আপনি এখন ঠিক আপাতত কি অবস্থায় আছেন তা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারিঃ আপাতদৃষ্টিতে অনন্ত গর্ভদশায় পরিশ্রান্ত এবং ক্লান্ত।যমজ কিম্বা ততোধিক সন্তানের সাথে 37 সপ্তাহের গর্ভবতী হয়ে ওঠা অধিকাংশ মায়েদেরকেই অবসন্ন করে তোলে, যদিও বাচ্চারা মায়ের দেহের ভিতরে তখনও বেশ আরামদায়কভাবেই থাকে।প্রায় প্রত্যেকেই এই সময় তাদের শ্রম যন্ত্রণার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকেন, যা আপনার সন্তানের আগমনের সঙ্কেত দেবে।তবে এটি জেনে রাখা জরুরি যে, সেগুলি হতে আরও কয়েক দিন বা আর এক সপ্তাহ মত বা তারও কিছু বেশি সময় নিতে পারে।আপনার গর্ভদশার 37 সপ্তাহে সন্তানদের প্রসব করাটা তাদের জন্য দারুণ হবে কিন্তু তারা যদি আরও কিছুটা সময়ের জন্য গর্ভের মধ্যে থাকে, এটি তাদের আরও বেশি উপকারের কাজে লাগে।শ্রমে প্ররোচিত করা অথবা সিজারিয়ান বা অস্ত্রপচার পদ্ধতিতে প্রসব করানোটি কেবল আপনার গর্ভদশায় ভীষণ মাত্রায় ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে যাওয়ার জন্যই করানো হয় না তা আবার ভবিষ্যত জটিলতাগুলি এড়ানোর ক্ষেত্রেও করানো হয়ে থাকে।
এটি জেনে অবাক হতে পারেন যে আপনার গর্ভের ভিতরে আপনার সন্তানদের বৃদ্ধির অগ্রগতি এখনও বজায় থাকে, এমনকি এর মধ্যেই আপনার গর্ভদশার 37 সপ্তাহ পার করার পরেও।আদপে, শিশুদের বৃদ্ধির অগ্রগতিটি থাকে অব্যহত তা সে গর্ভের ভিতরেই হোক কিম্বা বাইরে।
প্রত্যাশা মত দেহের অভ্যন্তরে সবকিছুই ঠিকঠাক কাজ করছে তার নিশ্চয়তা স্থাপনের জন্য দেহ এবং মাথা সুসংগত ভাবে কাজ করার কারণে আপনার ভিতরে হওয়া সকল ক্রিয়াকলাপগুলিরই বারে বারে পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে।আপনার ছোট্টগুলি এখন বেশ ভালভাবেই তাদের চোখের পলক ফেলতে শুরু করবে।এই সময়ের মধ্যে তাদের হাতের বুড়ো আঙ্গুল চোষাটা বেশ প্রতিষ্ঠিত একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠবে আর তার সাথে তাদের হাতের নাগালে যা কিছুই তারা পায় তাকেই তারা মুঠো করে বেশ দৃঢ়তার সাথে ধরে রাখা শুরু করে।আপনার ভিতরে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসটি চালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মধ্যচ্ছদা এবং ফুসফুসের মধ্য দিয়ে অ্যামনিওটিক তরলের প্রবাহ অবিরত থাকবে।
শিশুদের বহির্বিশ্বে সুরক্ষিত রাখার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যও আবার এই সপ্তাহের সমাপ্তির আশেপাশে এক ভাল মাত্রায় তারা অর্জন করা শুরু করেঃ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং তাপ নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা।
শিশুর ক্ষতি করতে পারে এমন বাহ্যিক উপাদান এবং যেকোনও ধরণের বহিরাগত সংক্রমণগুলি থেকে দেহকে সুরক্ষিত রাখতে, গত সপ্তাহগুলিতেই শক্তিশালী হয়ে উঠে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাটি এর মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক জাল গঠণ করে।একবার পেটের বাইরে আসলে মায়ের বুকের দুধে উপস্থিত পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডিগুলি গ্রহণ করার পর যেকোনও বহিরাগত জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতার উন্নতি বজায় রাখতে আরও কাজ করতে থাকে।
অনুরূপভাবে, শিশুদের দেহের তাপমাত্রাটিকেও একটি ভাল মানে রাখা দরকার।গর্ভ এবং অ্যামনিওটিক তরল সমানে অবিচ্ছিন্নভাবে সামঞ্জস্য করে চলে পরিবেশকে সহায়ক রাখার জন্য।শিশুদের দেহে পুঞ্জীভূত হওয়া ফ্যাট বা চর্বি তাদের দেহকে উষ্ণ রাখে এবং আসল বিশ্বে তাদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।গর্ভদশার 37 সপ্তাহে প্রসব করানোকে ডাক্তারদের পছন্দ করার এটি একটি প্রাথমিক কারণ, যেহেতু এই সময়ের মধ্যে শিশুদের দেহে একটা ভাল স্তরে ফ্যাট জমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।
গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়গুলিতে শিশুদের বৃদ্ধি ঘোরতর হয়ে থাকে।বাস্তব পৃথিবীতে তাদের বহিঃপ্রকাশের পূর্বে খুব কম দিন বাকি আছে জেনেও, তাদের ওজন এবং ফ্যাটের স্তর বৃদ্ধির গতি এগিয়ে চলে এবং দৈনিক ভিত্তিতে তা গিয়ে পৌঁছায় 30 গ্রামের কাছাকাছি ফ্রিকোয়েন্সিতে।
