In this Article
- গর্ভপাতের কারণে হয়ে থাকা রক্তপাত কীরকম হয়ে থাকে?
- একটি গর্ভপাতের পর কত দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে?
- গর্ভপাতের পরে অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া কি?
- অসম্পূর্ণ গর্ভপাত কি?
- গর্ভপাত পরবর্তী রক্ত ক্ষরণের জটিলতাগুলি
- একটি গর্ভপাতের পর হওয়া অস্বাভাবিক রক্তপাতের চিকিৎসা
- কখন ডাক্তারকে ডাকা প্রয়োজন?
- গর্ভপাতের পরে রক্ত ক্ষরণ মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা
- একবার রক্ত ক্ষরণটি বন্ধ হয়ে গেলে জীবনটিকে যেভাবে পরিচালিত করবেন
একটি মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হল গর্ভদশার বাইশ‘তম সপ্তাহে পৌঁছানোর আগেই গর্ভাবস্থাকে খুইয়ে বসা।একটি গর্ভপাত নিঃসন্দেহে একটি বিধ্বংসী ও হৃদয় ভঙ্গকারী ঘটনা, বিশেষ করে যখন আপনার পরিবারে এক নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর জন্য আপনি নিজেকে প্রস্তুত করে চলেন।যদিও এটি দুর্ভাগ্যজনক, তবে গবেষণা থেকে প্রমাণিত যে, 10%-20% গর্ভাবস্থারই পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে গর্ভপাতের মাধ্যমে।যদিও মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হওয়াটা সাধারণ একটা ঘটনা, তবে এটি একজন মায়ের পক্ষে শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং দুঃখ–মর্ম যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠতে পারে।এই অবস্থাটির সাথে মোকাবিলা করার প্রক্রিয়াটিতে প্রচুর পরিমাণে মানসিক এবং শারীরিক সাহসিকতা এবং চিকিৎসাগত পরামর্শ ভালভাবে জড়িত থাকা প্রয়োজন।একটি গর্ভপাত ঘটার পর যন্ত্রণা এবং রক্তক্ষরণ অনুভব করাটা পুরোপুরি স্বাভাবিক।তবে প্রতিটি স্বাভাবিক অসুস্থতাই যেমন শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, গর্ভপাতও ঠিক এমনই একটি ঘটনা, যেখানে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলে তার সাথে আপনার দেহকে মোকাবিলা করতে হতে পারে।
গর্ভপাতের কারণে হয়ে থাকা রক্তপাত কীরকম হয়ে থাকে?
যোনি থেকে রক্ত ক্ষরণ হল একটি গর্ভপাত ঘটে যাওয়ার একটি অত্যন্ত সাধারণ লক্ষণ।এর রঙ খুব হালকা হয়ে থাকে, প্রায় দাগ লাগার মত একটা কিছু , আর তার চেয়ে বেশি কিছু নয়, তবে কখনও কখনও আবার রক্তপাতটি স্বাভাবিক মাসিকের থেকেও অনেক বেশি হয়ে থাকতে পারে।গর্ভপাতের রক্তক্ষরণের এই সকল লক্ষণগুলি কয়েক দিনের জন্য অথবা আবার এমনকি বেশ কয়েক সপ্তাহের জন্যও থাকতে পারে।এই রক্তক্ষরণটি আবার চিহ্নিত করা যেতে পারে রক্ত বড় বা ছোট আকারে জমাট বাঁধা, অথবা আবার এমনকি এমন স্রাবের দ্বারা যা টিস্যু বা কলার ন্যায় দেখতে।মিসক্যারেজের পর রক্ত ক্ষরণ অব্যাহত হওয়ার সাথে আবার ক্র্যাম্প বা খিঁচ লাগাটিও সংযুক্ত হতে পারে।আপনি আবার আপনার তলপেটেও ব্যথা অনুভব করতে পারেন, তা সেটি হালকা অথবা তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে, যেটি শ্রম বেদনা ওঠার সময় সংকোচনগুলির ব্যথার মতই প্রায় অনুভূত হতে পারে।আবার এমন কিছু মহিলাও থাকেন যারা এই ধরণের কোনও লক্ষণ ছাড়াই গর্ভপাত বা মিসক্যারেজর মত দুঃসহ ঘটনাটির সাক্ষী থাকেন, তারা একটি রুটিন আল্ট্রাসাউন্ড করার সময় জানতে পারেন তাদের ভ্রূণের মৃত্যুর ব্যাপারে, কিন্তু তাদের সতর্ক হওয়ার মত রক্তপাতের কোনও সঙ্কেত তারা পান না।
একটি গর্ভপাতের পর কত দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে?
