কয়েক দশক আগেও 40 এ সন্তান ধারণ করা হয় পুরোপুরি অসম্ভব অথবা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যা এখন আর সমস্যা নয়। যদিও সেখানে একটি ঝুঁকি থেকেই যায়। তবু নানা রকম চিকিৎসা প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক ধরনের ফারটিলিটি ট্রিটমেন্ট এর দ্বারা সমস্যা গুলোর সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। যা 40 এ গর্ভধারণ আরো বেশি সহজ করে তুলেছে। যেহেতু চল্লিশে সন্তান ধারণ কিছুটা হলেও সমস্যাজনক তাই এই সময় আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত চলতে হবে।
মহিলাদের জৈবিক নিয়ম অনুযায়ী বিশেষত প্রজনন নিয়ম অনুযায়ী গর্ভধারণের সবচেয়ে সেরা সময় হলো 20 থেকে 30 এর মধ্যে। কিন্তু 40 এর মধ্যে তাদের শরীরে নানান পরিবর্তন ঘটে যা তাদের প্রজনন ক্ষমতার উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে।
40—44 বছরে: অল্প বয়সে মহিলাদের ডিম্বাণুর সংখ্যা ও তার গুণগত মান সবথেকে ভালো থাকে, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে।। 40 –এর প্রথমের দিকে যদি কোন মহিলা গর্ভবতী হন তবে উপলব্ধি করেন যে প্রাকৃতিক নিয়মে এই বয়সে গর্ভবতী হওয়ার কিছু সমস্যা আছ। আবার এই চল্লিশেই ডিম্বাণু উৎপাদনের সময় নানারকম ক্রোমোজোমল অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। যাইহোক বিভিন্ন প্রজনন প্রক্রিয়ার দ্বারা তাদের এই বয়সে গর্ভবতী হতে সাহায্য করা হয়। যদি ডিম্বাণু গুলির মধ্যে অস্বাভাবিকতার লক্ষ্য করা যায় তবে দাতা ডিম্বাণু সহজে পাওয়া যায় এবং IVF চিকিৎসা পদ্ধতির দ্বারা তা প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্য আরেকটি সমস্যা ডিম্বাশয় এর মধ্যে দেখা যায়। এই বয়সে ডিম্বাশয় মধ্যে রক্ত প্রবাহের মাত্রা কমে যাওয়ায় ডিম্বাশয় স্তরটির পুরুত্ব বাড়তে থাকে যা ডিম্বানুর প্রতিস্থাপনের বাধা দেয়।
45 বা তার কাছাকাছি বয়সে: গর্ভধারণ নিয়ে মতভেদ আছে যে, সাধারণত 45 বছরের পরে প্রাক্রিতিক নিয়মে স্বাভাবিক গর্ভধারণের হার কমে যায়। তবুও তাতে হৃদয় ভঙ্গের কোন কারণ নেই যেহেতু বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন IVF সে ক্ষেত্রে আশার আলো দেখায়। এখানে ডিম্বাণু গুলোকে পরীক্ষা করার পর সব থেকে স্বাস্থ্যকর ডিম্বাণু টিই প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে স্বাস্থ্যকর ডিম্বাণু উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়ে। যদি কোন স্বাস্থকর ডিম্বাণু না পাওয়া যায়, তবে সে ক্ষেত্রে দাতা ডিম্বাণুটি দ্বারা চেষ্টা করা হয়। এটি স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের জন্য একটি অন্যতম উপায়,যেহেতু এই পদ্ধতি প্রয়োগের দ্বারা 40 ও তার বেশি বয়সী মহিলাদের গর্ভধারণের সাফল্যের সম্ভাবনা চূড়ান্তভাবে বেড়ে যায়।
40 বছর বয়সে সন্তান নেওয়ার অবশ্যই কতগুলি সুবিধে আছে । এই বয়সে আপনি যথেষ্ট আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যেআপনি আপনার কেরিয়ারের সব থেকে সেরা মুহূর্ত টি কাটিয়ে আসেন, যার ফলে আপনি মানসিকভাবে নিশ্চিন্ত জীবন উপভোগ করেন। এই বয়সে যেহেতু আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান এবং সবকিছুই আপনার সহায় থাকে তাই আপনি মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারেন।
