In this Article
জেদ এবং একগুঁয়েমি এমন একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠতে পারে যেটি হয়ত আপনার সন্তান তার শৈশব থেকেই প্রদর্শিত করতে পারে।এ ব্যাপারে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন এই জন্যই যে এ ব্যাপারে আপনিই একা নন, এমন অনেক অভিভাবকই আছেন যারা একই পরিস্থিতির ভুক্তভোগী।আপনি যে উপায়ে আপনার একগুঁয়ে জেদী বাচ্চাকে পরিচালনা করবেন তা তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত করতে পারে।শৈশব কাল এবং কৈশোর কালটি মোকাবিলা করাটা সবচেয়ে কঠিন বলে বিবেচনা করা হয়।
এটি বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে একগুঁয়ে এবং জেদী স্বভাব কিছু বাচ্চার ব্যক্তিত্বের একটি অংশ, যখন আবার অন্য শিশুদের ক্ষেত্রে তারা তা প্রকাশ করে তাদের সীমানার বাঁধন ছাড়িয়ে তাদের ইচ্ছেগুলি চরিতার্থ করার লক্ষ্যে।সুতরাং সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চাকে পরিচালনা করার আরও অনেক এমন উপায় আপনাকে শিখতে হয় যাতে তারা তাদের মানসিক চাপগুলি মোকাবিলা করতে এবং তাদের অনুভূতিগুলি প্রকাশ করতে পারার মাধ্যমে সমগ্র বিষয়টিকে সহজে মোকাবিলা করা যেতে পারে।
জেদী এবং একগুঁয়ে বাচ্চাদের বৈশিষ্ট্যগুলি
আপনার সন্তান কেবলমাত্র তার ইচ্ছেগুলি পূরণ করার জন্যই জেদ করে না।একগুঁয়ে এবং দৃঢ়সংকল্প হয়ে ওঠার মাঝে একটি সূক্ষ্ম বিভাজন রেখা আছে।নজর দেওয়ার জন্য এখানে একগুঁয়ে জেদী আচরণের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলঃ
- অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং সৃজনশীল
- বিরুদ্ধাচারণের জন্য ভুল হতে পারে এমন সকল বিষয়ে প্রশ্ন করার প্রবণতা
- ঘন ঘন আপনার মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য তারা এমন কিছু করে যেগুলির জন্য তারা আপনার কোনও উক্তি শুনতে চায় এবং তাদের কৃত কাজগুলির স্বীকৃতি পাওয়ার প্রত্যাশা করে।
- অত্যধিক মাত্রায় স্বাধীনচেতা
- যেকোনও কাজের ক্ষেত্রে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে থাকে এবং সেটি শেষ না করা পর্যন্ত তারা থেমে যায় না ও বিশ্রাম নেয় না।
- মাঝে মধ্যেই সে দুর্বার ক্রোধ দেখাতে পারে
- নেতৃত্ব সুলভ বৈশিষ্ট্যগুলি থাকে এবং এমনকি মাঝে মধ্যে নেতাগিরিও দেখাতে পারে।
- নিজের মত করে তাদের নিজেদের গতিতে সবকিছুই তারা করতে পারবে
- তাদের যেটি ভালোলাগে সেটি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা নির্বিশেষে কিম্বা সেটি করার জন্য কোনও নিয়ম ভাঙার সাথে জড়িত হওয়ার মত কিছু অণ্বেষণ করার ক্ষেত্রেও কখনও দ্বিধাবোধ করে না।
একগুঁয়ে ও জেদী শিশুদের মনস্তত্ত্ব
একগুঁয়ে বাচ্চার সাথে মোকাবিলা করার সঠিক উপায়টি হল প্রথমে এটি বোঝা যে কেন এইভাবে সে আচরণ করে এবং কোন বিষয়টি তাদেরকে এরকম করে তোলে।আপনার শিশুর ক্ষেত্রে তার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠা এক ব্যাপার আর একগুঁয়ে হয়ে ওঠা অন্য ব্যাপার।দৃঢ়প্রতিজ্ঞ–কে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে “কোনও কিছুর উদ্দেশ্যে দৃঢ়তা প্রকাশ” করা হিসেবে যেখানে একগুঁয়ে হয়ে ওঠা বলতে বোঝায় “যে কোনও বাহ্যিক চাপের অধীনে চিন্তাভাবনা, আচরণ বা ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি“। বাচ্চাদের জেদ বংশগত হতে পারে আবার তারা তা অন্যদের দেখেও শিখতে পারে।তবে এই আচরণটি ফলদায়ক প্রমাণিত হতে পারে এবং আপনার শিশুকে একটি ধীর স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
জেদী বাচ্চাদের কীভাবে পরিচালনা করবেন?
