একজন পিতা–মাতার কাছে অন্যতম একটি ভীতিকর মুহূর্ত হল যখন আপনার টলমল করে হেঁটে চলে বেড়ানো ছোট্ট সোনাটির বুকে যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি হতে শুরু করে। ছোট্ট সোনাটি এতটাই ছোট্ট যে,এমনকি সে তার কষ্টের অনুভূতিটুকুও প্রকাশ করতে সমর্থ হবে না এবং একজন মা–বাবা হিসেবে আপনার কাছে এটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক একটি অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারে।তবে,যখন আপনার টলটলায়মান শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে আপনার কর্তব্য হল সেই সংক্রমণ অথবা যে কারণেই সে কোনও প্রকার অস্বস্তির শিকার হোক না কেন তার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করা এবং তাদের যথাযথ যত্ন নেওয়া নিশ্চিত করা।
সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট বাচ্চাদের সর্দি এবং কাশির জন্য ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকারসমূহ
এমন অনেক ভারতীয় প্রতিকার রয়েছে যেগুলি শিশুর সর্দি–কাশির যত্ন নেওয়া নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করা যেতে পারে।এখানে বেশ কিছু সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনার শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে এবং তাকে অনেকটা স্বস্তি দিতে সাহায্য করতে পারেন।
1. জোয়ানের পুঁটলি এবং রসুন
জোয়ানের পাশাপাশি রসুন–ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত এগুলির শক্তিশালী অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি–ভাইরাল বৈশিষ্ট্যের জন্য।যখন দুটিকে একসাথে একত্রিত করা হয়,সেগুলি অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে এবং আপনার ছোট্ট সোনার সর্দি–কাশির উপশমে সাহায্য করতে পারে।এগুলিকে একসাথে মিশ্রিত করা খুব সহজ এবং যখন কোনও শিশুর সর্দি–কাশিতে এটি প্রয়োগ করা হয়,সাফল্যের সাথে কাজ করে।এই পুঁটলিটি প্রস্তুত করতে,আপনার প্রয়োজন হবে কিছু জোয়ান দানা,রসুনের কোয়া এবং এক টুকরো মসলিন কাপড়।
একটি ছোট্ট চাটু বা কড়াইয়ের মধ্যে বড় 1 চামচ জোয়ানের সাথে 2 কোয়া রসুন নিয়ে শুকনো খোলায় ভেজে নিন।এরপর পুঁটলিটি তৈরী করার পূর্বে সেগুলিকে ঠাণ্ডা হতে দিন।এটি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে,ব্যবহারের জন্য পুঁটলিটির বাঁধন বেশ শক্ত হওয়া প্রয়োজন।
আপনার পুঁটলিটি প্রস্তুত করা হয়ে গেলে,আপনার বাচ্চার ঘুমের জায়গায় এবং তার মাথার উপরে সেটিকে আপনি স্থাপন করতে পারেন।এই পুঁটলি থেকে নির্গত তাপ,যাতে রসুন এবং জোয়ানের ধোঁয়া থাকে,তা যেকোনও অবরুদ্ধ নাসাপথকে মুক্ত করতে এবং বুকে সর্দি বসে যাওয়া থেকে ব্যাপক স্বস্তি প্রদানে সাহায্য করবে।
2. তাল মিছরি
2 বছর বয়সীদের কাশির জন্য অন্য আরেকটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার হল তাল মিছরি।বহু দোকানেই তাল মিছরি সহজলভ্য যা সহজেই ক্রয় করা যেতে পারে।এই একই কারণের জন্য অন্য যে উপকরণগুলি আপনার প্রয়োজন হবে তার মধ্যে রয়েছে তুলসী এবং আদা।
