অনেক বছর ধরেই জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ এবং ডিভাইস গুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে।সময়ের সাথে সাথে এদের উন্নতি ঘটছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য এগুলো আরো বেশী কার্যকর হয়ে উঠেছে জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক সময়ে মহিলাদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রক যে ডিভাইস টি আবিষ্কার হয়েছে তা হল ভ্যাজাইন্যাল রিং। এটাতে মনযোগ কারার মত প্রচন্ড আকর্ষন রয়েছে।এই ডিভাইস টি যোনিতে গর্ভনিরোধক হরমোন ক্ষরণ করে এবং অকাল গর্ভধারণ রোধ করে। এই প্রবন্ধে ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহারের বিভিন্ন দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল।
ভ্যাজাইন্যাল রিং নামটি থকে বোঝা যাচ্ছে যে এটা হল গোলাকার একটা রিং এর মত বস্তু যা যোনি তে লাগানো হয়।এটা তৈরী হয় নরম প্লাস্টিক দিয়ে যার ওপর হরমোণের প্রলেপ দেওয়া হয় যা মহিলাদের গর্ভধারন হওয়া থেকে রক্ষা করে।।এই সহজ গর্ভনিরোধক-টি বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পওয়া যায় এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র থেকে পাওয়া যায়।
ভ্যাজাইন্যাল রিং কাজ করে নিষেকে বাধা প্রদানের মাধ্যমে।রিং টাতে দুটি হরমোন,ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টিন এর প্রলেপ দেওয়া থাকে যা যোনির মধ্যে বসানো হয়।
ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় ছাড়া যেকোনো সময়ে এটা ব্যবহার করা যায়।এটার মানে হল মাসের মধ্যে তিন সপ্তাহ ভ্যাজাইন্যাল রিং পরে থকতে হবে এবং এক সপ্তাহ খোলা রাখতে হবে ঋতুস্রাবের জন্য।একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়ে গেলে নতুন রিং পরতে হবে অকাল গর্ভসঞ্চার আটকানোর জন্য।
ভ্যাজাইন্যাল রিং প্রবেশ করানো এবং এটা কাজ110 করানো খুব সহজ। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে রিংটা ঢোকাবার আগে আপনার হাত দুটো স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করুন এবং দেখে নিন রিংটা ব্যবহার যোগ্য সময় সীমার মধ্যে আছে কিনা।জীবাণুমুক্ত প্যাকেট টা খুলুন এবং রিং টাকে চেপে ধরে ছোট করুন যাতে দুটো ধার একসাথে লেগে যায় এইভাবে এটাকে যোনিতে প্রবেশ করান এবং প্রবেশ করানোর পর ছেড়ে দিন যাতে সেটা আবার গোলাকার আকার ধারণ করে।
রিং টা বের করার জন্য আপনার জীবাণু মুক্ত হাতটা যোনির মধ্যে প্রবেশ করান এবং আস্তে আস্তে রিং টাকে ধরে বাইরের দিকে টানুন। বের করে নিয়ে এসে আসল প্যাকিং জিনিস দিয়ে প্যাক করুন এবং শৌচ বর্জ্যের সাথে ফেলে দিন।মুত্র দিয়ে ধোবার পরামর্শ দেওয়া হয় না।
ভ্যাজাইন্যাল রিং ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রন করার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে গর্ভনিরোধক পিল এর মত।পিরিয়ড পেতে হলে রিংটি তিন সপ্তাহের জন্য লাগান এবং খুলুন ঠিক সেই ভাবে যে ভাবে আপনি রিং লাগিয়ে ছিলেন। আপনার পিরিয়্ড শুরু হবে ওটা খুলে নেবার পর থেকেই।সাধারণত পিরিয়ড হয়ে গেলে আবার নতুন রিং লাগাতে হয়। নতুন রিং ঢোকানোর সময় সামান্য রক্তপাত হয় তবে সেটা কোন ব্যপার নয়। যখন স্যানিটারি প্যাড বা ট্যাম্পুন ব্যবহার করছেন তখন ওটা রেখে দিতে পারেন। তবে কখনই মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করবেন না সেটা রিং এর অবস্থান সরিয়ে দিতে পারে।
ভ্যাজাইন্যাল রিং আপনাকে ঋতুচক্রের পরিবর্তন বা নতুন করে শুরু হবার সুযোগ দেয়।পদ্ধতিটা খুব সহজ এবং আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করে নেবেন।যদি আপনি পিরিয়ড না চান তাহলে রিং টা টানা চার সপ্তাহ পড়ুন তিন সপ্তাহের বদলে। চতুর্থ সপ্তাহে এটাকে বদলে নতুন রিং পড়ুন ঠিক সেই বারে যেই বারে আপনি রিং টা প্রথমে পড়েছিলেন।মাঝার স্পটিং বা সামান্য রক্তপাত হতে পারে যখন আপনি নতুন রিং টা পড়বেন পিরিয়ড এড়াবার জন্য,যদিও এর কোন ক্ষতিকারক প্রভাব আছে কিনা এখন পর্যন্ত প্রমান হয়নি।
এটা হল অন্যতম কার্যকরি গর্ভনিরোধক পদ্ধতি যার কার্যকারীতার হার 91%. সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল এটা খুব দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় লাগানোর এবং খোলার সময়।
সব থেকে ভাল কাজ পাওয়ার জন্য ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহারে সময় কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে সে গুলো নিচে বলা হল।
