তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যৌনকর্ম – শেষ পর্যায়ের গর্ভাবস্থায় প্রেম করা

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যৌনকর্ম – শেষ পর্যায়ের গর্ভাবস্থায় প্রেম করা

একটা সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনে প্রেম করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।কিন্তু মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের কথা ভেবে অনেক দম্পতি এই সময়ে সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকেন।তাদের জন্য এখানে একটা সুখবর রইল, যদি এখন পর্যন্ত আপনার নিরাপদ এবং সুস্থ গর্ভাবস্থা চলে আসে তাহলে এই পর্যায়ে আপনি সঙ্গম করতে পারেন কিছু অতি আবশ্যিক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে। আপনি ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন এই পর্যায়ে নিরাপদ সঙ্গম করার সময় কি কি সাবধানতা নেবেন তা জানার জন্য।

গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে যৌন কর্ম এটা কি নিরাপদ?

হ্যাঁ,গর্ভাবস্থায় যৌনকর্ম সম্পূর্ণ নিরাপদ যদি আপনার এই সময় পর্যন্ত কোনরকম গর্ভধারন সংক্রান্ত সমস্যা না হয়ে থাকে। ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী যৌন কর্ম করার বিভিন্ন ভঙ্গিমা গুলি মেনে চলেন যা হবু মায়ের আরামদায়ক হবে তাহলে প্রসবের একমাস আগে পর্যন্ত সঙ্গম করতে পারেন।

এটা বলা হয়ে থাকে যে এই সময় পায়ুমৈথুন না করাই ভাল যেহেতু অর্শ গর্ভধারণকালীন সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম।ফলে পায়ুমৈথুনের জন্য পায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে যা প্রচন্ড অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক।

শেষ ত্রৈমাসিকে আপনার যৌনজীবনের পরিবর্তন

শেষ ত্রৈমাসিকে আপনার পেট বৃহৎ আয়তন ধারণ করে যেহেতু আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণটি এই সময় বৃদ্ধি পায়।এর ফলে আপনি এবং আপনার সাথী ভঙ্গীমা নির্বাচনে সমস্যা দেখা যায়। স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে না পারার জন্য এই সময়ে সঙ্গম খুব একটা আনন্দদায়ক হয় না।অন্যান্য আরো কতগুলো ব্যাপার যেমনফোলা পা, পিঠের যন্ত্রণা, অবসাদ,স্তন্দুগ্ধ নিঃসরন,ভেরিকোজ,যোনি ফুলে যাওয়া এবং শ্রোনির অতিরিক্ত চাপ প্রভৃতির ফলে সঙ্গমের মজা অনেকটা ক্ষীণ হয়ে যায়।

কিন্তু এটা চালিয়ে যেতে আপনার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি অন্য ধরনের ভঙ্গীমা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আপনি আপনার সঙ্গীকে পিছন দিক থেকে প্রবেশ করাতে বলুন এবং শুয়ে চামচের মত অবস্থান নিন যাতে ব্যাপারটা অনেক মসৃণ হবে।এর ফলে আপনাকে অনেক কম নড়াচড়া করতে হবে যা নিরাপদ।ভঙ্গিমা নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখুন কোন অবস্থানটা সবথেকে সুবিধাজনক এবং কি কি বিষয় এড়াবেন।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করলে লাভ

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করলে লাভ

  • শারীরিক সম্পর্কের ফলে দুই সঙ্গীর মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়।
  • বীর্যের মধ্যে প্রোষ্টাগ্ল্যান্ডিন নামে একপ্রকার হরমোন থাকে যা সারভিক্সকে নরম করে সঙ্গমের সময়, যা সংকোচন ঘটাতে সহায়তা করে।
  • সঙ্গমের সময় মহিলাদের অক্সিটোসিন নামে একটি হরমোন বের হয় যা হ্যাপি হরমোন নামে পরিচিত।এটি উত্তেজনা জনিত সংকোচনে সাহায্য করে।
  • প্রচন্ড উত্তেজনা পেলভিস কে শক্তিশালী করে যা গর্ভধারণ করতে সাহায্য করে।

যতদিন না জল ভাঙছে ততদিন সঙ্গম করা লাভের সাথে সাথে নিরাপদ হয় শেষ ত্রৈমাসিকেও।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে কখন আপনি সঙ্গম করা এড়াবেন?

