আপনি আপনার বাচ্চার মধ্যে কিছু অসধারণ পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন তার দশ মাস বয়সে। আপনি আশ্চর্য হবেন আপনার ছোটো বাচ্চাকে খুব দ্রুত একজন স্বাধীন স্বতন্ত্র ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখে, যে এখন খেলতে পারে, ঘুরে বেড়াতে পারে এবং চেষ্টা করে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে ঠিক একজন নিখুঁত পেশাদারীর মতই।
নিচের সারণি থেকে বুঝতে পারবেন যে আপনার সন্তানের কাছ থেকে এই বয়সে কি আশা করতে পারেন।
আপনার শিশুর অর্জিত বিকাশের মাইলস্টোন গুলি | আপনার শিশু অর্জন করতে চলেছে এমন বিকাশের মাইলস্টোন গুলি |
হামাগুড়ি দেয় এবং দাঁড়াবার জন্য টান দেয় | অবলম্বন ধরে হাঁটতে চেষ্টা করে |
কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারে | কয়েকটি শব্দ বলতে ও বুঝতে চেষ্টা করে |
উপুর হওয়া থেকে বসতে পারে | দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে চেষ্টা করে |
অনুরোধ বুঝতে পারে | অন্যান্য মৌলিক নির্দেশ বুঝতে পারে |
কিছু মৌলিক কাজ অনুকরণ করতে পারে | পর্যবেক্ষণ করার পর কোন কাজ পুনরায় করার চেষ্টা করে |
লুকানো জিনিস খোঁজে | কোন জিনিস কোন স্থানে আছে তা মনে রাখার চেষ্টা করে |
ভীতিকর বা পীড়াদায়ক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। | অনেক বেশী বিভিন্ন ধরনের পারিপার্শ্বের প্রতি সাড়া দেবার চেষ্টা করে |
সাঁড়াশির মত করে হাত মুঠো করতে পারে | কোন কিছু ধরতে গোটা হাত ব্যবহার করতে পারে। |
দেখার গভীরতার উপলদ্ধি হয় | আরো ভালো দর্শনের গভীরতার উপলদ্ধির সাথে হাত ও চোখের সামজ্ঞস্য বিধান করতে চায় |
একটা দুটো দাঁত দেখা যায় | প্রথম জন্মদিনের আগে আট টি দাঁত ওঠার কথা |
আপনার দশ মাস বয়সী বাচ্চা উপভোগ করে প্রিতিদিনের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে নিজেকে স্বাধীনভাবে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ। এই পর্যায়ের শিশুরা হামাগুড়ি দিতে পারে, যখন বসে থাকে চেষ্টা করে কোন কিছুর অবলম্বনে উঠে দাঁড়াতে, বেঁটে বা ছোটো কোন জিনিস কে সে অবলম্বন করে উঠতে চায় এবং তার জন্য সে সেটিকে চারিপাশে খুঁজে বেড়ায়। কিছুজন হাঁটতেও শুরু করে দেয় আবার কিছু জন আছে যারা এত দ্রুত সেটি পেরে ওঠে না. বাচ্চারা কোন জিনিস কে নির্বাচন করতে শেখে, এবং তাদের হাত ও চোখের সমন্বয়ে কোন জিনিস কে খুব দ্রুত মুঠো করে ধরতে সাহায্য করে। তারা আবার ব্যাস্ত হয়ে পড়ে নানা কাজকর্মে, যেগুলি তাদের সচলতাকে বজায় রাখে,যেমন–কোন কিছু জড়ো করতে এবং সেগুলিকে গুছিয়ে রাখতে শেখে।
বস্তুর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি এবং লুকানো বস্তুর অনুসন্ধান: বস্তুর স্থায়িত্ব হল কোন বস্তুর অস্তিত্ব চেনার ক্ষমতা। দশ মাস বয়সের একটি শিশু জানে কোন লুকানো বস্তুকে খুঁজে বের করতে এবং তারা অনেক কম উদ্বিগ্ন হয় যখন তাদের মা বাবা তাদের চোখের আড়াল হয়। এটি তাদের অনুসন্ধিৎসু করে তোলে এবং তারা তাদের দৃষ্টির বাইরের জিনিস গুলিকে দেখার চেষ্টা করতে শুরু করে।
