গর্ভাবস্থা এমন একটি সুন্দর সময় বা মুহূর্ত যার স্মৃতি সারা জীবন জেগে থাকে আপনার মনের মনিকোঠায়,এসময়ে মনের গভীরে এসে ভীড় করে একগুচ্ছ সন্দেহ,ভয় এবং অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে এটি সত্য সেই সকল মহিলাদের ক্ষেত্রে যারা তাদের জীবনে প্রথম মা হতে চলেছেন। একটি সন্দেহ যেটি গর্ভবতী মহিলাদের মনে প্রায়শই হয়ে থাকে,সেটি হল,এই অবস্থায় সে তার যৌনজীবন পূর্বের মতই বজায় রাখতে পারবে কিনা। যদিও এটি বেশ বোধগম্য যে একজন মহিলা তার গর্ভাবস্থার শেষ পর্বে সঙ্গম করতে না চাইতে পারেন তার শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ–জনিত সমস্যার কারণে,তবুও যথাযথ সাবধানতা অবলম্বনের সাথে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে সঙ্গম করা কিছুটা সম্ভবপর হয়।
গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে আপনার যৌনজীবনে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটবে।আপনার হরমোনের অস্থিরতা,শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি এটিও লক্ষ্য করবেন যে,আপনার খিদে চোখে পরার মত বেড়ে গেছে।প্রথম ত্রৈমাসিক অবস্থায় শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরণের মাত্রাও বেড়ে যায়।এই অবস্থায় যখন 9 মাস ধরে যৌনতা বা সঙ্গম অব্যাহত রাখার বাতাস বইতে থাকে তখন এমন কিছু জনও আছেন যারা এই ইচ্ছার অভিজ্ঞতায় খামতি বোধ করেন।
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলি যেগুলি সঙ্গমের ইচ্ছে কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কাজ করে
এই সময়ে সঙ্গম করা মেনে নেওয়া বা তাকে আলিঙ্গন করে নেওয়া কিছু মহিলার কাছে অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। যাই হোক সেক্ষেত্রে অন্য অনেক মহিলা আছেন যারা মনে করেন যে,গর্ভাবস্থা তাদের শরীর সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন মানসিকতা ও ইতিবাচক অনুভূতি প্রদান করে।গর্ভাবস্থা মানে পূর্ণস্তন,গোলাকৃতি পিছন,এবং আরো লালিত্বে ভরা নিটোল চটকদার চেহারা,যা কিছু মহিলাকে তার সঙ্গীর সাথে তাকে আরো বেশী মাত্রায় অন্তরঙ্গ করে তুলতে পারে।
তরুণ মায়েদের কাছে এটি ভীষণ সাধারণ প্রশ্ন,প্রথম ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা নিরাপদ না কি নয়?আশ্বস্ত হন–এই সময়ে আপনার জরায়ুতে থাকে শক্তিশালী পেশী সমূহ যা আপনার গর্ভপাতের সম্ভাবনা কে হ্রাস করে। এই সময়ে যৌন সহবাসে যৌনাঙ্গটি যোনিতে প্রবেশ করে না,সুতরাং এটি গর্ভস্থ বাচ্চার কাছে পৌঁছায় না।শুধুমাত্র আপনার সঙ্গীকে এটুকু নিশ্চিত থাকতে হবে যে এই সময়ে আপনার উপর যেন তিনি খুব বেশী কঠিন ভাবে পতনশীল না হন।
আবার এর বিপরীতে জনপ্রিয় লোককথাটি হল,যৌনউদ্দীপনা বা প্রচন্ড উত্তেজনার কোন ভূমিকাই নেই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে। যখন প্রচন্ড উত্তেজনাও জরায়ুর হালকা সংকোচনের কারণ হতে পারে সেক্ষেত্রে সেগুলি অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকারক হয়।
যদিও অনেক ক্ষেত্রেই যৌন সহবাস মহিলাদের জন্য নিরাপদ,কিন্তু তাই বলে এইটি সব সময়ে সঠিকও নয়। এমন একটা সময় আসে যখন প্রত্যেকেরই প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় সঙ্গম এড়ানো প্রয়োজন হয়। যদি কোন মহিলার পূর্বে গর্ভপাতের কোন ইতিহাস থাকে,তবে তাকে সে ক্ষেত্রে যৌন মিলনে সংযত হওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়। যখন আপনি বমিবমি ভাব বা অত্যন্ত ক্লান্তি অনুভব করেন সেই সময়ে সঙ্গম থেকে নিরস্ত থাকাই শ্রেয়। আবার যেসব মহিলা গর্ভাবস্থায় যমজ বা তার বেশী সন্তান ধারণ করেন অথবা নিম্নবর্তী অবস্থায় অমরার(প্ল্যাসেন্টা)বিন্যাস হয় তবে সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গমে জড়ানো উচিত হবে না।
যদিও গর্ভাবস্থার সময়ে সঙ্গম নিরাপদ বলে খুব বেশি মনে করা হয় না, প্রথম ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব আছে।
1) যেহেতু গর্ভস্থ ভ্রূণটি বৃদ্ধি পেতে থাকে, সার্ভিক্সের ভার বহন ক্ষমতাও বেড়ে যায়। যদি আপনার সার্ভিক্স অঞ্চল অপর্যাপ্ত হয় (যেখানে সার্ভিক্স যথেষ্ট শক্তিশালী হয় না),তবে সঙ্গম থেকে বিরত থাকাই ভাল যেহেতু সঙ্গমের ফলে সার্ভিক্সের উপর চাপ আরো বেড়ে যেতে পারে।
2) আপনি যদি প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার (এমন একটি অবস্থা যেখানে অমরার একটা অংশ সার্ভিক্সকে ঢেকে রাখে) চিকিৎসাধীন হন তবে সেক্ষেত্রে সঙ্গম বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় সঙ্গম অমরাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে এবং বাচ্চার জীবন অসম্ভব ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ে।
3) STD গুলি থেকে সাবধান। সঙ্গমে নিযুক্ত হওয়ার আগে প্রত্যেকের সজাগ হওয়া উচিত তার সঙ্গীর যৌনস্বাস্থ্য এবং যৌন ইতিহাস সম্পর্কে। এই মুহূর্তে এগুলি জেনে নেওয়া সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।যদি আপনার সঙ্গীর হেপাটাইটিস বি অথবা যৌনাঙ্গের হারপিস থাকে,তবে সেটি আপনার শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে এবং তার পর তা বাচ্চার শরীরেও।
আপনি উচ্চে অবস্থান করবেন এর অর্থ হল সেক্ষেত্রে আপনার পেটের উপর একটুও চাপ পড়বে না।প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় এই ধরণের সঙ্গমের অবস্থানে আপনি ও আপনার বাচ্চা কেউই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না এইটি নিশ্চিত করে।এবং এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশের গভীরতা নিয়ন্ত্রণ কতৃত্বের ক্ষমতাও আপনারই বেশী থাকে।
যখন আপনার স্বামী আপনার মুখোমুখি দাঁড়ান, আপনি বিছানার একদম প্রান্তে হাঁটুগুলি ভাঁজ করে শুতে পারেন।যখন সেটি শৈল্পিক ভঙ্গীমার অবস্থানে ঘটে তখন সেক্ষেত্রে আপনার সঙ্গী তার শারীরিক ওজন আপনার উপরে প্রতিস্থাপিত করার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা না হওয়ারই কথা।
একটি কাউচের উপর হাঁটু গেড়ে বসুন,যাতে আপনার পেটটি আপনার সঙ্গীর পিছনের দিকে ঘোরানো অবস্থায় থাকে এবং এই অবস্থায় আপনার সঙ্গীকে সম্মতি দিন পিছন থেকে প্রবেশ করতে।
দুজনে পাশাপাশি শোবেন, আপনার সঙ্গীটি আপনার পিছনের দিকে শোবে এবং এটি তাকে সম্মতি দেবে পিছন থেকে অগভীর ভাবে আপনাকে প্রবেশ করতে।
সঙ্গমের এই আবস্থানগুলি আপনার বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং একইসঙ্গে আপনাকেও সুরক্ষা দেয়।