একদম ছেলেবেলা, অল্প বয়সকালে, কৈশোরকালে– জেদ যেকোনও বয়সেই দেখা দিতে পারে এবং তারপর তা বয়সকাল পর্যন্ত বিদ্যমান থাকতে পারে।একজন অভিভাবক হিসেবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার একগুঁয়ে বাচ্চাকে পরিচালনা করার এমন উপায় খুঁজে বের করা যাতে আপনি কারুর উপর চাপ না দিয়েই তার আচরণগুলিকে সংযত করতে পারেন।একটি মেজাজী শিশুকে পরিচালনা করার কিছু কৌশল এখানে দেওয়া হলঃ
1.মনযোগ অন্যদিকে বিক্ষিপ্ত করুন
এমন কিছু সমস্যা হতে পারে যে ব্যাপারে আপনি এবং আপনার শিশু একমত হতে সম্মত নন– যেমন ধরা যাক গাড়ির আসন নিয়ে।যদি গাড়িতে করে কোথাও যাওয়ার জন্য প্রতিটি সময় আপনাদের মধ্যে ইচ্ছাশক্তির লড়াইয়ে পরিণত হয়, তবে সেক্ষেত্রে গাড়িতে ওঠার আগে আপনার বাচ্চাকে কীভাবে এবং কোথায় বসবে বা অনুরূপ কিছু বলার পরিবর্তে বরং আপনারা কোথায় যাচ্ছেন এ ধরণের কিছু বলে সেদিকে তার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন।এবং যদি এই কাজগুলি একটি কঠিন মুহূর্ত হয়ে ওঠে তবে এটিকে একটি খেলায় রূপান্তরিত করার চেষ্টা করুন, সেটি হতে পারে কোনো নির্দিষ্ট বসার আসনে সে একটি সময় পর্যন্ত বসবে এবং তার পর অন্য কেউ সেই আসনটিতে বসবে আর এর মধ্যে তার ভাই–বোনেদেরও আবদ্ধ করে নিতে পারেন।
2.তর্ক–বিতর্ক করবেন না
জেদী ও একগুঁয়ে বাচ্চারা সর্বদাই একটি যুক্তির মুখোমুখি হয়ে সেটির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকে।সুতরাং তাদের সেই সুযোগটি দেবেন না।পরিবর্তে, বরং আপনার সন্তানের যা কিছু বলার আছে তা শোনার দিকে মনোযোগ দিন এবং তা যুক্তি–তর্কের পরিবর্তে কথোপকথনে পরিণত করুন।যখন আপনি তাকে এটি দেখান যে আপনি তার বক্তব্যগুলি শোনার জন্য প্রস্তুত তখন এটিই আবার তাদের শোনার অভ্যাসকে আরও বাড়িয়ে তুলবে সম্ভবত আপনি তাদের যা কিছু বলতে চান।
3.একটি সংযোগ স্থাপন করুন
আপনার বাচ্চা যা করতে চায় না তা করানোর জন্য তাকে জোর করবেন না।এটি তাদের আরও বেশি করে অবাধ্য করে তুলবে এবং ঠিক এমন কোনও কিছু করার জন্য বেঁকে বসবে যা করা উচিত নয়।অতএব, আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে টেলিভিশন দেখা বন্ধ করাতে চান এবং তার পরিবর্তে হোমওয়ার্কগুলি করাতে চান, চেষ্টা করুন তার সাথেই বসে কিছুক্ষণ টেলিভিশন দেখার।এটি দুজনের মধ্যেই কিছুটা পারস্পরিক আস্থা নিয়ে আসবে এবং এর অল্পক্ষণ পর, আপনি আপনার ছোট্টটিকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে আপনার বই পড়ার সময় সে আপনার কাছে বসে তার হোমওয়ার্কগুলি কিম্বা অন্য কিছু কাজ করতে চায় কিনা।
4.তার কিছু পছন্দসই প্রস্তাব দিন
একটি জেদী একগুঁয়ে শিশুকে যদি একথা বলা হয় যে তুমি কি করতে চাও– তবে তা তার মনের বিদ্রোহী রেখাটিকে বিদ্যুতের ন্যায় চকিতে প্রজ্বলিত করার একটি নিশ্চিত ইন্ধন যোগানোর উপায় হয়ে ওঠে।পরিবর্তে, বরং তাদের নির্বাচন করে নেওয়ার জন্য তাদের সামনে কিছু বিকল্পের প্রস্তাব দিন, কারণ তাদের জীবনের উপর যে তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে এটি তাদের বোধ করায় এবং তারা যা করতে চায় তার সিদ্ধান্ত তারা স্বাধীনভাবে নিতে পারে।নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের মধ্যে যাতে কোনওরকম বিভ্রান্তি না আসে, তার জন্য পছন্দগুলি সীমিত রাখুন এবং কেবল দুটি বা তিনটি বিকল্প তার সামনে রাখুন।দৃষ্টান্ত হিসেবে, সে যদি তার ঘর পরিষ্কার করতে চায়, তবে তাকে “কোথা থেকে তুমি পরিষ্কার করা শুরু করতে চাও?”- এটি জিজ্ঞাসা করার বদলে বরং এভাবে তাকে বলুন যে প্রথমে খাট নাকি আলমারি কোনটি দিয়ে সে তার সাফাই কাজটি শুরু করতে পছন্দ করবে।