ছবি এবং ইমেজ গুলিকে উপভোগ করে: তার সামনে অনেক রঙীন ছবি সমৃদ্ধ একটি বই খুলুন এবং দেখুন আপনার ছোট শিশুটিকে,সে মনমুগ্ধ হয়ে তার সাথে মিশে যাবে। তারা গল্প শুনতে ভালবাসবে এবং সমস্ত রঙীন চিত্র গুলিকে তারা শুষে নিতে চাইবে,শব্দ,বাক্য তৈরী করার জন্য চেষ্টা করবে, সেই শব্দগুলিকে ভাল করে শুনে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে।
অর্থ সহ শব্দ বোঝার ও গঠনের চেষ্টা করে: আপনার দশ মাস বয়সী জানবে, কোন জিনিসের নাম ও তার অর্থ এবং সে “হাই”,”না”,”হ্যাঁ” এবং ”বাই” এই ধরণের শব্দগুলির সাথে পরিচিত হবে এবং সেগুলির মানে বুঝবে।
এই মাইলস্টোন গুলি শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং স্বাভাবিক চলন দক্ষতার বিকাশের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত
ভালভাবে হামাগুড়ি দিতে পারে: আপনার দশ মাস বয়সী এখন একজন অলিম্পিক স্তরের খেলোয়াড় হয়ে ওঠে এমন কি সে এখন কোন কিছু অবলম্বন করে হাঁটার চেষ্টাও করে। তাকে লক্ষ্য করুন,দেখতে পাবেন সে কেমন করে হামা দিয়ে অণ্বেষণ করতে থাকে এবং ঘরের প্রতিটা কোণে পৌঁছানোর দুঃসাহসিকতা দেখাতে থাকে।
সাঁড়াশি উপলব্ধির ব্যবহার: আপনার বাচ্চা এখন সক্রিয়ভাবে তার হাতের তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুলের দ্বারা কোন ছোট জিনিসকে আরও দৃঢ় ভাবে ধরতে শিখবে সাঁড়াশি পদ্ধতিটি প্রয়োগের মাধ্যমে। এই পদ্ধতির সাহাযে সে তার আঙ্গুলের সাহায্যে কোন কিছু তুলতে শিখবে এবং খাবার নিয়ে খেতে শিখবে
অর্থ সহ শব্দ বোঝা ও গঠনের চেষ্টা: আপনার দশ মাস বয়সী এখন কোন জিনিসের নাম বুঝতে পারবে এবং কিছু শব্দ যেমন, “হাই”,”না”,”হ্যাঁ” এবং “বাই” এগুলি সম্পর্কে ধারণা তৈরী হবে।
অনুকরণ ও পুনরায় বলার চেষ্টা: বেশীর ভাগ দশ মাসের বাচ্চাদের একটি মারাত্মক সংসাধন হল তারা সব কিছু অনুকরণ করতে চেষ্টা করে। তারা পারে কর্মস্মৃতি গঠন করতে এবং সেগুলির উপর তাদের প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে। আপনি প্রায়শই লক্ষ্য করতে পারেন যে,আপনার শিশুটি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে আপনার থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য।
অনুরোধ বুঝতে পারে:দশ মাস বয়সে আপনার বাচ্চা বুঝতে পারে অনুরোধের অর্থ,যেগুলি আপনি তাকে করেন এবং সে সেগুলির নানা প্রতিক্রিয়ার দ্বারা সাড়া দেয়। আপনার বাচ্চার দিকে হাত বাড়িয়ে যদি কিছু চান সে সেটিকে আপনার হাতের উপরে দিয়ে দেয়।
