17 সপ্তাহের গর্ভবতীর আলট্রাসাউন্ড

17 সপ্তাহের গর্ভবতীর আলট্রাসাউন্ড

17 সপ্তাহের গর্ভস্থ শিশুর আয়তন আপনার হাতের তালুর মাপের মত হয়।সাধারণত বাচ্চাটির ওজন 113 থেকে 140 গ্রামের মধ্যে এবং দৈর্ঘ্য 11 থেকে 14 সেমি হয়ে থাকে।শিশুটি বেশ ভালভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ওঠে এবং তার নড়াচড়া আপনি খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন।শিশুটির পদাঘাতগুলি আরও জোরালো ভাবে আপনি অনুভব করবেন।শিশুটির বিকাশে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা জানার জন্য ডাক্তারবাবু আপনাকে হয়ত 17 সপ্তাহের গর্ভাবস্থার একটি আল্ট্রাসাউন্ড করাবার কথা বলতে পারেন

17 তম সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় আপনার কেন আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করাবার প্রয়োজন?

  • জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় করবার জন্যঃ ডাউন সিন্ড্রোম, স্পাইনা বাইফিডা প্রভৃতির মত জন্মগত রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারবাবু আপনাকে 17 সপ্তাহের গর্ভাবস্থার একটি আলট্রাসাউন্ড করবার পরামর্শ দেন,এর সাহায্যে আবার তার বিকাশজনিত ত্রুটিও ধরা পড়তে পারে।
  • হৃদস্পন্দনঃ গর্ভস্থ শিশুটির হৃদস্পন্দন নিরীক্ষণ করার জন্যেও আলট্রাসাউন্ড করা হয়ে থাকে,যেটা সাধারণত প্রতি মিনিটে 140 থেকে 150 বার মত হয়ে থাকে,যা এক জন প্রাপ্ত বয়স্কের হৃদস্পন্দনের হারের প্রায় দ্বিগুণ
  • যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতাঃ গর্ভে যদি একাধিক শিশু থাকে তবে আলট্রাসাউন্ডের সাহায্যে দেখা হয় জরায়ুতে উভয়ের জন্যই পর্যাপ্ত স্থান আছে কিনা এবং স্থানাভাবের জন্যে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে কিনা।
  • অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাড়ি এবং অ্যামনিওটিক তরলের নিরীক্ষাঃ ডাক্তারবাবু অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ডটি চেক করে দেখবেন তাতে দুইটি ধমনী এবং একটি শিরা আছে কিনা।যথেষ্ট পরিমাণে অ্যামনেটিক তরল আছে কিনা সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবু নিশ্চিত হতে চাইবেন।অ্যামনিওটিক তরল কম পরিমাণে থাকলে গর্ভপাত,জন্মগত ত্রুটি,অকাল প্রসব,মৃত শিশুর জন্ম, অ্যাম্বেলিক্যাল কর্ডের সংকোচন এবং শিশুর কম বৃদ্ধির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • জরায়ুর আকারের পরিমাপঃ টেকনিশিয়ান আপনার জরায়ুর আকারের পরিমাপ নেবেন এবং বুঝতে পারবেন আপনার জরায়ুটি সুস্থ গর্ভধারণের উপযোগী কিনা,এবং শিশুটির বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিসর আছে কিনা। আপনার গর্ভবস্থাটি কত সপ্তাহের এবং সেটি সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে এগোচ্ছে কিনা তার ইঙ্গিতও দিতে পারেন।
  • গর্ভস্থ ভ্রূণের শারীরিক অঙ্গসংস্থানের নিরীক্ষণঃ 17 সপ্তাহ বয়সী ভ্রূণটির অঙ্গসংস্থান নিরীক্ষণ করে দেখা হয় তার দেহের প্রতিটি অংশ এবং শরীরের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হৃদপিন্ড,মস্তিষ্ক,পাকস্থলী,মেরুদন্ড,বৃক্ক,মুত্রাশয় এবং জননাঙ্গগুলির বৃদ্ধি ঠিকমত হচ্ছে কিনা।
  • শিশুর প্রসবের সম্ভাব্য দিন এবং গর্ভকালীন বয়স নির্ধারণঃ এই স্ক্যানটি সম্পাদন করার দ্বারা শিশুর জন্মের সম্ভাব্য দিন এবং গর্ভাবস্থার বয়স জানা যায়।
  • অমরার অবস্থান নিরীক্ষণঃ টেকনিশিয়ান পরীক্ষা করে দেখবেন যে অমরাটি সার্ভিক্সের খোলা মুখটির ওপর অবস্থান করে সেটিকে ঢেকে দিয়েছে কিনা।