আপনাকে সব সময় এই পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে যে গর্ভাবস্থায় সঙ্গম প্রাক্কালে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন।এর ফলে আপনি আপনার গর্ভাবস্থার পর্যায় সম্বন্ধে ভালভাবে অবহিত হবেন ও এটা বুঝতে পারবেন যে এই পরিস্থিতিতে আপনাকে সঙ্গম এড়াতে হবে কিনা। নিচের উল্লেখিত পরিস্থিতিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত ডাক্তারবাবুরা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

  • কেউ যদি প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া আক্রান্ত হয়ে পরেন তাহলে ডাক্তারবাবু তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম না করার পরামর্শ দেন।এই ক্ষেত্রে ভ্রূণস্থ শিশুর মাথার অঙ্কীয়দেশে অমরা (প্ল্যাসেন্টা) অবস্থান করে।তাই সঙ্গমের কারণে অমরা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে যা আপনার শিশুর ক্ষতি করবে।
  • যদি অকালে জল ভেঙে যায় তাহলে মিউকাসের আস্তরন যা সারভিক্সকে রক্ষা করে তা অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে মা এবং শিশুর সংক্রমণের সম্ভবনা বেড়ে যায়। যেকোন ধরনের যৌনসং ক্রামক রোগের হাত থেকে বাঁচতে গর্ভাবস্থার অন্তিম পর্যায়ে সঙ্গম না করাই শ্রেয়।
  • যদি অতীতে আপনার অকালে প্রসববেদনা হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারবাবু আপনাকে শেষ ত্রৈমাসিকে মিলিত হতে নিষেধ করবেন।তার কারন হল সঙ্গম সময় যে হরমোন নিঃসৃত হবে তা আপনাকে আবার অকাল প্রসববেদনার সম্মূখীন করবে।
  • যদি আপনার যমজ সন্তান প্রসবের লক্ষণ থাকে তাহলে শেষ ত্রৈমাসিকে সঙ্গম না করার পরামর্শ দেওয়া হল।যমজ সন্তান সাধারনত সময়ের আগেই ভূমিষ্ট হয়ে থাকে এবং তাই এই সময়ে সঙ্গম করলে অকালজাত শিশুর জন্ম হতে পারে।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের জন্য আপনার বা আপনার শিশুর কি কোন ক্ষতি হতে পারে

আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করলেও আপনার শিশুর কোন ক্ষতি হবেনা। আপনার সন্তানটি সুরক্ষিত ভাবে অবস্থান করছে অ্যামোনিটিক স্যাক বা থলির ভিতর যা বিভিন্ন ক্ষতিকে দূরে সরিয়ে রাখে।সারভিক্সের ভিতরে মিউকাসের আস্তরন যাবতীয় সংক্রমণের হাত থেকে আপনার শিশুটিকে রক্ষা করে চলেছে তাই তার সুরক্ষা নিয়ে আপনি চিন্তিত হবেন না।

যদিও,আপনার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করছে শেষ ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের সময় নানা কারণে আপনার অস্বস্তি বাড়ার ব্যাপারগুলিঅনেক মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তাদের গর্ভস্থ শিশুর মাথাটি নিচের দিকে নেমে আসে শেষ ত্রৈমাসিকে স্বভাবতই তারা এই সময়ে সঙ্গম করতে চান না।এই ব্যাপারটা তদের এক অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয় এবং মিলনের সময় চাপের সৃষ্টি করে।

সঙ্গমের সময় স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়ের দেহ থেকে যেসব হরমোন গুলো বের হয় তা মাংসপেশীর সংকোচন ঘটায় ফলে তাড়াতাড়ি প্রসববেদনা ওঠে।সেইজন্যে যাদের আগে অকাল প্রসবের ইতিহাস আছে তাদের শেষ ত্রৈমাসিকে সঙ্গম না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

শেষ ত্রৈমাসিকে বেশী উত্তেজনার ফলে ব্র্যাক্সটন হিক্স এর সংকোচন ঘটতে পারে। এই ধরনের সংকোচনের ফলে গর্ভ এবং গর্ভস্থ শিশু শক্ত হয়ে যায়।এটা খানিক সময় ধরে চলতে পারে তবে এতে কারোর ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের শ্রেষ্ট ভঙ্গিমা

গর্ভধারনের শেষ ত্রৈমাসিকে জরায়ু আকারে বড় হয়ে যায়,তার ফলে কিছু ভঙ্গীমা প্রয়োগ করা যায় না।এখানে কয়েকটি যৌন ভঙ্গীমার কথা বলা হল যা আপনি চেষ্টা করতে পারেন গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকে যা দিতে পারে সুরক্ষিত এবং আরামদায়ক সঙ্গমের আনন্দ।

