গর্ভাবস্থায় লাফানো- এটি কি ক্ষতিকারক?

গর্ভাবস্থায় লাফানো- এটি কি ক্ষতিকারক?

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা একজন মহিলাকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।আজকাল অনেক গর্ভবতী মহিলাই আরও বেশি যোগা এবং যোগব্যায়াম অনুশীলনে যোগদান করছেন তাদের একটা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য।গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে এটা বোঝাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে যখন আপনি গর্ভবতী, সঠিক ধরণের ব্যায়ামগুলি সঠিক ভাবেই আপনার করা উচিত।কখনও কখনও কঠোর ব্যায়ামগুলি পেটে আঘাত হানতে পারে।আপনি হয়ত লাফাতে চাইতে পারেন, কিন্তু সেটি করে ওঠার আগে আপনি অবশ্যই একথা ভাববেন যে গর্ভাবস্থায় লাফানোটা ঠিক হবে নাকি না!ব্যায়াম হিসেবে লাফানোটা উপকারী কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তা সেরা বিকল্প নাও হতে পারে।এতে ভাবী মায়েদের স্বাস্থ্যের দিক থেকে জটিলতার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্যায়াম কীভাবে গর্ভাবস্থায় সহায়ক হতে পারে এবং যদি লাফানো হয়, তা গর্ভাবস্থার পক্ষে নিরাপদ, নাকি নয়।

ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় কীভাবে উপকারী হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করলে তা আপনার শক্তি এবং ধৈর্যের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে আর তার সাথে ভাল ঘুম হতেও সাহায্য করে।প্রসবপূর্ব ব্যায়ামগুলি আপনার স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখে।হালকা কিছু ব্যায়াম যেমন সাঁতার কাটা, স্ট্রেচ করা অথবা হাঁটা, গর্ভাবস্থায় সুপারিশ করা হয় এবং এগুলি এই সময়ের জন্য নিরাপদও।তবে লাফানো, হপিং করা অথবা স্কিপিং করার মত ঝাঁকুনিপূর্ণ গতিগুলির সাথে ব্যায়াম করা এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের এড়িয়ে চলা উচিত।গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার কিছু উপকারিতা নীচে দেওয়া হলঃ

  • এটি ফুলে যাওয়া, পেট ফাঁপা, পিঠ ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা কন্সটিপেশন হ্রাসে সাহায্য করে।
  • এটি রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়।
  • এটি ধৈর্য ক্ষমতা ও বল বৃদ্ধি করে এবং পেশীকে শক্তিশালী করে
  • শক্তির মাত্রা বা এনার্জি লেবেল বাড়াতে সাহায্য করে।

গর্ভবতী থাকাকালীন লাফানোর ঝুঁকিগুলি কি?

হালকা কিছু ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় করা সাধারণত নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে, তবে গর্ভাবস্থায় আপনার লাফানোটা এড়িয়ে চলাই উচিত।গর্ভাবস্থায় আপনি যদি জোর করে লাফান, তার ফলে যোনি থেকে রক্ত ক্ষরণ, অকাল শ্রম অথবা গর্ভপাতের মত দুঃসহ ঘটনাগুলি ঘটতে পারে।গর্ভাবস্থায় লাফানোর আরও কিছু ঝুঁকিগুলি নীচে উল্লেখ করা হলঃ

  • সেক্ষেত্রে জরায়ুটির সার্ভিক্সের ওপর ধাক্কা মারার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • এটা আবার এমনকি সঙ্কোচনেরও সূত্রপাত করতে পারে।
  • কঠোর অনুশীলনগুলি লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলিকে আহত করতে পারে এবং ছিঁড়ে ও ভেঙ্গেও যেতে পারে।
  • এটা আবার গর্ভাবস্থায় মারাত্মক জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।

