গর্ভাবস্থার মধ্য দিয়ে যাত্রাকালে আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করে তুলতে পারে প্রাপ্ত তথ্যের মাত্রাগুলি,যার মধ্য থেকে কোনগুলির জন্য প্রতিকার আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং কোনগুলিই বা আমাদের বর্জন করতে হবে?আমরা এখানে বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য তথ্য একত্রিত করেছি যেগুলি আপনার সংশয়গুলিকে কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।এই নিবন্ধে আমরা উল্লেখ করেছি এমন এক অত্যন্ত সাধারণ উপসর্গের কথা যেটির চিন্তা প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাই তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে করে থাকেন,সেটি হল বারংবার মূত্রত্যাগ।এটি শুরু হয় গর্ভাবস্থার মোটামুটি প্রায় ষষ্ঠ তম সপ্তাহ থেকে(প্রথম ত্রৈমাসিক) এবং গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে তা ভীতিকর হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগের কারণটি হল দেহস্থ hCG হরমোন যা মহিলাদের বৃক্কে রক্ত প্রবাহ 35-60% পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে।আর এই অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে গর্ভ ধারণের পর বৃক্ক প্রায় 25% পর্যন্ত বেশি মূত্র উৎপন্ন করে।এই অতিরিক্ত মূত্র উৎপাদন মোটামুটি প্রায় 9-16 সপ্তাহে সর্বোচ্চ পযায়ে পৌঁছায় এবং এর পর থেকে এটি স্থির অবস্থায় আসে।
যদিও রক্ত প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া বারংবার মূত্র ত্যাগের একটি অন্যতম মূখ্য কারণ,তবে এটি আবার গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রথলির উপর তাদের ক্রমবর্ধিত জরায়ুর চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণেও হয়ে থাকতে পারে।এই চাপটিই হল গর্ভাবস্থার চূড়ান্ত তিন মাসে থাকা গর্ভবতী মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগ আরও বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ।শিশুটি আকারে ক্রমশ বেড়ে ওঠার কারণে এবং জন্মের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মায়ের শ্রোণীর মধ্যে নেমে আসার দরুণ এই চাপটি বেড়ে যায়।
গর্ভাবস্থার একাধিক উপসর্গের মধ্যে বারংবার প্রস্রাব ত্যাগের প্রাথমিক লক্ষণটি বেশ সাধারণ।ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগের লক্ষণটি গর্ভাবস্থার প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আবদ্ধ।hCG হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শরীরে তরলের মাত্রাও বেড়ে যাওয়ার ফলে তা প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাকেই দিনে রাত্রে শৌচালয়ের দিকে ছুটতে বাধ্য করে।
একজন গর্ভবতী মহিলার প্রস্রাব ত্যাগের প্রক্রিয়াটি তার নয় মাসের সমগ্র গর্ভাবস্থার মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে।প্রতি ত্রৈমাসিক অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলির ব্যাখ্যা নিম্নে করা হলঃ
গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগ এবং বর্ধিত হরমোনের মাত্রা হল এর প্রাথমিক কারণ।জরায়ুর প্রসারণ,যা মূত্রথলির মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে,সেটিও গর্ভবস্থায় বার বার প্রস্রাব ত্যাগের পিছনে অবদানের দাবী রাখে।