এই সপ্তাহটিতে আপনার গর্ভস্থ অতি ক্ষুদ্রও নয় এমন প্রায় পরিণত শিশুদের দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে মোটামুটি প্রায় 47-48 সেন্টিমিটার মত, যার সাথে প্রতিটি শিশুর পৃথক পৃথক ভাবে 2.7 কিলোগ্রামের মত বা তার কিছু বেশি ওজন যুক্ত হয়।আপনি যদি এক্ষেত্রে গর্ভে দুটির বেশি সন্তান বহন করে থাকেন, প্রতিটি শিশুর ওজন এবং উচ্চতা কিছুটা কম হতে পারে।
যেহেতু আপনার প্রসবক্ষণ থেকে আপনি মাত্র এক ইঞ্চি দূরে অবস্থান করছেন তাই আপনার দেহের বেশিরভাগ পরিবর্তনগুলি আপনার দেহের নিম্নভাগে সম্পন্ন হবে আপনার সন্তানদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে।
গর্ভাবস্থার শেষ ভাগে আপনার অনুভব করার ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ বেশ সাধারণ হয়ে উঠবে।তবে পুরোপুরি চিরকালের মত উধাও হয়ে যাওয়ার আগে আবার কিছু লক্ষণ শেষ বারের মত ফিরে আসতে পারে আপনাকে উপদ্রব ও হতাশ করে তুলতে।
এই সপ্তাহে আপনার পেটের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হবে শিশুদের অবতরণ।যৌথ ভাবে তীব্র এবং হালকা ব্যাথা বোধের একটি সামাণ্য অনুভূতি,যার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে বাতাসের গভীর প্রশ্বাস টানার দক্ষতা।
মাঝে মধ্যে অনেক সময় আবার এমনকি আপনার পেট নিচে নেমে যাওয়ার আগেই শ্রম বেদনা উঠে যায়, এটিও বেশ স্বাভাবিক।ইতিমধ্যেই আপনার শিশু আপনার ভিতরে তার জন্য একটা ছোট্ট স্থান করে ফেলেছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বাইরে বেরিয়ে আসার পথ করতে সেখানে চাপ প্রয়োগ বা ঠ্যালা শুরু করতে পারে।আর এটির একমাত্র কারণ হতে পারে আপনার বক্ষ পিঞ্জর দ্বারা অনুভূত হওয়া বাচ্চাদের পদাঘাতগুলি, যেগুলি যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
গর্ভদশার এই পর্যায়ে খুব বিরলক্ষেত্র ছাড়া ডাক্তাররা একটি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান পরিচালনা করেন না।সাধারণত যতক্ষণ না তাঁরা গর্ভদশায় সেরকম কোনও জটিলতা দেখে থাকেন এবং এর কোনও অনিয়মিত বা আক্ষেপজনক প্রকৃতি নিশ্চিত করেন। বেশিরভাগ স্ক্যানগুলিতেই দেখা হয়ে থাকে যে বহির্বিশ্বে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করার কতটা কাছাকাছি শিশুরা রয়েছে।
এই সময় আপনার মেজাজকে উন্নত রাখার জন্য হালকা অথচ পুষ্টিকর খাদ্য আইটেম যেমন ফলের সরবত, চাট, ফলের টুকরোর বেক করা চিপস অথবা স্যালাড দুর্দান্ত হয়ে উঠবে।শ্রমকে প্ররোচিত করার ক্ষেত্রে আবার এমনকি সামান্য মশলাদার খাবার যেমন কারি অথবা মাংসের অন্যান্য পদগুলিও সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।এই সময় তাজা আনারসের রস উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করা হয় কারণ এটি সার্ভিক্সকে নমনীয় করে তুলতে সহায়তা করে।
অধিকাংশ ডাক্তারই আপনার গর্ভদশার 37 তম সপ্তাহে আপনার যমজ সন্তান প্রসবের সুপারিশ করে থাকেন, কারণ এটি জানা যায় যে এই সময়কালটি প্রসবের ক্ষেত্রে মৃত সন্তানের জন্মদান করা কিম্বা নবজাত শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি যথেষ্ট হ্রাস করে থাকে।
যদি যমজ সন্তানেরা গর্ভের ভিতরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করে, সঙ্কুচিত স্থানটি তাদের পক্ষে মারাত্মক প্রাণনাশক হয়ে উঠতে পারে।কিন্তু তারা যদি আবার সময়ের অনেক আগেই বেরিয়ে আসে, তাদের বেঁচে থাকার হারটিও খুব বেশি ভাল হয় না।এই দিক থেকে গর্ভদশার 37 তম সপ্তাহটি উভয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই বেশি কার্যকর ভাবে কাজ করার এক সু অবস্থান হয়ে ওঠে।
আপনার বাচ্চারা আপনার কোলে প্রায় এসে পড়ল বলে।সুতরাং সেগুলি সব অক্ষত রাখার জন্য আপনার যা প্রয়োজন তা হল কিছু দ্রুত কার্যকর টিপস আপনার হাতের মধ্যে রাখা।
একবার আপনি হাসপাতালে পৌঁছে গেলে, আপনি অন্যদের সাথে সংযুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন যেগুলি কিনে সঙ্গে রাখার দ্বারাঃ
যমজ সন্তানের সাথে 37 সপ্তাহের গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন যে, এক্ষেত্রে ভ্রূণের বিকাশ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে শিশুরা খুব বেশি সমস্যা ছাড়াই বহির্বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে বাস্তব দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারে।নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং আপনার আদরের সোনাদের জন্মদানকালীন সময়টিকে জীবনের সেরা অভাবনীয় মুহূর্ত করে তোলার প্রত্যাশায় দিন গুনুন।