শিশু

শিশুদের জন্য ঘি – এটা কি নিরাপদ?

ঘি-কে একটি শক্তিশালী সুবাসযুক্ত মাখন হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ধীরে ধীরে মাখনকে ফুটিয়ে প্রস্তুত করা হয় সব যতক্ষণ না সব জল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং ফ্যাটটি পৃথক হয়ে যায়। এর পরে, এটি একটি সুগন্ধযুক্ত, পুষ্টিকর স্বাদ দিতে কয়েক মিনিটের জন্য হালকা আঁচে গরম করা হয়। ঘি পুষ্টির একটি ভাল উৎস। ঘি শিশুদের ডায়েট অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি শিশুদের জন্য খুব উপকারী।

ঘিয়ের পুষ্টির মান

ঘি ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯-এর মত অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এটি ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে-তে ভরপুর। ঘি তার অ্যান্টিমাইকোবালিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরিচিত। এটি শরীরের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, ক্ষতিকারক মুক্ত র‍্যাডিকেল অপসারণ করতে সাহায্য করে। ঘি হজমে সাহায্য করে এবং অনাক্রম্যতা ও দৃষ্টিশক্তি উন্নত করার জন্য পরিচিত। ভিটামিন কে হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য ক্যালসিয়াম উৎপাদনে সহায়তা করে।

প্রতি টেবিল চামচ ঘিতে ১০৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৈনিক প্রস্তাবিত পরিমাণের ১২ বা ১৫%। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘি শরীর থেকে কার্সিনোজেন অপসারণে সাহায্য করেছে। কার্সিনোজেন শরীরের ক্যান্সারের কারণ একটি রাসায়নিক। ঘি এছাড়াও লিভারে এনজাইম কার্যকলাপ হ্রাস করে, যা এই ধরনের কার্সিনোজেনগুলি সক্রিয় করার জন্য দায়ী।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে, এছাড়াও একে শরীরের নিম্ন-ঘনত্বীয় লিপোপ্রোটিন (এলডিএল) বলা হয়। ঘিতে ডিএইচএ রয়েছে যা মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে এবং স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। ঘি ক্যালোরিতে বেশি ভরপুর এবং বুকের দুধ খাওয়ানো ছাড়ানোর পরে শিশুদের ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

আপনার শিশুর ডায়েটে কখন ঘি যোগ করবেন?

ঘি ৬ মাস বয়সে আপনার শিশুর খাদ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আপনি আপনার বাচ্চার মুসুড় ডাল এবং চালএর খিচুড়িতে কয়েকটি ড্রপ যোগ করে শুরু করতে পারেন। শিশুর বৃদ্ধি অনুযায়ী আপনি ধীরে ধীরে এই পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন। যাইহোক, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি প্রতিদিন এক চা চামচের বেশি অতিক্রম দেবেন না। অন্য যে কোন কিছুর সঙ্গেও, ঘি সংযমে খাওয়া উচিত।

আপনি আপনার শিশুর কতটা ঘি দিতে পারেন?

ঘি আপনার শিশুর বৃদ্ধির জন্য এবং উন্নয়নের জন্য খুবই উপকারী। তবে, প্রতি দিন সীমিত পরিমাণ ঘি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঘি হজমে সমস্যা, ক্ষুধা কমানো এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণ হতে পারে। এই টেবিল আপনার বাচ্চাদের বয়সের জন্য উপযুক্ত ঘিয়ের পরিমাণ এবং পরিবেশনের সংখ্যা নির্দেশ করে:

আপনার শিশুকে কতটা ঘি দিতে হবে
শিশুর বয়স ঘিয়ের পরিমাণ প্রতিদিন পরিবেশনের সংখ্যা
৬ মাস ১/২ চা চামচ
৮ মাস ৩/৪ চা চামচ
১০ মাস ১ থেকে ১ ১/৪ চা চামচ
১ বছর ১ থেকে ১/২ চা চামচ
২ বছর ১ ১/২ থেকে ২ চা চামচ

 

কিভাবে আপনার সন্তানের ডায়েট ঘি অন্তর্ভুক্ত করবেন?

ঘি বিভিন্ন উপায়ে আপনার শিশুর খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আপনি শিশুর ডাল বা খিচুড়িতে কয়েক ফোঁটা ঘি যোগ করে শুরু করতে পারেন। আপনি শিশুর সবজির পিউরি বা চটকানো আলুতে ঘি যোগ করতে পারেন। ঘিয়ের কয়েকটি ড্রপ শিশুর পেরিজের সাথে যোগ করা যেতে পারে। শিশুদের জন্য, মাখনের পরিবর্তে আপনি চ্যাপটি বা পরোটাতেও ঘি প্রয়োগ করতে পারেন। ঘি তেলের পরিবর্তে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি সাধারণ লবনাক্ত মাখনের পরিবর্তে ব্রেডে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

