যেহেতু আপনি আপনার গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে অগ্রসর হন, আপনি আপনার সম্পূর্ণ গর্ভদশার প্রায় মধ্য পথে অবস্থান করেন।এই পর্যায়টি গর্ভাবস্থাকালীন সময়ের সমস্যজনিত উপসর্গ গুলির হ্রাস পেতে থাকাকে চিহ্ণিত করে এবং উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি শিশু বাম্পটির আবির্ভাব ঘটে।এই সময়ে ভ্রূণটি সম্ভবত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।যেহেতু শিশুটি বেড়ে উঠতে থাকে,বেশীরভাগ গর্ভবতী মহিলারাই তাদের ওজন লাভ করতে শুরু করেন।
অত্যন্ত প্রত্যাশী মায়েরা আবার ইতিমধ্যেই তাদের সন্তানের আলোড়ন অনুভব করতে শুরু করেন।কিছুক্ষেত্রে আবার শিশুর এই আলোড়নটি বেশ স্পষ্টভাবেই অনুভূত হয় যখন আবার শুধুমাত্র অনিশ্চয়তার সাথে আলোড়নের অভিজ্ঞতারও কিছু দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
কিছু অবস্থানে বেড়ে যাওয়া পেটের পারিশ্রমিক দিতে হতে পারে,যেমন চিত হয়ে শোওয়া কিছুটা কঠিণ হয়ে উঠতে পারে। একটা মসৃণ গর্ভাবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বিশ্রাম,সক্রিয় থাকা এবং একটা পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসের লক্ষণগুলি প্রত্যেকের থেকে প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে।এমনকি,একই মহিলার ভিন্ন গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও উপসর্গগুলি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।বেশীরভাগ মহিলারই সাধারণত এই সময় থেকে তাদের গর্ভাবস্থাকালীন উপসর্গগুলি কমতে থাকে।গর্ভধারণের পঞ্চম মাসের কিছু উপসর্গ গুলি নিচে তালিকাবদ্ধ করা হল।
হার্ট বার্ন বা গলা–বুক জ্বালা হল এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থাকালীন আরেকটি উপসর্গ যেটি বাকি গর্ভাবস্থাকালীন সময় জুড়ে রয়ে যেতে পারে।যেহেতু শিশুটি বাড়তে থাকে, তার নিজের জন্য আরও বেশী জায়গার প্রয়োজন হয় এবং আভ্যন্তরীণ অঙ্গাণুগুলির উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে তাদের মধ্যেকার পদার্থগুলোকে খাদ্যনালীর মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।এছাড়াও যে পেশীগুলো খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর মধ্যে থাকে সেগুলো প্রসারিত হয়ে পাকস্থলীর অ্যাসিডকে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে দেয় এর ফলে হৃদয় প্রদাহ বা গলা–বুক জ্বালা করে।
স্তনগুলি আকারে আরো বেড়ে যেতে পারে এবং কোলোস্ট্রাম–যেটি হল মায়ের স্তন থেকে নিসৃত হলদেটে প্রথম দুধ যেটি আবার মায়ের প্রথম দুধ নামেও পরিচিত,সেটি তৈরী হওয়া শুরু হয়।স্তন দুধের মত, এটি অবাধে প্রবাহিত হতে পারে না।সাধারণত, স্তন থেকে কয়েক ফোঁটাই নিসৃত হতে পারে।
গর্ভাবস্থাকালীন হরমোনের ওঠা নামার কারণে শরীরে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে যা অনেক গর্ভবতী মহিলার ত্বকের বিভিন্ন স্থানকে কালো করে তোলে।ত্বকের সাধারণত কপালে,গালে এবং নাকের চারপাশের অঞ্চল মাস্কের আকারে কালো হয়ে যায়।এই অবস্থাটিকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়ে থাকে গর্ভধারণের মুখোশ।
এই সময়ে বেশীরভাগ মহিলার বলার মত যে অভিজ্ঞতাটি হয় তা হল তাদের খিদে বেড়ে যাওয়া।তাদের আবার বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি তীব্র ইচ্ছে প্রকাশ পেতে পারে এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবারের উপর অনীহাও দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থার হরমোনগুলি সাধারণত এমনকিছু পরিবর্তন আনতে পারে যা সাধারণত অস্থায়ী এবং শিশুর জন্মদানের পর সেগুলো উধাও হয়ে যায়।এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলি আপনি গর্ভধারণের পঞ্চম মাসে আশা করতে পারেন সেগুলি নিম্নরূপঃ
কিছুক্ষেত্রে মহিলারা তাদের বুক ধড়ফড়ানির অভিজ্ঞতা লাভ করেন তাদের উচ্চ হৃদস্পন্দনের জন্য এবং হৃদস্পন্দনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য,কারণ এখন থেকে হৃদপিণ্ড দুটি প্রাণের জন্য রক্ত পাম্পিং করতে থাকে।
গর্ভধারণের পঞ্চম মাসে লিউকোসাইট বা শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে কম হিমোগ্লোবিনের ফলে।
এক্ষেত্রে কিডনির উপরে প্রচুর পরিমাণে চাপ পড়ে তাই ডাক্তারবাবু কিডনির কোনও রকম সম্ভাব্য অসুবিধার বেড়ে যাওয়াকে এড়িয়ে চলার জন্য আপনার কিডনিটি পরীক্ষা করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
কিছু গর্ভবতী মহিলার আবার গর্ভাবস্থাকালীন মাড়ির সমস্যা (যেমন মাড়ি ফুলে যাওয়া,শিথিল মাড়ি)বিকাশ পেতে থাকে উচ্চ মাত্রায় ইস্ট্রোজেনের কারণে,যার ফলে মাড়ি থেকে রক্তপাত ঘটে থাকে।
অন্ত্রের আন্দোলন কঠিন অথবা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠতে পারে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ।খাদ্যের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় আয়রণ সম্পূরকগুলি থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যটি আরও খারাপ অবস্থায় পরিণত হতে পারে।
প্রতি সপ্তাহের সাথে শিশুর আরও বেশি সক্রিয় আন্দোলনের সাথে সাথে আপনার পেটটিও বেড়ে যাওয়ার ফলে আরামদায়ক ভাবে ঘুমানোর ভঙ্গীমাটি খুঁজে পাওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে ওঠে।
দেহে কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হতে থাকে যখন আপনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী হয়ে থাকেন।
নিম্নলখিতগুলি তার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।
গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে কিছু মহিলার আবার শারীরিক অস্বস্তির অভিজ্ঞতা কিছুটা বাড়তে পারে তাদের শারীরিক পরিবর্তনগুলি হওয়ার কারণে,সেগুলির মধ্যে কিছু উদ্বেগ হতে পারে–
গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে শিশু দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং শিশুর একটি অবিশ্বাস্য গতিতে বিকাশ হতে থাকে।প্রতিদিন নিয়ে আসে তার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ–ময় বিকাশ এবং আপনার সন্তানটি প্রায় 8-12 ইঞ্চি মত লম্বা হয়ে ওঠে।বাচ্চার ওজন বেড়ে প্রায় এক পাউন্ড মত হতে পারে।তবে এখানে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি শিশুই বেড়ে ওঠে তার নিজের গতিতে। যখন আপনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী সেই সময়ে যে উন্নয়নমূলক মাইলস্টোনগুলি আপনার শিশু অর্জন করে উঠতে পারে সেগুলি হল–
শিশুর পেশী এবং হাড়গুলি ক্রমশ ঘন হতে থাকে এবং বাহু,পায়ের আঙ্গুল,পা,হাত,হাতের আঙ্গুলগুলি ভালো ভাবে গঠিত হয়।
শিশুর ভ্রূ, চোখের পাতা,চোখের পাতার লোম,সূক্ষ্ম লোম,কান এবং নখ গুলি গঠিত হয়।
শিশুর মুখটি স্পষ্টভাবে গঠিত হতে থাকে।
আপনার সন্তানটি প্রসারিত হতে পারে,এবং অল্পের জন্য চোখ খুলতে পারে,হাই তুলতে পারে,বুড়ো আঙ্গুল চুষতে পারে,পা ছুড়তে পারে এবং ঘুরে যেতে পারে।
এছাড়াও আপনার বাচ্চা ভিতরে নড়াচড়া করে বাঁক নিতেও সক্ষম হয়।
শিশুর ছোট্ট বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সে মুখের অঙ্গঅভঙ্গীও করতে পারে।
শিশু ঘুমিয়ে এবং জেগে থাকার একটি মোটামুটি অবিচলিত সময়সূচী অনুসরণ করতেপারতে পারে।শিশুর ঘুমের ভঙ্গীটি তার মায়ের ঘুমানো এবং জেগে থাকার চক্রটি থেকে পৃথক হতে পারে।
এই সময়েই আপনার শিশুর, তার নিজের হাতের আঙ্গুলের এক অনন্য ছাপের বিকাশ হতে পারে।
এই পর্যায়ে আবার আপনার শিশুর যোনির বিকাশ ঘটে।
আপনার বাচ্চা কিছু শ্রবণ ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।সুতরাং, বাইরের শব্দ শিশুকে বিরক্ত করতে পারে।এছাড়াও,আপনি আপনার সন্তানের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করতে পারেন এবং হতে পারে তার থেকেও সাড়া পেতে পারেন।
শিশুর মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ হতে থাকে এবং ক্রমশ তা আরও জটিল হয়ে উঠতে থাকে।
18 সপ্তাহের আশেপাশে শিশুর রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাও আরও পরিণত হয়।তার শরীর শারীরবৃত্তীয় পদার্থগুলিকে সংশ্লেষ করতে পারে যা তাকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
19-20 তম সপ্তাহে,স্নায়ুতন্ত্র কাজ করতে শুরু করে।এন্ডোক্রাইন গ্রন্থিগুলি, প্লীহা এবং তার সাথে মোনোসাইট ও লিম্ফোসাইটগুলি কাজ করতে শুরু করে।
শিশুর অবস্থানের পরিবর্তন হতে শুরু হতে পারে তার এই অবস্থান থেকে মাথা নিচু করা অবস্থানে।
আপনার সন্তানের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতার বিকাশ ঘটে।
এছাড়াও তার স্বাদ–কোরকগুলিও গঠিত হতে শুরু করে।একটি 5 মাসের অজাত শিশুও নোনতা এবং মিষ্টি স্বাদের মধ্যে পার্থক্য করতেও সক্ষম হতে পারে।
আপনার ডাক্তারবাবু একটি মধ্য গর্ভাবস্থা স্ক্যান করানোর পরামর্শ দিতে পারেন আপনার গর্ভাবস্থার সুস্থতা পরীক্ষা করার জন্য এবং গর্ভাবস্থার 5 মাসের শিশুকে চেক করার জন্য।এই বিস্তৃত স্ক্যানটিকে আবার অনোমালি স্ক্যান বলা হয় কারণ এই স্ক্যানের একটা উদ্দেশ্য হল ভ্রূণের কাঠামোগত অস্বাভাবিকতার সন্ধান করা।ডাক্তারবাবু এই স্ক্যানের দ্বারা আপনাকে আপনার সন্তানের মুখ,চেহারা,বড় অঙ্গাণু গুলির পাশাপাশি হৃদপিণ্ডটিরও ছবি দেখাতে সাহায্য করতে পারেন।
যদি কোনো ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ড কোনওরকম অস্বাভাবিকতা প্রকাশ করে তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু একটি অতিরিক্ত স্ক্যান করাবার সুপারিশ করতে পারেন সমস্যাগুলিকে আরও ভালোভাবে চিহ্ণিত করার জন্য এবং সম্ভবত তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা করার জন্য।
আপনার আস্বস্তি এবং গর্ভধারণ জনিত সমস্যাগুলো এড়াবার জন্য এখানে কিছু আপনার করণীয় এবং কিছু বিষয় যা করবেন না সেই বিষয়গুলি বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হল।
গর্ভকালীন সময়ে সক্রিয় জীবন যাপন করুন।গান শুনুন,সামান্য হাঁটাচলা করুন,ধ্যান শিখুন,যোগ ব্যায়াম করুন, আরমে থাকার কৌশল গুলো রপ্ত করুন ইতিবাচক এবং চাপমুক্ত থাকতে।আপনি সময় কাটাতে পরিকল্পনা করুন আপনার একগুচ্ছ আনন্দের আবির্ভাবের জন্য।গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে গর্ভপাত হবার ঝুঁকি থাকে।তাই আপনার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কোনোরকম সন্দেহ দেখা দিলে দেরী না করে অতি দ্রুত ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।