5.আপনার জুতোয় পা গলান অর্থাৎ তার মত করে ভাবুন
আপনার সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটিকে হাতে নিয়ে দেখুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে কেন সে এভাবে এ ধরণের আচরণ করছে।আপনি যদি তাকে পার্কে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হয়ে ওঠায় তা পরবর্তিতে প্রত্যাখ্যান করেন, তবে আপনি যে কেন আপনার প্রতিশ্রুতি রাখতে সম্ভবপর নন তা তাকে ব্যাখ্যা করে আপনার বোঝানো দরকার।আপনার শিশুটি হয়ত সেটিকে শুধুমাত্র একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হিসেবেই দেখবে কিন্তু আপনি কেন তাকে নিয়ে যেতে পারেন নি তা বর্ণন করার দ্বারা এবং তা নিয়ে যাওয়ার জন্য পরবর্তী একটি দিনক্ষণ স্থির করার মাধ্যমে আপনি পরিস্থিতিটি রক্ষা করতে পারেন।
6.বাড়িতে শান্তি বজায় রাখুন
আপনার বাড়িটিকে এমন এক স্থান হওয়া নিশ্চিত করুন যেখানে আপনার সন্তান সব সময় আনন্দে, শান্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নিরাপদে থাকে।বাড়ির সকলের সাথে নম্র হন, বিশেষ করে আপনার সঙ্গীর সাথে কারণ বাচ্চারা যা দেখে তাই রপ্ত করে নেয়।তারা যা দেখে সেগুলিকে অনুরূপ ভাবে তারা অনুকরণ করার চেষ্টা করে, সুতরাং আপনার শান্তি বজায় রাখাটা এবং ঝগড়া কলহ– বাক্ বিতণ্ডার পাশাপাশি শিশুর সামনে অপমান করার প্রবণতাগুলিকেও এড়িয়ে চলা অপরিহার্য।
7.আপনার আপসে মধ্যস্থতা করার দক্ষতাকে ঝালিয়ে নিন
জেদী একগুঁয়ে বাচ্চারা যখন কোনওকিছু চায় তখন তা একেবারে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করাকে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়।সুতরাং তা করার পরিবর্তে তাদের ন্যায় নীতি না দেখিয়ে বরং তাদের সাথে আপোসে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করুন।দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যাক, যদি আপনার শিশুটি ঘুমের সময় দুটি গল্প শোনার জন্য জোর বায়না ধরে, তার সাথে কথা বলে এমন এক মধ্যস্থতায় আসুন যেখানে সে আজকের জন্য একটি এবং কালকের জন্য আরেকটিকে বেছে নিতে পারে।
8.ইতিবাচক আচরণকে উৎসাহিত করুন
সর্বদা ইতিবাচক মনোভাব উপস্থাপন করুন এবং দৃষ্টান্তের দ্বারা পরিচালিত করুন। আপনি যদি “না“; “পারব না“; “হবে না” এ ধরনের শব্দগুলির বহুল প্রয়োগ করেন তবে আপনার সন্তানেরও এই একই জিনিসগুলি করার সম্ভাবনা থাকে।আপনার বাচ্চার জেদের ব্যাপারে চিন্তা–ভাবনা না করে কথা বলা এবং নেতিবাচক ভাবে না দেখে বরং তা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখুন।“হ্যাঁ” বা “না” উত্তরের দ্বারা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা যায় এমন কিছু প্রশ্ন আপনার বাচ্চাকে করার মাধ্যমে সেটিকে একটি খেলাতে পরিণত করে তুলুন।প্রশ্নের সারণীটি এমন ভাবে প্রস্তুত করুন যার অধিকাংশ উত্তরই “হ্যাঁ” হয়ে থাকে।এর দ্বারা এই বার্তাটিই তার কাছে প্রেরিত হয় যে তার কথা সব শোনা হচ্ছে এবং তার জন্য সে প্রশংসিতও হয়ে উঠছে আপনার কাছ থেকে, আর এটি আপনার বাচ্চার উপর একটি সুপ্রভাব ফেলবে।
9.রুটিনগুলি উন্নীত করুন
প্রতিদিনের পাশাপাশি সাপ্তাহিক রুটিনগুলির সাথেও সংলগ্ন থাকলে তা আপনার সন্তানের আচরণের পাশাপাশি তার বিদ্যালয়ে সম্পাদিত কার্যতেও উন্নতি ঘটায়।শোয়ার সময়টি নির্ধারণ করা প্রয়োজন এবং সেটি এমন হওয়া উচিত যে তা যেন আপনার সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম সরবরাহ করে।ঘুমের অভাব এবং ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিন থেকে বারো বছরের মধ্যে থাকা শিশুদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
