এই সময়ের মধ্যে আপনার শিশুটির বয়স 11 মাস হয়ে গেছে, সে এখন নিজে নিজেই খেতে শিখে গেছে।পরিবারের বাকি সদস্যরা যে খাবার খান সেই খাবার আপনি আপনার বাচ্চাকে দেবেন শুধুমাত্র ভালোকরে চটকে এবং ছোট ছোট টুকরো করে যেটা আপনার বাচ্চাকে চিবোতে এবং সহজে হজম করতে সাহায্য করবে।সে যখন মূল খাবার বা জলখাবার খাবে তখন খুব ভাল করে লক্ষ্য রাখবেন যেন সে খেতে গিয়ে বিষম না খায়।
এই বয়সের শিশুদের নানা ধরণের ফল, শাক সবজি,এবং মাংস প্রভৃতি খাবারের পাল্লাটি অনেকটা বিস্তৃত।বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধের সাথে সাথে নানা ধরণের জলখাবার এই 11 মাস বয়সী বাচ্চাদের প্রতিদিন খাওয়া প্রয়োজন।মূল খাবার এবং জলখাবারের সময় নির্ভর করবে তার এবং আপনার রূটিন এর ওপর।
আপনার বাচ্চার খিদে নির্ভর করবে মূলত সে কতটা কাজ করছে এবং তার বৃদ্ধির ওপরে।নিচে দৈনিক আনুমানিক খাবারের পরিমাণের একটি হিসাব নিচে দেওয়া হল।
যখন আপনার সন্তানকে দুধ খাওয়াবেন তখন প্রাণপনে চেষ্টা করবেন সব সময়ে কয়েকটা বিষয় মেনে চলতে।এর মধ্যে আছে সে যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিদিন বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ পাচ্ছে নাকি পাচ্ছে না।এখানে রইল কয়েকটি উপায় যার সাহায্যে আপনি এটা বুঝতে পারবেন।
বুকের দুধ পানকারী শিশু
ফরমূলা দুধ পানকারী শিশু
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার বাচ্চার একটি সুন্দর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এখন এই অল্প বয়স থেকেই।খেয়াল রাখুন তার কোনো রকম এলার্জি হচ্ছে কিনা এবং তাকে সব ধরণের খাবারের অভ্যাস করান।
ভিটামিন এবং খনিজের একটা বিরাট উৎস, আপনার সন্তানের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এটাকে আবশ্যিক করে তুলুন।আপেল থেকে কমলা লেবু আবার কলা থেকে নাশপাতি সব কিছুই আপনার সন্তানকে দিন।
প্রোটিনে পরিপূর্ণ মাছ এবং চিকেন আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং সাধারণ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
নানা ধরণের চীজ যেমন কটেজ,চীডার,রিকোট্টা,এবং গোট আপনার বাচ্চার খাবারের স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে তার প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ করবে।
এই শ্রেণীভূক্ত যেকোনো খাবার আপনার 11মাস বয়সী সন্তানকে দিন।বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য এবং ডাল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনার সন্তানকে খেতে দিন তার মূল খাবার সময়ে।
বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার যেমন লসসি এবং দই আপনার বাড়ন্ত বাচ্চাটিকে খেতে দিন।একমাত্র গরুর দুধ তার এক বছর বয়স হবার পর থেকেই দেবেন।
সবুজ শাকপাতা যেমন পালং এবং মেথি শাক আপনার বাচ্চার আয়রণের চাহিদা পূরণ করে।
সব ধরনের সবজি আপনার সন্তানের জন্য উপকারী।প্রতিদিন প্রতিবার খাবার সময়ে তিনটি ভিন্ন ধরনের শাক সবজি তাকে খেতে দিন।
ডিম,বিশেষত কুসুম বাচ্চাদের এই বয়সে অত্যন্ত উপযোগী।এটা তারা খুব সহজেই খেতে এবং হজম করতে পারে।
এখানে 11 মাস বয়সী শিশুর খাবার সময়-সীমার একটা নমুনা দেওয়া হলঃ
ঘুম থেকে উঠে | প্রাতঃরশ | সকালর জলখাবার | মধ্যাহ্ণভোজ | সন্ধ্যার জলখাবার | নৈশ- ভোজ | শেষ রাতে | |
সোমবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | স্বাস্থ্যকর দানাশস্য | আপেলের টুকরো | সবজির সাথে দই ভাত | ফরমূলা/বুকের দুধ | টোস্টের সাথে মুরগির মাংস বা সবজির স্যুপ | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
মঙ্গলবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | রাগির ধোসা | কলার টুকরো | ভাঙ্গা গমের খিচুড়ি | ফরমূলা/বুকের দুধ | সাম্বার দিয়ে ধোসা | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
বুধবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | কলার প্যান কেক | মিষ্টি আলুর পাতলা টুকরো | ডাল এবং অন্যন্য গ্রেভির সাথে রুটি | ফরমূলা/বুকের দুধ | ডালের সাথে পরোটা | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
বৃহস্পতিবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | সাধারণ ধোসা | পেঁপের ক্বাথ | মাছের ঝোল ভাত | ফরমূলা/বুকের দুধ | সবজির পোলাও ও দই | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
শুক্রবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | টোস্টের উপর ডিমের কুসুম ছড়িয়ে | ন্যাশপাতির স্ট্যু | সবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং দই | ফরমূলা/বুকের দুধ | ভাত এবং গ্রেভি | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
শনিবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | ভাঙ্গা গমের জাউ | কুড়মুড় করে/দাঁত দিয়ে খাওয়ার বিস্কুট | ইডলি এবং সাম্বার | ফরমূলা/বুকের দুধ | পনীর কারীর সাথে রূটি | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
রবিবার | ফরমূলা/ বুকের দুধ | পনীর ভুজি স্যান্ডুইচ | তরমুজের ঘনকাকার টুকরো | পুরযুক্ত পরোটা | ফরমূলা/বুকের দুধ | সেদ্ধ সবজি সহ চটকানো আলু সেদ্ধ | ফরমূলা/ বুকের দুধ |
উপকরণঃ
কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ
একটা চাটুর মধ্যে ঘি গরম করে তার মধ্যে সুজি দিয়ে সেটিকে ভাজুন।অনবরত নাড়তে থাকুন তা না হলে এটি পুড়ে যাবে।যখন সুজিটির একটা ভাল গন্ধ বেরোতে শুরু করবে তার সাথে জল যোগ করুন খেজুরের পিউরিকে অনুসরণ করে।দলা পাকানো এড়াতে সমানে নাড়তে থাকুন, এবং আপনি যদি এর সাথে গুঁড়ো করা ড্রাই ফ্রুট যোগ করতে চান তবে এই সময়েই আপনি সেগুলিকে যোগ করতে পারেন।যখন দেখা যাবে যে সুজিটি রান্না হয়ে গেছে আপনি তাপটি বন্ধ করে দিতে পারেন।চূড়ান্ত পছন্দানুযায়ী ঘনত্বে আনার তুলনায় কিছুটা পাতলা করুন যেহেতু ঠান্ডা হলেই এটি ঘন হয়ে যাবে।
উপকরণঃ
কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ
প্রথমে,পাস্তা গুলিকে যথেষ্ট ভালোভাবে নরম করে রান্না করা নিশ্চিত করুন যাতে আপনার বাচ্চা সেগুলিকে সহজেই খেতে পারে।যদি আপনি চান তবে এটিকে আবার সামান্য হাল্কা করে চটকে নিতেও পারেন।খুব ভালো করে পালং পাতা গুলিকে ধুয়ে নিন এবং তারপর কিছু সময়ের জন্য সেগুলিকে ভাপিয়ে নিন।এরপর এর সাথে কুড়ানো পনীর যোগ করে কয়েক মিনিটের জন্য রান্না করুন যতক্ষণ না এর কাঁচা স্বাদটি উধাও হয়ে যায়।এরপর এটিকে ঠান্ডা হতে দিন এবং সামান্য জল দিয়ে পিঁষে এটির একটি মসৃন পেষ্ট বানান।যদি প্রয়োজন পরে আপনি এর সাথে সামান্য লবণও যোগ করতে পারেন।এবার এটির সাথে পাস্তা মেশান এবং আপনার আদরের সোনাকে তা পরিবেশন করুন।
