বাচ্চাদের কাশি – কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

বাচ্চাদের কাশি - কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

সদ্যজাত শিশুদের বেশি ঠান্ডা এবং কাশি সহ ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ বেশি হয় কারণ তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম হয় এবং পুরোপুরি তৈরি হয় না। শিশুদের ক্রমাগত কাশির থেকে গলা ব্যথা এবং সাথে কাঁপুনি ও যন্ত্রণা হতে পারে। সন্তান দীর্ঘদিন ধরে কাশির কারণে অসুস্থ হলে তার জন্য পিতামাতার মন খারাপ হতে পারে। এ কারণেই কাশির কারণগুলি, লক্ষণগুলি এবং এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা জানা দরকার।

কাশির প্রকারভেদ

চার ধরনের কাশি আছে যা বাচ্চাদের প্রভাবিত করে এবং এর মধ্যে রয়েছে সিক্ত কাশি, শুষ্ক কাশি, ক্রুপ কাশি এবং হুপিং কাশি। এখানে কাশির ধরণগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে এগুলির গুরুত্ব কতটা তা দেওয়া হল।

ক্রুপ কাশি

ক্রুপ কাশিতে শুকনো, ও তীব্র কাশি  হয় এবং সাথে খেঁক খেঁক করে আওয়াজ হয়। বাচ্চার উপরের ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালী ফুলে যায়। স্বরযন্ত্রের নিচে ফুলে যাওয়াটাই খেঁক খেঁক শব্দের জন্য দায়ী। আপনি হয়ত লক্ষ্য করতে পারেন যে শিশুটি শ্বাস নেওয়ার সময় একটি উচ্চ গ্রামে আওয়াজ করে, যা স্ট্রিডর নামে পরিচিত।

শুকনো কাশি

এতে শিশুর সর্দি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জনিত সংক্রমণ থেকে  ভাঙা কাশি হয়। এটি নাক এবং গলা সহ উপরের শ্বাস পথকে প্রভাবিত করে। আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে এই ধরনের কাশি উষ্ণ তাপমাত্রায় বা সন্তানের ঘুমোনোর সময়ে খারাপ আকার ধারণ করে।

সিক্ত কাশি

ফুসফুস ও শ্বাসনালী দিয়ে গঠিত নীচের শ্বাসপথে শ্লেষ্মা ও তরল সর্দি জমা হলে সিক্ত কাশি হয়।

হুপিং কাশি (পার্টুসিস)

একটি শিশুর হুপিং কাশি হলে স্বাভাবিক কাশির মতোই উপসর্গ দেখা যাবে, তবে এটিতে বারবার কাশি হয়, মূলত রাতের সময়। বারংবার হওয়া কাশির দমকের সাথে হঠাৎ করে পাঁচ থেকে পনেরোটি কাশি একের পর এক হতে থাকে। বাচ্চা কখনো হুপিং-এর মতো শব্দে গভীর শ্বাস নিতে পারে।

শিশুদের কাশি হওয়ার কারণ

গলায় সঞ্চিত হওয়া শ্লেষ্মা থেকে মুক্তি পেতে অথবা গলা বা শ্বাসপথের স্ফীতির কারণে সৃষ্ট জ্বালা বা অস্বস্তির জন্য বাচ্চাদের কাশি হয়। শিশুদের কাশি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, তবে সর্বাধিক পরিলক্ষিত ও সাধারণ কারণ হচ্ছে ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু।

1. সর্দি বা ঠান্ডা লাগা

ঠান্ডা লাগার ফলে কাশি হতে পারে, এবং শিশুর নাক বন্ধ বা নাক এবং চোখ দিয়ে জল পড়তে পারে,  সাথে গলায় ব্যথা এবং জ্বর থাকতে পারে।

2. ফ্লু

ফ্লু হল সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতোই। এই অবস্থায় শিশুর নাক দিয়ে জল পড়বে, জ্বর থাকবে এবং  ডায়রিয়া বা বমিও হতে পারে। ফ্লু-এর কারণে হওয়া কাশি শুষ্ক; হবে এবং শ্লেষ্মা নরম বা তরলের মতো হবে না, অর্থাৎ আপনার বাচ্চা খুবই কম পরিমাণ শ্লেষ্মা কাশির সাথে বের করতে পারবে।

3. ক্রুপ কাশি

যদি শিশুটির ক্রুপ কাশি হয়ে থাকে, তাহলে শ্বাসপথ স্ফীত হওয়ার কারণে কাশি হবে। শ্বাসের পথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে শিশুর শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।

4. হুপিং কাশি

শিশুটির কাশির সাথে প্রচুর কফ্ বা শ্লেষ্মা উঠবে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় হুপ হুপ শব্দ তৈরি করবে। এটি সাধারণত একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।

5. হাঁপানি (অ্যাস্থমা)

শিশুর কাশি শুরু হওয়ার একটি কারণ হতে পারে হাঁপানি (অ্যাস্থমা)। হাঁপানি (অ্যাস্থমা) রোগে ভুগছে এমন শিশুর বুক সংকীর্ণ বা আঁটসাঁট হয়ে থাকে, এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সময় সাঁইসাঁই শব্দ হয়।

6. টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষা

যেতে চাইছে না এমন ক্রমাগত কাশি টিবির একটি লক্ষণ হতে পারে। টিবির সংক্রমণে হওয়া কাশি প্রায় দুই সপ্তাহের মতো থাকবে। বাচ্চার কাশির সাথে রক্ত বেরোতে পারে, নিঃশ্বাসের কষ্ট থাকতে পারে এবং ক্ষুধামান্দ্য সহ জ্বরও দেখা দিতে পারে।

7. ভাইরাল সংক্রমণ

এটি ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো অসুখের দিকে চালিত করতে পারে।

8. দমবন্ধ হওয়া

যদি আপনি দেখেন শিশুটির নাক অথবা গলা অবরুদ্ধ হওয়ার ফলে হঠাৎ ভীষণ কাশছে এবং সাঁ সাঁ শব্দ করছে, তবে তা কোনো বহিরাগত বস্তুকে শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করার কারণে হতে পারে।

কাশির চিহ্ন ও উপসর্গ

কাশির লক্ষণ ও উপসর্গগুলি পিতামাতার ভয় বাড়াতে পারে, কারণ এটি কিছু গুরুতর অসুস্থতার কারণও হতে পারে। উপসর্গগুলি, কাশির কারণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। কয়েকটি উপসর্গ নীচে দেওয়া হল:

  • ঠান্ডা লাগার ফলে হওয়া কাশি আলগা হয় এবং শ্লেষ্মা গঠন হতে পারে। রাতে এটি আরও খারাপ আকার ধারণ করে কারণ যখন শিশুটি শুয়ে থাকে, তখন শ্লেষ্মা তার নাক ও মুখের পিছন দিক দিয়ে গড়িয়ে পড়ে শ্বাসনালীতে যেতে পারে। মাঝে মাঝে, কাশি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে এমনকি ঠান্ডা লাগার অন্য লক্ষণগুলি চলে যাওয়ার পরও।
  • হাঁপানির (অ্যাস্থমা) কারণে হয়ে থাকা কাশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতে খারাপ আকার ধারণ করে। এর সাথে সাঁ সাঁ করে শব্দ হতে পারে ও শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  • যদি আপনি খেঁক খেঁক শব্দ, কর্কশ কাশি লক্ষ্য করেন, তাহলে এটি ক্রুপ কাশির লক্ষণ হতে পারে।
  • যদি আপনার শিশু সবে  ঠান্ডা লাগা থেকে উদ্ধার পেয়েছে, কিন্তু  সর্দি কমার পরও অনেক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় কাশির সমস্যা হচ্ছে, তাহলে এটি হুপিং কাশি হতে পারে। এই অবস্থাটি গুরুতর হতে পারে এবং শ্বাসের সমস্যার জন্য  অক্সিজেনের অভাবের কারণে শিশুটি কিছুটা নীল হয়ে যেতে  পারে।
  • যদি এক বছরের কম বয়সী শিশুর কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা লেগে থাকে তবে তা ব্রঙ্কিওলাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।

কাশির জন্য পরীক্ষানিরীক্ষা

বেশিরভাগ শিশুর কাশি হলে কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। আপনার সন্তানের আগে হওয়া কাশির একটি তালিকার মাধ্যমে আপনি কাশির কারণ নির্ধারণ করতে পারেন। এছাড়াও কাশির সাথে হওয়া অন্যান্য লক্ষণগুলোকেও তালিকাবদ্ধ করুন। সাধারণত, শিশুদের কাশি সংক্রান্ত যে পরীক্ষাগুলি ডাক্তাররা করতে দিয়ে থাকেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া পরীক্ষা করার জন্য বুকের এক্স-রে।

শিশুর কাশির জন্য চিকিৎসা

যদি আপনার সন্তানের প্রায়ই খুব কাশি হয়, তাহলে আপনি নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলি বিবেচনা করতে পারেন:

  1. স্যুপ বা গরম তরল খাওয়ালে বুকের অস্বস্তি ও জ্বালা থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং কাশির সাথে বুকের শ্লেষ্মা আলগা করতে পারে।
  2. বাচ্চাকে আর্দ্রতাযুক্ত বায়ু শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি নিম্নলিখিত উপায়ে এটি নিশ্চিত করতে পারেন:

আপনার সন্তান যেখানে বিশ্রাম করছে সেখানে একটি শীতল আদ্রর্তা সৃষ্টিকারী যন্ত্র (হিউমিডিফায়ার) রাখুন।

এমনকি  বাথরুমের দরজা বন্ধ করে তাতে একটি উষ্ণ ঝরনাও চালু রাখতে পারেন এবং বাথরুমের ভেতরে বাষ্প ভরাট হয়ে গেলে আপনার বাচ্চাকে নিয়ে সেখানে প্রায় 10 মিনিটের জন্য বসুন।

আপনি আপনার সন্তানের ঘরে একটি ভিজা তোয়ালে রাখার চেষ্টা করুন।

  1. শুকনো কাশি বা ক্রুপ কাশিতে ভোগা শিশুটি ঠান্ডা বাতাস শ্বাস নিলে ভালো বোধ করতে পারে। শীতল বাতাস শ্বাস পথে প্রদাহ কমিয়ে দেয়। আপনি নিম্নলিখিত উপায়ে এটি চেষ্টা করতে পারেন:

শীতল ও আর্দ্র বায়ুতে শিশুকে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ানোর জন্য আপনার জানালা খুলে রাখুন।

আপনি গাড়ীর জানালা খোলা রেখে সন্তানকে গাড়ী করে ঘুরতে নিতে যেতে পারেন।

আপনি বাচ্চাকে ঠান্ডা-মেশিন বা খোলা ফ্রিজ থেকে বাষ্প গ্রহণ করতে দিতে পারেন।

  1. আপনি একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো কাশির ওষুধ দিতে পারেন।
  2. শিশুদের হুপিং কাশির জন্য টিকা আছে। কিন্তু মনে রাখবেন, টিকা দেওয়ার পরেও, শিশুদের মধ্যে এই রোগ হালকা ভাবে বিকাশ ঘটতে পারে।

উপরের সমস্ত বিকল্পগুলির জন্য আপনি আপনার সন্তানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিন।

বাচ্চাদের কাশি নিরাময়ে কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার

ঘরোয়া এই কার্যকরী প্রতিকারগুলি হাতের কাছে রেখে আপনি আপনার শিশুকে কাশি থেকে আরাম দিতে পারেন:

  • বুকের দুধ: সম্ভব হলে, আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, কারণ বুকের দুধে অ্যান্টিবডি থাকে যা শিশুর দেহে জীবাণু, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
  • নারকেল তেল সহযোগে অঙ্গমর্দন: অর্ধেক কাপ নারকেল তেল একটি ছোট পেঁয়াজ সহযোগে, দুই থেকে তিনটে তুলসী পাতা এবং একটি পানের বোঁটা সহ গরম করুন। গ্যাস বন্ধ করার পর এক চিম্টি কর্পূর যোগ করুন। বুকে, ঘাড়ে এবং বগলে এই তেল প্রয়োগ করলে নাক বন্ধ ভাব কমে যায় এবং খোলা ও মসৃণ ভাবে বায়ু চলাচল করাতে পারে।
  • রসুন এবং জোয়ান (অজ্বয়েন) থলি: রসুন এবং জোয়ানের বীজ সর্দির চিকিৎসার জন্য ভালো এগুলির ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ভাইরাস বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য। এর জন্য, শুকনো করে সেঁকা  রসুনের দুটি বড় কোয়া  এবং এক টেবিল চামচ জোয়ান নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে, মিশ্রনটিকে একটি পরিষ্কার মসলিন কাপড়ের মধ্যে রেখে শক্ত থলি বানিয়ে নিন। থলিটিকে শিশুর বালিশ বা খাটের তলায় লুকিয়ে রাখুন। থলি থেকে যে সুন্দর গন্ধ বের হয় সেটা বন্ধ নাক খুলতে এবং সর্দি জমে যাওয়া থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
  • রসুন ডোবানো সরিষার তেল জোয়ানের তেল দিয়ে মালিশ করুন: এর জন্য, প্রায় এক-চতুর্থাংশ কাপ উষ্ণ সরিষার তেল নিন যাতে থেঁতো করা রসুন মেশানো আছে। শিশুটির পায়ের তলায় এবং বুকে এই তেল মালিশ করুন। এক চিমটি জোয়ান বীজও এতে যোগ করা যেতে পারে। সরিষার তেলের একটি উষ্ণ প্রভাব রয়েছে যা সর্দি জমে যাওয়াকে কমায়।
  • হলুদের পেস্ট: জলে কিছু হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে একটি হাতায় করে গরম করুন। বুকে, কপালে এবং পায়ের পাতার উপর পেস্টটি প্রয়োগ করুন। হলুদের তাপ শ্লেষ্মাকে শোষণ করে কষ্ট লাঘব করতে পারে।
  • ইউক্যালিপ্টাস তেল: এই তেলের শ্লেষ্মা দূর করার ক্ষমতা আছে (শ্লেষ্মাকে টেনে বের করে আনতে এবং দূর করতে সহায়তা করে) এবং এটি ঠান্ডা লাগা থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলোতে ইউক্যালিপটাস তেল এক-দু ফোটা যোগ করুন ও এটি শিশুর ঘরে রেখে দিন।
  • টমেটো এবং রসুন স্যুপ : এই উপাদানগুলো দিয়ে যখন স্যুপ বানানো হয় তখন এটি শিশুর অনাক্রম্য ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং ঠান্ডা লাগা ও কাশি হওয়া প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
  • গুড় দিয়ে জোয়ানের জল: জোয়ানের জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। এক কাপ জলে এক চিমটি জোয়ান এবং এক চা চামচ গুড় দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিন, এবং শিশুর কাশি দূর করতে প্রতিদিন একবার এক চা চামচ করে দিন।
  • গাজরের রস: গাজরে বিটা ক্যারোটিন এবং কোলাইন রয়েছে যা হাঁপানি (অ্যাস্থমা)-এর বিরুদ্ধে কার্যকর। গাজরের রস উষ্ণ জল দিয়ে পাতলা করে আপনার বাচ্চাকে  খাওয়ান।
  • কেশর তিলক: এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিকার যেটিতে কেশরের কয়েকটি সুতা ঘষে একটি পেস্ট তৈরি করা হয় এবং রাতে শিশুর পায়ের তলায় ও কপালের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এটি শিশুর কপালের মধ্যে জমে থাকা জল শোষণ করতে সাহায্য করে।
  • সজনে ডাঁটা গাছের পাতা থেকে তৈরি চুলে লাগানোর তেল: অর্ধেক কাপ নারকেল তেল গরম করুন এবং কিছু সজনে ডাঁটা গাছের পাতা যোগ করুন, যা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যখন পাতা থেকে তেল বের হয়, তখন মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করুন। বাচ্চার কাশি, সর্দি জমে যাওয়ার সময়ে, তার মাথায় এই তেল মাখাতে পারেন।
  • মুরগির স্যুপ: মুরগির স্যুপ ঠান্ডা লাগার লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে এবং সর্দি জমে যাওয়া ও কাশি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
  • রসুন জোয়ানের পুঁটুলি ঘষা: আগে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, রসুন এবং জোয়ান শিশুদের কাশি থেকে মুক্তি দিতে ভাল কাজ দেয়। এই ঘরোয়া চিকিৎসাটির একটি প্রকার হল একটি মসলিন কাপড়ের মধ্যে কিছুটা জোয়ান এবং রসুন নিয়ে একটি থলি বা পুঁটুলি তৈরি করা। তারপর প্যানের উপর থলি বা পুঁটুলিটি রাখুন এবং এটি গরম হতে দিন। শিশুর বুকের উপর ঘষার আগে এটির তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখে নিন।
  • মধু: এটি  শ্লেষ্মানাশক হিসাবে বা শুষ্ক কাশি নরম করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। আপনি এক চামচ মধু শিশুর কাশির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। নিশ্চিত করা উচিত যে এই প্রতিকারটি যেন 1 বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের জন্য ব্যবহার করা হয়, যদি বাচ্চার বয়স 1 বছরের কম হয় তাহলে মধু থেকে বতুলিজম (এক ধরণের বিষাক্ততা) হতে পারে।
  • আদা তুলসী: আদা এবং তুলসী থেঁতো করে রস বের করে তাতে মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে হবে।

