গর্ভাবস্থায় সুস্বাদু স্ন্যাক্স এবং মুখরোচক জলখাবার খাওয়ার লালসা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং নানা ধরণের বিস্কুটগুলি আপনার মুদিখানার তালিকায় প্রায়ই সেই জায়গাগুলি দখল করে নেয়।সাধারণভাবে বলতে গেলে, ক্ষুধা-যন্ত্রণাগুলি সন্তুষ্টিকরণের সময় এলে, সে ক্ষেত্রে বিস্কুটগুলি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে।তবে তাই বলে সব ধরণের বিস্কুটই স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়, যখন আপনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন, কারণ আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য সেগুলি খাওয়ার জন্য ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আপনার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকার কারণহেতু, সেই বিস্কুটগুলিতে কামড় দেওয়ার পূর্বে তার তথ্যগুলি যাচাই করে নেওয়া সবচেয়ে ভাল।গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য আপনার পক্ষে কোন বিস্কুটগুলি ভাল এবং কোনগুলি খারাপ তার একটি মেন্টাল চেকলিস্টও আপনি তৈরী করে নিতে পারেন।
বিস্কুটের গুণমান এবং তার উপাদানগুলি আপনার খাওয়ার পক্ষে নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য, সেগুলি কেনার সময় প্রতিবারই আপনাকে সেগুলি চেক করে নিতে হবে, প্রয়োজনে দু’বার করেও চেক করতে হতে পারে।আপনার কাছে বিষয়গুলিকে সহজ করার জন্য এখানে কয়েক ধরণের উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনার সন্তানের এবং তার সাথে আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও ভরসাযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভবতী মহিলারা লেবু অথবা আদার নির্যাসের সুগন্ধ যুক্ত বিস্কুটের অতুলনীয় স্বাদ গ্রহণ করতে খুবই পছন্দ করেন।এই স্বাদগুলি মর্নিং সিকনেস এবং বমি বমি ভাবের মত গর্ভাবস্থাকালীন উপসর্গগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।যখন সংযমের সাথে খাওয়া হয়, তখন এই সকল বিস্কুটগুলি বেশ সহায়ক প্রমাণিত হতে পারে।
যে সকল বিস্কুটগুলি সম্পূর্ণ গম অথবা সম্পূর্ণ দানা শস্য দ্বারা প্রস্তুত হয়ে থাকে, সেগুলি গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য বেশ সহায়ক হয়ে উঠতে পারে সেগুলি মধ্যস্থ ডায়াটরি ফাইবার উপাদানের উপস্থিতির কারণে।বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারাই কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভুগে থাকেন।ডায়জেস্টিভ বিস্কুটগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্ত্রের আন্দোলন সম্পর্কিত সমস্যাগুলি মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।আবার সেগুলিকেও খাওয়া উচিত সর্বদা সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে। 3.পুষ্টিকর বিস্কুট ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত পরিপূরক পুষ্টিকর উপাদানযুক্ত বিস্কুটগুলি ডায়েটরি অপ্রতুলতাগুলির মোকা্বিলা করার জন্য দরকারী।গর্ভাবস্থায় প্রোটিন বিস্কুটগুলি আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর খাদ্যগত চাহিদাগুলি মেটাতেও সহায়তা করতে পারে।
এক্ষেত্রে এমন কয়েক প্রকারের বিস্কুট আছে যেগুলিকে গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত যেহেতু সেগুলি স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে ক্রমশ বাড়িয়ে তুলতে পারে।সেগুলি সম্পর্কে আরও জানতে হলে পড়তে থাকুনঃ
যদিও চিনি সমৃদ্ধ মিষ্টি এবং ক্রীম বিস্কুটগুলি অতি মাত্রায় সুস্বাদু হয়ে থাকে, সেগুলিতে উচ্চ পরিমাণে চিনি অথবা ক্রীম থাকে, যা গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলাই উচিত।এই বিস্কুটগুলি শুধু দ্রুত এবং অবাঞ্ছিত ওজন বৃদ্ধির কারণই হয়ে উঠবে না, আপনি কিন্তু আবার এই সকল বর্ধিত ওজন আপনার সন্তান প্রসবের পরেও হ্রাস করতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন।এই সময় যদি আপনি খুব বেশি মিষ্টি খেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আবার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার একটা সম্ভাবনাও থেকে থাকে।আপনি যদি গ্লুটেন অ্যালার্জিতে ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে বিস্কুটের প্যাকেটের গায়ে লেবেলে গ্লুটেন ফ্রী লেখা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরী।বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত বিস্কুটগুলিতে প্রায়শই উচ্চ পরিমাণে গ্লুটেন থাকে যা আপনার দেহে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুকেও প্রভাবিত করতে পারে।