শিশুদের জন্য ঘিয়ের উপকারিতা

ঘি সীমিত পরিমাণে খাওয়ানো হলে শিশুদের জন্য খুব উপকারী হতে পারে। আপনি যদি ভাবছেন, বাচ্চাদের জন্য ঘি ভাল কিনা, এখানে ঘি আপনার শিশুর বিভিন্ন উপায়ে উপকার করে তার তালিকা রয়েছে:

১) ওজন অর্জন করতে সাহায্য করে: ঘি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ক্যালোরিতে পূর্ণ হয়। মায়ের দুধ খাওয়া বন্ধ করার পরে এটি আপনার শিশুর ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।

Related Post

২) হাড়কে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে: ঘিতে ভিটামিন কে থাকে যা শরীরের ক্যালসিয়াম উৎপাদনে সহায়তা করে, যা শক্তিশালী হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

৩) অনাক্রম্যতা বাড়ায়: ঘি তার অ্যান্টিমাইকোবায়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত এবং এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা সংক্রমণ, কাশি ও ঠান্ডা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৪) হজমের সহায়ক: ঘি একটি ছোট শৃঙ্খলাযুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড থাক যার নাম বাটয়রিক অ্যাসিড, যা প্রদাহ কমাতে এবং পাচনতন্ত্র উন্নত করতে সহায়তা করে। ঘি এছাড়াও পেটে অ্যাসিড স্রোতকে উদ্দীপনা দেয় যা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে।

৫) অপরিহার্য ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে: ঘিতে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য ভাল। এতে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে রয়েছে যা চোখ, ত্বক এবং উন্নত অনাক্রমতার জন্য ভাল। ঘি ডিএইচএ বা ডোকোসাহেক্সএক্সেনোইক অ্যাসিড রয়েছে, যা চোখ এবং মস্তিষ্কের মধ্যে উপস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত ফ্যাট।

৬) কার্সিনোজেনগুলি সরিয়ে দেয়: গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে মাঝারি পরিমাণে ঘি খাওয়ার ফলে শরীর থেকে কার্সিনোজেন নির্মূল করা যায়, ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

৯) খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: গবেষণায় দেখা গেছে যে অল্প পরিমাণে ঘি খাওয়ায় নিয়মিত শরীরের এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এলডিএল কোলেস্টেরল ধমনী ব্লক করা এবং হৃদরোগের জন্য দায়ী।

১০) শুকনো কাশির চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে: শিশুদের শুকনো কাশি গোলমরিচ-এর নির্যাস সহ ঘি দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। এটি তৈরি করার জন্য কয়েক চা চামচ ঘি গরম করুন, এতে ৩-৪ টুকরো টুকরো মরিচ কাটুন, হালকাভাবে গরম করুন এবং তাপ থেকে সরিয়ে নিন। সব মরিচকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জন্য মিশ্রণটি ছেঁকে নিন এবং এই মরিচের নির্যাসযুক্ত ঘি অল্প পরিমাণে শিশুকে খাওয়ান তার শুকনো কাশি নিরাময় করতে।

১১) একজিমার চিকিৎসা করতে পারে: ঘি শিশুদের একজিমা এবং চুলকানিযুক্ত ত্বকের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। খতিগ্রস্থ অংশে ঘি ঘষে দিন জায়গাটি আদ্র রাখতে। ঘি জীবাণু হ্রাস করে এবং একটি অ্যান্টিমাইকোবায়্যাল এজেন্ট হিসাবে কাজ করে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ও একজিমা আরও ছড়িয়ে পরা থেকে আটকায়।

১২) থাইরয়েডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে: ঘিতে আয়োডিন থাকে যা থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।

একটি শিশুকে খুব বেশী ঘি প্রদান করা কি ঝুঁকিপূর্ণ?

খুব বেশী যে কোন কিছুই খারাপ হতে পারে। একই জিনিস ঘিয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মাঝারি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে, ঘিয়ের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে। তবে, অত্যধিক ঘি শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি বদহজম এবং ক্ষুধামন্দের কারণ হয়। যেহেতু ঘি ফ্যাট এবং ক্যালোরিতে পূর্ণ হয়, তাই এটি অত্যধিক খাওয়া স্থূলতা এবং হৃদরোগের কারণ হয়। অতএব, প্রতিদিন আপনার শিশুর জন্য ১ বা ১ ১/২ চা চামচ ঘি ব্যবহার সীমাবদ্ধ করা জরুরি।

সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে ঘিয়ের বাড়তি স্বাস্থ্যকর সুফল রয়েছে। যখন শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা হয়, তখন তারা ওজন হারায়। ঘি প্রদান করলে তাদের বয়সের জন্য উপযুক্ত ওজন অর্জন ও বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। ঘিতে ক্যালোরিও বেশি থাকে, যা শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয়, কারণ হাঁটা শুরু হওয়ার পরে তাদের আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। যাইহোক, কোন খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন করার আগে আপনার শিশুর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সবসময় ভাল।

Share
Published by
প্রিয়াংকা কুণ্ডু
Tags: Ghee