ভারতের এক অন্যতম মহাকাব্য রামায়ণ রচনা করেছিলেন বিখ্যাত ঋষি বাল্মিকী। এই বিখ্যাত হিন্দু ধর্মশাস্ত্রটি কাব্যিক আকারে সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছিল।রামায়ণ হল মন্দের উপর ভালোর এক বিজয় কাহিনী, যেখানে ভগবান রামচন্দ্র তাঁর স্ত্রী সীতা দেবীকে উদ্ধার করার জন্য অসুর রাজ রাবণের সাথে যুদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করেছিলেন।এই হিন্দু মহাকাব্যটিতে আমরা হিন্দু সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শিক্ষা পাই এবং এটি আমাদের আমাদের প্রেম, ভক্তি,বীরত্ব এবং সাহসিকতার প্রকৃত অর্থ বুঝতে সহায়তা করে।
রামায়ণ থেকে উৎকৃষ্ট ছোটগল্প শিশুদের জন্য
আসল মহাকাব্যটি লেখা হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায় এবং আপনার শিশুর পক্ষে সেটি বোঝাটা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।যাইহোক, তবে আপনি যদি চান যে এই কিংবদন্তি মহাকাব্যের মধ্যে আপনার ছোট্টটিকে একটু উঁকিঝুঁকি মারাতে, তাহলে এখানে কয়েকটি ছোটগল্প দেওয়া হল যা রামায়ণ থেকে উৎকৃষ্ট।
1হনুমানকে কেন বজরংবলী বলা হয়?
সদা উৎসাহী হনুমান একদিন সীতা দেবীকে তাঁর কপালে সিঁদুর লাগাতে দেখলেন।তখন হনুমান তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, “সীতা মাতা আপনি কেন আপনার কপালে সিঁদুর লাগাচ্ছেন?” তখন সীতা হনুমানের আগ্রহ দেখে অবাক হয়ে উঠলেন এবং তিনি উত্তর দিলেন যে তিনি তার কপালে সিঁদুর লাগান যাতে রাম দীর্ঘজীবী হন।এই কথা শুনে হনুমান তার নিজের সারা শরীরে সিঁদুর মাখলেন।তা দেখে রাম অত্যন্ত অবাক হলেন এবং হাসতে আরম্ভ করলেন।তখন তিনি হনুমানকে তার নিজের কাছে ডেকে নিলেন এবং বললেন যে, “আমার প্রতি তোমার প্রতি ভক্তি এবং ভালোবাসা দেখে আমি বিস্মিত এবং প্রীত হয়েছি এবং আজ থেকে তোমাকে লোকে বজরংবলী বলেও জানবে।” “বজরংবলী” শব্দে “বজরং” এর অর্থ হলো কমলা।
2.রামের বোন শান্তার গল্প
তাঁর নিজের তিন ভাই ছাড়া রামের আরো একজন বোন ছিলেন।যার কথা খুব বেশি জন জানেন না এবং এটি বিশ্বাস করা হয় যে দশরথের চারজন পুত্রকে শান্তার কথা বলা হয়নি।শান্তা ছিলেন দশরথ এবং কৌশল্যার সবথেকে বড় সন্তান।কৌশল্যার আরেকজন বড় দিদি ছিলেন যার নাম ছিল ভার্শিনি যার নিজস্ব কোনো সন্তান ছিল না।তাই তার নিজের ছোট বোন কৌশল্যার কাছে যখন ভার্শিনি ঘুরতে এসেছিলেন তখন তিনি কৌশল্যার কাছে তার শিশুকে চাইলেন।দশরথ তখন তার নিজের মেয়ে শান্তাকে ভার্শিনির হাতে তুলে দিতে রাজী হলেন।
3. হনুমানের সীতা দেবীর মুক্তার নেকলেস পাওয়ার গল্প
যুদ্ধ জয় করে ফেরার পর রামচন্দ্র প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করলেন যারা যারা তাকে যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন।রামচন্দ্র যখন হনুমানকে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি কি পুরস্কার নেবেন হনুমান সেটি নিতে চাইলেন না।এই কথোপকথন শোনার পর সীতা দেবী হনুমানকে তার মুক্তার নেকলেস উপহার দিলেন।হনুমান এই উপহারটি গ্রহণ করলেন এবং নেকলেসের প্রতিটি মুক্তাকে দাঁত দিয়ে ভাঙতে শুরু করলেন।অবাক হয়ে সীতা হনুমানের এই কাজের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন তার উত্তরে হনুমান বললেন যে তিনি প্রতিটি মুক্ততে রামকে খুঁজছেন কিন্তু কোথাও তাঁকে পাচ্ছেন না। সভাসদরা হনুমানের এই রাম ভক্তি দেখে হাসাহাসি করতে লাগলেন এবং তাদের মধ্যে একজন বললেন যে হনুমান কি তার নিজের দেহেও রামকে দেখতে পান।এর উত্তরে হনুমান তার দুই হাত দিয়ে নিজের বুক চিঁড়ে ফেললেন এবং হৃদপিন্ডের স্থানে রাম এবং সীতার মূর্তি দর্শন করালেন।প্রত্যেকেই তার ভক্তি দেখে মোহিত হয়ে গেলেন এবং সকলেই তাকে অভিনন্দন জানালেন।
4. কাঠবিড়ালির গল্প
রাবণ সীতাকে হরণ করার পর তাকে লঙ্কায় নিয়ে যান।এক বিশাল সমুদ্র পার করে রামচন্দ্রকে সীতাকে ফিরিয়ে আনতে হয়।তার বানর সেনাবাহিনী এবং প্রতিটি প্রাণী রামকে সাহায্য করেছিলেন লঙ্কায় যাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন করার কাজে। রামচন্দ্র তাঁর সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।তিনি লক্ষ্য করেছিলেন একটি ক্ষুদ্র কাঠবেড়ালি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সেতুবন্ধন করার জন্য।কাঠবিড়ালিটি ছোট ছোট পাথরের টুকরো তার মুখে করে নিয়ে আসছিল এবং এবং বড় পাথরের পাশে জড়ো করছিল।কিন্তু তার এই উৎসাহ চাপা পড়ে যায় যখন একটি বাঁদর তাকে বলে যে সে যেন একটু দূরে থাকে না হলে সে চাপা পড়ে যাবে এবং ছোট্ট কাঠবেড়ালিটিকে নিয়ে সে একটু মজাও করল।আশাহত কাঠবেড়ালিটি তখন রামচন্দ্রের কাছে ছুটে গেল এবং তাকে সমস্ত ঘটনাটি জানিয়ে নালিশ করল।রামচন্দ্র প্রত্যেককে এক জায়গায় জড়ো করলেন এবং তিনি দেখালেন কীভাবে ছোট্ট কাঠবেড়ালির আনা পাথরের টুকরোগুলো বড় বড় দুটি পাথরের মাঝের ফাঁক ভরাট করে দিচ্ছে।তিনি এও বললেন যে কোনো ধরনের চেষ্টাই বৃথা হয় না তা যতই বড় বা ছোট হোক না কেন।যেটা প্রয়োজন তা হল একাগ্রতা এবং ভক্তি।কাঠবেড়ালির কঠোর পরিশ্রম দেখে রামচন্দ্র মুগ্ধ হলেন এবং আলতো করে কাঠবেড়ালির পিঠ চাপড়ে দিলেন।আর এর ফলে কাঠবিড়ালির পিঠে তিনটি কালো রং এর দাগ সৃষ্টি হল। এটি মনে করা হয় এই ঘটনার আগে কাঠবেড়ালির পিঠে কোন দাগ ছিল না।এটি শিশুদের জন্য একটি দারুণ নীতি শিক্ষামূলক গল্প, এটি তাদের শেখায় যে যে কোন প্রয়াস তা বড় কিম্বা ছোট যাই হোক না কেন তা বৃথা যায় না।
5.রাবণ কি করে দশটি মাথার অধিকারী হলেন
ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য রাবণ তপস্যা শুরু করেছিলেন, যা বহু বছর ধরে চলেছিল। একদিন ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য রাবণ তার মাথা কেটে আহুতি দিলেন। কিন্তু যখনই তিনি তার মাথা কেটে ফেললেন তখনই সেখানে আরেকটি মাথা গজিয়ে গেল। তিনি পর পর নিজের মাথাগুলি কেটে ফেলতে লাগলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হন।তাঁর তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা রাবণকে দশটি মাথা দান করলেন এবং বর দান করলেন যে তিনি হবেন সবচেয়ে বড় এবং সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাজা। প্রকৃতপক্ষে রাবণের দশটি মাথা আসলে ছয়টি শাস্ত্র এবং চারটি বেদের প্রতীক যেগুলিতে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল।
6. মন্দোদরী এবং সীতার গল্প
এটি সর্ববিদিত একটি ঘটনা যে সীতা হলেন জনক রাজার কন্যা। কিন্তু অদ্ভুত রামায়ণ অনুসারে মন্দোদরী হলেন সীতার মা।বলা হয়ে থাকে রাবণ যে সকল ঋষিদের হত্যা করতেন তাদের রক্ত একটি বড় পাত্রে জমিয়ে রাখতেন।এক অন্যতম প্রখ্যাত ঋষি ঘৃতস্মাদ দূর্বা ঘাস থেকে প্রাপ্ত দুধ একটি পাত্রে জমিয়ে রাখতেন এবং তপস্যা করতেন দেবী লক্ষীকে তার কন্যা হিসেবে পাওয়ার জন্য।রাবণ একদিন চোরের মত ঋষি ঘৃতস্মাদের ঘরে ঢোকেন এবং তার দুধের পাত্রটি থেকে দুধ নিয়ে নিজের জমানো রক্তের পাত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেন।মন্দোদরী এই ঘটনাতে এতটাই মর্মাহত হন যে তিনি সেই পাত্রের সঞ্চিত পদার্থ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।কিন্তু রাবণের পাত্রের পদার্থটি পান করার পর তার মৃত্যু হয়নি বরঞ্চ তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং সীতার জন্ম দান করেন যিনি আবার হলেন দেবী লক্ষীর অপর একটি রূপ। যাই হোক মন্দোদরী এই শিশুকন্যাটিকে কুরুক্ষেত্রে ফেলে রেখে দিয়ে আসেন যেখান থেকে জনক রাজা তাঁকে কুড়িয়ে পান।
7. হনুমানের জন্ম বৃত্তান্ত গল্প
একটি দারুণ মজাদার গল্প যেটি বাচ্চারা শুনতে চায় তা হল হনুমানের জন্ম বৃত্তান্ত। একদিন রাজা দশরথ একটি যোগ্য করছিলেন তার সন্তান হওয়ার জন্য ঠিক একই সময়ে অঞ্জনা শিবের উপাসনা করছিলেন একটি পুত্র সন্তান লাভের আশায়।অগ্নি দেব রাজা দশরথকে প্রসাদ দিয়েছিলেন যা তার তিন মহিষী ভাগ করে গ্রহণ করেছিলেন। এইসময় দৈবক্রমে একটি ঈগল সেই প্রসাদের কিছুটা নিয়ে নেয় এবং সেটিকে ফেলে দেয়। বায়ু দেবতা সেই প্রসাদটিকে অঞ্জনার হাতে এনে দেযন, যেটি অঞ্জনা গ্রহণ করেন।এর কিছুকাল পরেই তিনি হনুমানের জন্ম দেন।
8.রামচন্দ্রের অন্যান্য ভাইদের অবতার রূপ
রাম হলেন বিষ্ণুর অবতার।মনে করা হয় তাঁর ভাইরা যথা লক্ষণ, ভরত এবং শত্রুঘ্ন হলেন যথাক্রমে শেষ নাগ (বৈকুন্ঠে যিনি অসংখ্য মস্তকধারী সর্পের উপর বিষ্ণু শুয়ে থাকেন), শঙ্খ (বিষ্ণুর শখ) এবং সুদর্শন চক্র (ভগবান বিষ্ণুর অস্ত্র) এর অবতার রূপ।
9.সূর্পনখার গল্প
সূর্পনখা হলেন রাবণের বোন এবং মনে করা হয় রাম ও রাবণের মধ্যে যুদ্ধের অন্যতম কারণ হলেন তিনি।সূর্পনখা কীভাবে এই যুদ্ধের জন্য দায়ী তার নানা রকম গল্প আছে।বাল্মিকীর রামায়ণ অনুসারে রামের কাছে গিয়েছিলেন সূর্পনখা তার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে কিন্তু রাম তা প্রত্যাখ্যান করেন।তারপর তিনি লক্ষণের কাছে ওই একই প্রস্তাব রাখেন কিন্তু লক্ষণও তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এর ফলে সূর্পনখা সীতার ক্ষতি করতে চান তখন রামের আদেশ অনুসারে লক্ষণ তার নাক কেটে দেন। ভগ্নহৃদয়ে আশাহত সূর্পনখা তার দাদা রাবণের কাছে যান এবং রাবণ সীতাকে হরণ করেন রাম ও লক্ষণের উপর বদলা নেওয়ার জন্য।
10. রামের মৃত্যুর কাহিনী
রামের যখন মৃত্যুর সময় হল তখন রামচন্দ্র হনুমানকে কৌশলে বোকা বানালেন। কারণ তিনি জানতেন হনুমানকে এড়িয়ে কখনই যমরাজ রামের আত্মাকে নিয়ে যেতে পারবেন না এবং এর ফলে রামের মৃত্যু হবে না।হনুমানকে বিভ্রান্ত করার জন্য রাম তাঁর আংটি–টিকে একটি ছোট গর্তের মধ্যে ফেলে দিলেন এবং হনুমানকে বললেন সেটি নিয়ে আসার জন্য হনুমান নিজের দেহটিকে ছোট করে একটি গুবরে পোকার আকৃতিতে নিয়ে এলেন এবং ওই ফাটল দিয়ে আঙ্গুলের আংটির ডিকে চলতে লাগলেন তিনি নাগ–লোকে পৌঁছে গেলেন।সেখানে গিয়ে নাগ–লোকের রাজা বাসুকিকে রামচন্দ্রের আংটিটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।বাসুকি তখন আংটির পাহাড়ের উপর বসে ছিলেনএবং হনুমানকে জানালেন সমস্ত আংটিগুলিই হল শ্রীরামের।হনুমান এই আংটির স্তুপ দেখে চমকে উঠলেন তাই দেখে বাসুকি জানালেন যে হনুমানের সঙ্গে শ্রী রামচন্দ্র চাতুরী করেছেন।
11.রাবণের আত্মার কাহিনী
মনে করা হয় রাবণ রামের সাথে যুদ্ধ করার আগে তার আত্মাটিকে এক সন্ন্যাসী অধীনে রেখে যান যার নাম ছিল অগ্নি চক্ষু।সন্ন্যাসীটি রাবণের সেটি ফেরত নিতে না আসা পর্যন্ত তাঁর আত্মাটিকে সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাম অবাক হয়ে গেলেন এই দেখে যে তিনি যত ধরনের বান ছুঁড়ুন না কেন কোনটাই রাবণের কোন ক্ষতি করতে পারছে না।রাবণের আত্মার এই গোপন সংবাদটি রামের এক সহযোগীর কাছে ছিল।তিনি নিজেকে রাবণের ছদ্মবেশ ধারণ করিয়ে সেই ওগ্নি চক্ষু সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে তার আত্মা ফেরত চাইলেন। যেই মুহূর্তে আত্মাটি মুক্ত হয়ে গেল রাম তখনই রাবণকে বধ করলেন।
12.লক্ষণের ঘুমের কাহিনী
লক্ষণ, রাম ও সীতার বনবাস কালে তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেই জন্য তিনি তার ঘুম পরিত্যাগ করেছিলেন।তার ঘুম পরিত্যাগের জন্য তিনি ঘুমের দেবী নিদ্রার কাছে যান এবং তাকে অনুরোধ করেন তিনি যেন 14 বছরের জন্য লক্ষণের ঘুম ফিরিয়ে নেন।তখন নিদ্রা দেবী তাকে জানান এটা সম্ভব যদি কেউ লক্ষণের হয়ে 14 বছরের জন্য ঘুমিয়ে নেন।লক্ষণ তখন তার স্ত্রী উর্মিলার কাছে যান এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি লক্ষণের ঘুমের অংশের ভাগ নিয়ে ঘুমাতে রাজি কিনা। এতে লক্ষণের স্ত্রীর উর্মিলা সম্মত হন।উর্মিলা 14 বছর ঘুমিয়ে থাকেন যা লক্ষণকে তার কাজে সহায়তা করে।
13.রামের দ্বারা হনুমানের মৃত্যু পরোয়ানার গল্পটি
একবার নারদের প্ররোচনায় হনুমান নিজের অজান্তে বিশ্বামিত্র মুনিকে অসম্মান করে ফেলেছিলেন।এটি তখন ঘটেছিল যখন রামচন্দ্রের সভায় হনুমান সমস্ত ব্রাহ্মণ ঋষিদের সম্ভাষণ করেছিলেন কিন্তু তিনি বিশ্বামিত্রকে বাদ দিয়েছিলেন। কারণ বিশ্বামিত্র জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ ছিলেন না।এতে বিশ্বামিত্র অসম্মানিত হন এবং রামকে আদেশ দেন তিনি যেন হনুমানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। হনুমানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয় এবং তা কার্যকর করাও হয়।কিন্তু কোনও বান এমনকি ব্রহ্মাস্ত্রও হনুমানের কোনও ক্ষতি করতে পারেনি।এটা সম্ভব হয়েছিল কারণ সারাক্ষণ ধরে হনুমান রামের নাম করে চলেছিলেন।
14.কুম্ভকর্ণের নিদ্রার গল্প
একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, রাবণ, বিভীষণ এবং কুম্ভকর্ণ এই তিন ভাইয়ের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের বর দান করতে চেয়েছিল।কুম্ভকর্ণের বুদ্ধি এবং শক্তি সম্বন্ধে দেবরাজ ইন্দ্র অবগত ছিলেন তাই তিনি দেবী সরস্বতীকে অনুরোধ করেন বর চাওয়ার সময় দেবী যেন কুম্ভকর্ণের জিহ্বায় অবস্থান করেন।তার ফলে কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মার কাছে সর্বদা ঘুমাবার বর চান। রাবণ তাঁর ভাইয়ের এই দশা দেখতে চান নি তাই তিনি তার ভাইকে দেওয়া বর ফিরিয়ে নিতে বলেন।কিন্তু ব্রহ্মার বর দান পুরোপুরি ফেরাতে নারাজ হন।তিনি তাকে 6 মাস ঘুমের এবং ছয় মাস জেগে থাকার বর প্রদান করেন।রামের সঙ্গে যুদ্ধের সময় কুম্ভকর্ণ ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তাকে জাগাবার নানা প্রচেষ্টা করা হয়।
15. রামচন্দ্রের যুদ্ধ জয়ের গল্প
রামের সাথে যুদ্ধের শেষের দিকে রাবণ তার জয় নিশ্চিত করার জন্য একটি যজ্ঞের আয়োজন করেন।এই যজ্ঞের একটি শর্ত ছিল যে যতক্ষণ না যজ্ঞ শেষ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত রাবণ ওই যজ্ঞস্থল ছেড়ে যেতে পারবেন না।যখন রামচন্দ্র এই যজ্ঞের কথা জানতে পারলেন তখন তিনি অঙ্গদকে একদল বানর সেনার সাথে যজ্ঞস্থলে পাঠালেন যাতে রাবণের যজ্ঞ ভণ্ডুল হয়ে যায়।অঙ্গদ তার বাহিনী নিয়ে অনেক উৎপাত করেও রাবণকে তার যজ্ঞস্থল থেকে নাড়াতে পারলেন না।অবশেষে অঙ্গদ রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীকে তার কেশ আকর্ষণ করে যজ্ঞস্থলে নিয়ে এলেন।মন্দোদরী কাতর স্বরে রাবণের সাহায্য প্রার্থনা করলেন কিন্তু রাবণ তাতেও দৃকপাত করলেন না।কিন্তু মন্দোদরী যখন রাবণকে সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম এর উদাহরণ দিয়ে ভৎর্সনা করলেন তখনই রাবণ যজ্ঞ থেকে উঠলেন আর পরাজিত ও নিহত হলেন।
রামায়ণ থেকে নেওয়া এই ছোটগল্পগুলিতে নীতি শিক্ষা এবং মূল্যবোধ রয়েছে।এই গল্পগুলি আপনার শিশুকে শুধু আনন্দ দেবে না এই ছোট ছোট গল্প গুলির সাথে রাম রাবণের যুদ্ধের ঘটনাটিও তার সামনে আসবে।ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে এই ধরনের দারুণ কৌতুহলদ্দীপক গল্প বিদ্যমান।আপনি তাদেরকে শ্রীকৃষ্ণের গল্পও বলতে পারেন যেগুলিতে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীগুলির ধারণা পাওয়া যায়।