এটি হলো সেই বয়স যখন আপনার এবং আপনার সঙ্গীর মধ্যে সম্পর্কটি উন্নতির শিখরে থাকে এবং আপনার পরস্পরের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে চান ।যার ফলে আপনাদের সম্পর্ক টি একটি সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করে। এবং আপনার ভালোবাসার সঙ্গীটিকে পাশে পেয়ে নিশ্চিন্তে সন্তান ধারণ করতে পারেন। যার অর্থ হলো আপনার শিশুটির জন্য একটি মজবুত পরিবারের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
এই বয়সে আপনি অনেক বেশি আশাবাদী অনেক বেশি পরিণত এবং অনেক বেশি বিচক্ষণ হন। সুতরাং একজন অভিজ্ঞ মা হিসেবে এই বয়সে আপনি সন্তানের অভিভাবকত্বের পছন্দের বাস্তব দিকগুলি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে সক্ষম হন। সে ক্ষেত্রে এই বয়সে আপনি একজন সবচেয়ে ভালো মা হতে পারেন।
যেহেতু পৃথিবীর অনেক বিষয় আপনি দেখেছেন এবং তার ধারণা আছে তাই এই বয়সে আপনি অনেকটাই সহজ হয়ে ওঠেন। সুতরাং এই সময়ে আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে মনযোগ দিতে পারেন যা আপনার শিশুটিকে পর্যাপ্ত সঙ্গ দিতে সাহায্য করবে এবং এর ফলে আপনি আপনার শিশুটিকে সুন্দরভাবে বড় করে তুলতে পারবেন।
আরেকটি সুবিধা হল চল্লিশে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে একাধিক সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা অনেকটা বাড়ে। যদি আপনি প্রাকৃতিক ভাবে সন্তান ধারণের চেষ্টা করেন হরমোন গুলি সর্বক্ষণের জন্য কাজ করতে থাকে যা একাধিক ডিম্বাণুকে প্রতিস্থাপন করে। ফলে এই বয়সে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। একই রকম ভাবে IVF পদ্ধতিতে আপনি যদি দাতা ডিম্বাণুর সাহায্যে চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান ধারণ করেন সেক্ষেত্রেও একাধিক শিশুর জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
এই বয়সে গর্ভবতী হওয়ার প্রধান অসুবিধা হল যে শিশুর জন্মের সময় পর্যন্ত অনেক অস্বাভাবিকতা ও প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় যা শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে প্রচন্ড ঝুঁকিবহুল হয়ে পড়ে। তাই এই বয়সে গর্ভবতী হলে তাকে উচ্চ ঝুঁকি গর্ভাবস্থার বয়স বলে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বর্তমানে অনেক উন্নত প্রযুক্তিগত চিকিৎসা শুরু হয়েছে যার দ্বারা জন্মের আগের খুতগুলি সহজে আগে থেকেই খুঁজে বের করা যায়।। চল্লিশের গর্ভবতী মহিলাদের নানান স্ক্রিনিং টেস্ট করানো হয় তাদের ভূণের কোন সমস্যা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য। এটা দেখা গেছে যে বয়স্ক মায়েদের সন্তান জন্মায় ডাউন সিনড্রোমের মত অসুখের প্রবল ঝুঁকির মধ্য দিয়ে। চল্লিশে বা তার বেশী বয়সে গর্ভবতী হলে শরীরে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতাও দেখা দেয়।
বেশি বয়সে গর্ভবতী হলে গর্ভস্রাব এর মতন সমস্যাও দেখা দেয়।গর্ভস্রাব এর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে গর্ভবতী হলে এবং 45 বছরের পরে তা আরো বেড়ে যায়
বেশি বয়স্ক গর্ভবতী মহিলারা অমরা সম্পর্কিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস,প্রাক এক্ল্যামসিয়া এর মতো আরো নানান সমস্যায় ভোগেন। তাদের প্রসব জনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ প্রসবের বদলে সিজার করে প্রসব করাতে হয়। অনেক সময় জন্ম নির্ধারিত সময়ের অনেক পূর্বেই সন্তান প্রসব করেন ফলে তাদের শিশুদের ওজন কম হতে পারে। এমনকি প্রসবের সময় বাচ্চার অবস্থান ও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
হ্যাঁ চল্লিশোর্ধ মহিলাদের গর্ভবতী হওয়ার নানান সমস্যা আছে। কিন্তু ভালো খবর এটাই যে অনেক মহিলা আছেন যারা এই বয়সে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে সুস্থ শিশুর স্বাভাবিক জন্ম দেন। মনে রাখবেন যা কিছুই সমস্যার সম্মুখীন হন না কেন আধুনিক চিকিৎসায় অনেক ওষুধ বেরিয়েছে যে গুলি আপনাকে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।
অনেক গবেষণার দ্বারা এটি প্রমাণিত যে 40 এর বেশি বয়সে মহিলারা গর্ভবতী হলে প্রজনন সংক্রান্ত নানা সমস্যা সঙ্গে তাদের রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। চল্লিশের পরে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এবং চল্লিশের পরে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সম্ভবত 5—20% এর মত।
একজন মহিলার যখন 30 বছর বয়সে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে 75% এর মত তখন 40 এর উপর সেই সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এই কারণের জন্যই কম বয়সে কোনো মহিলার যত পরিমাণে ডিম্বাণু উৎপাদন হতে পারে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেটির পরিমাণ ক্রমশই কমতে থাকে। কম বয়সী মহিলাদের ডিম্বাণু উৎপাদন করার ক্ষমতা থাকে 300,000—400,000 এর মধ্যে । কিন্তু 37 বছর পর থেকে সেই ডিম্বাণু উৎপাদন করার মাত্রা কম দাঁড়ায় মাত্র 25,000 এর কাছাকাছি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের ডিম্বাণু গুলির গুণগত মানও ক্রমশ কমতে থাকে।
40 এর পর গর্ভাবস্থায় যখন তখন গর্ভস্রাবের মত দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। চল্লিশের প্রথম দিকে এই গর্ভস্রাবের সম্ভাবনা থাকে প্রায় 34 % এর মত,যখন 45 বছর বয়সে সেই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় 53% এর কাছাকাছি। এছাড়াও আরো অনেক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। যেমন বংশগত সমস্যা, ক্রোমোজোমাল সমস্যা এরকম আরো অনেক।
বর্তমানে নানা ধরনের জন্মদায়ক প্রযুক্তির সাহায্যে (ARTs)40 বছর বা তার বেশি বয়সে গর্ভবতী হওয়াটা খুবই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে ।তাই 40 বছর বয়সকে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা ধরা হচ্ছে না। তাই এই বয়সেও আপনি গর্ভবতী হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। এমনকি যদি তাদের ডিম্বাণু গুলি পুষ্ট নাও হয় তাহলে অন্য কারোর ডিম্বাণু, দাতা ডিম্বাণু হিসেবে প্রতিস্থাপিত করা হয় IVF পদ্ধতিতেবর্তমান যুগে,যাতে চল্লিশের বেশী মহিলারাও খুব সহজে গর্ভবতী হতে পারেন এবং একটি সুন্দর সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে পারেন।আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ঔষধের গুণে বর্তমানে 45 বছর বয়সী মহিলারাও অনায়াসেই মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করতে পারেন।
চল্লিশে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে অনেকগুলি মৌলের উপর, যেমন মায়ের স্বাস্থ্য, তার জীবন যাত্রার মান এবং এরকম আরো নানা বিষয়ের উপর। চল্লিশের প্রথম দিকে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যখন 20% 45 বছর বয়সের পরে সেই সম্ভাবনাই কমে দাঁড়ায় 5% এর নিচে।
একই সময় আপনি 40 বছরের পরে স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হতে পারেন আপনার জীবন যাত্রার মান এবং খাদ্যাভ্যাসের কিছু বিক্ষিপ্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে। এমন বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে দেখা যায় মহিলারা সহজেই গর্ভবতী হতে পারেন তাদের জীবনযাত্রার মানে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক,স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে।
স্বাভাবিক BMI বজায় রাখুন: শরীরের সঠিক ভর (BMI)নিয়ন্ত্রণ আমাদের শারীরিক কার্যাবলী গুলির জন্য অত্যন্ত জরুরি। তার অর্থ হলো আপনার শারীরিক উচ্চতা অনুযায়ী আপনার শরীরের ওজন টি আদর্শ হতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে চেষ্টা করতে হবে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখার। অতিরিক্ত ওজন অনেক সময় মহিলাদের ইনফার্টিলিটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মহিলাদের ওজনের সাথে তাদের হরমোনের কাজগুলি আদর্শ অনুপাতে বাড়ে ও কমে। তাই সন্তান ধারণের জন্য আপনি আপনার দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। কখনো উপোস থাকবেন না এবং পুষ্টিকর খাবার খান। অনিয়মিত এবং ভুল খাদ্য পদ্ধতি আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব ঘটায় যার ফলে এন্ডোক্রিন হরমোন নিঃসৃত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
ওজন কমানোর বা ওয়েট লস সাপ্লিমেন্ট কখনোই খাওয়া ঠিক নয় যেহেতু এগুলি হরমোনের বিভিন্ন কাজের উপর প্রভাব ফেলে।
পুষ্টিকর খাদ্য: এমন কিছু খাদ্য আছে যেগুলিকে ‘ফার্টিলিটি ডায়েট‘ বলা হয়। এগুলি সঠিক পরিমাণে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ যেগুলো 40 বছর বয়সে স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হওয়ার জন্য প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে সর্বোত্তম পুষ্টির প্রয়োজন। যে খাদ্যটি মা গ্রহণ করেন তার পুষ্টিগুণ জরায়ুতে পৌঁছায়। একটি সুস্থ স্বাভাবিক গর্ভধারণের ক্ষেত্রে খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালোরি,প্রোটিন,ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদান গুলি অবশ্যই থাকা জরুরী। অধিক পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করুন। ক্ষতিকারক পানীয় যেমন এলকোহল, ধুম্রপান এগুলো থেকে দূরে থাকুন। অন্য কোন পানীয়ের বদলে আপনি বেশী করে সুপ জাতীয় খাবার খেতে পারেন গরম অথবা ঠান্ডা। সবুজ শাকসবজি সবচেয়ে আদর্শ বিশেষত ব্রকোলি,পালং শাক, ফুলকপি,পাতা কপি,বিনস ইত্যাদি।
প্রেগনেন্সির জন্য ফলিক এসিড অত্যন্ত জরুরী। বেশি পরিমাণে মাছ খাওয়া উচিত যেহেতু এগুলিতে ফলিক অ্যাসিড থাকে। রেড মিট থেকে দূরে থাকাই ভাল তবে চর্বিহীন মাংস কিছুটা খাওয়া যেতে পারে। ডিম খুব বেশি পরিমাণে প্রোটিন এর জোগান দেয়।
আপনি আরও বেশি করে স্যালাড এবং নরম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন যাতে আপনার শরীরে অ্যামিনো এসিডের যোগান হয়,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেলস গুলি আপনার স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণে সাহায্য করে।
পরামর্শ: আপনার ওভুলেশনের সঠিক দিনটি জানার জন্য একটি ওভুলেশন কিট ব্যবহার করুন। আপনার শরীরের তাপমাত্রা কি ওভুলেশনের সময় বেড়ে যায়। আপনার সার্ভিকাল সিক্রেশন টি চেক করে নিন এটি ভ্রূণের অবস্থা নির্দেশ করে। প্রতি এক দিন ছাড়া ছাড়া সঙ্গম করুন। গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করালে এবং এগুলি যথাযথভাবে মেনে চললে আপনার প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা অনেক দ্রুত বেড়ে যায়।
সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য উপাদান: চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারা তাদের গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা দ্রুত বাড়ানোর জন্য এর উপযোগী অন্যান্য কিছু উপাদান গ্রহণ করতে পারেন, যেমন– ভিটামিন E সাপ্লিমেন্ট,ফোলেট সাপ্লিমেন্ট, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য আরো কিছু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন যেগুলিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে যা হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
চল্লিশে মহিলাদের গর্ভবতী হওয়া এখন আর কঠিন নয়। নানা ধরনের ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট এর সাহায্যে এই সম্ভাবনাকে আগের থেকে অনেক বেশী বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
এই জন্যই বলা হয় এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় যে কোন 40 এর কাছাকাছি মহিলা যদি গর্ভোবতী হতে চান কিন্তু তাদের ডিম্বাণুর পরিমাণ কম হয় বা তার মন খারাপ হয় তবে তিনি কোনো দাতা ডিম্বাণুর সহযোগিতা নেবেন গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে।
এক্ষেত্রে IVF বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার মাধ্যমে ভ্রূণটি কে ডিম্বাশয়ের বাইরে তৈরি করে সেটিকে ডিম্বাশয় এর ভিতরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র যে আপনার প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে একটি অসম্ভব সম্ভাবনা সৃষ্টি করে তাই নয়, একটি সুস্থ ও সুন্দর শিশুর জন্ম দানও নিশ্চিত করে।
ICSI বা ইন্ট্রাসাইটোপ্লাসমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন টিও চল্লিশের মহিলাদের নিশ্চিত গর্ভধারণের জন্য ভীষণ ভাবে ব্যবহার করা হয়।
ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।নিয়মিত চেক আপ করান এবং আপনার প্রেগনেন্সির সম্ভাবনার উপর কোনটি কি প্রভাব ফেলবে তা ভালো করে ডাক্তারের কাছে জেনে নিয়ে ওনার কথামত চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করুন।সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন।ডাক্তারের উপদেশ মত সমস্ত ওষুধ খান। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদেরও গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা প্রবল থাকে উপযুক্ত ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট এর দ্বারা।এবং এই পদ্ধতিতে তারা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দেয়।
যদি আপনি চল্লিশের পরে গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করেন তবে যেটি সবার প্রথমে আপনার করা উচিত তা হল একটি সুস্থ স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বেছে নিতে হবে।। নিজেকে তৈরি করুন। জেনে নিন আপনার স্বাভাবিক আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত এবং কি ধরনের কাজ এই সময় করা উচিত। সেই ধরনের খাবার খান এবং কাজ করুন যেটি আপনার সাধারন ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনার স্থুলতা বাড়ে আর ওজন কমে,কখনোই উপোস দেবেন না অথবা কোন রকম কঠিন ডায়েট করবেন না এই পর্যায়ে। কারণ এই সময় আপনার শরীরে অধিকমাত্রায় পুষ্টির প্রয়োজন।
উপসংহার
যদিও এটি ঘটনা যে চল্লিশে অথবা 40 এর বেশি বয়সে মহিলাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে পাশাপাশি এটিও ভীষণ ভাবে সত্য ও লক্ষণীয় যে বর্তমানে অনেক মহিলা চল্লিশ বা তার বেশি বয়সে গর্ভবতী হচ্ছেন এবং একটি স্বস্থ্যকর সুন্দর শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। তাই আপনিও আশা রাখতে পারিন যে আপনিও এর জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। সুতরাং এই দিনটি যাতে তাড়াতাড়ি আসে তার জন্য রেডি হতে থাকুন এবং ডাক্তারের উপদেশ ও পরামর্শ মত চলতে থাকুন। খুব শীঘ্রই শুভ খবর পেয়ে যাবেন।