গর্ভাবস্থায় যোনিপথের পরিবর্তনগুলি

গর্ভাবস্থায় যোনিপথের পরিবর্তনগুলি

গর্ভাবস্থা মহিলাদের দেহে অসংখ্য পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি জানবেন আমরা কি বিষয়ে কথা বলছি।এই সময় আপনার দেহ অবশ্যম্ভাবীরূপে অনেকগুলি হরমোনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।আপনি নিশ্চই ইতিমধ্যে আপনার দেহে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন,যেমন ওজন বৃদ্ধি,স্তনের নমনীয়তা,উজ্জ্বল চুল এবং ত্বক ইত্যাদি।কিন্তু এক্ষেত্রে আরও এমন অনেকগুলি পরিবর্তন আছে যেগুলি গর্ভাবস্থায় আপনার মধ্যে হয়ে চলে যা আপনি হয়ত তখনও বুঝতে পারেন না।

যোনির পরিবর্তনগুলি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বুঝতে পারাটা বেশ কঠিণ।বস্তুত প্রথম ত্রৈমাসিকে এটির কোনও পরিবর্তন হবে না কারণ পরিবর্তনের সাপেক্ষে এই সময়টি হল বেশ তাড়াতাড়ি।তবে আপনি বেশ কিছু বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন আপনার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে,হরমোনের পরিবর্তনগুলির ফল হিসেবে আপনার স্ত্রী অংশগুলি এবং এমনকি আপনার বাহ্যিক চেহারাও পরিবর্তিত হবে।দেহে হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনগুলির কারণে আবার দেহে ভেরিকোজ শিরাগুলি দেখা দিতে পারে,যা মোটামুটি প্রায় দশ শতাংশ গর্ভবতী মহিলার উপর প্রভাব ফেলে।এই শিরাগুলি প্রসবের মোটামুটি ছয় সপ্তাহ আগে উধাও হয়ে যায়,সুতরাং আপনার এ ব্যাপারে ভয়ের প্রয়োজন নেই।গর্ভাবস্থা আপনার যোনি অঞ্চলে আর কি কি পরিবর্তনগুলি নিয়ে আসে তা জানতে পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় আপনার যোনিতে যে সকল পরিবর্তনগুলি হতে পারে

গর্ভাবস্থায় কোমড়ের বেল্টের নিচের অংশে বহুবিধ পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে ঘটে যায়।গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হওয়া কিছু যোনিগত পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলঃ

১. আপনার যোনির pH মাত্রার পরিবর্তন হবে

আপনার দেহের যে অংশগুলি প্রসবের সাথে সম্পর্কিত গর্ভাবস্থায় সেই সব অঞ্চলে আপনার রক্তপ্রবাহ আরও বেড়ে যাবে।এগুলির মধ্যে আপনার জরায়ু এবং যোনিও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।বর্ধিত রক্ত ​​সরবরাহ সেখানকার রাসায়নিকগুলির pH ভারসাম্যকে বদলে দেবে, ফলস্বরূপ একটি ঘন আঠালো চ্যাটচ্যাটে গন্ধ নির্গত হবে।হ্যাঁ এই সময় আপনার যোনির গন্ধ কিছুটা পৃথক হবে এবং আপনার অতিরিক্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের কারণে আপনি সেটি অনুভব করতে সক্ষম হবেন।যাইহোক,তবে যদি গন্ধটি মাত্রাধিক বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে উঠতে লক্ষ্য করেন তবে সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন কারণ এটি সংক্রমণের একটি লক্ষণ হতে পারে।

২. আপনার যোনির স্বাদ ভিন্ন হবে

আপনার যোনির স্বাদের পরিবর্তনটি অলক্ষ্যেই থেকে যাবে যদি না আপনার সঙ্গীটি আপনাকে এ ব্যাপারে অবগত করিয়ে থাকেন।স্বাদের এই পরিবর্তনের কারণ হল আপনার যোনি অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়া,যা যৌনাঙ্গ অঞ্চলের রাসায়নিকের ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটায়।গর্ভাবস্থায় এর স্বাদ আরও নোনতা এবং ধাতব হয়ে উঠবে।

৩. আপনার যোনির স্রাব আরও বেড়ে যাবে

অধিকাংশ মহিলারাই মনে করে থাকেন যে গর্ভাবস্থায় যোনি স্রাব কেবলমাত্র তার প্রসবের সময় এগিয়ে আসার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে,কিন্তু এটি সত্যি নয়।গর্ভাবস্থা একজন মহিলার দেহের হরমোনের বহু পরিবর্তনের দ্বারা চিহ্নিত হয়,যার পরিণামস্বরূপ গর্ভাবস্থায় লেবিয়া বা যোনির ওষ্ঠসদৃশ অংশের পরিবর্তনগুলি সংঘটিত হয়ে থাকে।আপনার যোনির প্রাচীরগুলি লিউকোরিয়া নামক একটি দুধেল সাদা স্রাব উৎপাদন করার জন্য উদ্দীপ্ত হবে,যা আপনার স্ত্রী অংশগুলিকে যে কোনও সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখবে।সুতরাং যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি স্রাব নির্গত হয় সেক্ষেত্রে ভীত হবেন না।

