In this Article
- গর্ভাবস্থায় পেটের উপর চুলকানি হওয়াটা কি স্বাভাবিক?
- গর্ভাবস্থায় পেটে চুলকানির কারণগুলি
- পেটের উপর চুলকানিটি কি মারাত্মক হতে পারে?
- কখন ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন?
- গর্ভাবস্থায় পেটের উপরে হওয়া চুলকানির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি
- চুলকানির সময় মুক্তি পাওয়ার পদক্ষেপগুলি
- চুলকানিযুক্ত পেট থেকে স্বস্তি দিতে ওভার দ্য কাউন্টার পণ্যগুলি
গর্ভবস্থার অগ্রগতির সাথে এটি মহিলাদের দেহে নানাবিধ পরিবর্তন নিয়ে আসে।বিভিন্ন পরিবর্তনগুলির মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণময় পরিবর্তনটি হল তার বর্ধিষ্ণু পেট!পেটের মধ্যে শিশু বাম্পটি জোরালোভাবে প্রদর্শিত হওয়াটা মহিলাদের মধ্যে একটা উল্লাসজনক অনুভূতি হয়ে ওঠে,তবে এর পাশাপাশি আপনি আবার আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে পারেন,আর সেটা হল আপনার পেটের উপর চুলকানি।
গর্ভাবস্থায় পেটের উপর চুলকানি হওয়াটা কি স্বাভাবিক?
হ্যাঁ,গর্ভাবস্থায় পেটের উপর চুলকানি হওয়াটা স্বাভাবিক।আপনার গর্ভাবস্থার সাথে আপনি অগ্রসর হওয়ার কারণে আপনার পেটের চামড়াও প্রসারিত হতে থাকে আর সেই কারণেই এটি হয়ে থাকে।এই প্রসারণের কারণে আপনার ত্বকের পৃষ্ঠতলটি শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং সেই আদ্রতা বিহীন ত্বকে চুলকানি দেখা দেয়।আপনার দেহের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তনগুলির কারণে এটি হয়ে থাকে।এছাড়াও আবার আপনি হাতের তালু,পায়ের তলা এবং এমনকি আপনার স্তনের মতও দেহের অন্যান্য অংশে চুলকানি অনুভব করে থাকতে পারেন।চুলকানিটা সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষের দিক করে শুরু হয়ে থাকে।তবে এর পাশাপাশি আবার আপনি সেটি প্রথম ত্রৈমাসিকেও অনুভব করতে পারেন।চুলকানিটা প্রচণ্ড অস্বস্তিকর হতে পারে এবং আপনি যদি সেটি ক্রমশ বেড়ে যাওয়া অনুভব করেন,সেক্ষেত্রে আপনার তৎক্ষণাৎ ডাক্তারি সহায়তা নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় পেটে চুলকানির কারণগুলি
গর্ভাবস্থায় পেটের উপর চুলকানির সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি হলঃ
- হরমোনের পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে পেটের উপর চুলকানি হয়।
- ওজন লাভঃ বর্ধিত জরায়ু পেটের ত্বককে বিস্তৃত করে।আর এই প্রসারিত ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে চুলকাতে থাকে।
পেটের উপর চুলকানিটি কি মারাত্মক হতে পারে?