কিছুটা জল নিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং তার মধ্যে তাল মিছরি যোগ করুন এবং অতিরিক্ত হিসেবে তুলসীর সংযোগ ঘটান।আপনার সন্তানকে খাওয়াবার জন্য আপনি আবার এই একই জিনিসগুলি আদা চা–এর সাথেও যোগ করতে পারেন।
আপনার সন্তানকে এটি দেবার অন্য আরেকটি উপায় হল সম পরিমাণে গোল মরিচ,আমণ্ড বাদাম এবং তাল মিছরি নিয়ে সেগুলিকে একসাথে ভাল ভাবে মিশ্রিত করে নিন।এরপর সেই মিশ্রণটিকে সামান্য গরম করে নিয়ে সেটিকে সারা শীতকাল জুড়ে আপনার টলমল করে হেঁটে চলা শিশুটিকে খাওয়াতে পারেন।এটিকে আবার দুধের সাথেও মিশিয়ে নিয়ে আপনার ছোট্ট সোনাটিকে খাওয়ানো যেতে পারে।
3. গুড়ের সাথে জোয়ান–জল
এই সহজ রেসিপিটিতে আপনার যা কিছু করা প্রয়োজন তা হল এক কাপ জল নিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে জোয়ান এবং প্রায় এক চা–চামচ গুড় যোগ করে সেটিকে ফুটিয়ে নিন।এরপর ছেঁকে নিয়ে সেই জলটিকে আপনার টডলার পদাধিকারীটিকে খাওয়ান।তবে এক চামচই খাওয়ানোর সুপারিশ করা হয়।
4. সৈন্ধব লবণ এবং উষ্ণ সরষের তেলের মালিশ
কিছুটা সরষের তেলকে সামান্য গরম করে নিয়ে তার সাথে কিছুটা সৈন্ধব লবণ যোগ করুন।এক্ষেত্রে এক চা–চামচ লবণ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়।শিশুর দেহে প্রয়োগের জন্য মিশ্রণটি যথেষ্ট গরম হয়ে গেলে সেটিকে কিছুটা ঠাণ্ডা করে নিয়ে বাচ্চার সহনশীল তাপমাত্রায় আনার পর আপনি ধীরে ধীরে সেটিকে আপনার বাচ্চার বুকে মালিশ করে দিতে পারেন।
এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে,এই মালিশ করার পর আপনি আপনার সন্তানকে একটি সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবেন যাতে এটি প্রয়োজনীয় উষ্ণতা বজায় রাখে শিশুর স্বস্তিবোধ করার জন্য।
5. সাদা পিঁয়াজের রস
উত্তর ভারতে সর্দি প্রতিকারের অন্য আরেকটি অত্যন্ত জনপ্রিয় রেসিপি হল সাদা পিঁয়াজ।এটি সাধারণত এপ্রিল এবং মে মাসে সহজলভ্য।আপনার টলটলায়নকারীকে সাহায্যের জন্য,আপনি পিঁয়াজের রসকে বের করে নিয়ে সেটিকে দিনে এক চা–চামচ করে আপনার টডলার পদাধিকারীটিকে খাওয়াতে পারেন।এটি তার নাসাপথকে পরিষ্কার করবে এবং যেকোনও সর্দি কাশিতে তাদেরকে উপশম দেবে।
6. মধুর সাথে লেবুর রসের মিশ্রণ
যদিও বাচ্চারা সাধারণত ওষধি পানীয় পছন্দ করে না, তবে মধুযুক্ত সুস্বাদু এই সংমিশ্রণটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করবে এমন কোনও উপায় নেই।একটি কাপের মধ্যে আপনি মধুর সাথে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। তারপরে, এতে ঈষদুষ্ণ গরম জল যোগ করুন এবং সেটিকে আপনার শিশুকে দিন যাতে সর্দি–কাশির উপশমের জন্য তারা একটি সুস্বাদু প্রতিকার পায়।
7. লবঙ্গ এবং মধুর মিশ্রণ
শিশুদের প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মায় খাওয়ানোর সেরা জিনিসগুলির মধ্যে একটি হল লবঙ্গ এবং মধুর মিশ্রণ।এটি একটি দুর্দান্ত পাচন এবং শিশুদের শ্লেষ্মায় অত্যন্ত উপকারীও বটে,যা নিশ্চিত করে যে দিনের পরবর্তী সময়ে আপনার বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে এমন কোনও কাশি আর তার মধ্যে থাকবে না।
খাওয়াবার জন্য,কেবল 5 টি লবঙ্গ নিয়ে সেগুলিকে শুকনো খোলায় ভেজে নিয়ে ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত ভাল ভাবে চূর্ন করে একটি মিহি গুঁড়ো বানিয়ে নিন।এবার এর সাথে কিছুটা মধু যোগ করে নিয়ে বাচ্চাকে ঘুমানোর আগে দিন।
