সঠিক ধরণের খাদ্য গ্রহণ আপনার প্রজননে সাহায্য করে থাকে।যদি আপনি পরিবার পরিকল্পনা করা শুরু করে থাকেন, তবে এই অনুছেদটি পরে জেনে নিন সেই সকল পছন্দের খাদ্য সম্পর্কে, যেগুলি আপনাকে সফল মাতৃত্বের পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
সঠিক ধরণের খাদ্যগ্রহণ আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনাকে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।তাই,যদি আপনি সন্তান– ধারণের জন্য চেষ্টা করেন এবং সেই সময় ভাগ্য আপনার সাথ না দেয়, বাকি সব ছেড়ে কয়েকটি বিশেষ খাদ্যাভ্যাসের উপর নজর দিতে পারেন যা আপনার গর্ভধারণের জন্য সহায়ক হতে পারে।এখানে কিছু খাদ্যের তালিকা দেওয়া হল যেগুলি প্রমানিত যে, আপনার সন্তানধারণ পরিকল্পনায় ভীষণভাবে উপকার করে।
গর্ভধারণের জন্য ১০টি সেরা পুষ্টিকর খাদ্য
কিছু মহিলার গর্ভবতী হওয়ার সময় খুবই কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অন্যান্যদের তুলনায়।যদি আপনি চেষ্টা চালিয়ে যান,অসফল হন,সন্তানধারণ করতে,তাহলে আপনি গর্ভধারণের জন্য বিবেচনা করতে পারেন বেশ কিছু সেরা খাদ্যগ্রহণ করার কথা।শরীরের মধ্যে সঠিকভাবে হরমোনের সাম্যতা বজায় রাখার সম্ভাব্য গুণগুলি এই খাবারগুলিতে থাকে।যেগুলি প্রয়জনীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয় এবং অবশ্যই প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়।
এখানে প্রজননে সাহায্যকারী বেশ কিছু খাদ্যের কথা বলা হল।
১।সবুজ শাকসব্জি
প্রজননের সময় প্রজননে সাহায্যকারী কিছু খাদ্য যেমন–সবুজ শাকসবজি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।। এগুলি আয়রন, ফলিক এসিড এবং এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়। আপনার প্রত্যহ খাদ্যতালিকায় নিয়ম করে সবুজ শাকসবজি রাখা উচিত। কারণ এই জাতীয় খাবার শরীরের শক্তিশালী এন্ডোমেট্রিয়াম লাইনিং গঠনে সাহায্য করে। এবং জাইগোটটিকে জরায়ুর মধ্যে প্রতিস্থাপন করতেও সাহায্য করে।
২। বাঁধাকপি
বাঁধাকপি ও হলো আরেকটি সুপার খাদ্য যেটি আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের যোগান দেয়। এর ডাই–ইন্দোল মিথেন উপাদানটি আপনার শরীরের অস্ট্রোজেন মেটাবলিজম কে নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। বাঁধাকপি শরীরে ফাইব্রয়েড গঠনে বাধা দেয় এবং এন্ডোমেট্রিওসিস–কেও দূরীভূত করে(জরায়ুর মধ্যে অবিন্যস্ত কলা গুলির সারিকরণ)।
৩। ব্রকলি
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় ব্রকলির স্থান কিছুটা উঁচুতে। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যেটি ওভেলিউশন পদ্ধতির মাধ্যমে ডিম্বাণুটিকে পরিণত হতে সাহায্য করে। ব্রকলি আয়রন, ফলিক এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি সুপার খাদ্য। –যা আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ প্রোটিন সরবরাহ করে। এগুলি ছাড়াও ব্রকলি আপনার শরীরে আয়রনের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় যা আপনাকে প্রসবের সময় অ্যানিমিয়া থেকে রক্ষা করে।
৪।আলু
এমনকি আলুও এমন এক খাদ্য যেটি প্রজননে সাহায্য করে। আলু আপনার শরীরের কোষ বিভাজন কে বাড়ায়। আলু খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যকর ডিম্বাণু গঠনের সম্ভাবনাও বাড়ে। এগুলি ছাড়াও আপনার দৈনন্দিন ডায়েট চার্টে থাকা আলু আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান যেমন– ভিটামিন B এবং A–এর যোগান দেয়।
৫।সাইট্রাস খাদ্য
আপনি যদি গর্ভবতী হতে চান তাহলে বেশি মাত্রায় সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। যেহেতু এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C সমৃদ্ধ হয়। তাই ডিম্বাণুটি কে সহজেই ওভারির মধ্যে মুক্ত করতে সাহায্য করে। আপনি যখন গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন তখন প্রত্যহ এক গ্লাস করে কমলা লেবুর রস খেলে আরো বেশী উপকার পাবেন।
৬।কলা
নিয়মিত ঋতুচক্রে আপনার প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে,এবং সঙ্গমের পর চরম মূহুর্তে আপনার গর্ভধারনের ক্ষমতাটিকে বাড়াতে সাহায্য করে। কলা ভিটামিন B সমৃদ্ধ হওয়ায় আপনার নিয়মিত স্বাভাবিক ঋতুচক্র বজায় রাখে।। এগুলি ছাড়াও কলা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ, ভিটামিন ও সামান্য ফ্যাট যুক্ত হয়। তাই কলা ভীষণ স্বাস্থ্যকর জলখাবার। আরো অনেক ভাবেই কলার স্বাদ নেওয়া যেতে পারে যেমন মিল্কশেক, আইসক্রিম, সন্দেশ, পিনাট বাটার, স্যান্ডউইচ এবং এইরকম প্রায় সবকিছুর সাথেই কলা খাওয়া যেতে পারে।
৭।আনারস
আনারস গর্ভধারণের জন্য আপনাকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক কারী হিসেবে আনারসের অনেক সুখ্যাতি আছে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ থাকে যেগুলি এক প্রকার জন্মদায়ক খনিজ । আনারস আপনার শরীরের জন্মদায়ক হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনি আনারস কে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁচা খেতে পারেন। অথবা এটিকে পিষে রস করেও খেতে পারেন।
৮। সালমন
বন্য সালমন ভীষণ জনপ্রিয় একটি মাছ,যা সহজেই পাওয়া যায়।। আপনি যদি শাকাহারি না হন এবং গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন তাহলে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সালমান মাছ রাখলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। সালমান মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা 3 এবং ফ্যাটি এসিড থাকে,যেগুলি আপনার শরীরের বিভিন্ন হরমোন গুলির ক্ষরণ এবং পুনরায় তৈরীর ক্ষেত্রে ভীষণভাবে সাহায্য করে। বন্য সালমন ভীষণভাবে উপকারী। যেহেতু এটি ওস্ট্রোজেনের অসাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে,জন্মদায়ক অঙ্গগুলিতে রক্তচাপ বাড়ায়এবং তার ফলে প্রজনন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৯। জটিল কার্বস
জটিল কার্বস বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফ্যাট,ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট।এই কারণেই জটিল কার্বস যেমন– আটার রুটি এবং ওট দিয়ে প্রস্তুত খাদ্যগুলি প্রজননে ভীষণভাবে সাহায্যকারী খাদ্য রূপে বিবেচিত, যা গর্ভাবস্থায় রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।প্রতিদিন জটিল কার্বস খাদ্য হিসেবে গ্রহন করলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং প্রজননকারী হরমোন গুলির মাত্রা ঠিক রাখে।যদি আপনি গর্ভবতী হতে চান তাহলে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় জটিল কার্বস রাখুন।দেহের ওজন হ্রাস করার ট্রেনিং এর সময় জটিল কার্বস খাদ্যতালিকায় রাখা হুয়।সঠিক ওজন সন্তানধারণের জন্য উপযুক্ত,ওবেসিটি বা স্থুলতা গর্ভধারণে অসুবিধার সৃষ্টি করে।
১০। রঙিন ফল ও সবজি
যখন আপনি গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন সেই সময় আপনার রোজের খাদ্যতালিকায় রাখুন হলুদ, লাল রঙের ঘন্টা মরিচ,পাতা কপি,কুমড়ো এবং নানান বর্ণের সবজি। এই সকল সবজিগুলি বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উপাদান এবং ভিটামিন এর সঙ্গে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ হয় যেগুলি আপনাকে গর্ভবতী হতে সাহায্য করে। এই কারণে এই সকল সবজি ও ফল– গুলি কে আপনার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। মনে রাখবেন সবজির ঘন রঙগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ হয়। আপনি এগুলিকে আপনার প্যান পাস্তার সঙ্গে যোগ করে খেতে পারেন, নরম ও সিদ্ধ করে খেতে পারেন অথবা অলিভ অয়েল এর মধ্যে সামান্য নেড়েচেড়ে অল্প ভাজা করেও খেতে পারেন।
এগুলি হল সেই সকল খাদ্য যেগুলি আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়ায়। মনে রাখবেন নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার শুধুমাত্র গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে না। গর্ভস্থ শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশে এবং একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতেও সাহায্য করে। সুতরাং আপনি এবং আপনার সঙ্গীটি যদি পরিবার পরিকল্পনা করেন তবে, তবে আপনাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকার ওপর সজাগ দৃষ্টিপাত করার সময় হয়েছে। এবং সেই সকল খাদ্য গ্রহণ করুন যেগুলি প্রজননের হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। এবং আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রজনন বিশারদ এর মতে নিয়মত উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ প্রজননের সম্ভাবনার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।