শিশুদের ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য 15 টি সেরা ঘরোয়া প্রতিকার

শিশুদের ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য 15 টি সেরা ঘরোয়া প্রতিকার

শিশুদের মধ্যে ডায়পার জনিত ফুসকুড়ি সাধারণ একটা ব্যাপার।শিশুদের যৌনাঞ্চলে,পশ্চাৎদেশে এবং ডায়পার পরিহিত এলাকায় লাল প্রলেপ এবং আঁশের দ্বারা এটিকে চিহ্নিত করা যায়।যদিও এটি সাধারণ,তবুও এটির চিকিৎসার প্রয়োজন।যদি আপনার বাড়িতে আপনার একটা ছোট্ট সোনা থাকে,আপনার জানা উচিত কীভাবে আপনি ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলিকে প্রতিরোধ করতে পারেন যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে যন্ত্রণা পেতে না দেখতে চান।

শিশুদের ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির কারণগুলি কি

শিশুদের মধ্যে ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির কয়েকটি সাধারণ কারণ নীচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ

১.ডায়পারের নিজস্ব ঘষায়

২.দীর্ঘ সময়ের জন্য একটা ভিজা অথবা ময়লা ডায়পারের মধ্যে রেখে দেওয়া

৩.ইস্ট সংক্রমণ

৪.ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ

৫.সাধারণ উত্তেজক পদার্থ যেমন সাবান,সুগন্ধ যুক্ত ডায়পার এবং ওয়াইপগুলি

15 টি প্রাকৃতিক প্রতিকার ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য

ভিজে এবং ময়লা ডায়পারগুলি হল শিশুদের মধ্যে ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির প্রাথমিক কারণ।ফোস্কা এবং চুলকানি থেকে শুরু করে ছোট ব্রণ এবং ত্বকের ছাল ওঠা,এই সকল অচিকিৎসাগত ডায়পার র‍্যাশই শিশুর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটায় এবং তা তাদের জন্য একটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।সেই কারণে এখানে ডায়পার র‍্যাশের জন্য 15 টি সর্বোত্তম প্রাকৃতিক প্রতিকারের উল্লেখ করা হল।

১.নারকেল তেল

নারকেল তেল

অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য নারকাল তেল সুপরিচিত এবং এটি শিশুদের ডায়পার র‍্যাশের জন্য একটি অন্যতম অত্যন্ত কার্যকর প্রতিকার।উষ্ণ গরম জলের দ্বারা আপনার সন্তানের নিতম্ব ধুয়ে দিয়ে একটি নরম তোয়ালের দ্বারা মুছে শুকনো করে নিন।আপনার সন্তানের পশ্চাৎদেশ পরিষ্কারের পরবর্তীতে বড় চামচের অর্ধেক পরিমাণ নারকেল তেল নিয়ে সেটিকে আপনার ছোট্টটার নিতম্বে হয়ে থেকে ফুসকুড়িগুলির উপরে প্রয়োগ করুন।এছাড়াও নারকেল তেল আবার ডায়পারে ছত্রাক র‍্যাশের চিকিৎসার জন্যও কার্যকর।

২.ভিনিগার

ভিনিগার

প্রস্রাব ক্ষারীয় প্রকৃতি হওয়ার কারণে,এটি শিশুর ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে যদি সে অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে একটি ডায়পার পরে থাকে।স্নানের জলের সাথে দেড় কাপ মত ভিনিগার যোগ করে সেই জল দিয়ে আপনার বাচ্চার পিছনের অংশ পরিষ্কার করুন। এছাড়াও আপনি এক চা-চামচ হোয়াইট ভিনিগার নিয়ে এক কাপ জলের সাথে মিশিয়ে সেটি দিয়ে আপনার সোনার নিতম্বটি মুছে দিতে পারেন।এই দ্রবণটি ব্যবহার করা যেতে পারে বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তনের সময়।

৩.বুকের দুধ

বুকের দুধ

ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য বুকের দুধ একটি কার্যকর প্রতিকার।আপনাকে যা করতে হবে তা হল,কয়েক ফোঁটা বুকের দুধ নিয়ে র‍্যাশ প্রভাবিত এলাকার উপরে প্রয়োগ করুন এবং এগুলিকে নিজে থেকেই শুকিয়ে যেতে দিন।সবচেয়ে ভাল ফলাফল পেতে,একবার আপনি এই প্রতিকারটি ব্যবহার করার পর তার ডায়পারটি পরিবর্তন করে একটি পরিষ্কার ফ্রেস ডায়পার পরিয়ে দিন।

৪.তার ডায়পারকে পরিষ্কার রাখুন

ডায়পার র‍্যাশগুলি আসলে হয়ে থাকে আদ্র ডায়পার থেকে।আপনার বাচ্চার নিতম্বটি উপযুক্ত শুকনো রাখা এবং সেটিকে না ঘষার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।তাকে স্নান করানোর সময় হালকা ধরনের সাবান ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে তার ডায়পারটি পরিষ্কার করে দিন।মাঝে মধ্যেই তার ডায়পার পরিবর্তন করে দিতে মনে রাখবেন এবং অ্যালকোহল নির্ভর কোনও ওয়াইপ ব্যবহার করবেন না।