৪. আপনি মূত্রনালী সংক্রমণের শিকার হতে পারেন

গর্ভাবস্থায় আপনি মূত্রনালীর সংক্রমণের(UTI) ঝুঁকির সম্ভাবনায় থাকতে পারেন। আপনার গর্ভাবস্থা ক্রমশ বিকাশ পেতে থাকার কারণে আপনার বর্ধিত জরায়ুটি আপনার মূত্রথলির উপর ভাল মাত্রায় চাপ প্রয়োগ করবে,যা মূত্রাশয় থেকে সম্পূর্ণ প্রস্রাব নিঃসরণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করবে।এটি আপনার মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

৫. আপনার যোনি মারাত্মক সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে

গর্ভাবস্থায় ভালভা বা যোনিদ্বারে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে এটিকে স্ফীত এবং সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।

৬. আপনার নিচের দিকে ভেরিকোস শিরাগুলি দেখা দিতে পারে

যোনি অঞ্চলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হয়ে থাকা অপর আরেকটি পরিবর্তন হল ভেরকোস শিরাগুলির উপস্থিতি।শিরাগুলির মধ্য দিয়ে উচ্চ পরিমাণে ধীরে ধীরে রক্ত প্রবাহিত হওয়ায় শিরার প্রাচীরগুলিতে চাপ পড়ে।অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের মধ্যে ভেরিকস শিরাগুলি দেখা যাওয়ার এটিই হল কারণ।

৭. আপনার যোনিতে ঈস্ট সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে

ঈস্ট সংক্রমণ মহিলাদের মধ্যে খুবই সধারণ তা তারা গর্ভবতী হন বা না হন উভয় ক্ষেত্রেই।মোটামুটি প্রায় 75%  মহিলারাই ঈস্ট সংক্রমণে প্রভাবিত হয়ে থাকেন। যাইহোক,তবে গর্ভবতী মহিলারাই ঈস্ট সংক্রমণের প্রতি বেশি ঝুঁকিবহুল হয়ে থাকেন তাদের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং দেহের pH মাত্রার পরিবর্তন হওয়ার কারণে।

৮. আপনার যোনির বর্ণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে

সাধারণত যনির বর্ণ গলাপি হয়ে থাকে তবে গর্ভাবস্থায় সেই বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।সেখানে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এই পরিবর্তন হতে পারে।এটি আবার চাদউইকের লক্ষণ হিসেবেও পরিচিত।পিগমেন্টেশনকে প্রভাবিত করা হরমোনগুলি গর্ভাবস্থায় আপনার লেবিয়া বা যোনির ওষ্ঠসদৃশ অংশ এবং ভালভা বা যোনিদ্বারের বর্ণ ঘন নীলচেতে রুপান্তরিত করে তুলতে পারে।এই পরিবর্তনটি গর্ভাবস্থার প্রথম চার সপ্তাহের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে যা আবার গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও চিহ্নিত হতে পারে।তবে এ ব্যাপারে ভয় পাবার মত কিছু নেই।নীলচে অথবা বেগুনী রঙের আভাটি আপনার ছোট্ট সোনাটিকে জন্মদান করর পরেই উধাও হয়ে যাবে।

৯. আপনি হয়ত আরও বেশি অন্তর্বধিত লোম লক্ষ্য করতে পারেন

রক্ত প্রবাহে প্রচুর পরিমাণে ইস্ট্রোজেনের উপস্থিতির ফলে গুপ্ত লোমগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়,যা পরবর্তিতে লোমকূপের ছিদ্রগুলির মুখ বন্ধ করে দেয় এবং পরিণাম হিসেবে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে।

১০. আপনার যোনিতে চুলকানিবোধ হতে পারে

আজ্ঞে,আপনি যোনির নিম্নাঞ্চলে চুলকানি বোধ করতে পারেন।যোনি স্রাব বৃদ্ধি,pH মাত্রার পরিবর্তন এবং আরও অন্যান্য পরিবর্তনগুলির কারণে আপনি হয়ত অস্বস্তিবোধ এবং সেখানে চুলকানি অনুভব করতে পারেন।ঐ স্থানে চুলকানি মহিলাদের গর্ভাবস্থার সাধারণ একটি উপসর্গ এবং যেকোনও সময় সেটি হতে পারে কিন্তু আপনার সহ্যের সীমা ছাড়িয়েও যদি সেটি অব্যাহত থেকে যায় তবে দেরী না করা আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন।

একটি মহিলার যোনি তার গর্ভাবস্থার যাত্রাপথে একটি বৃহৎ ভূমিকা গ্রহণ করে। গর্ভাবস্থায় আপনার যোনিতে বেশ কিছু পরিবর্তন হওয়া বাধ্য-সেগুলি অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে তবে সেগুলি সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত।এর কোনও পরিবর্তনই দীর্ঘ মেয়াদে আপনার সাথে থাকবে না এবং আপনার গর্ভাবস্থাকেও প্রভাবিত করবে না।উপরন্তু আপনার সন্তান পৃথিবীতে আসার পর আপনার স্ত্রী অংশগুলি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।তবে এই পরিবর্তনগুলি আপনার জীবনের প্রতিদিনের পথে যদি আপনার সাথে চলে আসে,সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।