  • চামচের ন্যায় অবস্থান দিতে পারে আরামদায়ক সুখানুভূতি আপনার ফুলে ওঠা পেট সত্ত্বেও।আপনি একপাশ ফিরে শুয়ে ইংরাজির C এর মত ভঙ্গিমা করুন এবং আপনার সাথী কে পিছন থেকে আপনাকে জাপটে ধরুক।এই ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গী আপনার পিছন থেকে যোনিতে প্রবেশ করাতে পারবে যখন দুজনেই এক পাশ ফিরে শুয়ে থাকবেন।প্রসব পূর্ববর্তী যত্নপ্রসব পূর্ববর্তী যত্ন
  • গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আপনি আপনার সঙ্গীর ওপর উঠে এই কাজটি করতে পারেন।আপনি আপনার চাহিদা মত গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। শুধু খেয়াল রাখবেন আপনার সঙ্গী যেন গভীর ভাবে প্রবেশ না করায়।
  • গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বিছানার একদম ধারে বসে সঙ্গম করার পরামর্শ দেওয়া হল। এক্ষেত্রে আপনি বিছানার একদঅম ধারে শুয়ে পড়ুন এমন ভাবে যাতে আপনার মাথাটা উপরের দিকে আর আপনার পা দুটো ফাঁক করে রাখুন, খেয়াল রাখবেন আপনার পা এর পাতা যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে।আপনার সঙ্গী দাঁড়িয়ে অথবা বসে আপনার যোনিতে প্রবেশ করাবে, আপনি তাকে শুধু বলে দেবেন কত ধীরে ধীরে এবং মসৃন ভাবে তা প্রবেশ করাবেন।

অনুপ্রবেশের সময় যদি অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে মুখমৈথুন বা উভয়ের সাহচর্যে হস্তমৈথুন করতে পারেন যা হল সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কোন রকম অস্বস্তিজনক নয়।

কি ধরনের ভঙ্গীমা এড়িয়ে যাবেন

কারিগরি ভাবে বলতে গেলে কোন ভঙ্গীমাই অসুরক্ষিত নয় গর্ভাবস্থায় সঙ্গমের জন্য কেবলমাত্র আপনি চিৎ হয়ে শুয়ে সংগম না করলেই হল। অন্যান্য ভঙ্গীমা গুলো প্রয়োগ করার সময় আপনার সঙ্গীকে একথা মনে রাখতে বলবেন সে যেন গভীর ভাবে অনুপ্রবেশ না করায়। কারণ গভীর অনুপ্রবেশের ফলে শুধুমাত্র অস্বস্তি হবে তাই না এর ফলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ওরাল সেক্স করার সময় আপনার সঙ্গীকে যোনি তে জোরে ফুঁ দিতে বারন করবেন, কারণ এর ফলে রক্তবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা আপনার এবং আপনার সন্তান দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম কি প্রসব যন্ত্রণাকে ত্বরান্বিত করে?

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম কি প্রসব যন্ত্রণাকে ত্বরান্বিত করে

গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে যৌন সঙ্গম প্রসব যন্ত্রনা কে ত্বরান্বিত করে।গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকে সঙ্গম প্রসব যন্ত্রনার সৃষ্টি করে যদি আপনার সারভিক্স এবং জরায়ু প্রস্তুত থাকে। কিন্তু যদি সারভিক্স প্রস্তুত না থাকে তাহলে প্রসবের ক্ষেত্রে যতবার ইচ্ছা সঙ্গম করুন না কেন তা কোন কাজ দেয় না।

দয়া করে মনে রাখবেন যদি 42 সপ্তাহের পরও প্রসববেদনা না ওঠে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ আগে নেবেন। সেক্ষেত্র প্রসব যন্ত্রনা আপনার ডাক্তারবাবুই তৈরী করতে পারবেন আপনার সঙ্গী সেটা পারবেন না।

গর্ভাবস্থায় সঙ্গম শুধুমাত্র সুরক্ষিতই নয় সঙ্গমের জন্য আপনাকে পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।শারীরিক সুবিধা গুলো ছাড়াও এটা হবু পিতামাতার সম্পর্ককে মজবুত করে বিশেষত যারা গর্ভাবস্থার খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছেন।