একটা স্বাস্থ্যকর ডায়েট একজন মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে মূল ভূমিকা পালন করে।আর একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।আপনি যদি একটি শিশুর প্রত্যাশা করে থাকেন,তবে আপনি জানেন যে আমরা কি বিষয়ে কথা বলছি।গর্ভাবস্থায় আপনি কি খাচ্ছেন তার উপর যত্নশীল হওয়া আপনার কর্তব্য কারণ আপনার ডায়েট আপনার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে।
গর্ভাবস্থায় আপনাকে ফল,সবজি,ড্রাই ফ্রুট,বাদাম এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিকে খাওয়ার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু নিশ্চই আপনাকে পরামর্শ দিয়ে থাকবেন এবং কোনও সন্দেহ নেই আপনি আবশ্যিকভাবেই সকল স্বাস্থ্যকর খাবারগুলিকেই গ্রহণ করবেন!কিন্তু তাই বলে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সবকিছুই নিরাপদ নয়।আজকে আমরা একটি নির্দিষ্ট ফল সম্পর্কেই কথা বলব–পেয়ারা…এবং দেখা যাক গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটের সাথে এটিকে আবশ্যিকভাবেই সংযুক্ত করা উচিত কি উচিত নয়।পেয়ারা,তা সে কাঁচা হোক,সম্পূর্ণ পাকা,শক্ত অথবা নরম–সবগুলিই স্বাদে অতুলনীয়।বহু মানুষ বিশ্বাস করেন যে পেয়ারা খেলে তা একজন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।তবে এই তথ্যের কোনও চিকিৎসাগত প্রমাণ নেই।যদি আপনি গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেতে চান তবে জেনে নিন সেগুলি খাওয়া নিরাপদ কি না।
পেয়ারা খুবই পুষ্টিকর এবং বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া খুবই উপকারী হতে পারে।পেয়ারা নানাবিধ ভিটামিন,খনিজ এবং ফলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।পেয়ারার পুষ্টি তথ্যগুলি সম্পর্কে জনতে পড়ুনঃ
পেয়ারা বিভিন্ন ভিটামিন যেমন ভিটামিন C, A, B2 এবং E তে সমৃদ্ধ। পেয়ারাতে কমলা এবং পাতি লেবুর থেকেও বেশি ভিটামিন A এবং ভিটামিন C থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়।
ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধির জন্য অ্যাসকরবিক এবং ফলিক অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পেয়ারায় উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড আবার সংবহন তন্ত্রেও উপকার করে এবং শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশেও সাহায্য করে।
লাইকোপেন নামক এক প্রকার রঞ্জকের উপস্থিতির কারণে পেয়ারার মধ্যস্থ শাঁসের রঙটি গোলাপী হয়ে থাকে।আর মুখের চারপাশে ক্যান্সার বৃদ্ধির ঝুঁকি কমিয়ে তোলার জন্য লাইকোপেন পরিচিত।
পেয়ারা আবার পটাসিয়াম,ক্যালসিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,কপার এবং ফসফরাসের মত অন্যান্য পুষ্টিরও একটি ভাল উৎস।এই খনিজগুলি হাড় এবং তরুণাস্থির বিকাশের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তা ছাড়াও,এই খনিজগুলি দেহে শক্তিলাভে সহায়তার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গর্ভবস্থায় পেয়ারা খেলে তা আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়ে উঠতে পারে।ভোরবেলায় পেয়ারা খাওয়া মর্নিং সিকনেসের জন্য একটা দুর্দান্ত প্রতিকার।সেটির উচ্চ ফাইবার এবং জলীয় উপাদানের দরুণ,পেয়ারা গর্ভাবস্থার ডায়েটে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।গর্ভবস্থায় পেয়ারা ভক্ষণ আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং গর্ভবতী মহিলাদের উপর প্রভাব ফেলা সাধারণ একটি শর্ত–গর্ভাবস্থাকালীন ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
এই সকল উপকারিতাগুলি ছাড়াও,পেয়ারা আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলিও সরবরাহ করে থাকে।এই সুস্বাদু ফলটি কেন একটি বিস্ময়কর ফল হয়ে উঠেছে তা জানতে নিবন্ধটি একবার চোখ বুলিয়ে নিন!
