ভারত এক বৌচিত্র্যময় দেশ,এর বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধর্মের নানা সংস্কৃতির লোকের বাস।আর তার সাথেই ভারতবর্ষ হল এক উৎসব মুখরিত দেশ,দেশবাসীর দ্বারা পালিত এক সারি উৎসবগুলির প্রতিটি অপরটির থেকে আরও বেশি প্রাণবন্ত এবং মনহরণকারী ঐন্দ্রজালিক।প্রায় প্রতিটি উৎসবই কোনও না কোনও দেব–দেবীর সম্মানার্থে উদযাপিত হয় আর সেগুলি অত্যন্ত উৎসাহ এবং ধুমধামের সাথে আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয়।আমাদের দেশে পালিত বেশিরভাগ উৎসবের সাথেই আনন্দ–উল্লাস,নানান রঙ,প্রার্থনা,উপাসনা জড়িত এবং চারিদিকে গানবাজনা ও উজ্জ্বল আলোর ঝলমল রঙে পরিব্যপ্ত হয়ে ওঠায় এটি শিশুদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে ওঠে।আর এটি হল এমন একটি সময় যখন তাদের জন্য কড়া শাসনের বাইরে গিয়ে কিছুটা ছাড় থাকে এবং মনের আনন্দে তারা ছুটে বেড়ায়।যাইহোক,কেবল হৈ–হুল্লোড়–আনন্দই নয়,এই সকল উৎসবগুলির পিছনে থাকা এর ইতিহাস এবং প্রাসঙ্গিকতাগুলি সম্পর্কেও তাদের জানা প্রয়োজন।এগুলি সম্পর্কে জানা আবার তাদের সাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার বাড়ানোর পক্ষেও সর্বদা ভাল।আর তার জন্য আপনার প্রয়োজন এগুলি পরিকল্পনার প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে তাদের মনেপ্রাণে জড়িত করা।ভারতীয় উৎসবগুলির বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ এখানে করা হল যেগুলি আপনি আপনার শিশুকে জানাতে পারেন।
ভারতীয় উৎসবের তালিকা,যেগুলি আপনার শিশুর অবশ্যই জানা উচিত
ভারতে অনেক ধর্মীয় উৎসব আছে যার প্রতিটির পিছনে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি।কিছু তথ্যের সহিত এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
1. দিওয়ালি বা দীপাবলি
দীপাবলি বা দিওয়ালি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে উৎসাহ এবং আবেগের সাথে মহা ধুমধাম এবং আড়ম্বরপূর্ণভাবে হিন্দুদের দ্বারা পালিত হয়ে থাকা এক অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব।এই উৎসবের সূত্রপাত পূর্বের ইতিহাসে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রের দীর্ঘ 14 বছর বনবাসের পর পুনরায় অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে উদযাপন করাকে ঘিরে।আর তাঁর এই প্রত্যাবর্তনের আনন্দে অযোধ্যাবাসীর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা–ভক্তি প্রদর্শনের জন্য তারা তাদের বাড়ির দোরগোড়া এবং জানলায় বাতি প্রজ্জ্বলনের দ্বারা সারা শহরটিকে আলোকিত করে সাজিয়ে তুলেছিল।এমনকি এখনও পর্যন্ত ঐ দিনটিতে বাড়ির ভিতর এবং বাইরের সর্বত্রই ছোট ছোট প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে তোলা হয়।আর বলা হয়ে থাকে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের এই আলোগুলি সকল খারাপের উপর ভালোর প্রতিষ্ঠাকে প্রতিস্থাপিত করে।দীপাবলিতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,উপহার,মিষ্টি বিনিময়ের দ্বারা একে অপরের সাথে মিলেমিশে এই উৎসবটি উদযাপন করে।এই উৎসবটিতে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই নানা রঙ–বেরঙের আতশবাজি,যেমন ফুলঝুড়ি,তুবড়ি,রঙমশাল ইত্যাদি ফাটানোর মধ্য দিয়ে চারপাশ আলোয় আলোকিত করে,খুশির জোয়ারে ভেসে চলেন।