রসুন হল রান্নার একটি জনপ্রিয় উপাদান; এটির তীব্র স্বাদ যেকোনো খাবারে স্বাদ ও সুগন্ধ সংযুক্ত করে,সুতরাং রসুন ছাড়া যেকোনো খাবারে সুগন্ধের অভাব দেখা যায়।এছাড়াও রসুনের উচ্চ ওষধি গুণও আছে।আপনার ঠাকুমা নিশ্চই রসুনের ওষধিগুণ গুলির এবং কীভাবে এইটি দিয়ে সাধারণ সর্দিকাশির চিকিৎসা করার পাশাপাশি দেহের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা যায় তার প্রশংসা করেছেন।অবশ্যই রসুনের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারীতা আছে কিন্তু এটা কি একটা ছোট্ট শিশুর জন্য ভাল?বেশিরভাগ নতুন মা তাদের সন্তানকে রসুন দেবার ব্যাপারে নিশ্চিত হন না, সেইজন্য আমরা এখানে আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্যগুলি সংগৃহীত করে সংকলন করলাম যা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার ছোট্ট সোনাকে রসুন দেবেন নাকি দেবেন না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।দেখে নিন রসুন শিশুদের জন্য নিরাপদ কিনা আর কখন আপনি আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় রসুন যোগ করবেন।
যদি বাচ্চাদের নিরাপদ পদ্ধতিতে রসুন খাওয়ানো হয় তাহলে সেটা তাদের কোনো ক্ষতি করে না।রসুনের জন্য এলার্জি হয় তবে সেটা খুব সামান্য ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যায়।রসুনের শক্তিশালী এবং কড়া গন্ধ আপনার ছোট্ট বাচ্চাটির জন্য বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে তাই শুরুতে খুব সামান্য পরিমাণ রসুন তার খাবারে যোগ করুন।
কখন আপনি আপনার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় রসুনকে অন্তর্ভূক্ত করবেন সে বিষয়ে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।কিছু মায়েরা তাদের সন্তানের 6 মাস বয়স হওয়ার সাথে সাথেই খুব সামান্য পরিমাণ রসুন তাদের খাবারে যোগ করা পছন্দ করতে পারেন, পক্ষান্তরে আবার অন্যান্যরা এক বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত অথবা তারও বেশি অপেক্ষা করতে চাইতে পারেন।তবে ডাক্তারবাবুরা সাধারণত যেকোনো ধরনের শক্ত খাবার,বিশেষত রসুনের মত শক্তিশালী খাবারগুলি 10-11 মাস বয়স হলে পরেই খেতে দেবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রসুনের গঠন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দারুণ কৌতুহলদ্দীপক ব্যাপার যেখানে সবথেকে বেশি বিভিন্ন উপাদানগুলির এক অদ্ভুত সমাহার সংঘঠিত হয়েছে যা এটাকে স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।100 গ্রাম রসুনের মধ্যে নিম্নলিখিত অংশানুপাতে উপাদানগুলি বর্তমান থাকে।
উপাদান | পরিমাণ |
তন্তু বা ফাইবার | 2.1গ্রা |
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা | 33.1গ্রা |
প্রোটিন | 6.4গ্রা |
ক্যালোরি | 149 |
সোডিয়াম | 17মিগ্রা |
আয়রণ বা লোহা | 1.7মিগ্রা |
সূত্র– http://nutritiondata.self.com/facts/vegetables-and-vegetable-products/2446/2
বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাচ্চাদের খাওয়ার তালিকাতে রসুন অন্তর্ভূক্ত করতে চান কারণ স্বল্পকালীন সময়ের সাথে সাথে দীর্ঘকাল ব্যাপী রসুনের উপকারী ভূমিকা আছে।
শিশুর শরীরের ইওসিনোফিলস,ডেনড্রাইটিক কোষ,ন্যাচারাল ডিফেন্স বা স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা কোষ এবং লিম্ফোসাইট বা শ্বেতকণিকা নামক কোষগুলিকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে বাড়ানোর জন্য রসুন পরিচিত। উপরন্তু এটি এমনকি সাইটোকাইনের ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে যা বিপাকের উন্নতি ঘটায় এবং স্থূলতার যেকোনও সম্ভাবনাকে প্রতিহত করে।
রসুনের যে বৈশিষ্ট্য গুলি একজন ব্যক্তিকে ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস এবং অক্সিডেন্ট গুলি থেকে সুরক্ষার দেয় সেটি আরও বেড়ে যায় যখন রসুন গুলিকে থেঁতলে বা চুর্ণ করে ব্যবহার করা হয়,যেহেতু এতে উচ্চ পরিমাণে অর্গানোসালফার যৌগ থাকে।এই সব কিছুই একসাথে একত্রিত হয়ে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনাকে উদ্দীপিত করে প্রদাহের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া করতে এবং মুখ,মলাশয়,মূত্রাশয় সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার থেকে শিশুদেরে রক্ষা করে।