যদিও চুলকানি হওয়াটি ভীষণভাবে স্বাভাবিক,তবে গর্ভাবস্থায় পেটের উপর চুলকানিযুক্ত র্যাশ হওয়ার কিছু ক্ষেত্রে আবার সেটি একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে,যেমনঃ
1. প্রিউরিটিক আর্টিকেরিয়াল প্যাপুলস অ্যান্ড প্লাকস অফ প্রেগন্যান্সি
PUPPP হল একটি ত্বকজনিত র্যাশ বা ফুসকুড়ি,যা দেখতে আমবাতের অনুরূপ এবং গর্ভবতী মহিলাদের পেটের উপর চুলকানি সৃষ্টি করে।যদিও এটি সেরকম ভয়ংকর কিছু অবস্থা নয়,তবে এটি ভীষণ অস্বস্তিদায়ক হতে পারে।
2. গর্ভাবস্থার প্রুরিগো(প্রচণ্ড চুলকানির রোগ বিশেষ)
এটি দেখতে অনেকটা ছাড়পোকার কামড়ের মত এবং সেটি ছোট ছোট কেটে যাওয়াতে রূপান্তরিত হতে পারে।সমগ্র অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিতে চুলকাতে পারে।এটি সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষের দিকে কিম্বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শুরুর দিকে হতে পারে।
3. ইমপিটিগো হার্পেটিফর্মিস
এই বিরল অবস্থাটি সোরিয়াসিসেরই একটি রূপ,যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের উপর হয়ত প্রভাব ফেলতে পারে।এই অবস্থাটির সাথে ছোট ছোট পূঁজযুক্ত ফুসকুড়ি দেখা দেয়।এই অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা মা এবং তার সন্তানকে খুব কাছ থেকে নিরীক্ষণ করতে হয়।
4. পেমফিগয়েড জেস্টেশয়নিস
এই বিরল চুলকানির অবস্থাটি আমবাতের মত শুরু হয় তবে ধীরে ধীরে তা বড় বড় ফোসকার ন্যায় ফোঁড়াতে রূপান্তরিত হয়।এগুলি গর্ভবতী মহিলাদের তলপেট অঞ্চলে দেখা দিতে শুরু করে তারপর দেহের অন্যান্য অংশেও তা ছড়িয়ে পড়ে।
5. কোলেস্ট্যাসিস
গর্ভাবস্থায় লিভারের সমস্যার কারণে কোলেস্ট্যাসিস হয়ে থাকে এবং এর ফলে গর্ভবতী মহিলা হয়ত তার সারা দেহে চুলকানি অনুভব করতে পারেন।এই অবস্থাটি অনাগত শিশুর জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকারক হতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
কখন ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন?
আপনার অবলম্বে চিকিৎসাগত সহায়তা নেওয়া উচিত,যদিঃ
- আপনি আপনার সারা দেহে চুলকানি অনুভব করলে
- আপনি তীব্র চুলকানি অনুভব করলে এবং তা দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে থাকলে
- চুলকানির কারণ ছাড়া ত্বকে শুষ্কতাবোধ করলে
- আপনার মল–মূত্রের রঙ পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি আপনার মধ্যে বমি বমি ভাব,ক্লান্তি এবং ক্ষুধামান্দ্য লক্ষ্য করলে
- PUPP এর কারণে আপনার মধ্যে তীব্র মাত্রায় র্যাশের প্রকোপ হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলে
গর্ভাবস্থায় পেটের উপরে হওয়া চুলকানির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি
নিম্নলিখিত কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার গর্ভাবস্থায় চুলকানির জন্য সহায়ক প্রমাণিত হতে পারেঃ
1. চুলকানির জন্য ঘৃত কুমারী
আক্রান্ত এলাকার উপর অ্যালোভেরা বা ঘৃত কুমারীর জেল প্রয়োগ করুন।এই গাছটি তার নিরাময় বৈশিষ্ট্য এবং শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বককে প্রশমিত করার জন্য প্রসিদ্ধ।
2. ওটমিলের স্নান
স্নানের জলের মধ্যে ওটমিল বা জইচূর্ণ ভিজিয়ে রেখে সেই জলে স্নান করুন।ওটমিলের প্রশমনকারী বৈশিষ্ট্য চুলকানি থেকে স্বস্তি আনে।
3. বেকিং সোডা স্নান
জল এবং বেকিং সোডা দিয়ে প্রস্তুত একটা পেস্ট নিয়ে প্রভাবিত এলাকার উপর প্রলেপণ করুন এবং সেটিকে শুকোতে দিন।লালচে ভাব এবং চুলকানি থেকে স্বস্তি আনার ক্ষেত্রে বেকিং সোডা বেশ কার্যকর।
4. ঠাণ্ডা সংকোচন
প্রভাবিত এলাকার উপর ঠাণ্ডা সংকোচন প্রয়োগের দ্বারা ত্বক প্রদাহ এবং চুলকানি মুক্ত হয়ে উঠতে পারে।
5. জুনিপার বেরির তেল
যদিও জুনিপার বেরি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিণ,তবে সেটি থেকে প্রস্তুত তেল চুলকানিযুক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে যাদুমন্ত্রের মত কাজ করে।
