল দিয়ে গার্গেল করলে তা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণকে 40% মত কমাতে সাহায্য করে। স্যালাইনের দ্রবণগুলি গলায় প্রদাহজনিত স্ফীত কলাগুলি থেকে অতিরিক্ত তরল টেনে নিতে পারে, এর ফলে এগুলি কম আহত হয়।এছাড়াও এটি শ্লেষ্মা শিথিল করে এবং গলা থেকে অ্যালার্জেন, ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাককে দূর দেয়। ফলাফল দেখতে এটি দিনে দু-তিন বার করুন।

৭. হিউমিডিফায়ার

হিউমিডিফায়ার বাতাসের আদ্র উপকরণগুলিকে বাড়িয়ে তোলে এবং নাক,গলা ও ফুসফুসের জায়গাগুলিকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে।এটি বাতাস প্রবাহকে সহজ করে তোলে এবং অবরুদ্ধ নাক এবং উত্তরণগুলি থেকে স্বস্তি দেয়।

৮. ভিটামিন C

ভিটামিন C হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টঅক্সিডেন্ট যা দেহকে স্বাস্থ্যকর এবং শক্তিশালী রাখে।এই ভিটামিনে সমৃদ্ধ খাবারগুলিকে আরও বেশি করে আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।কমলা লেবু,আঙুর এবং ট্যাঞ্জারিন বা ছোটো কমলা লেবুর মত সাইট্রাস ফ্রুটগুলিতে এই ভিটামিন থাকে,এবং একইভাবে সবুজ শাক-সবজি,টমেটো এবং স্ট্রবেরির মধ্যেও থাকে ভিটামিন C।

৯. জিঙ্ক

ঠাণ্ডা লেগে সবচেয়ে বেশী সর্দি হয়ে থাকে রাইনোভিরাসের কারণে,যা নাসাপথে এবং গলার মধ্যে বহুবিভাজিত হয় এবং সমৃদ্ধি লাভ করে।ভাইরাসের বহুবিভাজনকে প্রতিরোধ করতে জিঙ্ক সহায়তা করে।এটি আবার নাক এবং গলার ঝিল্লিতে মিউকাস বা শ্লেষ্মার অবস্থিতি বন্ধও করতে পারে।লজেন্স এবং সিরাপের মধ্যে থাকা জিঙ্ক থেকে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।অতএব,পালং শাক,গম জীবাণুর তেল,কুমড়োর বীজ,ভেড়ার মাংস এবং পাঠার মাংসের মত খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে জিঙ্ক নিরাপদ উপায়ে গ্রহণ করা যায়।

১০. আদা

গর্ভাবস্থায় শুকনো কাশির জন্য কোনও ঘরোয়া প্রতিকার খুঁজছেন কি?তবে,আদা হল একটি ভাল বিকল্প।শুকনো কাশি প্রকৃতই একটা উপদ্রব,কারণ এটি কোনওরকম কফ বা শ্লেষ্মা উৎপন্ন করে না।সংক্ষেপে,অন্যান্য কাশি যেগুলি দেহ থেকে অবাঞ্ছিত শ্লেষ্মাকে অপসারি করে দিতে পারে সেগুলির মত শুকনো কাশি ভাল নয়।এই কাশি ভাইরাল ইনফেকশন বা সংক্রমণ এবং এলার্জির কারণে হয়ে থাকে।আদা কফ বা শ্লেষ্মা এবং জ্বলনকে কমায়।আদা খাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেটির চা রুপে পান করা।দু গ্লাস জল নিয়ে সেটিকে ফুটান এবং তার মধ্যে দু চামচ থেঁতো করা আদা দিয়ে 15 মিনিট ধরে কড়া করে ফুটিয়ে নিন।এবার এটি কিছুটা ঠাণ্ডা হলে এর সাথে খানিকটা মধু যোগ করে পান করুন।

সর্দি প্রতিরোধ করতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়গুলি

আমরা প্রত্যেকেই এই প্রবাদটি শুনেছি যে,’নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল’।এবং এটি সবসময়ের থেকেও বেশী সত্য হয়ে দাঁড়ায় গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে।আপনার গর্ভস্থ সন্তানের ক্রমবিকাশের সাথে তার পরিচর্যা এবং যত্নের জন্য,আপনার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলা আপনি এবং আপনার সন্তান উভয়কেই স্বাস্থ্যকর করে তোলে।এখানে দেওয়া হল সর্দি,কাশি ইত্যাদির মত সমস্যাগুলিকে প্রতিরোধ করতে আপনি কীভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন সেই সকল বিষয়ে।

১. মাল্টি-ভিটামিন গ্রহণ করুন

মাঝেমধ্যে,রোগ প্রতিরোধের জন্য খাবার দ্রুত অথবা এমনকি যথেষ্ট পরিমাণেও কাজ না করতে পারে।এই ক্ষেত্রে,মাল্টি-ভিটামিনের প্রতিদিনের ডোজ আপনাকে আপনার পুষ্টি দেয় এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।

২. হাইড্রেট থাকুন

জল আপনার কোষগুলিতে অক্সিজেন বহন করে এবং আপনার পেশি গঠন করতে সাহায্য করে আর আপনাকে শক্তিশালী রাখে।এছাড়াও এটি আপনার দেহ থেকে থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলিকে বের করে দেয়,যেগুলি অন্যথায় আপনার সমগ্র শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।সুতরাং,সারাদিন ধরে পর্যাপ্ত জল পান করা সুনিশ্চিত করুন।

৩. যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন

আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার অন্যতম প্রধান উপায় হল আপনার হাত পরিষ্কার রাখা।আমাদের হাত সর্বাধিক ব্যাকটেরিয়া বহন করে,যেগুলি সম্ভবত আমাদের দেহে বেশি প্রবেশ করে যখন আমরা খাই,রান্না করি অথবা যখন কোনও শাক-সবজি,ফলকে স্পর্শ করি তার মাধ্যমে।সর্বজনক্ষেত্রসমূহকে স্পর্শ করার পর,কাশি,হাঁচি ইত্যাদির পর সাবান এবং জল দিয়ে আপনার হাত ভাল ভাবে ধুয়ে নেওয়াটা সুনিশ্চিত করুন।

সর্দি এবং কাশি হওয়া খুবই অপ্রীতিকর একটা বিষয়,কিন্তু এটিকে কার্যকরভাবে ঘরেই প্রতিকার করা যেতে পারে।ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।যদি আপনার অসুস্থতা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে,একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।