গর্ভাবস্থা আপনার হরমোনের স্তরে প্রচণ্ড মাত্রায় পরিবর্তন ঘটায় এবং ফলস্বরূপ সেগুলি আপনার সংবেদনশীল ক্রিয়াকলাপ এবং আবেগের উপর প্রভাব ফেলে।আপনার ব্যাসাল মেটাবলিক রেটের পরিবর্তন হওয়ার সাথে এবং দেহের সকল অংশে রক্ত সরবরাহের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে আপনার দেহের-বগল,যোনি,জরায়ু এবং প্রায় সকল জায়গাতেই আপনার ঘর্ম নিঃসারক গ্রন্থিগুলি অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে। যার ফলে আর আপনি নিজেকে হঠাৎ করে পুষ্পের ন্যায় তরতাজা অনুভব করতে পারেন না।গর্ভাবস্থা আবার আপনার নাককে এই ব্যাপারে সন্দিগ্ধু করে তোলে,এবং আপনি কিছুতেই আপনার দেহ থেকে উদ্ভুত দুর্গন্ধকে কাটিয়ে উঠতে পারেন না।গর্ভাবস্থায় দেহের দুর্গন্ধ আপনার মেজাজের উপর প্রভূত প্রভাব ফেলতে পারে এবং যা আপনাকে প্রকৃতই সচেতন করে তোলে এবং বিব্রতবোধ করায়।দুগ্ধবতী অবস্থাতেও আবার হরমোনগুলি ভবগুরের ন্যায় কাজ করে সেই কারণেও তীব্র দুর্গন্ধ নির্গত হয় বিশেষ করে যৌনাঙ্গ এবং বগলের অঞ্চল থেকে।তাই আবারও বলা চলে যে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেহগত দুর্গন্ধ হওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার।
এস্ট্রাডিওল হল এমন এক ধরণের হরমোন যা গর্ভাবস্থায় বৃদ্ধি পায় এবং তার ফলে গন্ধের তীব্রতা অনুভূত হয়।বাইরে থেকে আসা দুর্গন্ধের সাথে মকাবিলা করা সহজ কিন্তু একটা বিশ্রী গন্ধ যেটি আপনার নিজের দেহ থেকেই নির্গত হয় তা আপনাকে অসহ্য করে করে তোলে।এই বিশ্রী গন্ধযুক্ত দুর্গন্ধগুলি হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলিকে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা এগুলিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য এগুলির সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।গর্ভাবস্থায় এই তীব্র শারীরিক দুর্গন্ধের প্রাথমিক কারণগুলি সম্পর্কে জানতে পড়ুন।
শরীরেহরমোনেরমাত্রাগুলিরএকতীব্রপরিবর্তন, বিশেষতএস্ট্রাডিওলেরপরিমাণবেড়েযাওয়ারসাথেসাথেআপনারদেহেতীব্রগন্ধউৎপন্ন হয়।এ ব্যাপারেহরমোনগুলিহলমূলঅপরাধীএবংতীব্রগন্ধেরকারণ।মূলত যে অঞ্চলগুলিতে হরমোনগুলিপ্রভাবিতহয়সেগুলিহলযৌনাঙ্গএবংবগল, সেই কারণেগর্ভাবস্থায়বগলের তলায়দুর্গন্ধহওয়া গর্ভবতীমায়েদেরমধ্যেখুব সাধারণ একটি ঘটনা।
গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত এই তাপ সহ্য-ক্ষমতা কম থাকে।এই সময় আপনার এই অতিরিক্ত ওজন যা আপনি বহন করে চলেন তাও আপনাকে বেশি ঘামিয়ে তোলে এমনকি ঠাণ্ডার দিনগুলিতেও।গর্ভবতী মহিলাদের ঘর্মগ্রন্থিগুলি অতি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে থাকে এবং দেহের দুর্গন্ধকে তীব্র করে তোলে।ঘাম সাধারণত গন্ধহীন হয়ে থাকে,তবে,যখন এটি ত্বকের উপর প্রতিস্থাপিত হয় সেটি ব্যাকটেরিয়ার সমৃদ্ধিলাভের জন্য একটা পরিবেশ তৈরী করে এবং সেটিই গর্ভাবস্থায় দেহের মধ্যেও একটা বাজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গর্ভবতী মহিলারা বিভিন্ন প্রকার অভ্যাসের প্রতি প্রবল সংবেদনশীল হয়ে পড়েন।আপনার ঘ্রাণ শক্তির অনুভূতি উচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি নিজের মধ্যেই হয়ত মাঝেমধ্যে দূরে নিক্ষেপ করার মত এক ঝলক বোকাটে অর্থহীন গন্ধ অনুভব করতে পারেন।এটি হয়ত আপনার চারপাশের লোকেরা লক্ষ্য না করলেও আপনার মধ্যে সম্ভবত সেটি থাকতে পারে।এই পর্যায়ে যেকোনোও জিনিসের প্রতি আপনার সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়াকেই এর জন্য দোষারোপ করুন।
