গর্ভাবস্থা তার নিজস্ব কিছু শারীরিক পরিবর্তনের সাথে আসে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি প্রকৃতই সুখকর নাও হয়ে থাকতে পারে।আপনি কিছুটা ফোলাফোলা অনুভব করবেন,গা গুলানি ও বমি বমি ভাবের অভিজ্ঞতা হবে এবং হয়ত বা আপনার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (কিছু ক্ষেত্রে আরও আগেও হতে পারে)আবার আপনি আপনার মলে রক্তের উপস্থিতিও লক্ষ্য করতে পারেন।হেমরয়েডস অথবা সাধারণ ভাবে পরিচিত পাইলস বা অর্শ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া একটি সাধারণ শর্ত।এগুলি মলদ্বারের রক্তক্ষরণের কারণে হয়ে থাকতে পারে এবং যা ভীষণ অস্বস্তির একটি কারণ হতে পারে।যদিও এগুলি চুলকানিযুক্ত এবং যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে,সেগুলি চিকিৎসাযোগ্য এবং সহজে প্রতিরোধ করাও যেতে পারে।এই নিবন্ধটি আপনাকে জানাবে হেমরয়েডস এবং গর্ভাবস্থায় কীভাবে এটিকে প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে সমস্ত কিছু।
হেমরয়েডসগুলি হল পায়ু বা মলদ্বারের নিম্নাংশে ফুলে ওঠা শিরা।এগুলির আকার মটরশুঁটির মত ক্ষুদ্র থেকে আঙ্গুরের দানার মত বৃহৎ আকারের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে।গর্ভাবস্থায় সাধারণত দু‘ধরনের হেমরয়েড বা অর্শ হতে দেখা যায়ঃ আভ্যন্তরীণ হেমরয়েডস এবং বাহ্যিক হেমরয়েডস।
বাহ্যিক হেমরয়েড যেটি গর্ভাবস্থায় বিকাশ পায় সেটি মলদ্বারের খোলা প্রান্তে দেখা যায়। এগুলি চুলকানিযুক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং মাঝেমধ্যে এগুলি থেকে রক্তক্ষরণও হতে পারে।এগুলি পিণ্ডের মত অনুভুত হতে পারে এবং সেগুলির চারপাশে যদি না রক্ত জমাট বেঁধে যায় তবে সাধারণত এর জন্য কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
অন্যদিকে,আভ্যন্তরীণ হেমরয়েডগুলি মলদ্বারের নালীতে হতে দেখা যায়।এগুলি সাধারণত যন্ত্রণাদায়ক হয় না,যদিও সেগুলি চুলকাতে পারে এবং মাঝেমধ্যে সেগুলি থেকে রক্তক্ষরণও হতে পারে।
বিভিন্ন কারণের জন্য গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস হওয়া স্বাভাবিক।ক্রমবর্ধমান জরায়ু,কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রোজেস্টেরণ হরমোনের আকস্মিক বৃদ্ধিপাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পাইলস বা অর্শ হয়ে থাকে।মাঝেমধ্যে আবার পায়ের এবং স্ত্রীযোনিদ্বারের ভেরিকোস শিরার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও গর্ভাবস্থায় হেমরয়েডস বা অর্শ হয়ে থাকে।
কত দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভাবস্থাকালীন হেমরয়েডগুলি বজায় থাকবে সে ব্যাপারে যদি আপনি চিন্তা করতে থাকেন,তবে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সুখবর রয়েছে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই,গর্ভাবস্থাকালীন পাইলস বা অর্শ সন্তানের জন্মদান করার পরমুহূর্ত থেকেই উধাও হয়ে যায়,বিশেষ করে সেটি যদি কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণে হয়ে থাকে যেহেতু প্রত্যাশিত মায়েদের দ্বারা এটি সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে।
শারীরিক পরিবর্তনগুলি যেগুলি গর্ভাবস্থার সহিত সংযুক্ত থাকে সেগুলি সরাসরি অর্শের বিকাশের উদ্ভব ঘটায়,কীভাবে তা এখানে দেওয়া হলঃ
গর্ভবতী মহিলাদের হেমরয়েড বা পাইলসের কিছু সাধারণ লক্ষণগুলি হলঃ