8. ঘি এবং গোল মরিচ
সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চাদের এবং একদম ছোট শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে সর্দি–কাশি এবং বুকে সর্দি বসে যাওয়ার মত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়ককারী এক অন্যতম সেরা প্রতিকার হল বড় এক চামচ ঘি এবং এক চিমটে বিশুদ্ধ গোল মরিচ গুঁড়ো।এই দুটিকে মিশ্রিত করে সমগ্র শীত কাল জুড়ে বাচ্চাদের খাওয়ান।এর স্বাদে,নিঃসন্দেহে প্রত্যাশার অতিরিক্ত কিছুই পাওয়া যাবে।
9. কেশর দুধ
শিশুদের সর্দি–কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি চমৎকার ঘরোয়া প্রতিকার হল কেশর দুধ।এক কাপ ফুটানো দুধ নিয়ে সেটিকে ঠাণ্ডা করার আগে তার সাথে কেশরের কয়েকটি সুতা যোগ করুন।কোনও রকম সর্দি–কাশি না হওয়াকে নিশ্চিত করতে, কেশরের সুতাগুলিকে ছেঁকে নিয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর আগে খাওয়ান।
10. লেবু,মধু এবং দা্রুচিনির পাচন
একটি কাপের মধ্যে কিছুটা লেবুর রসের সাথে মধু এবং সামান্য দারুচিনি গুঁড়ো নিয়ে ভাল ভাবে মিশ্রিত করুন এবং সেটিকে সামান্য গরম করে নিন।এরপর সেই মিশ্রণটিকে আপনার সন্তানকে খাওয়ান এবং দেখুন এটি কীভাবে যাদুমন্ত্রের মত তাদের সাইনাসকে পরিষ্কার করে এবং সর্দি–কাশির ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
11. লবণ এবং আদা
টডলার পদাধিকারীদের সর্দি–কাশির জন্য অপর একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার হল লবণ এবং আদার মিশ্রণ।এটি প্রস্তুত করতে,কয়েক কুঁচি আদাকে কেটে নিন অথবা সেটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন,যা আবার জুলিয়েনস নামেও অভিহিত।এরপর এর উপর কিছুটা লবণ যোগ করে আপনার ছোট্ট সোনাকে প্রদান করুন।এই মিশ্রণটি শিশুকে সর্দি,কাশি এবং গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবে।
12. মরিচ এবং গুড়ের মিশ্রণ
গুড় এবং মরিচের মিশ্রণ হল একটি দুর্দান্ত পাচন এবং প্রতিষেধক।বড় চামচের মোটামুটি 1 ½ চামচ মত গুড়ের দলা নিয়ে সেটিকে চূর্ণ করে নিন অথবা সেটির গুঁড়ো নিন এবং সেটিকে 3-4 টি মরিচের গুঁড়োর সাথে মিশ্রিত করুন।এবার এই মিশ্রণের গুঁড়োটিকে একটি বায়ুনিরুদ্ধ কৌটার মধ্যে মজুত করে রাখুন।এবার যখনই আপনার বাচ্চা সর্দি কাশিতে ভুগবে ও কষ্ট পাবে তখন তাকে সেখান থেকে এক চিমটে নিয়ে দিন।
আপনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার শরীরের কোনো ক্ষতি করবে না তা নিশ্চিত করার জন্য অনেকগুলি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে।তাদের ঠাণ্ডা লাগলে এমনকি তাদের মধ্যে সামান্যতম সর্দি কাশির লক্ষণ দেখা গেলেই তাদের এই মিশ্রণগুলি খাওয়ানো যেতে পারে এবং বলা চলে প্রায় কোনওরকম সময় ব্যতীতই সেই সকল উপসর্গগুলি উধাও হয়ে যাবে।তবে প্রতিবারের মতই একথাও বলা হয়ে থাকে যে এগুলিই সর্বশেষ প্রতিকার নয়,সাময়িক স্বস্তিপ্রদানের কিছু সহায়ক মাত্র।তাই গুরুতর ক্ষেত্রে এবং ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকের পরামর্শই বাঞ্ছনীয়।