কীভাবে আপনার গর্ভাবস্থার 17 তম সপ্তাহের স্ক্যান করাবার জন্য প্রস্তুতি নেবেন?

17 সপ্তাহের ভ্রূণের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করাবার জন্য সোনোগ্রাফার মূত্রাশয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরলের দ্বারা পূর্ণ হয়ে ওঠাটিকে আশা করেন কারণ তার ফলে আপনার গর্ভস্থ শিশুটির ছবিটি খুব স্পষ্ট ওঠে।যদিও এর জন্য আপনার খুব অস্বস্তিকর ভাবে মূত্রাশয়টিকে পূর্ণ করা তোলার দরকার নেই। স্ক্যান করার 30 মিনিট আগে আপনি 3 গ্লাস জল পান করলেই হবে।এমন পোশাক পরুন যাতে সোনোগ্রাফার খুব সহজেই আপনার পেটটিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থার 17 তম সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড সম্পাদন করতে কত সময় লাগে?

এটি করতে 40 মিনিট থেকে একঘন্টা মত সময় লাগে যেহেতু টেকনিশিয়ানকে অনেক গুলো পরিমাপ নিতে হয়।যমজদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার 17 সপ্তাহের স্ক্যানটি সম্পাদন করতে আরও বেশি সময় লাগে।17সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড করার সময় গর্ভস্থ শিশুটির অবস্থান যদি এমন হয় যে তার অভ্যন্তরস্থ অঙ্গগুলি ঠিকমত বোঝা না যায় সেক্ষেত্রে এটি সম্পন্ন করতে আরও বেশি সময় লাগবে।

কীভাবে 17 সপ্তাহের স্ক্যানটি সম্পাদন করা হয়?

17 সপ্তাহের আল্ট্রাসাউন্ড হল একটি পেটের স্ক্যান।টেকনিশিয়ান আপনাকে চিৎ করে শুইয়ে দেওয়ার পর আপনার উন্মুক্ত পেটের ওপর একটি জেল দেবেনতারপর টেকনিশিয়ান আলট্রাসাউন্ডের দণ্ডটি আপনার পেটের ওপর চেপে ধরবেন আপনার গর্ভের মধ্যস্থ শিশুটির চিত্র পাওয়ার জন্য।স্ক্যান হয়ে যাওয়ার পর আপনি এটা মুছে ফেলতে বা ধুয়ে ফেলতে পারবেন যেহেতু এটা একটা জল ভিত্তিক জেল।যদি ভ্রূণের অভ্যন্তরস্থ অঙ্গগুলো ভালোভাবে দেখা না যায় তবে আপনাকে ট্রান্সভ্যজাইন্যাল স্ক্যান করতে হবে যেখানে আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রটিকে আপনার যোনির ভিতর দিয়ে ব্যাথাহীন ভাবে প্রবেশ করানো হয় এবং গর্ভস্থ শিশুটির ছবি পাওয়া যায়।

কীভাবে 17 সপ্তাহের স্ক্যানটি সম্পাদন করা হয়?

গর্ভাবস্থার 17 সপ্তাহে পরিচালিত স্ক্যানে আপনি কি দেখতে পাবেন?

