গর্ভাবস্থায় পান খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় পান খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

আমাদের দেশ এবং পরিবারগুলির মধ্যে পান খাওয়ার রেওয়াজটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার।শরীরের জন্য পান পাতা তার নিজের উপকারের ভাগটি নিয়ে আসে এবং তার সাথে খিদে বা আহারের রুচির উপরেও তার একটা প্রভাব আছে বলে জানা যায়।গর্ভাবস্থায় আবার কখনও কখনও আপনার মিষ্টি পান খাওয়ার বাসনা হতে পারে এবং সেই স্বাদ আস্বাদনের জন্য আপনি ব্যাকুল হয়েও উঠতে পারেন।কিন্তু এটা কি গর্ভস্থ শিশুর জন্য নিরাপদ কিম্বা এর কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব আছে কি? আসুন তার সন্ধান করা যাক।

গর্ভাবস্থায় পান খাওয়া কি নিরাপদ?

অনেকের ক্ষেত্রেই পান পাতা একটা স্বাস্থ্যকর পছন্দ হয়ে থাকতে পারে, তবে যখন আপনি গর্ভবতী, তখন সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে সেটি গ্রহণ করার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হয়।

সুপুরির সাথে পান পাতা খেলে তা অনেকের স্বাস্থ্যের উপরেই একটা ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি পরিণাম হিসেবে তা ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।পৃথিবীর অনেক অংশের মানুষের, যাদের মধ্যে নিয়মিত পান খাওয়ার একটা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ রয়েছে, এমনকি গর্ভাবস্থাতেও, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাকালীন জটিলতা, জন্মগত ব্যাধি ইত্যাদির মত ঘটনাগুলি উচ্চ মাত্রায় দেখা গেছে।

গর্ভাবস্থায় পান খাওয়ার ব্যাপারটা সাধারণ কেন?

বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলা যারা গর্ভাবস্থায় পান খাওয়া অব্যাহত রাখেন তারা সেটি সাধারণত করে থাকেন তাদের পরিবার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকেপান পাতাগুলি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং কোনও ব্যক্তির ক্ষুধা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে বলে জানা যায়বেশ কিছু জায়গায় আবার বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য স্তন পান করানোর সময় স্তনের ওপর পান পাতাগুলি প্রয়োগ করার রেওয়াজ আছে।

পান পাতার মধ্যে বেশ পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।আর এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই এগুলি কাশি, ডিহাইড্রেশন, প্রদাহ, কন্সটিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথা ব্যথার মত সাধারণ অসুস্থতা ও সমস্যাগুলিতে এবং এ ধরণের অন্যান্য আরও কিছুর ক্ষেত্রে একটি প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে।

গর্ভবতী থাকাকালে খুব বেশি পরিমাণে যদি পান খাওয়া হয়, তার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি

  • নিয়মিত পান সেবনকারীদের ক্ষেত্রে অন্যতম বৃহৎ যে ক্ষতিকারক প্রভাবটি লক্ষ্য করা গেছে তা হল তাদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার একটা প্রবল ঝুঁকি থাকে।এর বেশিরভাগ সময়েই যেটি হয়ে থাকে তা হলওরাল বা মুখে ক্যানাসার, যা কেবল মাকেই নয়, তার গর্ভস্থ বাচ্চার উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে

গর্ভবতী থাকাকালে খুব বেশি পরিমাণে যদি পান খাওয়া হয়, তার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি

  • গর্ভাবস্থায় পান খেলে তা ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠতে পারে, তবে এটা ছাড়াও মুখে ঘা বা আলসার হওয়ার সম্ভাবনাটাও বেশ বেড়ে যায়, যদি সেটি খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়ে থাকে, তা নিরাময় হতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।তাছাড়াও এটি দেহের ভিতরেও পৌঁছে যেতে পারে এবং গ্রাসনালী, স্বরযন্ত্র এবং গলার মত আভ্যন্তরীণ অঙ্গাণুগুলিতে প্রভাব ফেলে যার ফলস্বরূপ মারাত্মক অস্বস্তি গড়ে ওঠে।
  • পানের দোকান থেকে যখন পান কেনা হয়, তখন বেশিরভাগ পান পাতার সাথেই তামাক মেশানো থাকে।তামাক একটি উত্তেজক হিসাবে পরিচিত যা ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায় এবং দেহের শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এটি একদিকে যেমন নেশা বাড়িয়ে তোলে তেমনি আবার অন্যদিকে গর্ভস্থ শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে কারণ এইসকল পরিবর্তনগুলি তার বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • পানের পাতার উপর চুনের প্রলেপ দেওয়ায় তা পান পাতার সকল পুষ্টি পদার্থগুলি বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে, তবে এটি অবশ্যই হৃদ্‌স্পন্দনে প্রভাব ফেলতে পারে এবং বুক ধড়ফড়ানির কারণ হয়ে উঠতে পারে।এর থেকে হওয়া দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজ অন্তর্ভুক্ত।অনেক সময় আবার মানুষও পানের সাথে এই চুন খাওয়ার প্রতি অতিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
  • নিয়মিত মিষ্টি পান খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে যার ফল হিসেবে স্থূলতা দেখা দেয়।

গর্ভাবস্থায় নানারকম খাদ্য বাসনা জেগে ওঠাটা কোনও নতুন জিনিস নয় এবং প্রায় সব মায়েদেরই এই সময় এমন কিছু খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হয় যেগুলি কখনও কখনও অদ্ভুত হতে পারে।তবে এটা জেনে রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের সকল খাদ্য বাসনাগুলি চরিতার্থ করাটাও সবসময়ের জন্য নিরাপদ হয়ে থাকে না এবং সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু দীর্ঘ মেয়াদে তাদের এবং গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।এটি সেবন করার একটি বাসনা, দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটা রেওয়াজ বা অভ্যাস কিম্বা কেবলই একটা নৈমিত্তিক বিকল্পযাই হোক না কেন, গর্ভাবস্থায় এই পান খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা হল আপনার নিজেকে সুস্থ রাখার সাথে সাথে আপনার গর্ভস্থ শিশুর ঠিকমত যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তার স্বাস্থ্যকর বিকাশকে সুনিশ্চিত করার একটি বড় চ্যালেঞ্জ জয় করা