মোলার প্রেগনেন্সি হল একটি বিরল অসুখ যেটি গর্ভবতী মহিলাদের অমরার রোগ জনিত সমস্যার জন্য হয়ে থাকে।নিষিক্ত ডিম্বাণু বা ভ্রূণটি বিকাশ লাভ করতে অসমর্থ হয় এবং সেটি আঙুর গুচ্ছের থোকার ন্যায় কোষসমষ্টির(মোল)দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।
মোলার প্রেগনেন্সি হল সেই অবস্থা যখন নিষেকের পর একটি স্বাভাবিক ভ্রূণ অস্বাভাবিক ভাবে বিকাশ লাভ করে এবং একগুচ্ছ আঙুরের থোকার মত দেখতে লাগে যাকে হাইডাটিডিফর্ম মোল বলা হয়ে থাকে।এটি খুবই কম ঘটে থাকা অমরার অসুখ যা সাধারণত প্রথম দিকের ত্রৈমাসিকে ধরা পরে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর সমাপ্তি ঘটে গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে।
জেনেটিক এবং ক্রোমোজোমের গঠণের উপর নির্ভর করে মোলার প্রেগনেন্সিকে সম্পূর্ণ মোলার প্রেগনেন্সি এবং আংশিক মোলার প্রেগনেন্সি নামক দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এই জেনেটিক অস্বাভাবিকতার কারণটির বেশিরভাগটাই অজানা।তবুও নিচের বিষয়গুলি মোলার প্রেগনেন্সির ঝুঁকির শর্ত হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকেঃ
কিশোরীয় গর্ভাবস্থার বা 40 উর্দ্ধ মহিলাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
এশিয়ান মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় দ্বিগুণ বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
যে সকল মহিলাদের পূর্বে মোলার প্রেগনেন্সির ইতিহার আছে তাদের ভবিষ্যতেও এটি ঘটার ঝুঁকি সমানুপাতিক ভাবে বেশি রয়েছে।একবার ঘটে যাওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে পুনরায় মোলার প্রগনেন্সির ঝুঁকির মাত্রা 1-1.5%, অন্যদিকে যাদের দুবার বা তার বেশি এই ঘটনা ঘটেছে তাদের ক্ষেত্রে সেটি বেড়ে 15-20% হওয়ার সম্ভবনা আছে।
মোলার গর্ভাবস্থার সাথে যুক্ত নির্দিষ্ট কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলি হল
সারা বিশ্বেব্যাপী অবস্থার বিচারে,এশীয় উপমহাদেশের মহিলাদের মধ্যে এই অবস্থাটি বেশি দেখা যায়,যেখানে এটি পুনরাবৃত্তির হার প্রতি 1500 গর্ভাবস্থার মধ্যে 1 জনের ক্ষেত্রে এটি ঘটে থাকে।যে সকল মহিলাদের অতীতে মোলার গর্ভাবস্থা থেকে থাকে,তাদের মধ্যেও এটি দেখা দেওয়া অনেক বেশি সাধারণ।
একটি মোলার গর্ভাবস্থা প্রথমদিকে কিছুদিন লক্ষণাত্মক অথবা স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার কিছু সাধারণ লক্ষণের সাথে উপস্থিত হতে পারে।গর্ভকালীন বয়সের অগ্রগতির সাথে এটি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির সাথে উপস্থিত হতে পারেঃ
যাইহোক,তবে এই সকল লক্ষণগুলি ভীষণ মাত্রায় অনির্দেশ্যসূচক,যেহেতু এগুলি আবার স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় অথবা গর্ভপাতের মত ক্ষেত্রগুলিতেও দেখতে পাওয়া যায়।
মোলার গর্ভাবস্থাটি নির্ণয় করা যেতে পারে পরীক্ষাগারে গবেষণা এবং ইমেজিং অধ্যায়নের উপর ভিত্তি করে।
মোলার গর্ভাবস্থার সহিত নিম্নলিখিত ঝুঁকি এবং জটিলতাগুলি সংযুক্ত থাকতে পারেঃ
1.উপসর্গমূলক চিকিৎসাঃ অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা নিরাময়,অ্যান্টি থাইরয়েডের ওষুধ।
2.অ্যান্টিনিওপ্লাস্টিক ড্রাগ বা ওষুধঃ গর্ভকালীন ট্রফোব্লাস্টিক নিউওপ্লাসিয়ায় মেথোট্রেক্সেটের মতো ওষুধগুলি কার্যকর।
3.ফোলিক অ্যাসিডঃ উচ্চ পরিমাণের ফোলিক অ্যাসিড সমন্বিত ওষুধগুলি।
বাড়তি কোনও রোগ–ব্যাধি এড়াতে,চিকিৎসার পরে পর্যবেক্ষণ চালানোটা জরুরি।ধারাবাহিক শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং পূর্ব ইতিহাসের জন্য চিকিৎসা করার পরেও নিয়মিত আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর নির্দেশগুলি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
