আপনি সদ্য সদ্যই আপনার ছোট্ট আনন্দের ডালিটিকে আপনার জীবনে স্বাগত জানিয়েছেন আর আপনি নিশ্চই ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করেছেন যে একজন নতুন মা হয়ে ওঠা বেশ বড় একটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।আপনার ছোট্ট পুচকু সোনা আপনার সমগ্র সময় এবং মনোযোগ আকর্ষণ করার দাবী করে এবং আপনি নিজের দিকে দেখার প্রায় কোনওরকম সময় পান না বললেই চলে-আমরা সেটা বুঝতে পারি!কিন্তু এখন যদি আপনি আপনার স্বাস্থ্যের দিকে মনযোগ না দেন তবে ভবিষ্যতে আপনাকে অনুতাপ করতে হতে পারে।
প্রসবের পর,আপনার শরীরের মধ্যে একটা ব্যথা থাকবে বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান পদ্ধতিতে আপনার প্রসব করানো হয়ে থাকে,তবে ব্যথা থেকে স্বস্তি পেতে এবং সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় হয়ে উঠতে,আপনি প্রসবোত্তর মালিশ করাতে পারেন!প্রসবোত্তরকালীন মালিশটি আপনার পেশীগুলির টান শিথিল করে,ব্যথা প্রশমিত করে এবং আপনাকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিরাময় করে তুলতে সহায়তা করে।কিন্তু সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের পর কি কোনও মহিলার প্রসবোত্তর মালিশটি করানো উচিত?খুঁজে দেখুন!
প্রসবোত্তর মালিশটি হল বাচ্চার জন্ম দেওয়ার পর মায়ের সারা দেহে একটা মালিশ প্রদান করা।আর এটি সাধারণত করানো হয়ে থাকে একজন পেশাদার অঙ্গমর্দিকার দ্বারা যিনি প্রসবোত্তর মালিশ প্রদানের একজন বিশেষজ্ঞ।আপনার সময়ানুযায়ী একজন অঙ্গমর্দিকাকে আপনার বাড়িতে ডেকে তাকে দিয়ে মালিশ করাতে পারেন।এই প্রসবোত্তর মালিশটি খুবই উপকারি হতে পারে,বিশেষ করে সেই সকল নতুন মায়েদের,যাদের সিজারিয়ান পদ্ধতির দ্বারা প্রসব হয়েছে।সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের ক্ষতগুলির নিরাময় হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে,যদি আপনার মধ্যেও এই পদ্ধতিটি পরিচালনার দ্বারা প্রসব করানো হয়ে থাকে,আপনি হয়ত যন্ত্রণা অনুভব করবেন,বিশেষত আপনার ক্ষতের চারপাশের অঞ্চলে।সম্পূর্ণ রূপে পুনরুদ্ধারের জন্য আপনি এর মালিশগুলিকে বেছে নিতে পারেন,তবে মালিশ করানোর আগে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিন।যদি আপনার সিজারিয়ান পদ্ধতির দ্বারা প্রসব হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত পেটে মালিশ করানোর আগে মোটামুটি প্রায় 6 সপ্তাহ মত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকবেন।
একজন মহিলার উপর মানসিক চাপ পড়ার পর তার দেহকে শিথিল করে তুলতে একটি প্রসবোত্তর মালিশ সহায়তা করে।একটি সি সেকশন প্রসবের পর সেই সময়ের ভীতিগুলি নিরাময় হতে বেশ কিছুটা সময় নেবে।একজন মহিলা তার প্রসবের কয়েক সপ্তাহ পরে একটি প্রসবোত্তর মালিশ করানোকে বেছে নিতে পারেন।প্রসবের পরবর্তী মালিশটি করালে তা শরীরের ব্যথা যন্ত্রণা কমাতে এবং সেই অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করবে।এটি বিশেষভাবে নিশ্চিত করবে যে, আপনার ভিতরের ক্ষত কলাগুলি আপনার আভ্যন্তরীণ অন্যান্য অঙ্গাণুর উপর প্রভাব ফেলে না এবং যার ফলে আপনি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার মুখোমুখি হন না।প্রসবোত্তর মালিশগুলি করানোর উপকারিতাগুলি নিম্নরূপঃ