10.কঠোর নিয়ম নীতি এবং ফলাফলগুলি পরিত্যাগ করুন
সাফল্য লাভের জন্য জেদী ও একগুঁয়ে বাচ্চাদের নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা প্রয়োজন।সুতরাং সীমানা নির্ধারণ করুন এবং একটি পারিবারিক বৈঠকে আপনার প্রত্যাশাগুলি পরিষ্কার করুন।জেদের ফলাফলগুলি কি হতে পারে তা সম্পর্কে আপনার সন্তানকে বলুন এবং সেগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কি অভিমত সেটিও জানতে চান।দৃঢ়তা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তার অর্থ একেবারে অনমনীয়তার সাথে নয়।সময় বিশেষে নমনীয় হয়ে ওঠাটাও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন ছুটির দিনে যখন আপনি বাড়িতে থাকেন অথবা কোনও অনুষ্ঠানে যখন আপনার শিশুটি অকরণীয় আচরণ প্রদর্শন করে, তখন তাকে জ্ঞাত করা দরকার যে তার জন্য নির্ধারিত নিয়ম কানুনগুলি পুরস্কারযোগ্যও এবং তাকে প্রতিহত করার জন্য তা নয়।
একগুঁয়ে জেদী বাচ্চাকে নিয়ে সমস্যা
একটি একগুঁয়ে জেদী বাচ্চার অভিভাবকত্ব করাটা কোনও সহজ কাজ নয়, প্রতিটি ছোটখাটো জিনিসই প্রতিদিনের সংগ্রামে পরিণত হতে পারে যদি আপনি দ্রুত তার সমাধান খুঁজে বের না করেন।জেদী বাচ্চার আচরণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তার প্রচুর খবরাখবর আপনি এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন কিন্তু প্রতিটি দিনই নিয়ে আসে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।জেদী বাচ্চাকে নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে রেখে পরিচালনা করা সব ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সমাধান নাও হয়ে উঠতে পারে এবং একটি কার্যসংক্রান্ত বিষয়ের খোঁজ করা এ ব্যাপারে আরও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
1.খাওয়ার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন
যখন কোনও খাদ্য বা আহারের ব্যাপারটা আসে বেশিরভাগ বাচ্চাই উদাস হয়ে উঠতে পারে এবং সেটি আরও হতে পারে যদি তার মধ্যে একগুঁয়েমি এবং জেদী স্বভাবটি থাকে।তাকে খাওয়ানোর ব্যাপারটি চুপচাপ গোপন রাখাটা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে এবং চেষ্টা করুন আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য অল্প পরিমাণে পরিবেশন করতে এবং তারপর তাকে বেছে নিতে দিন সে কোনটি আরও খেতে চায়।এছাড়াও আবার আপনি তার জন্য খাবারটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করতে পারেন নানা ধরণের পুষ্টিকর উপাদানগুলির সাথে আপনার সৃজনশীল প্রতিভার দ্বারা আরও নতুন নতুন রেসিপি প্রস্তুত করার মাধ্যমে।এছাড়াও আবার আপনি টেবিল ঠিক করার মত খাবার সময়ের টুকিটাকি কাজগুলির সাথে তাকে জড়িত করতেও পারেন। খাবারটি খাওয়া শেষ করলে তাকে তার প্রিয় মিষ্টান্নটি উপহারস্বরূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দানের মাধ্যমে আবার আপনি তাকে খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটিকে সহজ ও মসৃণ করে তুলতেও পারেন।
2.হোমওয়ার্ক করার ক্ষেত্রে অনীহা
লক্ষ্য করুন আপনার সন্তান নির্ধারিত হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা কিম্বা তার লেখা ও পড়ার পরিমাণ দেখে সে বিহ্বল হয়ে পড়েছে কিনা।যদি সেটিই হয়েছে বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আপনি সেটিকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে ভাগ করে দিতে পারেন পর্যায়ক্রমে শেষ করার জন্য।মাঝেমধ্যে ছোট ছোট বিরতি দিলে তা একভাবে বসে করার থেকে দ্রুত কাজে আসতে পারে।অন্য আরেকটি বিকল্প আছে যেটি এর সাথে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে তা হল এর সাথে অন্য কিছু ক্রিয়া যুক্ত করা।উদাহরণস্বরূপ বলা যাক, বাগানে জল দেওয়ার সময় আপনার ছোট্টটি যখন আপনাকে সাহায্য করে সেই সময় তাকে বানান শেখানোর কাজটি আপনি করতে পারেন।
