আপনার শিশু যদি আর কয়েক দিনের মধ্যেই 14 মাসে পড়তে চলে ,তবে তার জন্য এমন কিছু খাবারের সন্ধান করতে হবে যা তাকে দিতে পারেন,তাই না?কিন্তু এরপর একটা 14 মাসের বাচ্চার খাবারের মেনুতে আসার জন্য বাবা–মায়ের পক্ষে সহজ কাজ হবে না।আপনার বেড়ে উঠার শিশুর খাওয়ানোর অভ্যাসগুলি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত হবে এবং এখন থেকে আপনার শিশুকে কিছু দেওয়ার আগে, বিষয়টি নিয়ে আপনাকে অনেক চিন্তা করতে হবে কারণ এটি এমন একটি বয়স যখন একটা শিশু খুঁতখুঁতে বাচ্চা হয়ে উঠতে শুরু করে।যখন আপনার 14 মাস বয়সী বাচ্চার সাথে নতুন খাবারের পরিচয় করাবেন তখন তাকে কেবল সেই সকল খাবার গুলিকেই দেওয়া নিশ্চিত করুন যেগুলি তাকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।ভালো কথা,যদি আপনি এখনও এই সকল বিষয় গুলি নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন,তবে আপনি আপনার সন্তানকে কি দিতে পারেন সে বিষয় গুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে এই নিবন্ধটি পড়ুন।
আপনার সন্তান এখনও একটি ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির পর্যায়ে এবং নির্দিষ্ট ট্র্যাকে তার উন্নয়ণকে বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সর্ব শ্রেষ্ঠ পুষ্টি।
14 মাস বয়সী শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হল শক্তি।পূর্ববর্তী মাস থেকে 1000 ক্যালোরি দিয়ে শুরু করে, দৈনিক প্রয়োজনীয়তা এই সময়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রায় 1200-1300 ক্যালোরি মত হবে।
আমাদের খাদ্যগুলির ক্ষেত্রে সাধারণত কার্বোহাইড্রেটগুলির দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, যা খুব সামান্য কিছু পরিমাণ প্রোটিন ছাড়তে পারে।কিন্তু এটিকে উপেক্ষা করবেন না।একজন 14 মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ভিত্তিতে প্রায় 13-15 গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়।
কার্বোহাইড্রেটগুলি আপনার সন্তানের খাদ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কারণ এটি কেবল শক্তি সরবরাহ করে না বরং মস্তিষ্ককের প্রয়োজনীয় সমস্ত ক্রিয়া গুলি সম্পন্ন করতে এবং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।তাদের প্রয়োজনীয়তা গুলি একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতই অনুরূপ হয় যেটি হল মোটামুটিভাবে প্রতিদিন প্রায় 130-150 গ্রাম।
আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যতালিকাগত ফাইবার বা তন্তুর প্রয়োজন হয়।এটা হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের আলোড়নকে নিশ্চিত করে।একটি শিশুর তার প্রতিদিনের খাওয়া ফল এবং সম্পূর্ণ খাদ্য থেকে কম করে 19 গ্রাম ফাইবার খাওয়া প্রয়োজন।
সোডিয়াম হল আমাদের শারীরিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যতম মূখ্য পুষ্টিকর উপাদান।একটি শিশুর প্রতিদিন প্রায় 1 গ্রাম করে সোডিয়ামের প্রয়োজন হয়।
যদি আপনার বাচ্চা বুকের দুধ ছেড়ে দিয়ে থাকে,তার অন্যান্য উৎস থেকে সর্বোত্তম পরিমাণে আয়রণ গ্রহণ প্রয়োজন।প্রতিদিন 7 মিগ্রা লোহা খাওয়ার সাথে সাথে, আপনার সন্তান সহজেই যেকোনও ধরনের লোহা ঘাটতির মোকাবিলা করবে।
যদিও বেশিরভাগ বাবা–মা জলকে একটি পুষ্টিকর উপাদান হিসাবে দেখেন না, তবে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যকে নিখুঁত রাখতে জল সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা যে যথেষ্ট,তা অস্বীকার করা যায় না।আপনার বাচ্চার সারা দিন জুড়ে কমপক্ষে 1 লিটার জল খাওয়া নিশ্চিত করুন।
