আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন,তবে আপনি অবশ্যই আপনার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্য এবং ভালভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার মঙ্গলের জন্য সবকিছুই সঠিকভাবে করতে ইচ্ছুক হবেন।প্রথম এবং প্রধান জিনিসটি হল আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েট এবং আপনার পুষ্টির দিকে মনোযোগ দেওয়া।আপনি যদি চিন্তা করতে থাকেন যে আপনার গর্ভাবস্থার প্রতিদিনের ডায়েটে গাজর অন্তর্ভূক্ত করা ভাল ধারণা হবে কিনা,তবে নিম্নলিখিত নিবন্ধটি পড়ুন।এখানে আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা এবং ঝুঁকিগুলির বিষয়ে।
গাজর হল একটি আশ্চর্যজনক মূল জাতীয় সবজি যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজের দ্বারা পূর্ণ থাকে।নিম্নের তালিকাটি গাজরের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে আপনাকে অবগত করাবে।
পুষ্টিমান | প্রতি 100 গ্রামে |
এনার্জি বা শক্তি | 41 kcal |
কার্বোহাইড্রেট | 9.58 g |
শর্করা | 4.5 g |
প্রোটিন | 0.93 g |
ফ্যাট | 0.24 g |
ফাইবার (খাদ্যগত তন্তু) | 2.8 g |
ভিটামিন C | 6 mg |
ভিটামিন A | 5 mg |
ভিটামিন B-6 | 0.135 g |
ভিটামিন K | 13.2 ug |
ক্যালসিয়াম | 33 mg |
সোডিয়াম | 69 mg |
ফসফরাস | 35 mg |
পটাসিয়াম | 320 mg |
ম্যাগনেসিয়াম | 12 mg |
কপার | 0.045 mg |
আয়রণ | 0.30 mg |
জিঙ্ক | 0.24 mg |
ম্যাঙ্গানিজ | 0.143 mg |
সেলেনিয়াম | 0.1 ug |
উপরে বর্ণিত মানগুলি 100 গ্রাম গাজরে উপস্থিত আনুমানিক মান।
গাজর হল বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের একটি শক্তিঘর।এই মূল জাতীয় সবজিটিকে কাঁচা এবং রান্না করে এই দুই ভাবেই খাওয়া আপনাকে এবং আপনার গর্ভাবস্থায় গাজর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে।
ভিটামিন A দ্বারা সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় গাজর গর্ভাবস্থায় আপনার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভাল।এটি গর্ভাবস্থায় আপনার কেবল চোখ এবং দৃষ্টিরই যত্ন নেয় না,তার সাথে এটি আবার ভ্রূণের চোখের বিকাশের জন্যও উপকারী।
গাজরে ভাল পরিমাণে ভিটামিন C আছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী।গর্ভাবস্থায় অনাক্রম্যতা হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা থাকে এবং প্রতিদিন গাজর খেলে তা আপনার অনাক্রম্যতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে।
ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গাজর খাওয়া ভীষণ কার্যকর কারণ গাজরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা ভ্রূণের দাঁত এবং হাড়ের গঠণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।গাজর মধ্যস্থ ক্যালসিয়াম আবার মায়ের হাড়কেও স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য ভাল।
গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে গাজরের অন্তর্ভূক্তিকরণ গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়াকে নিবারণ করতে সহায়তা করতে পারে।এর কারণ হল গাজর কেবল আয়রণেই সমৃদ্ধ নয়,এর মধ্যে আবার ভিটামিন C ও থাকে যা শরীরের দ্বারা আয়রণ শোষণে সহায়তা করে।
গর্ভবতী মহিলাদের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে সাধারণ একটি সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিণ্য।গাজরে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা নিয়মিত সেবন করলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের বিপর্যয়গুলি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।এছাড়াও গাজর আবার হজমের অন্যান্য সমস্যাগুলিকেও দূরে ঠেলে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