শিশুদের উপর কাশির প্রভাব

ঠান্ডা লাগা বা সর্দিতে  ভুগছে এমন শিশুর বন্ধ নাক, নাকে জল বা  সর্দি ঝরা, স্বরভঙ্গ বা গলার ভিতরে ক্ষত, চোখ দিয়ে জল পড়া এবং ক্ষুধামান্দ্য বা খাদ্যে অনিহা থাকবে। বাচ্চাটি হুপ হুপ ও খেঁক খেঁক আওয়াজ করতে পারে কাশির কারণে। এর ফলে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শ্বাসকষ্ট এবং তার সাথে কাশি ও কফের কারণে বাচ্চাটি খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে।

কখন  ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

শিশুদের বেশিরভাগ কাশি উপযুক্ত যত্ন এবং বিশ্রাম পেলে কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে, যদি আপনার শিশুর নিম্নলিখিত কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে আপনাকে ডাক্তারের যেতে হবে:

  • শিশু যদি শুকনো কাশিতে ভোগে যেটা চার দিনের বেশি সময় ধরে থাকে
  • শুকনো বা ভিজা কাশির সাথে সর্দি এবং জ্বর, সাঁ সাঁ শব্দ এবং বার বার কাশি হয়ে থাকে
  • বাচ্চাটি দ্রুত সাঁ সাঁ আওয়াজ করছে, গোঙাচ্ছে, নীলচে হয়ে যাচ্ছে বা দ্রুত তার পেট সংকুচিত ও প্রসারিত করছে
  • শিশুটির ক্ষুধা এবং ওজন কমে যাচ্ছে

কাশি থেকে শিশুকে কিভাবে দূরে রাখা যায়

নিম্নলিখিত উপায়ে আপনি আপনার সন্তানকে কাশির প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পারেন:

  • আপনার সন্তানকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরে ঢাকা বা চাপা দিয়ে রাখুন
  • হাঁপানির কারণে যদি লাগাতার কাশি হয়, তবে হাঁপানির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন
  • উপযুক্ত টিকার মাধ্যমে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন
  • শিশুটিকে গোটা বাদাম খেতে দেবেন না বা ছোট বস্তু নিয়ে খেলতে দেবেন না যা সহজেই শ্বাসের মাধ্যমে ভিতরে চলে আসতে পারে। এটি শ্বাসনালীতে কিছু আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করবে
  • সাধারণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন যেমন হাত ধোয়া যাতে সর্দি বা ফ্লু-এর জীবাণুর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়

এই টিপস বা পরামর্শগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার সন্তানের বারংবার ফিরে আসা কাশির আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।