গর্ভাবস্থায় বীটরুট-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

গর্ভাবস্থায় বীটরুট

বিটরুট হল নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর মূল জাতীয় সবজি,যা সারা বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।এটি আবার গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও বেশ উপকারি বলে প্রমাণিত।বীটরুট কীভাবে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে এবং এটি খাওয়ার উপায়গুলিই বা কি সে সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে থাকুন।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট ভোজন করার অত্যাশ্চর্যজনক উপকারিতা গুলি

গর্ভাবস্থায় বিটরুট ভোজন করার অত্যাশ্চর্যজনক উপকারিতা গুলি

বীটরুটগুলি বহু পুষ্টিকর উপাদান এবং এমন আরও কিছু উপাদানে ভরপুর যেগুলি ক্রমবর্ধিত ভ্রূণের জন্য সহায়ক।গর্ভাবস্থায় বীটরুট খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতাগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলঃ

1. অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে

বীটে রয়েছে ভাল পরিমাণে আয়রণ,যা গর্ভাবস্থায় লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।

2. অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে

বীটরুটে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি আপনার অনাক্রম্যতার উন্নতি ঘটায় এবং গর্ভাবস্থায় সংক্রমণগুলি থেকে রক্ষা করে।

3. অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়

গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকতে পারে বলে জানা যায়যেটি হল এমন একটি অবস্থা যা আপনার হাড়কে দুর্বল এবং ভঙ্গুর করে দেয়।বীটের মধ্যে একটা ভাল অংশে সিলিকা এবং ক্যালসিয়াম আছে,যা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্ত রাখে।

4. বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে

বীট হল পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ,সুতরাং আপনার ইলেক্ট্রোলাইটে ভারসাম্য আনতে এবং বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সেগুলি ভোজন করুন।এগুলি আবার গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবেও পরিচিত।

5. প্রদাহ রোধ করে

বীটরুটের মধ্যে বিটেন নামক এক প্রকার প্রদাহ বিরোধী এজেন্ট উপস্থিত থাকে,যা গর্ভাবস্থায় জয়েন্ট বা সন্ধিগুলিতে প্রদাহ,ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

6. রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

বীট কম গ্লাইসেমিকযুক্ত খাদ্য হওয়ায় সেটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে এবং রক্তের মধ্যে শোষিত হতে বেশি সময় নেয়।এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

7. ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

ফোলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ বীটগুলি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে উন্নীত করে।এটি আবার আপনার ছোট্টটির মেরুদণ্ডের উন্নতিতেও সহায়তা করে।

8. একটি স্বাস্থ্যকর যকৃৎ উন্নীত করে

বীটে উপস্থিত বিটাসায়ানিন আপনার যকৃৎ এবং রক্তকে বিষমুক্ত করে।এছাড়াও এটি আবার আপনার দেহ থেকে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং বিষাক্ত পদার্থগুলিকে দূর করে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে।

9. ভিটামিন C সরবরাহ করে

বীটরুটে থাকা ভিটামিন C উপাদানটি আয়রণ শোষণে সহায়তা করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পথ প্রস্তুত করে।

10. জন্মগত ত্রুটি হ্রাস করে

ফোলিক অ্যাসিড স্বাস্থ্যকর কলার বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বিকাশকে প্ররোচিত করে।এটি আবার পিঠের মেরুদণ্ডের সর্বোত্তম বিকাশ সুনিশ্চিত করার দ্বারা স্পাইনা বিফিডার মত জন্মগত ত্রুটিগুলি প্রতিরোধও করে।

গর্ভাবস্থায় বীট খাওয়ার সাথে কোনও রকম ঝুঁকি সংযুক্ত আছে কি?

বীটরুটের অসংখ্য স্বাস্থ্যকর উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও,গর্ভাবস্থায় খাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলির কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছেঃ

  • বীটের মধ্যে থাকে বিটেন,যার কারণে বমি,গা গুলানো,বমি বমি ভাব,ডায়রিয়া এবং অন্যান্য গর্ভাবস্থাকালীন সমস্যাগুলি হতে পারে।
  • বীটে উপস্থিত নাইট্রেট উপাদানটির কারণে গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় বীটরুটের রস সেবন করলে তা সাময়িকভাবে আপনার গলার ভোকাল কর্ডে বা স্বরযন্ত্রে প্যারালাইসিস ঘটাতে পারে।
  • অত্যধিক পরিমাণে বীটরুট খাওয়ার ফলে বীটুরিয়া নামক এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে,যা আপনার প্রস্রাব এবং মলের বর্ণ লালে রূপান্তরিত করতে পারে।
  • বীটরুটে বর্তমান অক্সালেট উপাদানটি হয়ত কিডনি স্টোনের বা বৃক্কে পাথরের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বীটরুটকে কীভাবে আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটের সাথে যোগ করবেন?

প্রাতঃকালীন অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাব একবার কেটে গেলে,ওয়াক তোলার অনুভূতি ছাড়াই আপনি কোনও কিছু খেতে সক্ষম হবেন।আর এই সময়েই আপনার ডায়েটে অন্যান্য সবজিগুলির সাথে বীটরুট যুক্ত করা শুরু করতে পারেন।গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বীটরুট খাওয়া হল একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকে উন্নীত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানগুলি একত্রিত করার একটি দুর্দান্ত উপায়।এখানে বীটরুটের কয়েকটি অনন্য রেসিপির উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি নিজের হাতে বানাবার চেষ্টা করতে পারেনঃ

1. বীটরুটের চা

বীটরুটের চায়ে বলদায়ক বৈশিষ্ট্যগুলি আছে এবং এর সবচেয়ে ভাল দিকটি হল,এর মধ্যে কোনও রকম ক্যাফিন থাকে না।

উপকরণ

  • জল-1/4 কাপ
  • বীট,সূক্ষ্মভাবে কাটা-4 টি
  • মধু-1/2 কাপ
  • 2 টি লেবুর রস

প্রণালী

  • একটি সসপ্যানে করে জল ফুটান এবং তার সাথে বীট,লেবুর রস এবং মধু যোগ করুন।
  • এবার এগুলিকে একত্রে ফুটতে দিন
  • গ্যাস নিভিয়ে সেটি একভাবে মোটামুটি প্রায় 20 মিনিটের জন্য স্থিরভাবে রেখে দিন।
  • এরপর ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করুন।

2. বীটরুট গুঁড়ো

বীট খাওয়ার একটি সহজ উপায় হল সেগুলিকে চূর্ণ করে মিহি পাউডার করে নিয়ে জল অথবা রসের সাথে মিশিয়ে সেবন করা।

উপকরণ

  • বিটরুট-1 টি

পদ্ধতি

  • বীটরুটটিকে নিয়ে ভালভাবে ধুয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে নিন,এবং তারপর সেটিকে পাতলা পাতলা করে কেটে নিন।
  • এবার ঐ পাতলা করে কাটা টুকরোগুলিকে আপনাকে শুকিয়ে নিতে হবে।আপনি সেগুলিকে হয় একটি পাতলা নেটের মশারির কাটা অংশ দিয়ে ঢেকে নিয়ে সূর্যালোকে অথবা গ্যাসের শিখা কমিয়ে নিয়ে তার উপর একটা পাত্রে রেখে শুকিয়ে নিতে পারেন।
  • একবার এগুলি শুকিয়ে গেলেই আপনি সেগুলিকে একটি মিক্সচার গ্রাইন্ডারের মধ্যে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন।
  • এবার সেই গুঁড়ো করা বীটরুটের পাউডারটিকে একটি বায়ুনিরুদ্ধ পাত্রের মধ্যে মজুত করে রাখুন।

যদিও গর্ভাবস্থায় বীটরুট খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ,তাই বলে এটি অত্যধিক পরিমাণে সেবন করা উচিত নয়।সারাদিনে কেবল 2 টি বীটরুট খাওয়ার মধ্যেই আপনার বীটরুট সেবনটি সীমিত রাখুন।তবে আমরা আপনাকে এর দ্বিতীয় মতামতটি নিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিই আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের থেকে।