বৃহত্তর মূখ্য উপাদান গুলি ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশের সমর্থনের জন্য কিছু অতিরিক্ত বিশেষ উপাদানেরও প্রয়োজন।ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, DHA, প্রোবায়োটিকস, এবং অন্যান্য আরো অনেক আপনার খাবারে অন্তর্ভূক্ত করে খাবারে বিভিন্নতার মাত্রা যোগ করা যেতে পারে।
জলখাবারের পরিকল্পনার দিকে তাকানোর আগে,এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে,একজন 14 মাস বয়সী টডলার পূর্বের ন্যায় অত বেশী আর খেতে পারে না।এমনকি যদিও তারা বড় হতে থাকে কিন্তু এই সময়ে তাদের বিকাশের হার একটা নির্দিষ্ট জায়গাতেই স্থির হয়ে থাকে।প্রতিদিনের প্রয়োজনানুযায়ী সাধারণত 1000 ক্যালোরিই যথেষ্ট এই বয়সের একজন শিশুর জন্য।
আপনার 14 মাসের শিশুর সবচেয়ে সেরা পুষ্টিকর উপাদান গুলিকে পাওয়া নিশ্চিত করতে এখানে কিছু জনপ্রিয় খাদ্য আইটেমের উল্লেখ করা হল যেগুলি কোনওরকম ব্যর্থতা ছাড়াই তার খাবারের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন।
যদিও অনেক মায়েরাই তাদের স্তন থেকে তাদের সন্তানদের দুধ ছাড়ানো পছন্দ করতে পারেন,কিন্তু যদি এই বয়সে তাদের সমানে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া যায় তবে তা আপনার ছোট্ট সোনাটির জন্য বেশ উপকারী হিসেবেই বিবেচিত।অনেক গুলি অ্যান্টিবডি,উৎসেচক,ভিটামিন মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে যা তাকে বিভিন্ন সংক্রামণ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে সুরক্ষিত রাখে এবং তাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
যখন আপনি আপনার সন্তানকে মাংস দেবেন তখন চর্বিহীন মাংস যেমন মাছ বা পোল্ট্রির মাংস দেওয়াটাই পছন্দ করবেন।যেটা আপনার সন্তানের এই বয়সের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করার পাশাপাশি আপনার সোনার জন্য একটা সুস্বাদু এবং দারুণ একটা খাবার হয়ে উঠবে।30 গ্রাম মাংস তার জন্য যথেষ্ট।
বাচ্চারা চীজ খেতে খুব ভালবাসে।এটাকে সব সময় রুটি বা অন্য কোনও চটজলদি খাবারের সাথে দেবার দরকার নেই।আপনার প্রতিদিনের শাকসবজি অথবা প্রাতঃরাশের সাথে এটাকে মিশিয়ে তাদের স্বাদ বৃদ্ধি করুন এবং আপনার বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন এর থেকে পাবে।
যখন আপনি আপনার সন্তানকে বীনস দেবেন সেটাকে চটকে দেবেন।এটা নিরামিষাশী পরিবারগুলির কাছে আর্শীবাদ স্বরূপ যা তাদের প্রোটিন এবং ভিটামিন C এর চাহিদা পূরণ করে।এছাড়াও আয়রণ বা লোহা সংশ্লেষে এর ভূমিকা আছে।
ডিম হল প্রচুর সুপারিশকৃত এবং অতি জনপ্রিয় একটি প্রাতঃরাশ।যেহেতু ডিমকে নানাভাবে রান্না করা যায় তাই আপনার সন্তান কখনই বিরক্ত হবে না।এটা ছাড়াও ডিমে আছে ফোলেট,ভিটামিন B12,আয়রণ, এবং অন্যান্য পুষ্টি পদার্থ যা আপনার বাচ্চার জন্যে সবথেকে বেশী স্বাস্থ্যকর খাদ্য হয়ে উঠতে পারে।
যখন আমরা জুস এর কথা ভাবব তখন অবশ্যই আমরা বাড়িতে তৈরী তাজা ফল থেকে তৈরী জুস এর কথাই বলব।আপনার সন্তানকে বাজার চলতি জুস দেবেন না কারন এগুলোতে নানা ধরনের সংরক্ষক (প্রিজারভেটিভ),চিনি অথবা অন্যান্য অনেক পদার্থ মেশানো থাকে।180-200 মিলি জুস দেবার ব্যাপারে স্থির থাকুন।
কোনও কোনও বাচ্চা 14 মাস বয়সে মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়, তাই তাদের কোনোওরকম ব্যর্থতা ছাড়াই প্রতিদিন আধকাপ দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে।বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক খাবারের সাথে এটাকে মিশিয়ে তার স্বাদ বাড়ান, দুধের মধ্যে থাকা ফ্যাট শিশুর শক্তির যোগান দেয়।
এটা হল যেকোনো শিশুর খাদ্যের মূল ভিত্তি।আপনার সন্তানদের কাঁচা সবজি না দিয়ে সেগুলোকে সেদ্ধ করে নরম করে দিন।নানা রঙের সবজি আপনার বাচ্চার খাবারকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং তার ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।