একটি গর্ভপাতের পরে ইউটেরাইন মিউকোসাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয় যার ফলে রক্ত ক্ষরণ এবং পেটে ব্যথা হয়ে থাকে।এই রক্ত ক্ষরণটি সাধারণত কেবল দুই সপ্তাহ মত বজায় থাকে।তবে রক্ত ক্ষরণের তীব্রতাটি মহিলাদের মধ্যে এক–এক জনের ক্ষেত্রে এক–এক রকম হতে পারে।এটি কেবল লক্ষণীয় বা গুরুতরও হতে পারে, তবে এর উপসর্গগুলি সাধারণ মাসিক চক্রের মতই প্রায় অনুরূপ হয়ে থাকে।সংক্রমণের ঝুঁকি ঠ্যাকাতে প্যাড ব্যবহারের পরামর্শই দেওয়া হয় কারণ ট্যাম্পনের মত তুলোর পট্টি বা কাপড়ের ন্যাকড়াগুলি রক্তপাত আটকাতে খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।যদি এক ঘন্টার মধ্যে আপনাকে একটার বেশি প্যাড ব্যবহার করতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।প্রতি ঘন্টায় একটি করে প্যাড পাল্টানো হেমারেজ হওয়ার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে।তীব্র রক্ত ক্ষরণ হতে থাকলে সুস্থ থাকার জন্য সার্জারি বা অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হতে পারে অথবা ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হতে পারে।
মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের রক্ত ক্ষরণটি সাধারণত দুই সপ্তাহের বেশি হয় না।তবে যে সকল ক্ষেত্রে এই রক্তপাতটি দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানোর কথা বলা হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে এটি হয়ে থাকতে পারে একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাত যেখানে আপনার টিস্যু বা কলা বহিষ্কার করার প্রয়োজন হতে পারে।এরকম পরিস্থিতিতে সেটি একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাত কিনা তা আপনার ডাক্তারবাবুর নির্ধারণ করার প্রয়োজন হবে এবং সেই অনুযায়ী সেই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি হয়ত একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতির প্রস্তাব দেবেন।
গর্ভপাত ঘটার পর আপনার পিরিয়ড বা মাসিকটি তার স্বাভাবিক চক্রে ফিরে আসবে 3-5 সপ্তাহের মধ্যে।
গর্ভপাতের পরে অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া কি?
গর্ভপাতের রক্ত ক্ষরণ যা একটি গর্ভপাত ঘটার পর দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে সেটিকেই অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তা অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়।একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাত ইঙ্গিত দেয় যে, সমস্ত কলাগুলি পুরোপুরি অপসারিত হয় নি এবং তার জন্য চিকিৎসাগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।একটি গর্ভপাতের পর বেশিরভাগ রক্তপাতই ক্রমশ কমতে থাকে, হালকা হতে থাকে এবং অপ্রতুল হয়ে দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়।যদি আপনার প্রতি ঘন্টায় একটি প্যাড পাল্টাতে হয়, তবে সেক্ষেত্রে এটি একটি সতর্কতার সঙ্কেত এবং বিলম্বে তার তত্ত্বাবধান করে সঠিক পদক্ষেপ অবলম্বনের দ্বারা যথপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অসম্পূর্ণ গর্ভপাত কি?