গর্ভদশায় পেটে গ্যাস হওয়ার বা পেট ফেঁপে যাওয়ার অন্যতম একটি সাধারণ কারণ হল চানা বা ছোলা (ছোলা গুঁড়ো) খাওয়া।সুতরাং সেগুলি যদি বিস্কুট রূপেও আসে সেগুলিকেও আপনার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত।ছোলার আটা আবার গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে গ্যাস, অম্বল এবং হৃদয় জ্বলন সৃষ্টি করার জন্যও সুপরিচিত, অতএব এই ধরণের বিস্কুটগুলি আপনার গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলাই সর্বোত্তম।
অন্য সকল খাদ্য এবং জলখাবারের মতই বিস্কুটের ক্ষেত্রেও আপনার সেগুলিকে সংযমের সাথে সেবন করা নিশ্চিত করা উচিত।যে বিস্কুটগুলি আপনার পক্ষে নিরাপদ সেগুলিও দিনে কতগুলি খাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে চেক করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।যাইহোক, তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতির অধীনে এবং আপনার যদি কোনও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি দিনে 2-3 টি(কিম্বা তার কম) বিস্কুট সেবন করতে পারেন যদি সেটি খাওয়ার মত আপনার মিষ্টি দন্তপাটি থাকে।
সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যেকোনও বিস্কুটের প্যাকেট কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই সেই বিস্কুটের প্যাকেটের গায়ে লেখা তার উপকরণগুলির তালিকাটিকে একবার ভালো করে দেখে নিতে হবে।আর আপনার যদি ইতিমধ্যেই মুদিখানা থেকে কেনা সকল জিনিসের উপরেই মুদ্রিত লেবেলটি চেক করে নেওয়ার অভ্যাস থাকে তবে তা গর্ভাবস্থাকালে বেশ ভালভাবে আপনার উপকারে আসবে। বিস্কুটগুলির প্রতিটি প্যাকেটের পিছনে উল্লিখিত উপাদানের পরিমাণ অনুসারে তালিকাটি সেই বিস্কুট তৈরীতে ব্যবহৃত উপাদানের শতকরা অংশটি উল্লেখ করে।যদি গমের আটা, কৃত্রিম চিনি বা হাইড্রোজেনেটেড তেলের মত উপাদানগুলি তালিকার একদম শীর্ষে উল্লিখিত থাকে, সেক্ষেত্রে সেটি তৎক্ষণাৎ সচেতন হয়ে ওঠার অ্যালার্ম বেল হিসেবে মনের অভ্যন্তরে বেজে ওঠা উচিত। হাইড্রোজেনেটেড তেলগুলি কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত এবং এগুলি আবার ট্রান্স ফ্যাটগুলির সাথে যুক্ত হওয়ায় কার্ডিওভাসক্যুলার ব্যাধির কারণ হিসেবে পরিচিত।যেকোনও জিনিস কেনা বা ব্যবহার করার আগে তার লেবেলটি একবার পড়ে নেওয়া একটা ভাল অভ্যাস এবং বিস্কুটটি তৈরী করতে যে সকল উপাদান বা উপকরণগুলি তাতে ব্যবহার করা হয়েছে তার একটি স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট ধারণা আমরা সেটি থেকে পেতে পারি। আপনি যদি এখনও বিস্কুটের প্রতি তীব্র আসক্তি প্রবণ হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি এই রেসিপিটি বানানোর চেষ্টা করতে পারেন এবং শুধুই নিজের জন্য একটি ব্যাচ তৈরী করুন।নিজের বিস্কুট নিজেই তৈরী করে নেওয়া আপনার অন্ত্রের ভিতর প্রবেশ করা উপাদানগুলি নিয়ন্ত্রণ করার একটা দারুণ উপায় এবং তার সাথে আবার এটি আপনার সেই উপকরণ বা উপাদানগুলিকে সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করার বিষয়টিও নিশ্চিত করে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিস্কুটের রেসিপি
উপকরণ ·
প্রণালী
মনে রাখবেন যে, গর্ভাবস্থা হল একটি সূক্ষ্ম পর্যায় আর সেই অনুযায়ী বুদ্ধিমানের মত আপনার খাদ্য পছন্দ করলে তা আপনার নিজেকে নিরাপদ রাখা এবং তার সাথে আবার একটি স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিস্কুটগুলি আপনার ক্ষুধা যন্ত্রণাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে যদি সেগুলি যথার্তভাবে বাস্তবসম্মত রূপে গ্রহণ করা হয় এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আবার সেগুলি আপনার খাদ্যগত চাহিদাগুলি পূরণেও সহায়তা করে।