দীপাবলির দিনটিতেই আবার অনেক মানুষ লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করে থাকেন।তারা তাদের ঘর বাড়ি পরিষ্কার করে ছোট–বড় নানা রঙের আলোয় সাজিয়ে তোলেন যাতে লক্ষ্মীদেবী অবাধে তাদের গৃহে প্রবেশ করে তাদের পরিবারের উপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।দীপাবলি সাধারণত পালিত হয়ে থাকে দশেরা ও বিজয়া দশমীর প্রায় 15-20 দিন পরে এবং দিপাবলী দিনটির আগে ও পরে মিলিয়ে 5 দিনের জন্য এটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এর শেষ দিনটি উত্তর ভারতে “ভাই দুজ“বা বাংলায়“ভাই ফোঁটা” হিসেবে পালিত হয়,যেখানে বোনেরা তাদের ভাইয়ের কপালে তিলক টেনে তার দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং ভাই বা দাদার প্রতি তাদের ভক্তি–ভালবাসার প্রকাশ করে।দক্ষিণ ভারতে এই উৎসবটিকে উদযাপন করা হয় দুষ্ট দানব নরকাসুরকে পরাস্ত করে শ্রীকৃষ্ণের বিজয় স্মরণে।
2. হোলি
ভারতের একটি অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রসিদ্ধ উৎসব হোলি আবার “রঙের উৎসব“নামেও অভিহিত।এটি হল রঙ,সংগীত, নৃত্য,আনন্দ,মজা এবং কৌতুকপূর্ণতার সমারহে সমৃদ্ধ একটি মুখরিত উৎসব।এটি বসন্ত কালে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।রাক্ষসী হোলিকাকে ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত প্রহ্লাদ হত্যা করেছিলেন যে দিনে তার স্মরণেই এই উৎসবটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।দক্ষিণ ভারতের কিছু সংস্কৃতির লোকেরা আবার এ দিনটিকে পালন করেন সেই দিন হিসাবে, যখন মহাদেব তাঁর তৃতীয় চোখ খুলে প্রেমের দেবতা কামদেবকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন।ভগবান কামদেব বিশ্বকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ভগবান শিবের শান্তিকে বিঘ্নিত করার সাহস করার কারণে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘে তারা ভগবান কামদেবের অর্চনা করে থাকেন।লোকেরা একে অপরকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে এবং হোলিকা দহন বা হলিকাকে হত্যা করার জন্য একটি পূজা অনুষ্ঠিত করে।হোলি আবার শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর সঙ্গিনী রাধার মধ্যে প্রেম উদযাপন করারও একটি প্রতিকী রূপ।এর পিছনের কাহিনীটি হল এই যে,শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁর মাকে অভিযোগ জানায় যে সে কত কালো আর রাধার গায়ের রঙ কত পরিষ্কার,সুন্দর ও ফরসা,তখন মাতা যশোদা তাঁকে রাধার মুখে রঙ নিক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছিলেন,আর সেই থেকেই রঙ দেওয়ার ব্যাপারটির সূত্রপাত হয় বলে মনে করা হয়।হোলির দিন বাচ্চারা একে অপরের হাতে–পায়ে–মুখে রঙ মাখায়,পিচকিরি দিয়ে রঙ জল ছোড়ে,অনেক সময় কাদা মাটি নিয়েও ছোঁড়াছুড়ি করে,বড়দের পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে আর বিনিময়ে বড়রা তাদের আশীর্বাদ করেন হাতে মুঠো ভরে লোভনীয় মঠ–ফুটকড়াই দিয়ে।অনেক প্রাপ্ত বয়স্করা আবার এ উৎসবটিকে পালন করেন ভাঙ(হোলির সময় গাঁজা গাছ থেকে বিশেষ ভাবে তৈরী একপ্রকার পানীয়)পানের দ্বারা একটু অন্যরকম ভাবে।
3. দশেরা,নবরাত্রি আর দুর্গা পূজা