কোন রকম অবলম্বন ছাড়াই বসতে পারে এবং যখন উঠে দাঁড়ায় কিছুটা এগিয়ে যায়:পিঠের এবং পেটের শক্তিশালী মাংসপেশী গুলির সাহায্যে আপনার বাচ্চা একা একাই বসতে পারবে, যখন সে তার পেটের উপর উপুর হয়ে শুয়ে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাবে। আপনার শিশু তার পা এর পাতার উপর ভর দিয়ে কোন কিছুকে অবলম্বন করে হাঁটা শুরু করতে পারে। এমনকি সে কোন কিছুর সাহায্য নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোট ছোট পা ফেলে ঘোরাফেরাও করতে পারবে।
মধ্যবর্তী( ইনসিজর) দাঁত দেখা যায়–নিচের দুটি ইনসিজর তার আট মাস বয়সে আর উপরের একটি ইনসিজর তার দশ মাস বয়সে উঠতে দেখা যায়। এগুলি বাচ্চাকে তার আঙ্গুলের খাবার (পাস্তা,ইডলি)কাটতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি এবং ইন্দ্রিয়ের যোগাযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়–দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির ফলে আপনার বাচ্চা যেকোন বস্তুর দূরত্ব বুঝতে সক্ষম হবে,এবং এটি তাকে সাহায্য করবে তার হাত ও চোখের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে।
এই মাইলস্টোনগুলি আপনার শিশুর সামাজিক দক্ষতা এবং মানসিক মেজাজ প্রদর্শন করে।
বিদায় জানায়: আপনার দশ মাস বয়সী এখন থেকে সামাজিক অঙ্গভঙ্গী গুলির গুরুত্ব বুঝতে পারবে, এবং তার ক্রিয়াকলাপে আপনার নিজের মুখেই হাসি ফুটে উঠবে যখন আপনি কাজে বেরোবেন। যদি আপনি ভাগ্যবতী হন তবে আপনি কখনো কখনো তার মুখ থেকে আধো আধো বুলিতে “বাই বাই” শুনতে পারেন।
অপরিচিতদের মাঝে উদ্বেগ প্রকাশ:দশ মাস বয়সী তার অপরিচিতদের মাঝে অস্বস্তি বোধ করবে এবং তাদের থেকে দূরে সরে যেতে চাইবে।
যন্ত্রণার পৃথকীকরণ: গবেষণার দ্বারা পরীক্ষিত দশ মাস বয়সের পর থেকে বাচ্চাদের মধ্যে বিচ্ছেদ উদ্বিগ্নতার ঝোঁক বাড়তে থাকে। তারা আপনাকে বা তার তত্ত্বাবধায়কদের জাপটে জড়িয়ে থাকতে পারে এমনকি আপনাকে আটকে রাখার জন্য তারা অসম্ভব রাগও দেখাতে পারে।
পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া–বিভিন্ন পরিস্থিতে আপনার বাচ্চার থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আশা করতে পারেন। সে সামান্য ভয় পেয়ে যেতে পারে যখন সে কোন জোরালো শব্দ শোনে কিম্বা উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে যখন সে পাখির কূজন শোনে।
লক্ষ্য রাখুন নিচের বিকাশের ক্ষেত্রে বিলম্বে প্রকাশিত লক্ষণগুলির প্রতি–
সাধারণ কয়েকটি কৌশল যা তার বিকাশের উন্নয়নমুলক সাফল্য ক্ষেত্রকে শান দেবে এবং আরও বেশী করে তাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
এই দশায় একজন সুস্থ শিশু ক্রমানুযায়ী মাইলস্টোন গুলো অতিক্রম করতে পারে যদি তার পুষ্টি সঠিক মাত্রায় হয় এবং দক্ষতা সহায়ক পরিবেশ পায়। জানা এবং শেখার জন্য তারা যে কাজ গুলো করে তাতে উৎসাহ দেবার সাথে সাথে সহযোগিতা করতে হবে।যদি আপনার মনে হয় কন কিছুর অভাব ঘটছে তাহলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।