ছোট শিশুদের প্রথম দেওয়া যেতে পারে এমন কয়েকটি খাদ্য উপাদানের মধ্যে দই হল অন্যতম।যদিও বেশীরভাগ দই গরুর দুধ থেকেই তৈরী হয়,এটি আবার মোষ,ছাগল অথবা উটের দুধ থেকেও তৈরী করা যেতে পারে।এর থেকে আপনি পাবেন আপনার বাচ্চার জন্য অপরিমেয় স্বাস্থ্যকর উপকারীতা।এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আপনি এই সুপার খাদ্যটিকে আপনার সন্তানের খাবারের সাথে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন এবং এটি থেকে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে।
অনেক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে শিশুদের মোটামুটি সাত থেকে আট মাস বয়সে দই দেওয়া যেতে পারে।অন্যদিকে আবার কিছু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মনে করে থাকেন যে দই হল শিশুদের জন্য একদম আদর্শ প্রথম কঠিন খাবার যা তাদেরকে প্রায় ছয় মাস বয়স থেকেই দেওয়া শুরু করা যেতে পারে।এটা সুপারিশ করা হয় যে আপনি দইয়ের সম্পূর্ণ ফ্যাটের বৈশিষ্ট্যের জন্য এটিকে নির্বাচন করুন,কারণ একটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য ফ্যাট অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
প্রথমবার অনেক মায়েরাই অবাক হয়ে যেতে পারেন এই ভেবে যে শিশুদের জন্য দই ভাল কিনা?নিম্নে তার কিছু উপকারীতাগুলি আলোচনা করা হলঃ
দইয়ের মধ্যে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড শিশুদের মধ্যে ভালোরকম রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ভীষণভাবে কার্যকরী। নিয়মিত দই খেলে তা পাকস্থলী থেকে ব্যাকটেরিয়া জনিত(ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি)রোগগুলিকে দূর করে।
দই মধ্যস্থ ল্যাকটিক অ্যাসিড দেহের অ্যাসিড–ক্ষারীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।এটি পেট জ্বালা এবং গ্যাসের সমস্যাকে দূরে ঠেলে রাখতে সাহায্য করে।
আপনার সন্তানকে নিয়মিত দই দিলে সেটি তাকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে।এটা ছাড়াও আপনি এমনকি আপনার সন্তানকে দইয়ের একটা মালিশ করে দিতে পারেন ঘুমকে প্ররোচিত করতে।
দই কেবল ডায়রিয়াকে দূরে ঠেলেই রাখে না এটি ডায়রিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কার্যকরী।একটা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে,যে সকল শিশুদের সঠিক মানের চিকিৎসার পাশাপাশি দই খাওয়ানো হয়েছে তারা তুলনামূলক ভাবে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে যারা কেবলমাত্র একই মানের চিকিৎসা পেয়েছে কিন্তু তাদের দই খাওয়ানো হয়নি তাদের তুলনায়।
দই পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য একটি আদর্শ খাবার।এতে আছে ভিটামিন A,C,B-6,D,E,K,রাইবোফ্লাবিন,ফোলেট এবং নিয়াসিন।এছাড়াও এর মধ্যে উপস্থিত ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক,সোডিয়াম এবং অন্যান্য খনিজগুলি শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য উপকারী।