6. লেবুর রস
লেবুর রসকে যখন জলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ত্বকের পৃষ্ঠতলের উপর ঘষা হয়,তা ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি নিয়ে আসে।
7. ছোলার ব্যাসনের পেস্ট
জলের সাথে ছোলার ব্যাসন মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে তা আক্রান্ত এলাকার উপর প্রয়োগ করলে,সেটি আপনার ত্বককে মসৃণ এবং নমনীয় করে তোলে এবং শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত ত্বক থেকে মুক্তি এনে দেয়।
8. ড্যান্ডেলিয়ন মূল
ড্যান্ডেলিয়ন মূলগুলিকে ফুটিয়ে নিয়ে সেই ক্কাথটিকে ব্যবহার করলে তা কোলেস্ট্যাসিসের কারণে হয়ে থাকা চুলকানি থেকে স্বস্তি আনতে সহায়তা করে(এই ক্কাথটি ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নেবেন)।
9. ক্যালামাইন লোশন
চুলকানি দূর করতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করুন।
10. নারকেল তেল
আপনার বর্ধিত পেটটির উপর অতিরিক্ত ভার্জিন নারকেল তেলের প্রলেপ দিন।নারকেল তেল হল শুষ্ক ত্বকের জন্য একটি দুর্দান্ত ময়েশ্চেরাইজার।
চুলকানির সময় মুক্তি পাওয়ার পদক্ষেপগুলি
চুলকানি থেকে আরাম পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
- আপনার দেহকে হাইড্রেট রাখতে পর্যাপ্ত জল পান করুন,কারণ জল যোজিত ত্বকে চুলকানি কম হয়ে থাকে।
- এয়ার কন্ডিশনারের খুব বেশি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন,কারণ AC এর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তা ত্বককে শুষ্ক করে দেয়।
- মাঝে মধ্যেই আপনার ত্বককে আদ্র করে তুলুন।
- দীর্ঘ সময় ধরে উষ্ণ আবহাওয়ায় থাকা থেকে বিরত থাকুন,যেহেতু উষ্ণ আবহাওয়া হল ত্বকের শুষ্কতার এবং চুলকানির কারণ।
- আঁটসাঁট জামা কাপড় ত্বকের সাথে ঘষা লাগার কারণে তা ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে এবং চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে তাই চেষ্টা করুন সর্বদা ঢিলেঢালা আরামদায়ক জামাকাপড় পরতে।
- কম ক্ষারযুক্ত এবং মৃদু গন্ধযুক্ত হালকা সাবান ব্যবহার করুন,কারণ তীব্র গন্ধের সাবানগুলির ত্বককে শুষ্ক করে দেওয়ার প্রবণতা থাকে।
- গরম জলে স্নান করবেন না কারণ গরম জলের কারণে ত্বক তার স্বাভাবিক আদ্রতা হারায়।
- আপনার লবণ গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করুন।
চুলকানিযুক্ত পেট থেকে স্বস্তি দিতে ওভার দ্য কাউন্টার পণ্যগুলি
গর্ভাবস্থায় পেটে চুলকানি হওয়া বহুল প্রসারিত একটি ঘটনা এবং এই চুলকানি থেকে মুক্তি আনতে সহায়্তার জন্য বহু ওভার দ্য কাউন্টার পণ্যগুলি উপলভ্য,তার মধ্যে রয়েছেঃ
1. ভিটামিন E লোশন
পরিমিত মাপে ভিটামিন E লোশন অথবা ক্যাপসুল ব্যবহার করা গর্ভাবস্থায় ত্বকের চুলকানির চিকিৎসায় ভীষণ কার্যকর।
2. ক্যালামাইন লোশন
সারা দিনে বেশ কয়েক বার ক্যালামাইন লোশনের প্রলেপন চুলকানি থেকে স্বস্তি আনে।
3. তেল জাতীয় ময়েশ্চারাইজার
তেল জাতীয় ময়েশ্চারাইজারগুলি যেকোনও ওষুধের দোকানেই উপলভ্য।চুলকানির চিকিৎসায় এগুলি ভীষণ কার্যকর।
পেটের উপর চুলকানির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই,গর্ভাবস্থায় সেরকম কোনও গুরুতর জটিলতার সৃষ্টি করে না।চুলকানির চিকিৎসা করতে আপনি এর উপযুক্ত যেকোনও ঘরোয়া প্রতিকারকে বেছে নিতে পারেন অথবা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলিও ব্যবহার করতে পারেন।যাইহোক,তবে যাই করুন না কেন সব ক্ষেত্রেই আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নেওয়ারই পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হচ্ছে।এমনকি আপনি যদি গর্ভাবস্থায় চুলকনির ব্যাপারে অন্য কোনওরকম অস্বাভাবিকতাও লক্ষ্য করে থাকেন সেক্ষত্রেও অনতিবিলম্বে আপনার ডাক্তারি সহায়তা গ্রহণ করা উচিত।