শ্রুতিকথা এবং বিশ্বাস অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম ক্ষতিকারক হলেও, আসলে এটি মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক এবং স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। সঠিক ভাবে এবং সঠিক আতিশয্যতা সহকারে করলে, গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম আসলে পরামর্শযোগ্য।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অপরিহার্য এবং খুবই সহায়ক, কিন্তু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলী অনুসরণ করা উচিত যা থেকে মা এবং শিশু উভয়ই উপকৃত হতে পারে।
গর্ভাবস্থার পর্যায়গুলির উপর ভিত্তি করে ব্যায়াম করলে মা এবং সন্তানের কোনো ক্ষতি ছাড়াই মা-কে সহজ ও স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করতে পারে।
প্রথম ত্রৈমাসিক (প্রাথমিক 3 মাস) সবচেয়ে দুর্বল সময় এবং মায়েদের যেকোনো ক্লান্তিকর কার্যকলাপ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যেমন ভারী ওজন তোলা, খুব বেশী কার্ডিও বা উচ্চ প্রবলতাযুক্ত ব্যায়াম। শুধুমাত্র মৃদু ব্যায়ামের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে, তবে শুধুমাত্র আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পরে।
ব্যায়ামের আগে একটু গা গরম করে নিলে পেশী নমনীয় হয় এবং কঠোরতা হ্রাস পায়, ফলে ব্যায়ামের জন্য আপনার শরীরকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
শুরু করার জন্য, আপনার মাথা পিছনের দিকে ঝোঁকান, নিতম্ব দেওয়ালে ঠেসে দিন, আপনার কাঁধ শিথিল করুন, এবং আপনার পা দুটি ফাঁক করুন।
ধাপ:
এই ব্যায়াম আপনার মেরুদণ্ড এবং নিম্ন পেট স্থিতিশীল করার সহায়ক যখন আপনি পিঠে ব্যাথা অনুভব করেন।
হাঁটু মুড়ে এক পাশ ফিয়ে শুয়ে পড়ুন এবং মাথার নিচে একটি হাত রাখুন ও অপর হাতটি মাটিতে স্পর্শ করে রেখে আপনার শরীরকে অবলম্বন দিন। আপনার একটি গোড়ালির উপর অপর গোড়ালিটি রাখুন।
ধাপ:
এই ব্যায়াম পেশী, পেট, উরু, নিতম্ব এবং পেলভিক মেঝে টানটান করতে সাহায্য করে। যেহেতু আপনার গর্ভাবস্থার সাথে সাথে পেট বৃদ্ধি পায়, তাই দেওয়ালে পিঠ ঠেসান দিয়ে এই ব্যায়ামটি করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেঝের উপর হাঁটু ভাঁজ করে চিত হয়ে শুয়ে, আপনার হাতের তালু গোড়ালির নিচে রাখুন।
ধাপ:
এই ব্যায়াম একটি বাড়ন্ত পেটকে জায়গা দিতে পিঠের নিচের দিককে অবলম্বন দেবে। এটি নিতম্বকেও শক্তিশালী করে এবং প্রসবের সময় সাহায্য করে।
হাঁটা গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয়, কিন্তু দ্রুত হাঁটা এড়িয়ে যান। এটি মা-কে আরও নমনীয় হতে সাহায্য করে এবং শরীরে চর্বি জমা হওয়া এড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুইবার অন্তত 30 মিনিট করে হাঁটা যথেষ্ট। প্রথম ত্রৈমাসিকের সময়, কিছু বমিভাব হওয়া স্বাভাবিক। তাই একটি হালকা ব্যায়ামের রুটিন রাখারপরামর্শ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময়ে, মা অপেক্ষাকৃত ভাল বোধ করেন, এবং এটি ব্যায়ামের জন্য একটি নিখুঁত পর্যায় যা সহজ প্রসবে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (13-27 সপ্তাহ) বা হানিমুন পর্যায় তুলনামূলকভাবে সহজ কারণ বমিভাবের উপসর্গগুলি সাধারণত এই সময়ের মধ্যে চলে যায়। পেট ব্যথা খুব বেশী হয় এবং শিশুর আন্দোলন সহজেই অনুভূত হয়, কারণ গর্তের সংকোচন ঘন ঘন হতে থাকে। এই পর্যায়ে ব্যায়াম করা সাধারণত নিরাপদ কিন্তু আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে করলে ভালো।