ধারাবাহিক মাসিক রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার সাহায্যে চিকিৎসার পরে বিটা HCG এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হল এর সবচেয়ে ভাল উপায়।সাধারণত,চিকিৎসার পরে খুব উচ্চ মোলার গর্ভাবস্থার HCG এর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া উচিত।যদি এটি একইভাবে উচ্চ মাত্রায় অব্যাহত রয়ে যায়,সেক্ষেত্রে বাড়তি রোগ–ব্যাধি কিম্বা ব্যাধির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যায়।চিকিৎসার পর ট্রোফোব্লাস্টিক ব্যাধির কোনওরকম সম্ভাবনা এড়ানোর ক্ষেত্রে,স্ক্রীনিং আল্ট্রাসাউন্ড পরিচালনা করা যেতে পারে।
মোলার গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নিরাময়কারী চিকিৎসা করা সত্ত্বেও,কিছু ক্ষেত্রে(1% আংশিক এবং প্রায় 15% সম্পূর্ণ)একটি অবশিষ্ট বাড়তি কলা রয়ে যেতে পারে,আর এটিই পারসিস্টেন্ট ট্রোফোব্লাস্টিক ডিজিজ(PTD) বা স্থায়ী ট্রোফোব্লাস্টিক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত।শরীরের অন্যান্য কলাগুলিতে ছড়িয়ে যাওয়ার সাথে এটিতে মারাত্মক আচরণগুলি দেখা দিতে পারে,যা সাধারণত ফুসফুসের সাথে জড়িত।এর চিকিৎসার মধ্যে ফোলিক অ্যাসিডের পরিপূরকগুলির পাশাপাশি মিথোট্রেক্সেট চক্রের সাথে কেমোথেরাপি জড়িত।
প্যাথোফিজিওলজি মূলত জিনগত হওয়ার কারণে,এর কোনও নির্দিষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা উপলব্ধ নেই।তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি এ ব্যাপারে বিবেচনা করা যেতে পারেঃ
মোলার গর্ভাবস্থা পুনরাবৃত্তি হওয়ার ঝুঁকি থাকে 1.5-2%,তবে এ ব্যাপারে কোনও গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য বিপত্তির সংবাদ নেই।মোলার গর্ভাবস্থা ঘটে যাওয়ার পরে যেকেনোও মহিলার মধ্যে একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থাও বজায় থাকতে পারে।তবে এটির পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য অস্ত্রপচার করা হলে সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের পূর্বে নূন্যতম 6 মাস অপেক্ষা করতে এবং কেমোথেরাপির পর প্রায় এক বছরের ব্যবধান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সৌভাগ্যবশত,মোলার গর্ভাবস্থা অথবা এর চিকিৎসা প্রজননের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলে না।এছাড়াও আবার এর পুনরাবৃত্তির ঝুঁকিটিও কম(1.5-2%)।বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকরা মোলার গর্ভাবস্থার পর পুনরায় গর্ভধারণের পূর্বে 1 বছর অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।এই সময়টি দেওয়া হয় বিটা HCG কে শারীরিবৃত্তীয় মাত্রায় ফিরে আসার জন্য।একবার প্রাক–প্যাথোলজিকাল মাত্রাগুলি প্রমাণিত হয়ে গেলে আপনি তখন নিরাপদে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
মোলার গর্ভাবস্থা একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক অনুভূতি হয়ে উঠতে পারে এবং গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে আপনার সন্তান হারানোর মত এক ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে।এ ক্ষেত্রে চরম আশাবাদী,শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি এবং আপনার সঙ্গীর পূর্ণ সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুনরাবৃত্তি এড়ানোর ক্ষেত্রে অযথা উদ্বেগ এবং প্রয়জনাতিরিক্ত চিকিৎসা কিছু ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।একজন পরামর্শদাতার সাথে আলোচনার দ্বারা পরামর্শ নেওয়া এবং দত্তক গ্রহণের বিষয়ে বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত।
মোলার গর্ভাবস্থা হল একটি দুর্লভ রোগজনিত অবস্থা যা গর্ভাবস্থা হ্রাসের মত বিষয়ের সাথে জড়িত।মোলার গর্ভাবস্থার অর্থ,সময়মত মূল্যায়ণ এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পর্কে একটা ভাল বোঝাপড়ার সাথে এই অবস্থাটি মোকাবিলা করার সাথে সাথে এটির পুনরাবৃত্তিও প্রতিরোধ করা যেতে পারে।