৫.কর্নস্টার্চ

কর্নস্টার্চ সবচেয়ে ভাল কাজ করে বাচ্চার নিতম্ব শুকনো রাখতে এবং কার্যকরভাবে আদ্রতা শুঁষে নিতে।প্রথমে,আপনার বাচ্চার পশ্চাৎদেশ ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন তারপর একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে এটি মুছে নিন।এবার কিছুটা কর্নস্টার্চ পাউডার নিয়ে সংক্রমিত অঞ্চলগুলির উপর প্রয়োগ করুন এবং ধীরে ধীরে নতুন ডায়পার পরিয়ে দিন।ফুসকুড়িগুলি না সেরে যাওয়া অবধি প্রতিদিন এটি করুন।

৬.পেট্রোলিয়াম জেলি

পেট্রোলিয়াম জেলি

শিশুরা যখন তখন তাদের ডায়পার ময়লা করে ফেলে এবং তারপর,তা তাদের ফুসকুড়িগুলিকে আরও খারাপ করে তোলে।এই ফুসকুড়িগুলির চিকিৎসা করতে,আপনার বাচ্চার পশ্চাৎদেশ পরিষ্কার করুন,সুতির তোয়ালে দিয়ে মুছে শুকনো করে নিন,এবং প্রভাবিত এলাকাগুলির উপর পেট্রোলিয়াম জেলির একটা পাতলা আস্তরণ প্রয়োগ করুন।পেট্রোলিয়াম জেলি প্রভাবিত এলাকাটিকে রক্ষা করবে মল-মূত্রের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির থেকে,এইভাবে ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলিকে প্রতিরোধ করবে।মাঝে মধ্যেই তার ডায়পার পাল্টিয়ে দিন এবং যতক্ষণ না লক্ষ্য করেন ফুসকুড়িগুলিকে উধাও হয়ে যেতে,পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।

৭.একটি ওটমিলের স্নান চিত্রায়ণ করুন

শিশুদের মধ্যে ডায়পার র‍্যাশের প্রয়োগিত এবং পরীক্ষিত একটি প্রতিকার হল ওটমিল।এটি যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি আনে।আপনি বড় এক চামচ ওটমিল নিয়ে স্নানের জলে মিশিয়ে নিতে পারেন।এরপর আপনার বাচ্চাকে এই জলের মধ্যে 5-10 মিনিটের জন্য বসিয়ে রাখুন।তারপর উপযুক্তভাবে তার ত্বক শুকিয়ে নিন।নম্র হন,ঘষবেন না কারণ ঘষা পরিস্থিতিকে কেবল আরও খারাপ করে তুলবে।যদি ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলি তীব্র হয়ে ওঠে তবে সেক্ষেত্রে ভাল ফলাফলের জন্য এই প্রতিকারটি দিনে দুবার ব্যবহার করুন।

৮.কিছু সময় ডায়পার-মুক্ত রাখা নিশ্চিত করুন

শিশুদের মধ্যে ডায়পার র‍্যাশ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল তাদের পশ্চাৎদেশের চারপাশের অঞ্চলে বায়ু সঞ্চালনের অভাব।সুতরাং,অবশ্যই কিছু সময় তাকে ডায়পার-মুক্ত রাখা উচিত।আপনার সন্তানের ডায়পার পরিবর্তন করার মাঝের সময়ে তাকে কিছু সময় ডায়পার-মুক্ত অবস্থায় থাকতে দিন।প্রভাবিত এলাকাটিকে বাতাসে মুক্ত করার ফলে সেখানে বায়ু চলাচলের দরুন আরও দ্রুত ফুসকুড়িগুলির নিরাময় হবে।

৯.ক্যামোমাইল চা এবং মধু

ক্যামোমাইল চা এবং মধুর মিশ্রণ শিশুদের ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য একটি অ্যান্টিসেপ্টিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।এটি ফুসকুড়িগুলিকে দূর করে এবং ত্বককে নিরাময় করে তোলে।মোটামুটি প্রায় দু কাপ ক্যামোমাইল চায়ের সাথে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণটিকে নিয়মিত প্রতিদিন ফুসকুড়িগুলির উপর স্প্রে করে ছিঁটিয়া দিন সেগুলি নিরাময়ে দ্রুত সাহায্য পাওয়ার জন্য।

১০.অ্যালো ভেরা বা ঘৃতকুমারী

অ্যালো ভেরা বা ঘৃতকুমারী

আপনার সন্তানের ডায়পার জনিত ফুসকুড়ি যদি গুরুতর প্রদাহের সাথে থাকে,তবে আপনার অ্যালো ভারা জেল ব্যবহার করা উচিত।আপনি ব্যবহার করতে পারেন হয় তাজা অ্যালো ভেরা জেল অথবা বোতলজাত সংস্করণ-দুটোই প্রাকৃতিক এবং আপনার বাচ্চাকে স্বস্তি দেবে।