আপনি চেষ্টা করতে পারেন এমন কিছু অন্যান্য বিকল্পগুলি

যেকোনও ব্যায়াম করার সময়েই গর্ভবতী মহিলাদের একটু অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া উচিত।গর্ভবতী থাকাকালীন জাম্পিং জ্যাকের মত লম্ফঝম্ফ করার ব্যায়ামগুলি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।গর্ভাবস্থায় যেকোনও ধরণের জটিলতাগুলিকে এড়ানোর চেষ্টার জন্য এক্ষেত্রে কিছু অন্যান্য বিকল্পও রয়েছে।হালকা লাফের মত ব্যায়ামগুলি তবুও গ্রহণযোগ্য, তবে গর্ভাবস্থায় সেটি পুরোপুরি এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভাল।হালকা অ্যারোবিক ব্যায়ামগুলি, হাঁটা, স্ট্রেচিং করা সতর্কতার সাথে হবু মায়েদের দ্বারা অনুশীলন করা যেতে পারে।

গর্ভবতী থাকাকালে নিরাপদ ভাবে ব্যায়াম করার টিপসগুলি

উচ্চ প্রভাব যুক্ত অ্যারোবিকস বা জাম্পিং জ্যাকের সাথে যুক্ত কঠোর অনুশীলনগুলি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।অন্যদিকে আবার হালকা ও সহনযোগ্য ব্যায়ামগুলির অনুশীলন আপনার মেজাজকে উন্নত করতে পারে, আপনার কর্মশক্তি বাড়িয়ে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুকে সুস্থ এবং সুরক্ষিত রাখে।আপনি যদি গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা শুরু করতে চান, লাফানো এড়িয়ে চলুন।গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করার সময় আপনার মনে রাখা প্রয়োজন এমন কিছু টিপস এখানে দেওয়া হলঃ

  • কোনও স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীর সাথে আপনার ফিটনেস রুটিনের ব্যাপারে আলোচনা করুন, একমাত্র আলোচনার পরেই আপনার কোনও ব্যায়াম করা শুরু করা উচিতএকথা সর্বদা মাথায় রাখবেন।
  • আপনি যখনই ব্যায়াম করবেন, আপনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে আপনাকে দেখার মত সেখানে কারুর উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
  • আপনি হয়ত একজন দুঃসাহসী ব্যক্তি হতে পারেন কিন্তু গর্ভাবস্থায় কোনওরকম বিপজ্জনক খেলা এড়ানোই ভাল।
  • গর্ভাবস্থায় আপনি যখনই ব্যায়াম করবেন চেষ্টা করুন সর্বদা হালকা ঢিলেঢালা পোশাক পরতে যাতে আপনি সহজেই অঙ্গ সঞ্চালনাগুলি করতে পারেন।
  • ব্যায়াম করার পর পর্যাপ্ত জল পান করার পরামর্শও আপনাকে দেওয়া হচ্ছে, তবে অবশ্যই তা সাথা সাথে নয়।যাইহোক, আপনি যদি ব্যায়াম করেন, নিজেকে হাইড্রেট রাখার জন্য আপনার অবশ্যই পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত।
  • উচ্চ তাপমাত্রায় চড়া গরমের মধ্যে ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলুন কারণ এটি বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।ব্যায়াম করারা সবচেয়ে ভাল সময়টি হল ভোর বেলা বা সকাল সকাল।

গর্ভবতী মায়েদের কঠোর অনুশীলনগুলি এড়ানো উচিত কারণ এটি বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে।হালক্‌ সীমিত ও পরিমিত লাফালাফির মত ব্যায়ামগুলি স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এবং প্রসবকে সহজ করে তুলতে পারে, কিন্তু তাই বলে কখনই তা অতিরিক্তি বাড়াবাড়িভাবে করবেন না।ভাল ও বাছাই করা ব্যায়ামের একটা কার্যক্রম উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।স্বল্প প্রভাবকারী ব্যায়ামগুলি অনুশীলন করলে তা আপনার গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর রাখে।যদিও শিশু জরায়ুতে সুরক্ষিত থাকে, তবে চাপ এবং লাফানোর আন্দোলনগুলি ঝুঁকি তৈরী করতে পারে।অতএব হালকা ব্যায়ামগুলি করুন আর একটি নিরাপদ গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!