ভারতে নয় রাত ব্যাপী হিন্দু উপাসনা এবং আশ্বিন মাসের নয় দিন নৃত্য পরিবেশনের দ্বারা নবরাত্রি উৎসবটি আড়ম্বরের সাথে পালন করা হয়ে থাকে।আর এই নয় রাত ব্যাপী ভারতের দেব–দেবীর সকল ধরণের শক্তির আরাধনার সাথে এটি উদযাপিত হয়।নয় রাত ধরে মাটির প্রদীপকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের সাথে মানুষ“গড়বা” নৃত্য পরিবেশন করেন।তামিলনড়ুতে প্রথম তিন দিন দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে,মাঝের তিনদিন দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে আর শেষের তিনদিন দেবী লক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে আরাধনা করা হয়।দশেরা হল নবরাত্রির নয় দিনের পর দশম দিনটি এবং এই দিনটি পালন করা হয় যেদিন ভগবান রামচন্দ্র অসুর রাবণকে পরাস্ত করেছিলেন।এই নয় দিন ব্যাপী উৎসবের সময় লোকসঙ্গীত সহযোগে মানুষ শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে রামলীলা অথবা রামের কাহিনী মঞ্চস্থ করে বেড়ান।আর দশম দিনে রামের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা রাবণ এবং তাঁর পুত্র মেঘনাথ এবং কুম্ভকর্ণের নির্মিত বিশাল মূর্তিগুলিতে প্রজ্জ্বলিত তীর বর্ষণ করে সেই বিশালাকার মূর্তিগুলি জ্বালিয়ে দেন।এই বিশালাকার কুশপুত্তুলিকাগুলি আলোকসজ্জা এবং আতশবাজিতে নেমে আসে আর লোকেরা এই প্রদর্শনীতে সানন্দে উল্লাসিত হয়ে চিৎকার এবং নাচ করতে থাকে।পশ্চিমবঙ্গে,লোকেরা মহিষাসুর অসুরের বিরুদ্ধে দেবী দুর্গার বিজয় মহা ধুমধামের সাথে উদযাপন করে থাকেন।এটিকে বলা হয় “দুর্গা পূজা“,আর এই দশ দিন ধরে শহর নানা আলোকসজ্জা এবং প্যান্ডেলে সুশোভিত হয়ে যেন এক চিত্রশালায় রূপান্তরিত হয়ে ওঠে আর তার সাথেই অনুষ্ঠিত হয় নানা নৃত্য–গীতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি। অবশেষে আসে বিষণ্ণতার সুরে বিজয়ার পর্ব,গঙ্গা নদীর জলে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা।মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন,ধুনুচি নাচ,ঢাকের তালে চোখের কোণে জলের ফোঁটায় মাকে বিদায় জানিয়ে বলি“মাগো আসছে বছর আবার এসো“।এরপরই বিদায়ের গ্লানি ভুলে উঠতে বাঙালীরা মেতে ওঠেন একে অপরের সাথে কোলাকুলিতে,বিজয়ার প্রণামে আর সাথে চলে মিষ্টি মুখের পালা।
4. ওনাম
দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে মালায়ালম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চিংগম মাসে ইংরাজী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাধারণত আগষ্ট–সেপ্টেম্বরে মাসে ওনাম সর্বাধিক প্রাণবন্তভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে মহাবলী রাজার বাড়িতে আসার উপলক্ষকে কেন্দ্র করে।এটি দশ দিন ব্যাপী উদযাপিত হয়ে থাকে আর সেখানকার অধিবাসিরা তাদের বাড়ির প্রবেশ দ্বারের সামনে রঙ–বেরঙের রঙ্গোলী এঁকে তাদের ঘর বাড়ি পুষ্প দ্বারা সুশোভিত করে তোলেন।এই উৎসব চলাকালীন,4টি বিভিন্ন ধরণের কারি সহ ‘ওনম সাধ্যা’ নামে প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী ভোজগুলি কলা পাতার উপর পরিবেশন করা হয়।স্নেক বোট রেস এবং কাইকোট্টিকালি নৃত্য হল ওনমের দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।এখানে দশ দিন ব্যাপী একটি ওনাম কার্নিভাল চলে যেখানে কেরালার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী এবং সংস্কৃতিটিকে যতটা ভালভাবে সম্ভব প্রদর্শন করানো হয়।
5. গণেশ চতুর্থী
মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক পালিত একটি উৎসব হল গণেশ চতুর্থী।গজানন ভগবান গণেশের জন্ম সময়কে আনন্দ প্রকাশের দ্বরা এটি উদযাপন করা হয়।জনশ্রুতি আছে যে দেবগণকে সাহায্য করার জন্য এবং অসুরদিগের অভিলাষ ব্যর্থ করার জন্য দেবাদিদেব শিব ভগবান গণেশকে সৃষ্টি করেছিলেন।এই দশ দিনের উৎসবে ভগবান গণেশের বিশাল মূর্তিগুলি বাড়িতে এবং রাস্তায় তৈরী করা মঞ্চগুলিতে স্থাপন করা হয় এবং ভগবানের উদ্দেশ্যে “মোদক” মিষ্টান্ন তৈরী করে তাঁকে প্রদান করা হয়।আর এই উৎসবের শেষ দিনে মানুষকে মহা ধুমধামের সাথে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে নদী এবং সমুদ্রে যেতে দেখা যায়।
6. ইদ–উল–ফিতর
ইদল–উল–ফিতর হল সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এক অত্যন্ত মূল্যবান উৎসব।দীর্ঘ 30 দিন ব্যাপী রমজানের উপবাসের সমাপ্তিতে উদযাপিত ইসলাম সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন।এই উৎসবটি তিন দিন ধরে পালন করা হয়,এবং নতুন পোশাক,উপহার বিনিময় এবং বাচ্চাদের হাতে অর্থ প্রদানের দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায় তাদের এই উৎসবটিকে আরও আনন্দমুখরিত করে তোলে।বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করার সময় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাও হল এই উৎসবটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
7. জন্মাষ্টমী
বিষ্ণুর নবম অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের দিনটির সম্মানে জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়।এটি দুদিন ধরে চলে,প্রথম দিনটি হল গকুল অষ্টমি আর দ্বিতীয় দিন জন্মাষ্টমী।এই সময়ে মহিলারা শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় দুটি খাদ্য দুধ এবং মাখন দিয়ে সুসাদু রেসিপিগুলি প্রস্তুত করে থাকেন।আর মধ্যরাত পর্যন্ত তারা উপবাস পালন করেন এবং তারপর মন্দির পরিদর্শন করে প্রভুর উপাসনা করেন।এই উৎসবে ‘দইয়ের হাড়ি‘ নামক একটা মজার খেলা খেলা হয়,যেখানে মানুষ একে অপরের পিঠের উঠে উঁচু একটি মানুষের পিরামিড গঠণ করেন আর পিরামিডের শীর্ষে থাকা ব্যক্তিকে সিলিং থেকে ঝোলা দই পূর্ণ একটি মাটির হাঁড়িকে ফাটিয়ে সেখান থেকে দইয়ের আস্বাদ গ্রহণ করতে হয়।
8. পোঙ্গল
পোঙ্গল হল মূলত দক্ষিণ ভারতে 3 দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত ফসল কাটা এবং গোলাজাত করার একটি উৎসব।প্রথম দিনে ঘর–বাড়ি পরিষ্কার করা হয় আর বাচ্চারা উৎসবাগ্নিকে ঘিরে সাথে নাচ–গান করে থাকে।উৎসবের দ্বিতীয় দিনটিকে বলা হয় সূর্য পোঙ্গল,সেদিন পোঙ্গল নামক এক প্রকার মিষ্টান্ন তৈরী করা হয় এবং সূর্য দেবতাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।আর তৃতীয় দিনটি হল মাতু পোঙ্গল যেখানে লোকেরা গরুর উপাসনা করে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
9. বৈশাখী
ভারতবর্ষে শিখ সম্প্রদায় লোকেদের কাছে বৈশাখী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব,যেটি মূলত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি করে উদযাপন করা হয়।এটি হল পাঞ্জাবি নববর্ষ এবং ফসল কাটা ও গোলাজাত করার একটি সংমিশ্রিত উৎসব।বৈশাখীর দিন পাঞ্জাবীরা ভাঙড়া নাচ করে থাকেন।এই দিনটি আবার খালসা সম্প্রদায়ের জন্মোৎসব হিসেবেও পালিত হয়,যেটি গুরু গোবিন্দ সিং শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবর্তন করেছিলেন কোনও উচ্চ বা নিম্ন পদাসনের পরিবর্তে সকলের মধ্যে সমাবস্থান প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