যখন জরায়ুর মধ্যে একটি শিশু মারা যায়, শরীর সর্বদা অভ্যন্তরস্থ ভ্রূণ বা অমরাটিকে সম্পূর্ণরূপে বহিষ্কার করতে পারে না।এক্ষেত্রে, এ জাতীয় গর্ভপাতটিকে বলা হয় ‘অসম্পূর্ণ গর্ভপাত‘।জরায়ুটি নিরাময় হয়ে উঠতে পারে না যদি তার মধ্যে কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়, যেগুলি অস্ত্রোপচারের দ্বারা পরিষ্কার করা প্রয়োজন হতে পারে।একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাতে নিম্নোলিখিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি উপস্থিত থাকে।
অসম্পূর্ণ গর্ভপাত রক্ত ক্ষরণের লক্ষণগুলি
- বিস্তৃত জরায়ু
- মারাত্মক রক্তপাত যেখানে এক ঘন্টার মধ্যে আপনার একটি প্যাড ভিজে যাবে।
- একটি আল্ট্রাসাউন্ডের দ্বারা নির্ধারিত হয় জঠরের বা জরায়ুর মধ্যে কলার উপস্থিতি
- তীব্র খিঁচুনি এবং যন্ত্রণা
- জল ধরে রাখা
- জ্বরের ন্যায় উপসর্গগুলি
সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল কয়েক সপ্তাহ ধরে রক্তক্ষরণ হওয়া এবং খিঁচ লাগা যা ইঙ্গিত দেয় যে জরায়ুতে আরও কলা রয়েছে যা বহিষ্কার করা প্রয়োজন।একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাতে প্রক্রিয়াটিকে পুরোপুরি নিঃশেষ করতে সাধারণত প্রয়োজন হয় একটি অস্ত্রোপচারের অথবা তার উপযোগী কিছু ওষুধ নির্ধারণ করা হয়।
গর্ভপাত পরবর্তী রক্ত ক্ষরণের জটিলতাগুলি
গর্ভপাতের রক্তপাতের সাথে বেশ কিছু জটিলতা সংযুক্ত থাকে।সেগুলির মধ্যে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যাওয়া,অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা– এগুলি হল সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা।ভীষণই বিরল ক্ষেত্রে, রক্ত কণিকার মাত্রা খুব কমে গেলে সেক্ষেত্রে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়ে থাকে।জরায়ুতে কোনও সংক্রমণ হয়ে থাকলে এবং যদি তার চিকিৎসা না করা হয়, তবে তা জরায়ু এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের ভিতরে কলাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলতে পারে যা ভবিষ্যতে গর্ভাবস্থায় প্রভাব পড়ার কারণ হয়ে ওঠে।কোরিওকার্সিনোমা হল গর্ভপাতের পরে রক্তপাত হওয়ার একটি বিরল কারণ বিশেষ।এটি হল এক প্রকার ক্যান্সার যা উদ্ভূত হয় একটি অমরার কলা থেকে অথবা একটি মোলার গর্ভদশাকে অনুসরণ করে, যেখানে অমরার কলা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে ওঠে।এটি সাধারণত কেমোথেরাপির দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
একটি গর্ভপাতের পর হওয়া অস্বাভাবিক রক্তপাতের চিকিৎসা
গর্ভপাতের ধরণ অনুযায়ী তার চিকিৎসাগুলিও বিভিন্ন হয়ে থাকে।কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা মৌখিক বা যোনিপথে ওষুধগুলি পরিচালনা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন প্রাকৃতিকভাবে গর্ভপাতের অগ্রগতিতে সহায়তার জন্য।এটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অমরার কলাগুলিকে দ্রুত অপসারিত হতে সহায়তা করবে।যদি কোনও চিকিৎসক গর্ভপাত থেকে অবশিষ্ট কোনও কলার টুকরো জরায়ুর মধ্যে সনাক্ত করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তিনি হয়ত একটি ডায়ালেশন এবং কিউরেটেজ সম্পাদন করতে পারেন, যা সাধারণত D&C হিসেবে পরিচিত।এই প্রক্রিয়াটি একটি সাধারণ অ্যানাস্থেসিয়া বা সাধারন চেতনা নাশক ব্যবহার করা হয়, যেখানে জরায়ু অবশিষ্ট যেকোনও কলাকে চেঁছে ফেলে।
কখন ডাক্তারকে ডাকা প্রয়োজন?
কোনও বিশেষ কারণ ছাড়াই গর্ভপাতের রক্তক্ষরণ এক মহিলা থেকে অন্য মহিলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।একটি গর্ভপাত হওয়ার পর এক কিম্বা দুই সপ্তাহের জন্য রক্তপাত হওয়াটা পুরোপুরি স্বাভাবিক এবং সাধারণ।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তপাতের সাথে খিঁচ লাগা সংযুক্ত হয়ে থাকে।তবে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার বাইরে অতিরিক্ত ভারী রক্তপাত হচ্ছে বলে যদি মনে করেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।যদি দুই সপ্তাহের পরেও একইভাবে রক্তপাত অব্যহত থাকে তবে সে ব্যাপারে অবশ্যই চিকিৎসাগত মনোনিবেশ করানো প্রয়োজন কারণ এর অর্থ একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাত হতে পারে, যেখানে কলা পুরোপুরি বহিষ্কৃত হয় নি।
গর্ভপাতের পরে রক্ত ক্ষরণ মোকাবিলার ব্যবস্থাপনা
একবার আপনার গর্ভপাত ঘটে থাকলে রক্তপাত পুরোপুরি থামতে কিছুটা সময় লাগবে।এই সময় আপনার যোনির ভিতরে কোনওকিছু প্রবেশ না করানোই সবচেয়ে ভাল এবং রক্ত প্রবাহকে সামাল দিতে স্যানিটারি প্যাডগুলিকে ব্যবহার করাই হল সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প।সম্পূর্ণ রূপে বিশ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং যন্ত্রণা উপশমের জন্য বা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি ডাক্তারের প্রস্তাবিত কিছু ব্যথানাশক বা পেনকিলারও গ্রহণ করতে পারেন।জরায়ু মধ্যস্থ সকল পদার্থগুলি অবশ্যই শরীর থেকে অপসৃত হতে হবে কারণ গর্ভদশাকালীন যেকোনও কলার অবশিষ্টাংশই কিন্তু একটি সংক্রমণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।আপনি যদি নিম্নোলিখিত উপসর্গগুলি অনুভব করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তড়িঘড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবেঃ
- দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রক্তপাত বজায় থাকলে
- তীব্র খিঁচুনি এবং যন্ত্রণা
- স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক রক্তপাত
- জ্বর কিম্বা ফ্লু–এর মত উপসর্গগুলি
- দুর্গন্ধ যুক্ত কিম্বা অস্বাভাবিক যোনি স্রাব
একবার রক্ত ক্ষরণটি বন্ধ হয়ে গেলে জীবনটিকে যেভাবে পরিচালিত করবেন
একটি গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হওয়া কেবলমাত্র শরীরের পক্ষেই যন্ত্রণাদায়ক নয়, তা মনের পক্ষেও।এই হারানোর যন্ত্রণা নিরাময় করে উঠতে আপনার বেশ কিছুটা সময় লাগবে।কিন্তু তাই বলে সামনের দিকে এগিয়ে চলাটাও অসম্ভব কিছু নয় এবং সবকিছু কাটিয়ে উঠে পুনরায় আপনার আগের অবস্থায় ফিরে আসারও অনেকগুলি উপায় আছে।
1.শারীরিক ভাবে আরোগ্যলাভ