উপকরণঃ
কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ
মাখন গরম করে তার মধ্যে পিঁয়াজ দিয়ে পরিষ্কার ভাবে তার রঙ না আসা পর্যন্ত সেটিকে সাঁতলান।এবার এর সাথে সেদ্ধ করে রান্না করে রাখা ভুট্টার দানা গুলি যোগ করুন।এরপর এর সাথে কুঁচানো গাজর এবং মরিচ যোগ করুন।কিছুক্ষণের জন্য সেগুলিকে সাঁতলান এবং তারপর তাপ বন্ধ করে দিন।আপনি এটিকে ঠান্ডা করে নিতে পারেন এবং আপনার বাচ্চার পছন্দের উপর নির্ভর করে এটিকে মোটামুটিভাবে অথবা মিক্সচার গ্রাইন্ডারে মসৃণ ভাবে পিঁষে নিতে পারেন।ভাত রান্না করার জন্য জল ফোটান এবং তার মধ্যে তেজ পাতাটি যোগ করুন।আপনার বাচ্চার সহজে খাওয়ার মত যথেষ্ট নরম না হওয়া পর্যন্ত ভাতটি রান্না করুন।এরপর সেটিকে মিশ্রণের মধ্যে ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন এবং তেজ পাতাটিকে ফেলে দিন।আপনার সোনাকে গরম গরম পরিবেশন করুন।
উপকরণঃ
কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ
ডিমের কুসুমটি বাদ দিয়ে তালিকাবদ্ধ সকল উপকরণ গুলিকে একসাথে মেশান।এরপর সেই মিশ্রণটি দিয়ে ছোট ছোট নাগেটের আকারে গড়ে তুলুন।ডিমের কুসুমটিকে ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে নাগেট গুলির উপরে তার প্রলেপ দিন।এছাড়াও আপনি ঐ নাগেট গুলিকে এটির মধ্যে ডুবিয়েও নিতে পারেন।এরপর নাগেট গুলিকে হালকা করে ভাজুন অথবা গ্রিল করে নিন যতক্ষণ না চিকেন গুলি ভালোভাবে রান্না হয়ে যায়।অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে নাগেট গুলো আরও বেশী কুড়মুড়ে ও সুস্বাদু হয়।
উপকরণঃ
কীভাবে প্রস্তুত করবেনঃ
একটা প্রেসার কুকারকে গরম করে তার মধ্যে মাখনকে গলিয়ে নিন।এর সাথে কুঁচানো রসুন যোগ করে এক মিনি্টের জন্য সাঁতলে নিন।এরপর তার মধ্যে পিঁয়াজ গুলি ঢেলে দিয়ে সেটিকে নেড়ে ভাজতে থাকুন যতক্ষন না সেগুলি নরম হয়।এরপর এর সাথে কুঁচানো টমেটো যোগ করে সেটি নরম হয়ে লেয়ি ভাব না হওয়া পর্যন্ত সাঁতলাতে থাকুন তারপর এর সাথে ভিজিয়ে রাখা রাজমা যোগ করে বেশ কয়েক মিনিটের জন্য সাঁতলাতে থাকুন।এরপর এতে দু কাপ জল ঢেলে প্রেসার কুকারের মধ্যে রাজমাটাকে ভালোভাবে রান্না হতে দিন যতক্ষণ না সেগুলিকে সহজে পিঁষে নেওয়া যায়।এরপর মিশ্রণটিকে ব্লেণ্ড করে নিয়ে স্যুপের ঘনত্বে আনুন এবং এটিকে ফুটিয়ে নিন।এবার এর সাথে লেবুর রস ও মরিচের পাশাপাশি সামান্য লবণও যোগ করতে পারেন যদি আপনি চান।এরপর সেটিকে একটা বাটিতে করে পরিবেশন করুন।
11 মাস বয়সী একটি শিশুর খাদ্য তালিকা সংকলন করা এবং রেফারেন্স হিসেবে সেটিকে ব্যবহার করা আপনার জন্য জিনিস গুলি সহজ করে তুলতে পারে।
আপনার বাচ্চা খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে এবং তার চারপাশের বিশ্বে অণ্বেষণ করতে শুরু করে।সুতরাং আপনার বাচ্চার সাথে নতুন খাবারের পরিচয় করানোর এবং ধীরে ধীরে একটা সময়ে তাকে পরিবারের পূর্বের খাবারে নিয়ে যাওয়ার এটাই হল সঠিক সময়।শুধুমাত্র এটুকুই নিশ্চিত করুন যে,আপনি যে খাবারটি আপনার সন্তানকে খাওয়াতে চলেছেন সেটি যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর হওয়ার এবং যতটা বেশী সম্ভব সেটি ঘরে রান্না করা হওয়ার ব্যাপারে।