10. মহা শিবরাত্রি
এই উৎসবটি দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনায় উদযাপিত হয়ে থাকে।এটি ভগবান শিব এবং তাঁর স্ত্রী পার্বতীর মধ্যে মিলন উদযাপনে পালিত হয়ে থাকে।লোকেরা সারা দিন উপবাসে থেকে শিব লিঙ্গকে দুধ এবং পবিত্র গঙ্গা জলে স্নান করান।এর পিছনে থাকা জনশ্রুতিটি হল,রাজা ভাগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষদের আত্মার মুক্তিলাভের জন্য প্রার্থনা করতে তাঁর রাজত্ব ছেড়েছিলেন।তিনি গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তিনি যেন তাঁর পূর্বপুরুষের ছাইগুলি ধুয়ে দিয়ে তাদের উপর থাকা অভিশাপটি মুছে ফেলেন যাতে তারা স্বর্গে পৌঁছতে পারেন।কিন্তু একমাত্র মহাদেবই তাঁর সমগ্র বংশকে মেনে নিয়েছিলেন আর তাই তিনি মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন।ভগবান শব দৃঢ় শিলা রূপে এই পৃথিবীতে এসে পৌঁছিয়েছিলেন,আর সেখান থেকেই শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢেলে স্নান করানোর গল্পটির উদ্ভব হয়েছিল।
11. রাখী বন্ধন
ভাই–বোনের মধ্যে এক দৃঢ় বন্ধনের সম্মানার্থে রাখী–বন্ধন উৎসবটি পালন করা হয়।এটি সাধারণত উত্তর ভারতে হিন্দু এবং শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে উদযাপিত হয়।রাখী–বন্ধনের দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখী নামক এক পবিত্র সূতা বেঁধে দেয় ভাইয়ের প্রতি তার শ্রদ্ধা–ভালোবাসা এবং তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং বোনের মঙ্গলের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব স্মরণ করানোর প্রতীক হিসেবে এটি পালিত হয়।আর এর সাথে চলে ভাই-বোনের একে অপরকে উপহার,অর্থ ও মিষ্টি দেওয়া–নেওয়ার পালা।বড় ভাইয়েরা সাধারণত তাদের বোনেদের অর্থের উপহার দিয়ে থাকে আর সেই কারণে তারা বোনেদের নানাভাবে জ্বালাতনও করে থাকে মজার ছলে।অনেক উপহার প্রাপ্তি এবং ভাল ভাল খাবার তাদের ভাইদের খাওয়ানোর জন্যে অনেক মেয়েরাই এই উৎসবটির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে।
12. করোয়া চৌথ
করোয়া মানে মাটির পাত্র এবং চৌথের অর্থ হল চতুর্থ।এই উৎসবটি উত্তর ভারতে কার্ত্তিক মাসে ক্ষীয়মাণ চাঁদ ওঠার চতুর্থ দিনে বিবাহিত মহিলাদের দ্বারা পালিত একটি অনুষ্ঠান।এই দিন সূর্যোদয় থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত মহিলারা উপবাসে থাকেন এবং তাদের স্বামীর সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রার্থনা করেন।তারা তাদের উপবাস ভঙ্গ করেন কেবলমাত্র চাঁদ দেখার পরেই। উদযাপিত এই অনুষ্ঠানটি আবার তাদের স্বামীর উপর তাদের আনুগত্যও প্রকাশ করে।
13. গুরু নানক জয়ন্তী
এটি সারা বিশ্ব ব্যাপী শিখ সম্প্রদায়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।গুরু নানক জয়ন্তী পালিত হয় শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মদিনটিকে পালন করার উদ্দেশ্যে।এই উৎসবের দুইদিন আগে সারা দিন–রাত ধরে শিখ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র গ্রন্থ সাহিব পড়া হয়।উৎসবের দিন অমৃতসর শহরে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষকভাবে সুসজ্জিত প্রাণবন্ত শোভাযাত্রাগুলি বের হয়।
14. বড়দিন