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আপনি হয়ত ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের প্রকোপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।এর কারণ হল জরায়ুটি ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে এবং তলপেটের উপরের অংশে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এর ফলে মূত্রথলি থেকে দূরত্ব তৈরী করবে,যার ফলে মূত্রথলিতে চাপ হ্রাস পায়,যদিও সেটি ক্ষণস্থায়ী,সেটি মনে রাখবেন।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আপনি এই লক্ষণটিতে একটা পরিবর্তন দেখতে পাবেন।গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে ঘন ঘন প্রসাব নিঃসরণ মূলত হয়ে থাকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুটি মায়ের শ্রোণীর মধ্যে নেমে আসার কারণে।যা মূত্রথলির উপর চাপ সৃষ্টি করে পরিণামে বার বার প্রসাব ত্যাগের জন্য দ্রুত শৌচালয়ের দিকে গমন করতে হয়।
গর্ভাবস্থায় হাঁচা,কাশা,ব্যায়াম করা এমনকি হাঁসার সময়েও প্রস্রাব লিক করা হল গর্ভাবস্থার একটি অতি সাধারণ উপসর্গ এবং এটি বিশেষত গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে হয়ে থাকে।প্রস্রাবে অসংযম অথবা প্রস্রাবের অনভিপ্রেত চলাচল হল চাপ নিষ্ক্রিয়তার একটি ফল।চাপের অসংযমতা হয়ে থাকে যেকোনও শরীরিক ক্রিয়া (উপরের উল্লেখানুযায়ী) করার সময় যা আপনার মূত্রথলির উপরে ধকল বা চাপ ফেলার কারণ।
প্রতিটি অন্তঃস্বত্তা মায়েরাই তাদের ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগ হ্রাস করার জন্য প্রতিকারের খোঁজ করে থাকেন।কিছু প্রতিকার আমরা নিম্নে উল্লেখ করলাম যেগুলি এক্ষেত্রে কিছুটা সহায়তা করতে পারবেঃ
রাতের বেলায় আপনার বার বার শৌচালয়ে গমন করাটিকে এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে প্রতিবার প্রস্রাব করার সময় সম্পূর্ণরূপে আপনার মূত্রথলিটিকে খালি করার মাধ্যমে এবং শুতে যাওয়ার অন্তত কয়েক ঘন্টা আগে আপনার তরল পানে কাটছাঁট আনার মাধ্যমে।তবে দিনের বেলায় বেশি করে জল পানের ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করে নেবেন।কম পরিমাণে তরল পান আপনাকে শৌচালয়ে কম বার যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।তবে এর ফলে ডিহাইড্রেশন বা শরীর জলশূণ্য হয়ে যেতে পারে এবং অবশেষে তার পরিণামে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে।আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্যই প্রয়োজন পর্যাপ্ত এবং অবিচলিত তরল সরবরাহ।
যদিও বারংবার মূত্রত্যাগ করা হল গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ লক্ষণ,এটি মূলত হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন এবং প্রস্রাবে অসংযমের কারণে হয়ে থাকে।তবে এর সাথে আরও অন্যান্য কারণও জড়িত থাকতে পারে।মূত্রনালীর সংক্রমণও ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগের জন্য দায়ী হয়ে থাকতে পারে।এই সম্ভাবনাগুলিকে দূর করতে সবচেয়ে ভাল হল আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শ নেওয়া।
গর্ভাবস্থা এবং প্রস্রাব নিঃসরণ হাত ধরাধরি করে আসে এবং এটি গর্ভবতী মহিলাদের দ্বারা বেশ চর্চিত একটি বিষয়।এমনকি প্রসবের পরেও,গর্ভাবস্থায় অর্জিত অতিরিক্ত তরলকে দেহ অনবরত অপসারিত করতে থাকে।প্রসবের পরবর্তী অন্তত কয়েকদিন ধরে ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যাগের তাগিদে হয়ত কোনও খামতি ঘটবে না।শুধুমাত্র অতিরিক্ত তরল অপসারণের পরেই আপনি কিছুটা স্বস্তি পাবেন যেহেতু আপনার শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া ক্রমশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিকে প্রত্যার্পণ করতে থাকে।
সিদ্ধান্ত
মনে রাখবেন প্রস্রাব সংক্রান্ত এই সকল অসুবিধাগুলি হল কেবল সামাণ্য কিছু ছোটখাটো সমস্যা যা শিশুর জন্মদানের পর নিশ্চিতভাবেই ম্লান হয়ে যায়।