অন্ত্রের গতিবিধির সহিত রক্তক্ষরণ হতে দেখা গর্ভবতী মহিলাদের পাইলস বা অর্শ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।তবে এটিও মনে রাখা গুরুত্বপুর্ণ যে পাইলস বা অর্শ তাই বলে সবসময়ই মলদ্বারের রক্তক্ষরণের কারনে হয়ে থাকে না।সুতরাং হেমরয়েডস বা পাইলসের চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে এই সমস্যাটির সঠিক কারণটি কি তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সাধারণ উপলব্ধি ছাড়াও এটি জানা প্রয়োজন যে গর্ভাবস্থাকালে হয়ে থাকা হেমরয়েডস বা পাইলসের নিরাময় করা যেতে পারে।গর্ভবতী মহিলাদের হেমরয়েডস বা অর্শের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলির পাশাপাশি কতকগুলি ক্লিনিক্যাল চিকিৎসাও রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় পাইলসের অস্বস্তি এবং যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য এর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সাপোজিটোরি এবং অয়েনমেন্টগুলির ব্যবহার,যার মধ্যে আবার স্থানীয় অ্যানেসথেটিকস,হালকা অ্যাস্ট্রিজেন্টস অথবা স্টেরয়েডগুলি অন্তর্ভূক্ত।তবে গর্ভাবস্থায় এই পণ্যগুলি ব্যবহারের সুরক্ষার বিষয়টি কোথাও নিশ্চিতকরণ বা নথিভূক্তকরণ হয়নি।আর সেই কারণেই এই সকল ওষুধ বা পণ্যগুলির কোনও একটিও ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারেওবাবুর পরামর্শ নিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
যদি যন্ত্রণাটি অব্যাহত থাকে তবে নিম্নলিখিত কিছু অস্ত্রপচার ব্যতীত চিকিৎসা পদ্ধতি গর্ভাবস্থায় পাইলসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
অর্শের জন্য অস্ত্রপচারের প্রয়োজন কেবল তখনই হয়ত হতে পারে যদি রক্তক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা না যায় এবং সেই ক্রিয়াটি কেবল তখনই সম্পাদন করা হয়ে থাকে যখন সেটি আপনার ডাক্তারবাবুর দ্বারা পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
মজার ব্যাপার হল,গর্ভাবস্থায় পাইলসের চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনেক বেশি নিরাপদ এবং উচ্চ মাত্রায় সুপারিশকৃত।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই,পাইলসের চিকিৎসা করা যেতে পারে খাদ্যে আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে,প্রতিদিন জল খাওয়ার পরিমাণকে বাড়ানোর দ্বারা মলকে নরমীকরণ করার মাধ্যমে এবং অর্শের জন্য বেদনানাশক ওষুধগুলি ব্যবহার করার মাধ্যমে।অন্যান্য কার্যকর প্রতিকারগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলঃ
হেমরয়েডস বা অর্শ,বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রকৃতই কষ্টকর এবং বিরক্তিজনক হয়ে ওঠে।তবে ভাগ্যবশত,কিছু সাবধানতা অবলম্বন এবং সাধারণ জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনয়নের মাধ্যমে সেগুলিকে এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
যদি প্রতিষেধক ব্যবস্থাগুলি এবং ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনার সাহায্যার্থে ব্যর্থ হয়ে থাকে এবং যন্ত্রণাটি যদি আরও গুরুতর হতে থাকে অথবা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে একজন ডাক্তারকে দেখানোর পরামর্শই দেওয়া হয়ে থাকে। যদি অর্শ বা পাইলসটি বৃহৎ আকারে হয়ে ওঠে এবং রক্তক্ষরণ হতে থাকে,তবে একজন বিশেষজ্ঞ সেটিকে সঙ্কুচিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবেন।
উপসংহার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের হেমরয়েডস বা পাইলসগুলি শুধুমাত্র ওষুধের দ্বারাই চিকিৎসা করা যেতে পারে।যদিও এটি একটি সাধারণ এবং বেশিরভাগটাই গৌণ যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার,তবে সময়মত চিকিৎসা করা না হলে হেমরয়েডস আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।যদিও ঘরোয়া প্রতিকারগুলি এক্ষেত্রে প্রায়শই স্বস্তি সরবরাহ করে থাকে,তবে সমস্যাটি যদি অব্যাহত থাকে আপনার ডাক্তারের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।