17 সপ্তাহের গর্ভাবস্থার স্ক্যানে আপনি যা দেখতে পাবেন সেই বিষয়গুলো এইখানে দেওয়া হলঃ

  • আপনি আপনার সন্তানের মাথার চুল এবং তার সারাদেহে সূক্ষ্ম লোমগুলি দেখতে পাবেন।
  • 17 সপ্তাহের 3D আল্ট্রাসাউন্ডে আপনি আপনার বাচ্চার মুখমন্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলি এবং তার অভিব্যক্তিগুলি বুঝতে পারবেন।
  • হৃদপিন্ড এবং হৃদস্পন্দন,তা ছাড়াও দেহের বিভিন্ন অংশ,অন্যান্য অঙ্গ যেমন বৃক্ক এবং পাকস্থলী দেখতে পাবেন যা আপনাকে টেকনিশিয়ান চিহ্নিত করে দেখিয়ে দেবেন।
  • টেকনিশিয়ান শিশুটির যৌণাঙ্গগুলিও বুঝতে পারবেন কিন্তু সে ছেলে না মেয়ে তা আপনাকে জানাবেন না যেহেতু ভারতে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ।
  • আপনি শিশুটির হাত ও পা গুলি দেখতে পাবেন। স্ক্যান করার সময় তার সঞ্চালন আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন।
  • এখন আপনার গর্ভস্থ সন্তানের মাথাটি তার দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে যা পরিষ্কার ভাবে স্ক্যানে দেখা যাবে।
  • শিশুটি স্ফীত হয়ে উঠতে শুরু করে কারণ এই সময় তার ত্বকের নিচে ফ্যাট জমা হতে থাকবে।ভ্রূণটিকে গোলাকার এবং অনেকটাই সদ্যোজাত শিশুর মত দেখতে হয়ে উঠবে।
  • গর্ভস্থ শিশুটির চোখের গঠণ সম্পূর্ন হয়ে ওঠার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। কানগুলো এবং নাকটি তাদের নির্দিষ্ট জায়গাতেই অবস্থান করবে।এই সময় থেকে আপনার সোনা আপনার গলার স্বর বুঝতে পারবে এবং অকস্মাৎ হয়ে ওঠা কোনও শব্দে সে চমকিয়ে উঠবে।
  • আপনি আপনার বাচ্চাটির মেরুদন্ড দেখতে পাবেন সাথে সাথে তার হাত, পা,বাহু এবং পায়ের পাতার হাড়গুলিও দেখতে পাবেন।

যদি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা থাকে তাহলে কি হবে?

সপ্তদশ তম সপ্তাহের গর্ভাবস্থার আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করার সময় যদি রেডিওলজিস্ট কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন তাহলে তিনি সেটি সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারবাবুকে জানাবেন এবং আপনাকে ডাক্তারবাবু সমস্যার ধরণ সম্বন্ধে অবগত করবেন।পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেবেন সে বিষয়ে ডাক্তারবাবু আপনাকে পরামর্শ দেবেন।রক্ত পরীক্ষা,২য় ধাপের আলট্রাসাউন্ড,CVS এবং অ্যামিয়োসেন্টেসিস প্রভৃতি পরীক্ষার সাহায্যে ডাক্তারবাবু আসল সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারবেন।তারপর ডাক্তারবাবু আপনার সাথে সেটির চিকিৎসা এবং অন্যান্য বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন।

অনেক মহিলাই তাদের গর্ভস্থ সন্তানের সঞ্চালন প্রথম বুঝতে পারেন তাদের 17 সপ্তহের গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে যেটা শুরু হয় পেটে উপর আলতো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তীতে জোরালো পদাঘাতের মাধ্যমে।যা জীবনদায়ক হিসাবে পরিচিত।অনাগত সন্তানের হৃদস্পন্দনের শব্দ শোনা,গর্ভস্থ শিশুর সঞ্চালন দেখা এবং তার মুখ ভঙ্গিমার প্রকাশ আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে জানতে পারা হবু বাবা মায়েদের কাছে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা,আর যদি সেটি তাদের প্রথম সন্তানের হয় তবে তো কথাই নেই।