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহের অবকাশই নেই যে একটি গর্ভপাতের পর জরায়ুর উপর একটি ভীষণ মাত্রায় চাপ পড়ে।আর যদি সেটি একটি অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের মত ঘটনা হয়, সেক্ষেত্রে জরায়ুতে অস্ত্রোপচার পদ্ধতি পরিচালনা করার প্রয়োজন হতে পারে এবং নিরাময় হয়ে উঠতে সেটি কিছুটা সময় নিতে পারে।যেকোনও গর্ভপাত থেকে পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক পদক্ষেপটি হল পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ।বেশিরভাগ মহিলাই দ্রুত সেরে ওঠেন এবং গর্ভপাত থেকে ভুগে ওঠার এক মাসের মধ্যেই আবার গর্ভধারণ করতে পারেন।কিন্তু আবার কিছু ক্ষেত্রে, এটির জন্য এক বছরও সময় লাগতে পারে।আপনার পরবর্তী গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে আপনার শরীরটিকে পুরোপুরি সেরে উঠতে দিন।
2.মানসিকভাবে আরোগ্যলাভ
গর্ভপাত ঘটার ফলে মনের উপরে পড়া চাপটির প্রভাব নিঃসন্দেহে শারীরিক চাপের প্রভাবের থেকেও অনেক বেশি হয়ে থাকে।মিসক্যারেজের পর রক্তপাতের পর্যায়কালটি আপনার মানসিক আবেগ–অনুভূতিগুলিকে ধুয়ে মুছে নিঃশেষিত করে দিতে পারে যেহেতু এটির সাথে আপনার সন্তান হারানোর মত এত বড় একটা ক্ষতির সম্বন্ধটি প্রতি মুহুর্তে আপনার কাছে এসে উপস্থিত হয় যা আপনাকে মানসিক দিক থেকে ভীষণভাবে আহত করে তোলে।অপরাধবোধ, হতাশা, ক্রোধ অথবা শোকানুভূতিগুলি অনুভব করার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে।এই সময় দেহে হয়ে চলা হরমোনের পরিবর্তনগুলি এই অবস্থাটিকে কেবল আরও খারাপই করে চলে।বহু মহিলা আবার অবসাদেও ভুগে থাকেন।আপনার সঙ্গী বা স্বামীর থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার ভালোবাসার মানুষগুলির সাথে অবিরত যোগাযোগ রাখুন ও তাদের সংসর্গে থাকুন।আপনি যদি এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ একা বোধ করেন, ভীষণ মাত্রায় হতাশ হয়ে পড়েন এবং এটি কাটিয়ে ওঠার জন্য মোকাবিলা করতে ব্যর্থ বা অপারগ হয়ে পড়েন, চেষ্টা করুন এর জন্য সহায়তাকারী কোনও গ্রুপ বা গোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের সাথে সংযুক্ত হতে অথবা একজন কাউন্সিলারের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে।
মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হওয়া কোনও বিরল ঘটনা নয়।এটি অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলার উপরেই প্রভাব ফেলে যা আবার তাদের মনের উপরেও কিছু বিধ্বংসী প্রভাব সৃষ্টি করে।এই চরম ক্ষতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য আপনার মত করে সময় নিন এবং আপনার সঙ্গীকে নিরবছিন্নভাবে সমর্থন করুন যখন তারও সাহায্য দরকার হতে পারে।একবার গর্ভপাতের পর পুনরায় গর্ভধারণ করা অসম্ভব কিছুই নয়।শরীর ও মন উভয় দিক থেকেই পুরোপুরি নিরাময় হয়ে উঠতে আপনি সময় নিন এবং শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে যখন আপনি একবার প্রস্তুত হয়ে উঠবেন চেষ্টা করুন আবারও আরেকবার গর্ভবতী হয়ে ওঠার।