যখন আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন আপনার দেহ স্তন পান করানোর জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।মনে রাখবেন আপনার ছোট্ট সোনাটি তার যথাযথ শ্রবণ এবং দৃষ্টি শক্তির বিকাশের জন্য কিছুটা সময় নেবে এবং ততক্ষণ তাদের কোনও জিনিসকে সনাক্ত করতে সাহায্য করবে তাদের তীব্র ঘ্রাণশক্তির অনুভূতি।আপনার সন্তান আপনাকে চিনতে পারবে আপনার দেহের গন্ধের দ্বারা এবং এই তীব্র গন্ধ আপনার সন্তানকে আপনার আরও কাছে নিয়ে আসবে এই ব্যাপারটিও ভীষণ স্বাভাবিক।আপনার গন্ধযুক্ত বগল আপনার সন্তানকে উৎসাহিত করবে স্তন পানের জন্য তার মাথাটিকে স্বাভাবিকভাবে আপনার স্তনের দিকে ঘুরিয়ে নিতে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা হল গর্ভাবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ,এবং অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারাই তাদের খাদ্য তালিকার সাথে যে সকল খাদ্যগুলিকে অন্তর্ভূক্ত করে থাকেন সেগুলি সাধারণত পুষ্টিকর হয়ে থাকে।কিছু নির্দিষ্ট ধরণের খাদ্যের কারণে দেহস্থ গন্ধের পরিবর্তন হয়ে থাকে।রেড মিট বা পাঠার মাংসে থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড,যার কারণে বেশ কয়েক ঘন্টার জন্য অথবা এমনকি বেশ কিছু দিনের জন্যও একটা নির্দিষ্ট উপায়ে ঘামে গন্ধ হতে থাকে।সামুদ্রিক খাবারগুলি কেবল ঘামের গন্ধেই প্রভাব ফেলে না এটি আবার যোনি স্রাবকেও প্রভাবিত করে।ব্রোকলি, বাঁধাকপি এবং ফুলকপির মতো সবজিগুলিতে সালফার থাকে যা রক্ত প্রবাহ দ্বারা শোষিত হয়।এর ফলে ত্বকের উপরিভাগে ঘাম ফুটে ওঠে যা আবার ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশ্রিত হয়,এবং ফল-স্বরূপ বিশ্রী গন্ধ তৈরী হয়।আপনি গ্রহণ করেন এমন কিছু ওষুধের কারণেও দেহের গন্ধের পরিবর্তন হতে পারে।
আপনার ঘ্রাণ শক্তির তীব্র অনুভূতির কারণে প্রায়শই কেবল আপনি নিজেই আপনার এই শারীরিক দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারেন।অন্যদের থেকে পাওয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হবেন না।তবে,আপনি যদি কোনও অদ্ভুত রঙ বিশিষ্ট অথবা দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব অনুভব করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
এমনকি ব্যাক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির একটি অনবদ্য মান বজায় রাখা এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ করার পরেও আপনি হয়ত দেহ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারেন।এই রকম পরিস্থিতিতে,আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করা সুনিশ্চিত করুন। আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে কিছু ওষুধযুক্ত সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন অথবা আপনি যে সকল ওষুধগুলি সেবন করছেন সেগুলির মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যে,আপনার শরীরের দুর্গন্ধ কখনই আপনার সন্তানের ক্ষতিসাধন করবে না এবং আপনি একাই এমন একজন ব্যক্তি নন যিনি এটি অনুভব করবেন।শরীরের দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে উপরে উল্লিখিত পদ্ধতিগুলি অত্যন্ত নিরাপদ।সুতরাং এগিয়ে চলুন সেগুলিকে প্রয়োগ করার চেষ্টা চালানোর জন্য এবং এ নিয়ে খুব বেশি অস্থির হয়ে উঠবেন না কারণ এগুলির সবগুলিই হল অভিজ্ঞতার এক-একটি অংশ।