১১.বেকিং সোডা

বেকিং সোডা pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শিশুর ত্বক থেকে অবাঞ্ছিত ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে অপসারিত করে।উষ্ণ গরম জলের সাথে বড় দুই চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে মিশ্রণটি দিয়ে নিয়মিত শিশুর ফুসকুড়িগুলিকে পরিষ্কার করুন।এরপর এগুলিকে বাতাসে শুকোতে দিন,এবং এই প্রতিকারটি একটি যাদুমন্ত্রের মত কাজ করবে।

১২.টি ট্রি অয়েল বা চা গাছের তেল

চা গাছের তেলের অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি এটিকে শিশুদের মধ্যে হওয়া ডায়পার জনিত ফুসকুড়ির জন্য এক চমৎকার প্রতিকার হিসেবে গড়ে তুলেছে।এই তেলের প্রায় তিন ফোঁটা মত নিন এবং সেটিকে নারকেল তেলের মতো একটি যত্নশীল তেলের সাথে মিশ্রিত করুন।এরপর সেই মিশ্রণটিকে ধীরে ধীরে ফুসকুড়িগুলির উপরে প্রয়োগ করুন এবং সেগুলি নিরাময় হতে দেখুন।

১৩.এসেনশিয়াল অয়েল স্প্রে

এসেনশিয়াল অয়েল স্প্রে

শিশুদের মধ্যে হওয়া ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলির চিকিৎসায় এসেনশিয়াল বা অপরিহার্য তেলগুলির একটা মিশ্রণও বেশ ভাল ভাবে কাজ করে।কিছু পরিমাণ জলের সাথে আমণ্ড তেল,চা গাছের তেল এবং ল্যাভেন্ডার অপরিহার্য তেল মিশ্রিত করে একটি স্প্রে বোতলের মধ্যে মজুত করে রাখুন।এরপর সেই স্প্রেটিকে ফুসকুড়ি প্রভাবিত এলাকাগুলিতে ব্যবহার করুন কার্যকর ফলাফল পাওয়ার জন্য।

১৪.দই

দই

সাদা দই(এর অর্থ হল কোনওরকম মিষ্টি অথবা কর্নস্টার্চ যোগ না করা দই)ব্যবহার করা যেতে পারে ডায়পার জনিত ফুসকুড়ি এবং প্রদাহের চিকিৎসায়।ফুসকুড়ি প্রভাবিত এলাকাগুলির উপর দইয়ের একটা পুরু আস্তরণের প্রলেপ দিয়ে দিন এবং ফুসকুড়িগুলিকে দু দিনের মধ্যে উধাও হয়ে যেতে দেখবেন।আপনি সাদা দইকে ব্যবহার করতে পারেন ঠিক ডায়পার র‍্যাশ ক্রীমের মত করেই।প্রভাবিত এলাকার উপর আপনি ঘরের তাপমাত্রায় রাখা দই ব্যবহার করুন এবং তারপর ডায়পার পরান।

১৫.ইপসম সল্ট বা লবণ

ইপসম সল্ট বা লবণ

উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম উপাদান এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য ইপসম লবণ পরিচিত।ঈষদুষ্ণ স্নানের জলের মধ্যে অর্ধেক কাপ ইপসম লবণ মিশিয়ে সেই মিশ্রিত জলের মধ্যে আপনার বাচ্চাকে 5-10 মিনিটের জন্য ভিজতে দিন।বাচ্চাকে স্নান করানোর সময় এটি অনুসরণ করুন এবং ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলিকে দূর করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এটির পুনরাবৃত্তি করুন।

কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনার প্রয়োজন

ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলি সাধারণত সেরে যায় এবং কয়েক দিনের মধ্যেই উধাও হয়ে যায়।বেশীর ভাগ বাবা-মায়েরাই ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলির শরণ নিয়ে থাকেন,কিন্তু সেগুলি সর্বদা কার্যকর প্রমাণিত হয় না।যদি আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলিকে আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখতে পান তবে সে ক্ষেত্রে আপনার তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

  • জ্বর
  • ফোসকা
  • অবিরত ফুসকুড়ি হয়ে চলা
  • অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া

ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলির চিকিৎসা ঘরেই করা যেতে পারে।শিশুদের মধ্যে হওয়া ডায়পার র‍্যাশগুলিতে ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সাধারণত ভালোভাবেই কাজ করে।এই প্রতিকারগুলি ব্যবহারের চেষ্টা করুন,আপনার বাচ্চা খুব শীঘ্রই ভাল অনুভব করবে।যাইহোক,তবে ডায়পার জনিত ফুসকুড়িগুলি যদি গুরুতর হয়ে ওঠে(এর অর্থ হল যদি আপনি উপরের উপসর্গগুলি লক্ষ্য করে থাকেন) এবং এক সপ্তাহের মধ্যে যদি উধাও না হয়ে যায়,একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন।