In this Article
অপরিকল্পিত গর্ভধারণ নিয়ণত্রণে সবচেয়ে কার্যকরী পথ হল গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন করা।জন্ম নিরোধক বড়ি হল এক ধরণের হর্মোনাল বড়ি যা শরীরকে প্রতিহত করে শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ থেকে এবং জরায়ুতে নিষিক্ত ডিম্বাণুর জরায়ুতে রোপণে বাঁধা দেই।তবে জন্মনিরোধক বড়ি সেবনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।সেগুলির মধ্যে যেটি মহিলারা সাধারণত অভিযোগ করে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি হল বাদামী স্রাব।
এই অনুচ্ছেদে আলোচোনা করা হয়েছে বাদামী স্রাব সম্বন্ধে,কিভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়,এবং কখন আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
জন্মনিরোধক বড়ি সেবনের সময় বাদামী স্রাব হওয়ার কারণ
জন্মনিরোধক বড়ি সেবন মেয়েদের বাদামী স্রাবের কারণ হলেও আরো অন্যান্য কারণেও মেয়েদের এটি হয়ে থাকে।নীচে তারই কিছু কারণ তালিকাবদ্ধ করা হল।
১।পুরানো রক্ত
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বাদামী স্রাব অন্য কোনো সমস্যা নয় জমে থাকা পুরানো রক্তের কারণে হয়ে থাকে।ঋতুস্রাবের পরেও অনেক সময় আপনার জরায়ুর আস্তরণের ভিতরে কিছু অবশিষ্ট রয়ে যায় যেগুলি শরীর থেকে বেরিয়ে আসে ।পুরানো রক্তের লৌহঘটিত উপাদান গুলি অক্সিজেন সমৃদ্ধ হইয় বলেই এটি বাদামী বর্ণ দেখায়।
২।স্থান নির্নয়
জন্মনিরোধোক বড়ি সেবনের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে আপনার শরীরের হরমোনের সাথে বড়িগুলি মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে এবং এর ফলে অনিয়মিত বাদামী রঙের রক্তক্ষরণ হয়।বড়িগুলি শরীরের লিউটিনাইজিং হরমোন(LH) এবং ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন(FSH) কে প্রভাবিত করে।এটি জরায়ুর আস্তরণ কে পাতলা করে দেয় এবং অতিরিক্ত এন্ডোমেটেরিয়াল কলাকে(জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ) পতিত করে এবং এটি শরীর থেকে বাদামী স্রাবরূপে নির্গত হয়।
৩।কম মাত্রায় গর্ভনিরোধক বড়িসেবন
সাধারণত কিছু ক্ষেত্রে বাদামী স্রাব হয়ে থাকে গর্ভনিরোধক বড়িতে উপ্সথিত খুব কম মাত্রায় হরমোন নির্গমনের ফলে।এটি বিপজ্জনক যেহেতু এটি বড়ির(পিলের)সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়। সেই কারণে ডোজের মাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন কিনা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
৪।বড়ি বাদ গেলে
জন্মনিরোধক বড়ি সক্রিয় ভাবে কাজ করে যদি সেগুলি প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া হয়।যদি আপনি একটি বা দুটি পিল বা বড়ি বাদ দেন,আপনার শরীরে হরমোনের সামঞ্জস্যে ব্যাঘাত ঘটে।।এই কারণে এণ্ডোমেট্রিয়ামটি পুনরায় পাতলা হতে শুরু করে এবং বাদামী হতে থাকে।
৫।নির্দিষ্ট বড়িগুলির স্পর্শকাতরতা
এই বড়িগুলিতে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন হরমোন থাকে বিভিন্ন ঘনত্বে।বাদামি স্রাব দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রূপে যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট বড়ির প্রতি স্পর্শকাতর হন।
৬।ফাইব্রয়েডস
ফাইব্রয়েডস হল জরায়ুর ভিতরের গাত্রে নন কার্সিজেনাস বৃদ্ধি।এটি বাদামী স্রাব হিসাবে দেখা যায়।ডাক্তারবাবু আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে এটি বুঝতে পারেন।প্রচুর পরিমান ঋতুস্রাব এর শেষ পর্যায়ে বাদামী স্রাব দেখা যায়।এর কারণ হল জরায়ুর ফ্রাইব্র্যেডস বা ডিম্বাশয়ের সিস্ট।এ ক্ষেত্রে অবশ্যি ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
৭।গর্ভসঞ্চার
অনেক সময় বডি নেওয়া সত্ত্বেও গর্ভসঞ্চার হয়ে যায়।এ ক্ষেত্রে সঞ্চারজনিত রক্তক্ষরণ বাদামী স্রাব রূপে দেখা যায়।যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ুর গায়ে প্রোথিত হয় তখন সামান্য রক্ত বেরিয়ে আসে। অনেক সময় এ টিকেও বাদামী স্রাব বলে মনে হয়।এ ক্ষেত্রে আপনি ঘরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
৮।ওভ্যালুয়েশন
জন্মনিরোধক বড়ি ওভ্যালুয়েশনকে রোধ ক রে।যদি আপনি এক বা একাধিক ডোজ বাদ দেন তবে ওভ্যালুয়েশন হতে পারে।এই সময় সাধারণত বাদামী দেখা যায়।সাধারণত নিয়মিত ঋতুস্রাবের ১০–১৪ দিন আগে ঘটে।এ ক্ষেত্রে আপনি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
৯।সংক্রমণ
অনেক সময় বাদামী স্রাব যৌনাঙ্গ সংক্রমণ বা সেক্সচুয়াল ট্রান্সমিটেড ইনফেক্সেন(STI) এর জন্য হয়।এটি ব্যাক্টিরিয়াজনিত,গনোরি ইয়া,বা ক্ল্যামাইডিয়ার কারণে হয়।যদি আপনার যৌনাঙ্গ লালচেভাব,যন্ত্রণা,চুলকানি বা বাজে গন্ধযুক্ত হয়ে এবং তার সাথে বাদামী স্রাব দেখা যায় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
১০।প্যাপ স্মীয়ার
এটি হল সার্ভাইকাল স্মীয়ার পরীক্ষা যা মহিলাদের সার্ভাইকাল ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়।এক্ষেত্রে যোণির ভিতর থেকে কলা কোশ এনে পরীক্ষা করা হয় যে এটি ক্যান্সার নাকি প্রি–ক্যান্সার কোশ।অনেক সময় এই জন্য কয়েক দিন হাল্কা রক্ত ক্ষরণ হয় যা বাদামী স্রাব বলে মনে হয়।
বাদামী স্রাব মোকাবিলা করার কিছু পরামর্শ
- প্যাড ব্যবহারঃ গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার প্রথম কয়েক মাস প্যাড বা প্যান্টি লাইনার ব্যবহার করতে হবে। যদি খুব বেশি স্রাব নির্গত হয় তার জন্য অতিরিক্ত প্যাড নিতে হবে।
- অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বনঃ বড়ি খাওয়ার সাথে সাথে কিছু অতিরিক্ত সাবধান তা নিতে হবে। যেমন সঠিক পরিমাণে ওষুধ খেতে হবে এবং তা কাজ করছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে।কম মাত্রার বড়ি খেলে অসুবিধা হবে।কন্ডোম বা স্পার্মাসাইড ব্যাবহার করা যেতে পারে।
- ডাক্তারের পরামর্শঃ দীর্ঘদিন ধরে বাদামী স্রাব চললে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
জন্ম নিরোধক বড়ি খাওয়ার সময় বাদামী স্রাব কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
এখানে কয়েকটি উপায় বলা হল।
- প্রতিদিন একি সময় বড়ি খেতে হবে।সময় এর আগু–পিছু হলে হরমোনল সাম্যতা নষ্ট হবে ফলে বাদামী স্রাব হবে।
- যদি একটি ডোজ বাদ যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।একাধিক ডোজ বাদ গেলে গর্ভনিরোধকবড়ী কাজ করবেনা ফলে বাদামী স্রাব হবে।
- নিজের ইচ্ছেমত বড়ি না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ খাওয়া উচিত যা আপনার শরীরের হরমোনের উপযোগী।যদি আপনি এমন বড়ি খান যা গর্ভধারণ আটকায় না তার ফলে বাদামী স্রাব হবে।
- প্রচুর পরিমাণে জল খাবেন।জল দেহের বিষাক্ত পদার্থগুলিকে বের করে দেবে এবং বাদামি স্রাব হবে না।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।যদি ওষুধটি কম শক্তিশালী হয় তবে ঋতুস্রাব বন্ধ হবে না এবং অনিয়মিত ঋতুস্রাব বাদামি স্রাব দেখা যায়।।
কখন বাদামী স্রাব গভীর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়
যদিও বাদামী স্রাব হয় গর্ভনিরোধক বড়ির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য তবুও কখন ও কখনও এটি সাঙ্ঘাতিক শারীরিক সমস্যার কারণ হয়।আপনি অবশ্যিই বিষয়টিতে সচেতন থাকবেন যদি নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা যায়।
- আঁশটে বা বিশ্রী গন্ধ – যোনী থেকে যদি আঁশটে বা বিশ্রী গন্ধবের হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সংক্রমণের কারণে এমন হয়। আন্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা হয়।
- যোনীতে লালচে ভাব– যোনীর আশেপাশে লালচে ভাব দেখা যায় যা সংক্রমণ জন্য হয়।এটি হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।
- রস স্ফীতি এবং…।।– যোনীর আশেপাশে যন্ত্রণা এবং সংক্রমণ জনিত স্ফীতি দেখা যায় যা অবহেলা করা উচিত নয়।
- তল পেটে যন্ত্রণা এবং খিঁচুনি– বাদামী স্রাবের সাথে সাথে তল পেটে যন্ত্রণা এবং খিঁচুনি হয়।এটি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ক্ল্যামাইডিয়ার লক্ষন।
- ১০৪০ ফারেনহাইটের বেশী তাপমাত্রা– বাদামী স্রাবের সাথে জ্বর হলে বুঝতে হবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
- ফ্লু– এর মতন লক্ষন– যদি অনিহা,অবসাদ,সারা শরীরে ব্যাথার সঙ্গে বাদামীস্রাব হয় তবে বুঝতে হবে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে।
যখন আপনি গর্ভনিরোধক বড়ি খেতে শুরু করেন তখন আপনার শরীর অতিরিক্ত হরমনের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে শুরু করে।সব মহিলার ক্ষেত্রে একি রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।কারুর ক্ষেত্রে হাল্কা লক্ষণ কারুর বা একই মাসে দুইবার ঋতুস্রাব কারুর বা বাদামী স্রাব দেখা যায়।এটি সাধারণ ব্যাপার.৬ মাস একটানা বড়ি খেলে সমস্যাগুলি ধীরে ধীরে কমে যায় বা একদম দুরিভূত হয়।যদি বাদামী স্রাব কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।