অল্প বয়স থেকেই ধমনীর রেখা বরাবর কলেস্টেরল জমা হওয়া শুরু হয় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের উপস্থিতি শুরু থেকেই পরীক্ষার মধ্যে রাখা প্রয়োজন।রসুন রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে,যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়।
পোকামাকড়গুলি শিশুদের পাকস্থলীতে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে খাবারের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে অথবা তাদের ডিমগুলিকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে অন্ত্রের মধ্যে যা সংক্রমণ এবং অন্যান্য রোগগুলি ঘটায়।এই কীটগুলিকে ধ্বংস করার অন্যতম সেরা একটা উপায় হল রসুন।
অন্ত্র নালীর মধ্যে ভাল এবং খারাপ উভয় প্রকারের ব্যাকটেরিয়াই থাকে।কোনও ওষুধ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় সাধারণত কোনও ভেদাভেদ ছাড়াই সকল ধরনের ব্যাকটেরিয়াকেই মেরে ফেলে।যাইহোক, রসুনে আছে ফাইটোকেমিক্যাল,যেগুলি কার্যকরভাবে কেবল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে অপসারিত করতে সাহায্য করে,উপরন্তু,এগুলি একটা শিশুর মধ্যে নিরাময় কার্যাবলীকে উন্নীত করতে ভালভাবে সাহায্য করে।
জলবায়ুর পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে যেতে এবং সর্দি–কাশি হতে পারে।সর্দি–কাশি এবং ঠাণ্ডা লেগে যাওয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে রসুন ভীষণভাবে কার্যকরী।রসুন তেলগুলি শ্বাস–প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক স্তরে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে,যখন এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি রোগের কারণ–স্বরূপ ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া গুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
যখন একটা বাচ্চার সাথে রসুনের পরিচয় করাবেন তখন এটি সঠিকভাবে করুন।যেকোনও নতুন খাবারের মত এক্ষেত্রেও এটা পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন যে এতে এলার্জির কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা।কাজেই,শুরুতে কেবল কয়েকটি মাত্র কোয়া দিন।যদি কিছুদিন দেওয়ার পর মনে হয় যে এতে কোনও সমস্যা নেই,তবে আপনি তাকে সম পরিমাণে অথবা এর থেকে অল্প কিছু বেশী পরিমাণে স্বাভাবিকভাবেই দিতে পারেন,তবে বড়দের ব্যবহারের মত অত বেশি পরিমাণেও দেবেন না।
একটি শিশুর সাথে যেকোনও রূপে রসুনের পরিচয় করা্নোর আগে এক জোড়া বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।একটি শিশুকে রসুন দেওয়ার আগে যে বিষয় গুলী আপনি অবশ্যই নজর করবেন সেগুলি এখানে দেওয়া হল–
সেই কোয়া গুলিকেই পছন্দ করুন যেগুলি পরিষ্কার,সাদা এবং রসালো।রান্না করার সময় আপনার শিশুর খাদ্যে এগুলিকে যোগ করুন।এগুলিকে কাঁচা অবস্থায় দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
রসুনের স্বাদ এবং গন্ধে যদি আপনার বাচ্চা খুব বাজে ধরনের প্রতিক্রিয়া করে বলে মনে হয়,তবে শুরুর দিকে আপনি এর সাথে মাঝেমধ্যে সামান্য চিনি যোগ করে দিন।তাকে এটি খুব বেশী দেবেন না।
একবার শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে আপনার সন্তানের খাদ্যতালিকায় রসুনকে অংশীভূত করার বেশ কিছু আকর্ষণীয় উপায় আছে।
একবার আপনার শিশুকে গার্লিক ব্রেড দিলে সে একবার ফিরে তাকাবে,এবং যা এর আগে কখনও হয় নি।এর স্বাদ এবং গন্ধে সে উত্তেজনার সাথে এটিকে কুড়মুড়িয়ে খাবে।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
পুষ্টির পাশাপাশি এর মোলায়েম প্রভাবের জন্য এটি একটি পুরাদস্তুর অতুলনীয় প্রস্তুতি হিসেবে পরিচিত।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
রাত্রে খাবার সময় আপনার বাচ্চাকে চিকেনের সাথে গার্লিক স্যুপ দিন।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
যেকোনও স্বাস্থ্যকর খাবারেই উপকারিতা আছে যখন সেটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া হয়।রসুনের ক্ষেত্রেও যথারীতি সেই একই ব্যাপার।আপনার সন্তানের জন্যও এটি সবথেকে ভাল হবে যখন এটিকে সঠিক রূপে তার সাথে পরিচয় করানো হবে।