3.পোশাকের আলমারি নিয়ে যুদ্ধ
যেকোনও অশান্তির একটি সুপরিচিত প্রচলিত কারণ হল মতভেদ, আর এটি হয়ে থাকে প্রতিবারই যখন আপনার সন্তান এমন কিছু পরিধান করতে চায় যেটি সেই অনুষ্ঠান অথবা বাইরের আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।এই সংঘর্ষ হ্রাস করার একটি উপায় হল আপনার বাচ্চার জামা–কাপড়গুলিকে বাছাই করা এবং প্রতি কয়েক সপ্তাহে সেগুলিকে পাল্টে দেওয়া।এছাড়াও ঋতুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন পোশাকগুলিকে সরিয়ে ফেলুন, যাতে সেক্ষেত্রে সংঘর্ষের জন্য অন্তত একটি কম কারণ থাকে।আপনার সন্তানের যেকোনও সময় পোশাক পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আপনি সবসময় তার সামনে দুই বা তিনটি ভিন্ন ধরণের পোশাক দিয়ে তার মধ্য থেকে তাকে বেছে নিতে বলুন।এভাবে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারায় যেমন খুশি হবে আবার তেমনই আপনাকেও আর আপনার চুল ছিঁড়তে হবে না!
4.শোবার সময় নিয়ে যুদ্ধ
শোবার সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে আপনার শিশুটি চারিদিকে ছোটাছুটি শুরু করবে এবং অ্যাড্রিনালীনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তুলবে, সুতরাং সে সহজে ঘুমিয়ে পড়ে না।অতএব তাকে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়ার প্রায় 30 মিনিট মত আগে আলো জ্বলা থাকাকালীন প্রশমনকারী কিছু সুরেলা সঙ্গীত চালিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে আলোটি মৃদু করুন।টেলিভিশন বন্ধ করুন এবং আপনার ছোট্টটির পোশাক পালটিয়ে সেটিকে তার ঘুমাতে যাওয়ার পায়জামাতে পরিবর্তন করুন।এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার রাতের পোশাক বেছে নেওয়া এবং সেটি পরা কিম্বা সেটি পরার ব্যাপারে আপনার তাকে সহযোগিতা করার মত ব্যাপারগুলি নিয়ে লড়াই করা এড়িয়ে চলুন।তাদের শোওয়ার ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে কয়েক মিনিট সময় নিন তার সারাদিনের ব্যাপারে তাকে তার কিছু জানানোর আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করতে অথবা সারাটা দিন তার কেমন ছিল ভাল নাকি মন্দ এধরণের দু–একটি সহজ সাধারণ বাক্য বিনিময়ের জন্য।
একটি জেদী এবং একগুঁয়ে বাচ্চা থাকাটা কোনও বাজে কিছু নয়।এমনকি এটি দেখা গেছে যে, যে সকল শিশুদের মধ্যে এই সকল বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে তারা তাদের বিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি কর্ম জীবনেও সাফল্য অর্জন করে।তারা সাধারণত নিজেদের মতই চলে এবং তাদের সমকক্ষদের কম চাপ দেয় এবং এর ফলে তাদের বন্ধুরা হয়ত যে সকল ভুল কাজে করে ফেলে তারা সেগুলো করে না যেটা তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যা তাদের মধ্যে ভাল–মন্দ বিচারের ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।কার্যকর শৃঙ্খলা অনুশীলন করা এবং আপনার সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করা তাদের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সত্ত্বেও দায়িত্ববান প্রাপ্তবয়স্কতে পরিণত হয়ে উঠতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এই তথ্যটি শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা এবং একজন যোগ্য বিশেষজ্ঞ পেশাদারের কাছ থেকে পাওয়া ডাক্তারি পরামর্শের কোনও বিকল্প নয়।