এখানে সঙ্গমের কিছু ভঙ্গীমা উল্লেখ করা হল যেগুলি প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলার নির্দশ দেওয়া হয় আপনার গর্ভাবস্থাকালীন সম্ভাব্য সমস্যা গুলির সম্মুখীন না হওয়ার জন্য।
এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়েই মুখোমুখি দাঁড়ান।পুরুষটি মহিলাটিকে কোলে তুলে নেন এবং তার হাত ও পা গুলিকে নিজের শরীরের ভিতরে আলিঙ্গন করে জড়িয়ে ধরেন।তার অর্থ হল আপনার পেটে চাপ পড়ে আপনার সঙ্গীর বুকের দ্বারা।যেটি পেটে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করাকেই জাহির করে।
যদি আপনি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন তবে নিশ্চিতভাবে আপনার পেটের তলায় একটি বালিশ প্রতিস্থাপন করুন তা না হলে আপনাকে ভোগ করতে হবে অসম্ভব যন্ত্রণা।
বি.দ্র.—অনেক মানুষ আরো ভালভাবে সঙ্গম করার জন্য সুগন্ধযুক্ত ল্যুব্রিকেন্ট ব্যবহার করেন।তবে প্রথম ত্রৈমাসিক অবস্থায় এটি ব্যবহার না করাই ভাল কারণ এটি যোনির আস্তরণের ক্ষতি করে।
এমন কতগুলি জিনিস আছে যেগুলি মহিলাদের জেনে রাখা প্রয়োজন তাদের গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করার আগে।
সেগুলি হল—
1) বেশীরভাগ মৌখিক মিলন ও পরিণয় এই সময়ে সব থেকে নিরাপদ।শুধু এইটুকু নিশ্চিত করুন যে, আপনার সঙ্গী যেন আপনার যৌনাঞ্চলে ফুঁ না দেন যেহেতু এটি এয়ার এমবলিজমের (বাতাসের বুদবুদ দ্বারা রক্তবাহী ধমনী গুলিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়) কারণ হয়ে দাঁড়ায়,যা বাচ্চা এবং মা উভয়েরই ক্ষতি করতে পারে।
2) সঙ্গমের পরে রক্তক্ষরণ উদ্বেগের কারণ।সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে আলোচনা জরুরী।
3) সঙ্গমের সময় প্রচন্ড উত্তেজনা ও খিঁচুনি হয়ে থাকে,কিন্তু এটি খুব ক্ষতিকারক লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায় যখন সেটি ঘটে সঙ্গমের পরে।এই অবস্থার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
4) সব মহিলা গর্ভাবস্থায় সঙ্গম করতে চান না তাদের যৌন–ক্ষুধার ওঠানামার কারণে।সুতরাং সেক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে দম্পতিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোন যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
প্রথম ত্রৈমাসিক সময়ে সঙ্গম এর ফলাফল নির্ভর করে মহিলাদের হরমোনের বিভিন্নতার উপর।ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের হঠাৎ ঢেউ কামশক্তির অভাব বা যৌনক্ষুধার অভাবের কারণ হয়ে ওঠে।এই কারণের জন্যই কিছু মহিলা তাদের গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে যৌন মিলন পছন্দ করেন না।মর্নিং সিকনেস এবং অবসাদও এর সাধারণ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত।
গর্ভাবস্থায় সঙ্গম সবসময়ের মতই শুধুমাত্র আনন্দদায়ক হতে পারে।সেক্ষেত্রে এই অবস্থায় যৌন মিলনের ক্ষেত্রে,সাবধানতা অবলম্বনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সে বিষয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টি থাকা আবশ্যক,যাতে আপনি ও আপনার বাচ্চা উভয়েই যেকোন ক্ষতি থেকে নিরাপদে থাকেন।যেকোন রকম সমস্যার সম্ভাবনা কমাতে এই সময়ে সঙ্গম করার আগে একজন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।