দই শিশুদের মধ্যে হওয়া মূত্রনালীর সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করে।এটির মধ্যস্থ প্রোবায়োটিকসগুলি সংক্রমণ নিরাময়ে সাহায্য করে এবং প্রস্রাব করার সময় জ্বলনের অনুভূতিকে লাঘব করে।
হেপাটাইটিস এবং জন্ডিস উভয়ই হল লিভার সম্পর্কিত রোগ যার ফল হিসেবে শরীরে অ্যামোনিয়া গঠিত হয়।অনেক পুরানো এবং ঐতিহ্যবাহী ঔষধের বিদ্যালয়গুলি যেমন আয়ুর্বেদ প্রচার করে যে শিশুদের এই ধরনের রোগে তাদের দই খেতে দিতে।
নিম্নলিখিত তালিকায় দইয়ের পুষ্টি মান দেখানো হলঃ
পুষ্টি | প্রতি 100 গ্রামে পরিমাণে | পুষ্টি | প্রতি 100 গ্রামে পরিমাণে |
এনার্জি বা শক্তি | 60 ক্যালোরি | ফাইবার বা তন্তু | 0 g |
জল | 88g | মোট লিপিড | 3.20g |
কার্বোহাইড্রেট | 4g | ক্যালসিয়াম | 120mg |
প্রোটিন | 3.5g | ম্যাগনেসিয়াম | 12mg |
শর্করা | 4.5g | জিঙ্ক | 0.50mg |
সোডিয়াম | 40mg | পটাসিয়াম | 150mg |
আয়রণ | 0.05mg | থিয়ামিন | 0.030mg |
ফসফরাস | 94mg | ফোলেট | 7ug |
ভিটামিন C | 0.5mg | ভিটামিন A | 98ug |
রাইবফ্লাবিন | 0.140mg | ভিটামিন D | 0.1ug |
ভিটামিন B-6 | 0.030mg | নিয়াসিন | 0.070mg |
ভিটামিন B-12 | 0.35mg | ||
ভিটামিন E | 0.05mg | ||
ভিটামিন K | 0.2ug |
উপরে উল্লিখিত মানগুলি হল 100 গ্রাম দইয়ে উপস্থিত বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের আনুমানিক একটা মান।
সাধারণত,বাজারে সহজলভ্য বিভিন্ন স্বাদের সকল প্রকারের দই গুলিই মিষ্টি হয়ে থাকে।বাড়ন্ত শিশুর জন্য চিনি ভাল নয় যেহেতু এটি শিশুদের মধ্যে দন্ত ক্ষয় এবং ওজনের সমস্যার কারণ হতে পারে।দই মধ্যস্থ মিষ্টির পরিমাণ কীভাবে পরীক্ষা করবেন তা ভেবে আপনি হয়ত বিস্মিত হতে পারেন যেহেতু দইয়ের মধ্যেও আবার এটির নিজস্ব কিছু স্বাভাবিক শর্করা উপস্থিত থাকে।অতএব শর্করা শব্দটির প্রতি অথবা এটির বিকল্পগুলি যথা মিছরি,সুক্রোজ,ফ্রুকটোজ ইত্যাদিগুলির পুষ্টি তথ্য বিভাগের স্তরগুলির উপর আপনার নজর দেওয়া উচিত।শিশুদেরকে ফুল ফ্যাট মিল্ক বা সম্পূর্ণ ফ্যাট যুক্ত দুধ থেকে প্রস্তুত দই–ই দেওয়া উচিত যেহেতু এটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন।
যদিও সাদা দই সত্যই খুব ভাল কিন্তু তবু যদি আপনি এর সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত মাত্রা জুড়তে চান,আপনি সেটা করতে পারেন।যদি আপনি ছোট শিশুদের দই দেন,তবে আপনি দইয়ের সাথে ফল অথবা সবজির পিউরি যোগ করে শিশুদের জন্য এটিকে সুস্বাদু করে তুলতে পারেন।যাইহোক,যদি আপনার বাচ্চা চিবাতে পারে,আপনি তবে দইয়ের সাথে কিছু কাটা ফলের বা সবজির টুকরো যোগ করে সেটিকে আপনার সন্তানের জন্য আরও বেশী আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।শিশুদের জন্য দইয়ের সুস্বাদু রেসিপিগুলি হতে পারে দইয়ের সাথে আপেল, কলা, স্ট্রবেরী, অ্যাভোকাডো,গমের দানা অথবা ওটমিল যোগ করে।যাইহোক,আপনার সন্তানের এক বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে দেওয়া দইয়ে স্বাদ বাড়ানোর জন্য মধু সংযুক্ত করা থেকে আপনার বিরত থাকাই উচিত।
দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিক থাকতে পারে যা আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভাবে উপকারী।লাইভ কালচার অথবা প্রোবায়োটিক,যা দুধ থেকে দই তৈরীর সময় ব্যবহৃত হয়,শিশুর অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।যাইহোক,সকল প্রকার দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিক অথবা লাইভ কালচার থাকে না।তখন প্রশ্ন আসে যে কীভাবে আপনি একটা বিশেষ ব্র্যান্ডের দইয়ে ভাল ব্যাকটেরিয়া আছে কি নেই সেটা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।যদিও সেক্ষত্রে এটা প্রতিষ্ঠা করার কোনও নিশ্চিত উপায় নেই,আপনি এই বিষয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য এটির উপরের নির্দেশিকার উপর নজর দিতে পারেন।
যদি দুধ থেকে আপনার সন্তানের এলার্জি হয় অথবা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকে,সে ক্ষেত্রে এটা সুপারিশ করা হয় যে,ডাক্তারের সাথে আলোচনা না করে আপনার বাচ্চাকে দই দেবেন না।দই অথবা দুগ্ধজাত কোনও উপাদান আপনার সন্তানের মধ্যে এলার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ কিনা সে বিষয়ে যদি আপনি নিশ্চিত না হয়ে থাকেন,আপনার তাকে এটা পুনরায় দেওয়ার আগে কমপক্ষে তিন দিন অপেক্ষা করা উচিত।এই উপায়ে আপনি ভালোভাবে জানতে সক্ষম হবেন যে,আপনার সন্তানের এলার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসেবে দই অথবা অন্য কোনও খাদ্য উপাদান ছিল কিনা।
এই এলার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে লাল ফাটা দাগ,মুখের চারপাশে ফুলে ওঠা অথবা বমি।এই লক্ষণগুলি খাবারের সাথে পরিচয় ঘটার দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে হতে পারে।
যদিও ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা শিশুদের মধ্যে সাধারণ নয়,এবং এমনকি যদি শিশুর মধ্যে যদি এটা থাকেও আপনি তাকে দই দিতে পারেন।এর কারণ হল দই তৈরী করার পদ্ধতিটি দুধ থেকে বেশীরভাগ ল্যাকটোজগুলিকেই ভেঙ্গে ফেলে যার ফলে সেটি শিশুদের সহজেই সহ্য হয়।
আপনি শুনে থাকতে পারেন অথবা বহু লোক আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন যে গরুর দুধ থেকে প্রস্তুত দই দেওয়ার জন্য,কিন্তু এক বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সেই দুধ আপনার সন্তানকে দেওয়ার জন্য ঠিক নয়।এর কারণ হল বুকের দুধ কিম্বা ফরমূলা দুধের সাথে তুলনা করলে গরুর দুধ শিশুদের হজম করার জন্য কঠিন। এছাড়াও গরুর দুধে অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদান এবং ফ্যাটের অপর্যাপ্ততা থাকে যা তারা স্তন দুধ অথবা ফরমূলা দুধ থেকে পেয়ে থাকে।
শিশুদের দই দেওয়ার আগে আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে পারেন।
বাচ্চাদের ঘরে পাতা দই দেওয়া সবচেয়ে ভাল,এবং এইভাবেই আপনি 1 বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ঘরে দই পাততে পারেন।
উপকরণ
পদ্ধতি
সুতরাং,যখন গরুর দুধ শিশুদের জন্য একটা ভাল ধারণা হবে না,আপনি সর্বদাই সে ক্ষেত্রে দইয়ের দিকে যেতে পারেন।দাঁতের কোনও রকম সমস্যা এড়াতে আপনি ভিন্ন ধরনের ও কোনওরকম সুগন্ধি ছাড়া কেবলমাত্র সাদা দই দেওয়াই সুনিশ্চিত করুন।