উপরে উল্লিখিত সুবিধাগুলির পাশাপাশি,পেয়ারা খাওয়া আবার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে,শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে এবং দেহে স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করতে পারে।ভীষণ সত্য ঘটনাটি হল পেয়ারায় ভিটামিন C, লাইকোপিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি সমৃদ্ধ থাকে যা ত্বক এবং চুলের জন্য পেয়ারা খাওয়াকে অত্যন্ত অনুকূল করে তোলে।
যদিও পেয়ারা স্বাদে অতুলনীয় এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে থাকে,তবে এটি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জটিলতা দেখা দিতে পারেঃ
বেশিরভাগ ফলগুলিকে যখন কাঁচা এবং তাদের প্রকৃত রূপে খাওয়া হয়ে থাকে সেগুলি বেশি স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে।পেয়ারাও হল এই ধরনের একটি ফল।তবে এই ফলটি খাওয়ার আরও অন্যান্য অনেক উপায় আছে।আপনি পেয়ারার রস বানিয়ে সেটি পান করতে পারেন।এছাড়াও আবার পেয়ারাকে খাওয়া যেতে পারে সেটির জেলি,জ্যাম এবং ফ্রুট স্যালাড আকারে।তবে এটি সুপারিশ করা হয় যে,জেলি,জ্যাম আকারে সংরক্ষণ করে রাখা পেয়ারাগুলিকে আপনি আপনার গর্ভাবস্থায় পারতপক্ষে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
তবে আপনাকে পেয়ারার রস অথবা সম্পূর্ণ গোটা পেয়ারা কামড়ে খাওয়ার মধ্যে কোনও বাছবিচার করতে হবে না, কারণ উভয়ই গর্ভাবস্থায় খাওয়ার পক্ষে নিরাপদ।
পেয়ারার রস পান করলে তা আপনার ত্বককে হাইড্রেট রাখে এবং আপনার চুলকে মজবুত করে তোলে।আপনি পেয়ারার রস খেতে চান তবে সেটি বাড়িতেই প্রস্তুত করুন।পাকা পেয়ারার খোসা ছাড়িয়ে তার মধ্যস্থ বীজগুলিকে সরিয়ে দিন,এরপর সেটিকে ব্লেন্ড করুন।পেয়ারার রস হল একটি চমৎকার ক্রান্তীয় পানীয় এবং একই সাথে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদুও।
আপনি যদি একটি আস্ত পেয়ারা খেতে চান,আপনি অবশ্যই কোনওরকম ক্ষতচিহ্ন ছাড়াই একটি পাকা পেয়ারা তুলে নিন,এবার এটিকে ভালভাবে ধুয়ে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন এবং তারপর সেগুলি খান।পাকা পেয়ারায় একটি অনন্য স্বাদ আছে।এছাড়াও আপনি আবার এক বাটি ফলের সাথে পেয়ারা যোগ করে সেটিকে ফ্রুট স্যালাডের একটি অংশ হিসেবে উপভোগ করতে পারেন।
বহু মানুষ কাঁচা পেয়ারাই খেতে ভালবাসেন,এবং একটি কাঁচা পেয়ারা খাওয়ার ক্ষেত্রে ভুল কিছুই নেই।কাঁচা পেয়ারা খাওয়াও সমভাবেই পুষ্টিকর এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সরবরাহ করে যদি সেটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয়ে থাকে।তবে গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেয়ারা খাওয়ার সুপারিশ করা হয় না।কাঁচা পেয়ারার তুলনায় পাকাগুলিতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন C থাকার জন্য গর্ভাবস্থায় সাধারণত পাকা পেয়ারা খাওয়ারই সুপারিশ করা হয়ে থাকে।আপনার যদি কোনও দাঁতের সমস্যা থেকে থাকে তবে পুনরায় আপনার কাঁচা পেয়ারাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত কারণ এগুলি খুব শক্ত এবং কাঁচা থাকার কারণে সেগুলিতে কামড় দেওয়ার সময় তীব্র দাঁত ব্যথার শিকার হতে পারেন।তাই একটি স্বাস্থ্যকর পছন্দ গড়ে তুলতে কাঁচার বদলে পাকা পেয়ারাকেই বেছে নিন।
পেয়ারা ভীষণ পুষ্টিকর এবং গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।আপনি পাকা পেয়ারা খেতে অথবা পেয়ারার রস পান করতে পারেন।শুধুমাত্র পেয়ারাগুলিকে খাওয়ার আগে যাবতীয় প্রয়োজনীয় সাবধানতাগুলি গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন যাতে এই রসাল ফলটি থেকে আপনার দেহ তার সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি শোষণে সমর্থ হয়।তবে গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে এই ফলটিকে সংযুক্ত করার আগে এব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নেবেন।এছাড়াও তাঁর থেকে জেনে নেবেন এক দিনে অথবা এক সপ্তাহে কটা পেয়ারা আপনার খাওয়া উচিত।আপনার ডাক্তারবাবু অথবা পুষ্টিবিদ আপনার শরীরের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী এটি আপনার সঠিক কত পরিমাণে খাওয়া উচিত সেটি নির্ধারণ করতে সমর্থ হবেন।স্বাস্থ্যকর খাবার খান আর একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!