পূর্বের উল্লেখানুযায়ী,সিজারিয়ান পদ্ধতির পর সম্পূর্ণ দেহ মালিশ করানোর আগে চিকিৎসকরা নূন্যতম 2 সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এটি নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্রপচারের পরবর্তীতে আপনার দেহে সংক্রমণগুলি দেখা দেবে না,যেহেতু প্রসবের পর আপনার দেহ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।যেহেতু এই সময় আবার আপনি আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং আপনার সন্তানের অনাক্রম্যতাও এই সময় বেশ কম থাকবে,তাই সম্পূর্ণ শরীরে একটা মালিশ গ্রহণ করার আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ বা তার থেকেও কিছুটা বেশি সময় অপেক্ষা করাটাই আদর্শ।সিজারিয়ান পদ্ধতির পর আপনি মাথা,পা,পায়ের পাতা এবং পিঠ মালিশ করাতে পারেন,তবে পেটের মালিশ করানো কমপক্ষে 6-7 সপ্তাহের জন্য এড়িয়ে চলুন।
আপনার সাধারণত ভেষজ তেলগুলি এড়িয়ে যাওয়া এবং যে তেলগুলি নতুন মায়েদের জন্য নিরাপদ হতে পারে সেগুলির বিষয়ে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শ নেওয়া উচিত।সাধারণত,সরষের তেল,তিল তেল এবং নারকেল তেল নিরাপদ বলে বিবেচিত,তবে সেটিও আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া সবচেয়ে সেরা বাজি হবে।আপনার অঙ্গমর্দিকা এমনকি তার সাথে একটা বিশেষ মিশ্রণ আনতে পারেন,যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আদর্শ,বিশেষ করে সিজারিয়ান পদ্ধতির পর পেটের মালিশের জন্য।সেই তেলটির গন্ধে আপনার শিশুটি কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় তা লক্ষ্য করুন,যদি সে এটি পছন্দ না করে বা তার মধ্যে যদি খুব খারাপভাবে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়,তবে সেই তেলটি পাল্টে ফেলুন,বিশেষ করে রোজের মালিশের জন্য,কারণ স্তন পান করানোর সময় আপনাকে তার অন্তরঙ্গ হতে হবে।
আপনার সিজারিয়ান সেকশনের ক্ষতটি যখন নিরাময় হবে।কলাটি তখন সবদিকেই বাড়ার সম্ভাবনা থাকে,যেহেতু এটি কোনও স্বাভাবিক প্রসব নয়,তাই ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগটির কলা যেভাবে খুশি বেড়ে যাবে।আপনার দেহের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়ায় এটি হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং মূত্রাশয়ের মত অন্যান্য আঙ্গাণুর নাগালে আসতে পারে ও এর স্বাভাবিক ক্রিয়াকার্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।আকস্মিক ঘটে থাকা এই ক্ষতের নিরাময়টি ধীর এবং বেদনাদায়কও হতে পারে যা আপনার পুনরুদ্ধার হয়ে ওঠার সময়টিকে বাড়িয়ে তুলবে এবং এমনকি আপনার বসে থাকাটিকেও যন্ত্রণাদায়ক করে তুলবে। সিজারিয়ান পদ্ধতির পর একটা মালিশ সম্পন্ন করলে তা এই বেড়ে যাওয়াটিকে আরও অন্যরকম হওয়া থেকে একইরকম রাখবে এবং ঐ অঞ্চলে রক্তপ্রবাহের উন্নতি ঘটাবে,এইভাবে এটি নিরাময়কে আরও ভালভাবে বাড়িয়ে তোলে এবং উদ্দীপ্ত করে।এই মালিশের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একজন পাকাপক্ত অঙ্গমর্দিকাকে দিয়েই সেটি পরিচালনা করা উচিত,যিনি মালিশের ব্যাপারে দক্ষ এবং এই ধরণের স্পর্শকাতর এলাকায় কীভাবে তা সম্পাদন করতে হয় তা জানার জন্য তিনি যথাযগ্য চিকিৎসা পরিচালনা করবেন।
সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের পর পেটের মালিশটি না করালে তা হয়ত পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।আপনার ক্ষতচিহ্নগুলি হয়ত সময়ের সাথে সেরে উঠবে এবং দেখতেও ঠিক হয়ে যাবে,কিন্তু অস্ত্রপচারের দ্বারা প্রভাবিত এই অঞ্চলটি নিরাময় হয়ে ওঠার জন্য আপনার দেহে সহায়তার প্রয়োজন হবে।ক্ষতচিহ্নের কলাটি মূত্রাশয় অথবা এমনকি জরায়ুর মত শরীরের অন্যান্য অঙ্গাণুর উপর জড়ো হতে পারে এবং চূড়ান্ত ক্ষেত্রে আবার বন্ধ্যাত্বের মত কার্যকর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।এর পরিণতি হিসেবে আপনার মধ্যে আবার এমনকি শ্রোণী এবং পিঠে ব্যথাও বেড়ে যেতে পারে।যাইহোক,প্রসবের পরে মালিশগুলি করালে তা আপনার শরীরে আরাম দিতে এবং নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
নিরাময় প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে তুলতে এবং আক্রান্ত এলাকায় ত্বকের বৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করতে দিনে একবার করে আপনাকে প্রসবোত্তর মালিশ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আপনার অঙ্গমর্দিকাকে অবশ্যই একজন পেশাদারী হতে হবে এবং তিনি যাতে ধীরে ধীরে(খুব কম চাপ প্রয়োগের দ্বারা) মালিশ করেন,বিশেষ করে পেট ও তলপেট অঞ্চলে সে ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সিজারিয়ান পদ্ধতির পর আপনার শরীরে যাকিছুই করুন না কেন তা অবশ্যই যত্ন সহকারে আপনার করা উচিত।সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের পর প্রসবোত্তর মালিশ গ্রহণের সময় আপনার যে সকল সাবধানটাগুলি অবলম্বন করা উচিত এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
আপনার যদি কোনও জটিলতা থাকে কিম্বা আপনার ডাক্তারবাবু যদি সিজারিয়ান পদ্ধতির পর পেটে মালিশ না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে সেটি এড়িয়ে চলুন।আপনার যদি ত্বকের সংক্রমণ,একজিমা অথবা অন্য কোনও র্যাশ বা অ্যালার্জি হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রেও মালিশটি না করানোর ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে কারণ এগুলি আপনার অবস্থাটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।যদি আক্রান্ত অঞ্চলটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হয় অথবা আপনি তীব্র যন্ত্রণা পান,তবে সেক্ষেত্রে মালিশ শুরু করার আগে সেগুলি নিরাময় হতে কিছুটা সময় দিন এবং একজন ভাল অঙ্গমর্দিকার খোঁজ করুন।
আপনার শরীর কি বলে শুনুন এবং আপনি এর সাথে কোনওরকম ভুলভ্রান্তি করবেন না।একটা চাপের মধ্যে থাকার ব্যাপারটিকে এক্ষেত্রে অজুহাত হিসেবে প্রশ্রয় দিতে কাজে লাগান এবং একজন নতুন মা হিসেবে আপনার দেহের পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য আপনার নির্দিষ্ট কয়েকটি জিনিস করা প্রয়োজন এবং সেগুলি যে আপনার ছোট্ট সোনাটির ভালভাবে যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও আপনাকে বিশেষভাবে সহায়তা করে তা উপলব্ধি করুন।