একজন মহিলা হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থা হল আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় ,এবং এই পৃথিবীতে একটি নতুন জীবন আনয়নের জন্য আপনার স্বাস্থ্যের পরম যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই সাথে এই সময় আপনার গর্ভের সঠিক পরিচর্যা সরবরাহের জন্য আপনার কেবল স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিই গ্রহণ করা ভীষণ মাত্রায় প্রয়োজন।আপনার দেহের পাশাপাশি আপনার ভ্রূণের সঠিক অনাক্রম্যতা নিশ্চিত করতে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজগুলি খাওয়া উচিত।
ডুমুরকে অন্যতম একটি স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে যা পুষ্টিতে ভরপুর এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উচ্চমাত্রায় সুপারিশ করা হয়। এর পাশাপাশি, এটি আবার আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকের প্রথম দিকে মর্নিং সিকনেসের সহিত মোকাবিলা করতেও আপনাকে সহায়তা করবে। এছাড়াও আবার গর্ভাবস্থায় এটি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পরিপূর্ণ করে।
গর্ভাবস্থায় ডুমুর খাওয়া উপকারী তবে সেটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। চিকিৎসকরা আপনাকে ডুমুরকে কেবলএকটি ফল হিসেবেই গ্রহণ করার পরামর্শ দেবেন, একটি ওষুধ হিসেবে নয়। আপনি সারাদিনের বিভিন্ন সময় জুড়ে এগুলির 5টি খাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন জলখাবারের সাথে, পড়ন্ত বিকেলের কিছু মুখরোচক হিসেবে,একটি কফির বিরতির সময় ,স্যালাডের মধ্যে অথবা কোনও রেসিপিতে পিউরি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে।
ডুমুরে অসংখ্য পুষ্টিকর উপাদান আছে, যেগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি তার গর্ভস্থ শিশুটিরও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখাকে নিশ্চিত করতে পারে।গর্ভাবস্থায় ডুমুর খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা নিচে বর্ণিত হলঃ
মায়ের দেহের পাশাপাশি ভ্রূণের হাড় এবং দাঁতের বিকাশের ক্ষেত্রেও ক্যালসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি মায়ের দেহের হাড়গুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে তার গর্ভাবস্থায় এবং এমনকি গর্ভাবস্থার পরবর্তীতেও ,যা তাকে তার নিয়মিত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখে।
ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে ডুমুর সেবনের একটি প্রশংসনীয় অবদান আছে। ডুমুর ওমেগা 3 এবং ফোলেটে সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যের বা স্পেশাল ডিশগুলি খাওয়ার আকাঙ্খা বেড়ে ওঠে। আর খাওয়ার এই তীব্র বাসনার পরিণতিতে গর্ভাবস্থাকালীন ডায়বেটিস এবং স্থূলতার মত আরও অন্যান্য গুরুতর অবস্থাগুলি দেখা দিতে পারে। ডুমুর মধ্যস্থ ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি এই ধরনের শর্তগুলি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি আপনার ক্ষুধাকে বাধা দেয় এবং খাওয়ার তীব্র বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আয়রণের ঘাটতি ভ্রূণে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস করে। আর ডুমুর দেহে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ উপাদানটি সরবরাহ করে থাকে, অতএব ডুমুর অবসাদ এবং রক্তাল্পতা দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দান করে।
ডুমুর খাদ্যগত তন্তুতে সমৃদ্ধ ,যা আপনার অন্ত্রের গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। তদুপরি, ডুমুর মধ্যস্থ প্রোবায়োটিকগুলি আপনার অন্ত্রের মধ্যে ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সমর্থন করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
ডুমুরের মধ্যে সোরালেন নামক একটি রাসায়নিক থাকে,যা ত্বকের পিগমেন্টেশন বা রঞ্জক সমস্যাগুলি এবং এমনকি মেলাজমার (গর্ভাবস্থার মুখোশ) চিকিৎসার জন্য বেশ কার্যকরী বলে জনা যায়।
ডুমুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন B-6 যা মর্নিং সিকনেসের প্রকোপ হ্রাসের ক্ষেত্রে উপকারী হিসেবে বিবেচিত।
