কোন মানুষটা ছোলা খেতে ভালোবাসেন না?এটি হল সকলের দ্বারা আস্বাদিত একটি সমাদৃত খাদ্য পদ।তবে আপনি যখন গর্ভাবস্থায় প্রবেশ করেন তখন আপনার অন্ত্রে কি প্রবেশ করছে সে ব্যাপারে আপনার সচেতন হওয়া উচিত,ছোলা হল সেগুলির মধ্যে অন্যতম।প্রথম ত্রৈমাসিক থেকে শুরু করে তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত আপনার ডায়েটের ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠার বিষয়টি বিবেচনা করা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কিন্তু তাই বলে এর অর্থ কখনই এই নয় যে ছোলা খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেবেন।এর ক্ষতিকারক দিকটির তুলনায় উপকারিতাগুলি এত বেশি যে,যেকোনও গর্ভবতী মহিলার জন্য ছোলা একটা ভাল পছন্দ হয়ে ওঠে।আসুন অন্বেষণ করা যাক এর উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উভয় দিকগুলিই।
ছোলাকে গর্ভাবস্থাকালে খাওয়ার জন্য অন্যতম একটি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।কেবল যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তা হল যথাযথ নরম না হওয়া পর্যন্ত ছোলাগুলিকে ভালভাবে রান্না করতে হবে।আর অন্য বিষয়টি হল ছোলা সবসময় পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।এর মধ্যে উচ্চ পুষ্টিমূল্য বজায় থাকায়,ছোলা প্রোটিন, খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফোলিক অ্যাসিডের ভাল মাত্রা সরবরাহ করে।
মা এবং ভ্রূণ উভয়ের জন্যই ছোলাগুলি নানা উপায়ে উপকারি হতে পারে।কীভাবে?তা জানতে হলে পড়ুনঃ
গবেষণায় দেখা যায় যে ছোলা ফোলেট বা যাথাযোগ্যভাবে পরিচিত ফলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।শরীরের মধ্যে এই অ্যাসিডের উপস্থিতি আশীর্বাদ বয়ে আনে,স্নায়বিক নালীর ত্রুটিগুলি প্রতিরোধ করার কারণে।
গবেষণা এই তথ্যের প্রমাণ দেয় যে,ছোলায় উপস্থিত ফোলিক অ্যাসিড স্পাইনা বিফিডা এবং অ্যানেন্সেফালির মত স্নায়বিক ত্রুটিগুলি এড়িয়ে চলে।সাধারণত আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে দেখা যায় যে,এই স্নায়বিক ত্রুটিগুলি আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে হয়ত খুব বেশি সময় নেয় না।সুতরাং পরের বার আপনি হয়ত এই ভেবে অবাক হবেন যে,গর্ভাবস্থায় ব্যাসন খাওয়া নিরাপদ কিনা?মনে রাখবেন,উচ্চ মাত্রার ফোলেট কার্যকরভাবে ভ্রূণকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
অ্যানিমিয়া হল মানব দেহের এমন এক অবস্থা,যেখনে হয় লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায় অথবা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে দেখা যায়।এইভাবে স্বাভাবিক রক্তের পরিমাণ এবং হিমোগ্লোবিন প্রত্যাশার চেয়ে কম থাকে।
আয়রণ হল এমন এক উপাদান যা উল্লেখযোগ্যভাবে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।আর মজার ব্যাপারটি হল প্রতি 100 গ্রাম ছোলা পরিবেশনে প্রায় 22% মত আয়রণ থাকে।বলার অপেক্ষা রাখে না যে,পরিণামস্বরূপ আয়রণ দেহে লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,যার ফলে ক্লান্তিবোধ ও বমি বমি ভাবের অনুভূতিটি আর সেরকম থাকে না।
গর্ভাবস্থাকালটি কোনও ছেলেখেলার কাজ নয়।গর্ভাবস্থার গুরুত্বপুর্ণ মাসগুলিতে,একজন মহিলা প্রায় সকল প্রকার ক্লান্তি এবং অবসন্নবোধ করেন।আপনার গর্ভের অতিরিক্ত ওজন বহন করার জন্য আপনার অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হবে।তবে ছোলা গ্রহণ এক্ষেত্রে সমাধান নিয়ে আসতে পারে।
ছোলার একটি সম্পূর্ণ পরিবেশনে থাকে প্রোটিন,আয়রণ এবং এমনকি প্রয়োজনীয় মাত্রায় ক্যালরি।গর্ভাবস্থায় কালো ছোলার উপকারিতার কথা কেউই অস্বীকার করতে পারেন না।গর্ভাবস্থার মুখোমুখি হওয়া যেকোনও চ্যালেঞ্জকে বহন করার প্রয়োজনীয় শক্তির মাত্রা সরবরাহ করার ক্ষত্রে কালো ছোলাগুলি দুর্দান্ত।
ছোলা কোলাইন সমন্বিত,যার অর্থ– এটি হল একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা মস্তিষ্কের বিকাশে এবং স্বাস্থ্যকর স্নায়ু গঠনে সহায়তা করে।আপনি যখন আপনার পছন্দের ছোলাগুলিকে কুড়িমুড়িয়ে চিবিয়ে গুঁড়ো করেন, আপনি আপনার অজান্তেই পরোক্ষভাবে ভ্রূনের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বিকাশে সহায়তা করে থাকেন।
100 গ্রাম ছোলা পরিবেশনের মধ্যে থাকে 43 গ্রাম ক্লোরিন।এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?
ছোলার মধ্যা থাকে ম্যাঙ্গানিজ যা হাড়কে শক্তিশালী করে তুলতে এবং তরুণাস্থির বিকাশে সহায়তা করে।এই পুষ্টিকর উপাদানটি আবার কোষের রক্ষায় এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সাহায্য করে।
একজন মহিলার দেহে একদিনে প্রায় 2 মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন হয়।মহিলারা এক কাপ অর্থাৎ প্রায় 164 গ্রাম ছোলার থেকে মোটামুটি প্রায় 1.69 মিলিগ্রাম মত ম্যাঙ্গানিজ পেয়ে থাকে।
ছোলা খাওয়ার এমন বেশ কিছু প্রভাব রয়েছে,যেগুলি আপনার জানা উচিত।সেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
ছোলার কিছু রেসিপি প্রস্তুত করার জন্য এখানে কয়েকটি পরামর্শ রইল।সেগুলির মধ্যে যেগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ,তার মধ্যে রয়েছেঃ
এগুলি হল ছোলার সাথে যুক্ত কিছু উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।মুদ্রার উভয় পাশেই দৃষ্টি রেখে,ছোলাকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করতে মনে রাখবেন,তবে পরিমিত পরিমাণে।আপনার এবং আপনার ভ্রূণের সু–স্বাস্থ্যটি বজায় রাখাই হল সকল বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।