বড়দিন বা ক্রিসমাস হল যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে 25 শে ডিসেম্বর খ্রিস্টান ও খ্রিস্টান বহির্ভূত প্রায় অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যেই পালিত সারা বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত জনপ্রিয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি।কলকাতা,দিল্লী,মুম্বাইয়ের মত বড় বড় শহরগুলিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে এই উৎসবটি উদযাপন করা হয়।বড়দিনের সময় উপহার বিনিময়,নানা রকল আলোক তারা দিয়ে ঘর–বাড়িকে সাজিয়ে তোলা এবং ক্রিসমাস ট্রীয়ের উপর নানা রকম উজ্জ্বল বর্ণের ঘন্টা,বল,সুসজ্জিত উপহারের বাক্স দিয়ে সাজিয়ে সান্তার আগমনের পথ প্রশস্ত করা, পরিবারের পুনর্মিলন–এগুলি তো সধারণ।নানা ধরণের সুস্বাদু কেকে যেমন পাম কেক,ফ্রুট কেক,চকোলেট কেক ইত্যাদি হয় তৈরী করা হয় অথবা কিনে আনা হয়।বাচ্চা এবং প্রাপ্ত বয়স্করা সমবেত স্বরে রাত্রে ক্যারোল সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং সান্তা মধ্য রাত্রে তাঁর শ্লেজে চেপে বাচ্চাদের জন্য উপহার সামগ্রীর সম্ভার নিয়ে এসে বাড়ির দোরগোড়ায় শিশুদের জন্য দিয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করা হয়।পরের দিন সকালে সাধারণত বাচ্চারা ক্রিসমাস ট্রিয়ের চারপাশে গুচ্ছ করে থাকা উপহারের কাছে সমবেত হয় এবং তাদের প্রাপ্ত উপহারগুলি খোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
15. মকর সংক্রান্তি
সৌর বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী,পৌষ মাসের শেষ দিনটিতেই মকর সংক্রান্তি উৎসবটি পালিত হয়ে থাকে।এই উৎসবের পিছনে থাকা জনশ্রুতিটি হল,মহাভারতে বীর ভীষ্ম তাঁর জীবনসূর্য অস্তের জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিলেন এবং তার জন্য তিনি এই দিনটিকেই চয়ন করেছিলেন কারণ এই দিনটি হল সেই শুভ দিন,যেদিন একজন ব্যক্তিকে চির সুখের দিকে পৌঁছে দিতে পারে বা ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করতে পারে।এই দিনটি পবিত্র গঙ্গা নদীতে ডুব দেওয়ার পর সূর্যদেবের প্রার্থনার দ্বারা উদযাপন করা হয়।মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোটিও হল একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যেটি বাচ্চারা বিশেষভাবে উপভোগ করে ও ভালবাসে।গুজরাট রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে এই দিনে একে অপরকে হাতে তৈরী উপহার সামগ্রী দেওয়ার রীতি আছে।
উপরে বর্ণিত উৎসবগুলি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবারের লোকেরা বিভিন্নভাবে উদযাপন করে থাকেন।প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরম ভক্তি,প্রাণবন্ত জীবন এবং চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা হয়। আপনার শিশুরা এই সকল উৎসবগুলি সম্পর্কে জানতে অবশ্যই ইচ্ছুক হবে।প্রতিটি উৎসবের উদ্ভব এবং কেন সেগুলি উদযাপন করা হয় তা অনুধাবন করার পর আপনার শিশুটিও আপনার সাথে সেগুলি উদযাপন করতে আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠবে।তারা তাদের বন্ধুদেরও সেগুলি শেখাতে পারবে এবং তাদের জ্ঞানের দক্ষতা ও ভান্ডার উজার করে তারা আবার আত্মীয় পরিজনদের হৃদয়েও দাগ টানবে।সুতরাং তাদের এগুলি শেখানো ও জানানোর পথে সম্মুখবর্তী হয়ে এগিয়ে যান এবং সকল উৎসবগুলিতেই একসাথে আনন্দ উপভোগ করুন!