ডুমুর আপনার হার্ট ভাল রাখতে সহায়তা করে।এর মধ্যস্থ কম মাত্রার সোডিয়াম এবং উচ্চ মাত্রার পটাসিয়ামের সমন্বয়টির গুণে এটি রক্ত শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে।এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি যা অ্যাথেরোসক্লেরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাই উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন।ডুমুরের মধ্যে ওমেগা-3,ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি এবং ফাইটোস্টেরলের মত স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলি বর্তমান থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। অতিরিক্তভাবে,ডুমুরে উপস্থিত পেক্টিন উপাদানটিও দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাসে সহায়তা করে থাকে।
ডুমুরগুলি ভিটামিন C সমৃদ্ধ,যা দেহের মধ্যে আয়রণ শোষণে সহায়ক হিসেবে পরিচিত।এই কারণে এটি মায়ের দেহে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ডুমুরগুলি মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে এবং গর্ভবতী মহিলাদের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ করার এটি একটি সহজ উপায়।
ডুমুরগুলি উচ্চ মাত্রায় উপকারী যা আমরা আগেই জেনেছি এবং একজন গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে সেগুলি অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। যদিও এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল তবে গর্ভাবস্থায় ডুমুরের শুকনো ফলটিকে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার জন্যই পরামর্শ দিয়ে থাকা হয়। গর্ভাবস্থায় ডুমুরের শুকনো ফল খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
১. গর্ভাবস্থায় ত্বকের রঞ্জকতার চিকিৎসায় ডুমুরের উপকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে,যদি উচ্চ পরিমাণে সোরালেনস(ডুমুরের মধ্যে থাকে)শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে,তবে সেটি ফটোডার্মাটাইটিস নামক গুরুতর একটি ত্বকজনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
২.মাঝারি পরিমাণে ডুমুর দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে,তবে খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলার ক্ষেত্রে এর একটি বিপরীত প্রভাব রয়েছে।এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৩.অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াগুলি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং যেকোনও সময় এটি দেখা দেতে পারে।এমনকি মায়ের মধ্যে অ্যালার্জির ইতিহাসের অনুপস্থিতিতেও, একাধিকবার গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ডুমুর খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াগুলি দেখা দিতে পারে।
তাজা ডুমুরগুলি খাওয়া এক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ বিকল্প।ডুমুরগুলিকে আবার কিছুটা ফ্রেশ ক্রীম সহযোগে একটি ফলের স্যালাডের সাথে যোগ করা যেতে পারে।
শুকনো ডুমুর বহন করা সহজ।আপনি কিছুটা শুকনো ডুমুরকে নিয়ে আবার অন্যান্য কিছু শুকনো ফলের সাথে আপনার হাতের ব্যাগের মধ্যে অসময়ের কিছু খুচখাচ খাবার হিসেবে মজুত করে রাখতে পারেন।
4-5 টি তাজা ডুমুর একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে নিয়ে তার সাথে 2 কাপ দুধ এবং বড় 3-4 চামচ চিনি অথবা আপনার প্রয়োজন মত যোগ করুন।এবার এর সাথে সামান্য ভ্যানিলার নির্যাস যোগ করুন।সকল উপকরণগুলি একত্রে ব্লেন্ড করে নিন।ডুমুর খাওয়ার একটি চমৎকার উপায় হল ডুমুরের মিল্কশেক পান করা যা আপনার প্রত্যহ দুগ্ধ চাহিদাকেও পূরণ করে।
একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে এক কাপ দইয়ের সাথে অর্ধেক কলা এবং 4-5 টি ডুমুর,বড় এক চামচ মধু এবং এক চিমটে লবণ যোগ করুন।এবার সবকিছু একসাথে ব্লেন্ড করুন এবং আপনি যদি একটি পাতলা ঘনত্ব পেতে চান তবে এর সাথে কিছুটা দুধ যোগ করুন।এটি হল একটি শক্তিশালী,সমৃদ্ধ রেসিপি যেটি আপনার জলখাবারের মেনুতে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
ডুমুর কেবল খাওয়ার জন্যই সুখকর নয়,এটি আবার গর্ভাবস্থার কিছু খারাপ প্রভাবকে প্রতিহত করতেও সহায়তা করতে পারে।তবে মাথায় রাখবেন যে,অতিরিক্ত পরিমাণে কোনওকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে আর ডুমুরগুলিও তার ব্যাতিক্রম নয়।