সমস্ত জাতি এবং বয়সের মহিলারা এটা ব্যবহার করতে পারেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত অসুবিধা না থাকলে যে কোন মহিলা কনোরকম অসুবিধা ছাড়াই এটা ব্যবহার করতে পারেন। যারা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তারা সন্তান প্রসবের পর 21তম দিন থেকে এটার ব্যবহার শুরু করতে পারেন।তবে রিংটা মায়ের দুধ এর পরিমাণ কমিয়ে দেয় তাই প্রসবের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত যেই সময়টা শিশুর একান্ত দুধ খাওয়ার সময় সেইটুকু সময় রিং ব্যবহার না করাই ভাল।গর্ভপাত বা গর্ভস্রাব হবার পরপরই এটা ব্যবহার করা যায়।
যদিও প্রায় সকল মহিলারা ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহার করতে পারেন তবুও যে সকল মহিলাদের নিচের সমস্যা গুলো আছে তাদের ভ্যাজাইন্যাল রিং না পড়াই ভাল।
গর্ভনিরোধণ ছাড়াও ভ্যাজাইন্যাল রিং আরো কয়েকভাবে উপকার করে থাকে যেমন-
এটা লাগানো খুব সহজ এবং প্রতিদিনের যত্ন নেবার কোনো ঝামেলা নেই। এটা যৌন আনন্দ উপভোগে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটায় না,তাই এটি খুব জনপ্রিয় গর্ভনিরোধক।
যেহেতু রিং হল হরমোনাল জন্ম নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি তাই গর্ভনিরোধক পিল এর মত এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।কিছু পার্শ্ব প্রতক্রিয়া নিচে দেওয়া হল।
কিছু কিছু ঝুঁকি দেখা যায় যেমন শিরা বা ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া এবং স্তন ক্যান্সারের সম্ভবনা সামান্য বেড়ে যায়।
কখনো কখনো আপনি রিং খুলতে ভুলে যেতে পারেন,এই সময়ে আপনি অসুরক্ষিত হয়ে পরেন,যেহেতু হরমোন গুলোর আয়ু শেষ হয়েছে।যাইহোক মনে পরার সাথে সাথে রিংটা খুলে ফেলুন।যদি তিন সপ্তাহের পর থেকে সাত দিনের মধ্যে খুলে ফেলেন তাহলে ঋতুচক্রের জন্য 7 দিনের বিরতি দিয়ে নতুন ভ্যাজাইন্যাল রিং লাগান। যদি তিন সপ্তাহের পরে এক সপ্তাহের বেশী সময় পারিয়ে যায় রিংটা খুলতে তাহলে খোলার সাথে সাথে নতুন রিং পরে ফেলুন।পিরিয়ড চলাকালীন যদি রিং খুলতে ভুলে যান এবং তখন যৌনসঙ্গম করেন তাহলে অবশ্যই আপৎকালীন গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে হবে অকাল গর্ভধারণ রোধ করতে।অতিরিক্ত গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে ভুলবেন না পরের এক সপ্তাহ যৌনসঙ্গম করার সময়।
অনেক সময় রিংটা আপনা থকে খুলে যায় এবং বেরিয়ে আসে সঙ্গম করার সময়ে বা অন্য সময় যদি এটা ঠিকমত লাগানো না হয়।লাগানোর পর কখন খুলে গেছে এবং কতক্ষণ বাইরে ছিল তার ওপর নির্ভর করে,যাইহোক নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন।
ভ্যাজাইন্যাল রিং যৌন সংক্রামক ব্যাধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে না। যদি এই ধরণের কোন সম্ভবনা থাকে তাহলে কন্ডোম ব্যবহার করবেন।
নিম্নলিখিত কিছু ওষুধের সাথে ভ্যাজাইন্যাল রিং এর বিক্রিয়া হয় এবং এর ফলে রিং এর কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে যায়।আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে নিচের ওষুধ গুলো খবেন যখন আপনি ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহার করছেন।
এটা প্রতিস্থাপন করার এক সপ্তাহ পর থেকে কাজ শুরু করে। যদি আপনি এটা ঋতুচক্রের প্রথম দিনেই লাগান তাহলে যেদিন লাগিয়েছেন সেদিন থেকেই এটা কাজ শুরু করে। অন্য কোনোদিন যদি এটা লাগানো হয় তবে অতিরিক্ত গর্ভনিরোধক পরবর্তী 7 দিনের জন্য ব্যবহার করুন।
আপনার সন্তান প্রসবের 21 দিন পর আপনি ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহার করতে পারবেন। যদিও এই সময় আপনার বাচ্চাকে আপনি বুকের দুধ খাওয়াবেন, তাই ভ্যাজাইন্যাল রিংটি আপনাকে ছয় মাস পর ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়,যেহেতু রিং এর হরমোন স্তন দুগ্ধের পরিমান কমিয়ে দেয়।
গর্ভপাত বা গর্ভস্রাবের ঠিক পরেই আপনি এটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
যদিও এটা ক্ষতিকারক নয় ভ্যাজাইন্যাল রিং ব্যবহার করা যখন আপনি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন।রিংটি স্তন দুগ্ধের পরিমান কমিয়ে দেয়। তাই পরামর্শ দেওয়া হয় প্রসবের ছয় মাস পর থেকে এটা ব্যবহার করার জন্য।
তাই প্রশ্নাতীত ভাবে বলা যায় যে ভ্যাজাইন্যাল রিং হল অত্যন্ত কার্যকর একটা গর্ভনিরোধক উপকরণ যখন এটিকে অধ্যাবসায় এবং সঠিক যত্নের সাথে ব্যবহার করা হয়। আপনি আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন ভ্যাজাইন্যালরিং এর সম্বন্ধে আরো বেশী কিছু জানতে, এবং এটা ব্যবহার শুরু করুন অকাল গর্ভাবস্থা রোধ করতে।