অনেক গর্ভবতী মহিলাই তাদের গর্ভাবস্থায় শিরায় টান লাগা বা পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভব করে থাকতে পারেন।যদিও এগুলি গর্ভাবস্থাকালীন ভীষণ সাধারণ সমস্যা,তবে সেগুলি ভীষণ অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে।গাজরের মধ্যে থাকে ফসফরাস যা গর্ভাবস্থায় পেশীগুলির যথাযথ ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে এবং যেকোনও প্রকার খিঁচুনি বা বাধা রোধ করে।
কিছু হবু মায়েদের মধ্যে হয়ত গর্ভাবস্থাকালীন উচ্চ রক্তচাপের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে,যা গর্ভাবস্থায় নানা জটিলতা সৃষ্টি করে।তবে যদি নিয়মিতভাবে গাজর সেবন করা যায় তবে সেগুলি গর্ভাবস্থাকালীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
গাজরের মধ্যে আছে ম্যাঙ্গানিজ যা আপনার অনাগত শিশুর হাড় এবং তরুণাস্থির সুগঠণের জন্য প্রয়োজনীয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন খনিজ।আপনি আপনার গর্ভাবস্থায় ডায়েটে গাজরের রস অন্তর্ভুক্ত করে আপনার ম্যাঙ্গানিজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাটিকে পূরণ করতে পারেন।
গাজর মধ্যস্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন B এবং ফোলিক অ্যাসিড আপনার অনাগত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য উপকারী।প্রতিদিনের ভিত্তিতে গাজর খেলে তা আবার স্পাইনা বাইফিডার মত স্নায়বিক জন্ম ত্রুটিযুক্ত শিশুর জন্মদানের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
গাজরে থাকে বিটা-ক্যারোটিন,যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রে উপকারী।বিটা ক্যারোটিন একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং আপনার দেহে মুক্ত মূলকগুলির প্রভাব হ্রাস করে আপনাকে এবং আপনার সন্তানকে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করে।
গাজর খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে যেগুলি আপনি গর্ভাবস্থায় আপনার নিজের এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য উপভোগ করতে পারেন।
আপনি যদি চিন্তা করে থাকেন যে কীভাবে আপনি আপনার ডায়েটে এই অলৌকিক মূল জাতীয় সবজিটিকে কার্যকরভাবে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন,সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে আপনার জন্য কিছু পরামর্শ আছে যা আপনার ডায়েটে কীভাবে এই সবজিটিকে সংযুক্ত করা যেতে পারে এবং কীভাবেই বা সেটিকে খাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে সহায়তা করতে পারেঃ
যদিও গর্ভাবস্থায় কাঁচা গাজর খাওয়া নিরাপদ এবং আপনার বা আপনার অনাগত সন্তানের জন্য কোনও ঝুঁকি সৃষ্টি করে না বলে বিবেচনা করা হয়,তথাপি গর্ভাবস্থায় কাঁচা গাজর অথবা গাজরের রস খাওয়ার সাথে কিছু ঝুঁকি যুক্ত থাকতে পারে।
ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এই সহজ গাজর স্যুপটি হল দারুণ স্বাস্থ্যকর এবং একদম উপযুক্ত আহার।
একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য গাজরে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে কিন্তু এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলিকেও হ্রাস করা যায় না,এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই।যদি আপনি আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে গাজর সংযুক্ত করতে চান,তবে এ বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করার পরামর্শই দেওয়া হল।আপনার ডায়েটে গাজর যোগ করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু যদি একবার সম্মতি দিয়ে দেন,আপনি এগিয়ে যেতে পারেন এবং গর্ভাবস্থায় গাজরের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলিকে স্বাগত জানাতে পারেন।তবে, এগুলি খাওয়ার ব্যাপারে আপনি অত্যধিক পরিমাণে ভক্ষণ না করার বিষয়ে সচেতন থাকার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করবেন কারণ সেটি থেকে বিভিন্ন জটিলতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।