পায়ের পাতা গুটিয়ে নিয়ে এবং আপনার আঙ্গুলগুলিকে প্রশস্ত করে একটি বিড়ালের ভঙ্গি নিন, আপনার আঙুলের ডগা দিয়ে মেঝেতে চাপ দিন।
ধাপ:
সামনে ঝুঁকুন এবং আপনার হাতের আঙ্গুল মেঝেতে দৃঢ়ভাবে চেপে ধরে হাত ও পা-কে বিশ্রামে রাখুন যাতে একটি “এ”-র রূপ নেয়।
আবার একটি বিড়ালের ভঙ্গিতে বসুন, হাতের তালু ও পায়ের পাতা মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়ে।
ধাপ:
এই ব্যায়াম পেলভিসকে শক্তিশালী করে, গর্ভাবস্থায় পিঠ ব্যথা উপশম করে, প্রসব শ্রমে সহায়তা করে ও প্রসবের প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য কাজ করে।
দেওয়ালের কাছে মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে, পা প্রসারিত করুন এবং আপনার পা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখুন।
ধাপ:
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ভারী ব্যায়ামগুলি এড়াতে হবে কারণ ভারী ওজন তোলার মতো ভারী ও পরিশ্রমের কাজগুলি অ্যামনিওটিক তরলের লিক করার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
কাঁধের প্রস্থের সমান দূরত্বে পা দুটিকে ফাঁক করে দাঁড়ান।
ধাপ:
প্রসব শ্রমের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় পেলেভিক মেঝের পেশীগুলির ব্যায়াম করা জরুরি। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য কেগেল ব্যায়াম পেলভিক মেঝের পেশীগুলির শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেয়। এই পেশীগুলিকে আলাদা করা এবং এগুলির ব্যায়াম করার জন্য, আপনার পেটের পেশী, উরু বা নিতম্বের পেশীগুলিকে ব্যবহার না করে প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করুন। ধীর কেগেল ব্যায়ামের জন্য, কসরত বলের উপর আরামদায়কভাবে পিঠ সোজা রেখে বসুন।
ধাপ:
ধীর কেগেল ব্যায়াম
দ্রুত কেগেল ব্যায়াম
স্বাভাবিক প্রসবের জন্য গর্ভধারণের সময় যোগব্যায়াম প্রত্যাশী মায়েদের জন্যভীষণভাবে সুপারিশ করা হয় এবং অনেক ভঙ্গি ও আসন রয়েছে যা প্রত্যাশিত মায়ের নমনীয়তা এবং ধৈর্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যে আসনগুলি করা যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:
যষ্টিকাসন (লাঠির ভঙ্গি):
বক্রাসন (পাকানো ভঙ্গি):
কোণাসন (কৌণিক ভঙ্গি)
উবু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পেলভিক পেশীর সংকোচন এবং আলগা হওয়ায় সহায়তা করে এবং প্রসবের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। একটি জিম বল বা হোল্ডারের অবলম্বন নিয়ে অবস্থান নিলে, পেলভিক এলাকা এবং উরুতে ভালো চাপ পড়বে।
ধাপ
গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম মাকে বিভিন্ন ভাবে উপকার করে এবং স্বাভাবিক নিরাপদ প্রসবের উচ্চ সম্ভাবনা নিশ্চিত করে। এটি নিম্নলিখিত সুবিধাও প্রদান করে,
সাধারণত, প্রায় অর্ধ ঘন্টা ব্যায়াম যথেষ্ট এবং সুপারিশ করা হয়। নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখলে, প্রত্যাশিত মায়ের ব্যায়াম বন্ধ করা আবশ্যক:
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, ব্যায়ামের সঠিক রুটিন মেনে চললে স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে তা ভীষণভাবে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, সাথে প্রসব শ্রমের সময় তার ব্যথা কমিয়ে দেয়। নিরাপদ অভ্যাস নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারকে বিস্তারিতভাবে ব্যায়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা উচিত এবং তত্ত্বাবধানের মধ্যে করতে হবে।