প্রতিটি খাবার খাওয়ার পর একটা করে ফল খাওয়া খুব ভাল অভ্যাস, যদি আপনার বাচ্চার কোনোরকম পুষ্টির ঘাটতি থেকে থাকে তাহলে ফল সেটি পুষিয়ে দেয়।খেয়াল রাখবেন আপনার বাচ্চাকে যে ফলটি দেবেন সেটা যেন পাকা হয়।একজন 14মাস বয়সী শিশু খুব সহজেই আধকাপ ফল খেতে পারে।
আপনার সন্তানের খাবারে যেটি সব থেকে বেশী পরিমাণে থাকে সেটি হল দানাশস্য।পূর্ণ দানা শস্য এমনকি সুস্বাদু সবজি পাস্তার মধ্য দিয়ে আপনি দানাশস্য তার খাবারে যোগ করতে পারেন।হোল হুইট বা গমের রুটি বা ওটমিল তার প্রতঃরাশে অন্তর্ভূক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয় যা নিশ্চিতভাবে তার পুষ্টির চাহিদা সহজ পদ্ধতিতে পূরণে সহায়ক হয়ে উঠবে।
যদি আপনি আপনার 14মাস বয়সী সন্তানের খাদ্য পরিকল্পনা বা ডায়েট চার্ট করতে গিয়ে সমস্যার মখোমুখি হন তাহলে সহজ একটা চার্ট দেওয়া হল যা দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন।
বার | প্রাতঃরাশ | জলখাবর | মধ্যাহ্নভোজ | বিকালের খাবার | নৈশভোজ |
সোমবার | অঙ্কুরিত মুগডাল | সবজির স্যুপ | পালংশাকের খিচুড়ি | একগ্লাস দুধ | রাগি ধোসা |
মঙ্গলবার | উপমা | আপেলের টুকরো | ডিম ভাত | পনীরের কাটলেট | ব্যাসনের পরোটা |
বুধবার | গমের প্যানকেক | হালকা পাণীয় | খিচুড়ি | এক গ্লাস দুধ | ওটের প্যানকেক |
বৃহস্পতিবার | মটর আলুর পরোটা | ডিম ভুর্জি | পোলাও | বীটরুটের কাটলেট | ভাজা ইডলি |
শুক্রবার | ফ্রেঞ্চ টোষ্ট | ওটের কুকিজ | সবজি ভাত | শাহী টুকডা | বিভিন্ন সবজির পরোটা |
শনিবার | ইডলি | মুরগির মাংসের মাফিন | খিচুড়ি | এক গ্লাস দুধ | ধোসা |
রবিবার | পাস্তা | মিল্ক শেক | ফ্রায়েড রাইস | উপমা | সেমুই |
এখানে খাবারের কিছু সেরা রেসিপি দেওয়া হল যেগুলি সারাদিন ধরে বিভিন্ন খাবারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটি স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্টের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে, এই রেসিপিটি সন্ধ্যায় চটপট জলখাবার হিসাবে আগের স্বাদের থেকেও অতিরিক্ত স্বাদযুক্ত বৈচিত্রের সাথে এটিকে দ্বিগুণ সুস্বাদু করে তুলতে পারে।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
যদি আপনার বাচ্চা এক জিনিস খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে ওঠে তবে এই সবজি পাস্তা দিয়ে অবাক করে দিন, এবং দেখবেন সে খাওয়ার জন্য কেমন এটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
সাদা ভাত বাচ্চাদের জন্য সহজপাচ্য।দুপুরের মধ্যাহ্ণভোজ হিসেবে অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে এটিকে গড়ে তুলতে এর স্বাদ আরও বাড়িয়ে তুলুন।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
বাচ্চাদের কাছে সেমুই পছন্দের হতেও পারে আবার নাও হতে পারে,কিন্তু এই সুস্বাদু পোলাওটি আপনার বাচ্চার মুখে অতিঅবশ্যই জল এনে দেবে।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
সপ্তাহান্তটিকে দূর্দান্ত করে তুলুন এই প্যানকেকটি আপনার বাচ্চার জলখাবারের জন্য অথবা এমনকি তার রাতের ডিনারের জন্যও তৈরী করে দিয়ে।
উপকরণ
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে মনে রাখার মত কিছু পরামর্শ এখানে দেওয়া হল।
এই বিস্ময়কর রেসিপি গুলি আপনার 14 মাসের শিশুর জন্য তৈরী করার চেষ্টা করুন এবং সে কোনওরকম হৈচৈ ছাড়াই এগুলিকে খেয়ে নেবে,যা থেকে আপনি নিশ্চিত ভাবে জানতে পারবেন যে সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা ও খাবারের সাথে যেগুলি প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলিকে পরিপূর্ণ করে সেগুলি আপনার ছোট্ট মাণিককে সঠিক পথে বিকশিত করছে কিনা।