In this Article
আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন আপনার দেহে হরমোন এবং আবেগপ্রবণতা উভয় ক্ষেত্রেই প্রচুর রূপান্তর সংঘটিত হয়ে থাকে।প্রায় সকল গর্ভবতী মহিলার এক চতুর্থাংশের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ যে পরিবর্তনটি হয়ে থাকে তা হল তাদের দেহে চুলকানির অনুভূতি।আপনার প্রসারিত ত্বক,ত্বকের বর্ধিত রক্ত সরবরাহ এবং হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন আপনার আঁচড়ানোর প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলাকে প্ররোচিত করে।এই চুলকানি আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে আপনার জঠর এবং স্তনের উপর।
এটি কি স্বাভাবিক? হ্যাঁ
এ ব্যাপারে আমার কি চিন্তার প্রয়োজন? না
হালকা ধরনের চুলকানি হওয়া স্বাভাবিক এবং এমনকি এটি প্রত্যাশিত।তবে আপনি যদি তীব্র চুলকানির কবলে পড়েন,সেক্ষেত্রে এর কোনও অন্তর্নিহিত সংক্রমণ অথবা দেহের একটি অকার্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকার ফলে হয়ে থাকতে পারে।এই ক্ষেত্রে,অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।নিম্নে নিবন্ধটিতে ত্বকের এমন কিছু অবস্থার রূপরেখা চিত্রিত হেয়েছে যেগুলি মারাত্মক চুলকানির কারণ হতে পারে। আপনার মধ্যে যদি আঁচড়ে বা চুলকে ফেলার তীব্র অনুভূতি উপলব্ধ হয়,তবে আপনি হয়ত নীচের শর্তগুলির মধ্যে যেকোনও একটির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় চুলকানির কারণগুলি
১ . প্রুরিটিক আর্টিকেরিয়াল পাপুলস এবং প্ল্যাকস অফ প্রেগনেন্সি(PUPPP)
PUPPP হল এমন এক ধরনের চুলকানিযুক্ত র্যাশ যেটি আপনার গর্ভাবস্থার শেষ দিকের মাসগুলিতে আপনার পেটের উপর দেখা যায়।ডাক্তাররা বিশ্বাস করেন যে প্রসারিত ত্বক এই র্যাশটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে কিন্তু এর আসল কারণটি অজানাই।
এতে আমার বচ্চার কি ঝুঁকি আছে?
নেটওয়েলনেস সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে প্রায় 150 জন গর্ভবতী মহিলার মধ্যে 1 জনের ক্ষেত্রে এই PUPPP জাতীয় র্যাশ হয়।যদিও তীব্র চুলকানি এবং র্যাশের মত অবস্থাটির জন্য মায়েদের ক্ষেত্রে এই PUPPP ভীষণই অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে,তবে এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটির মধ্যেই বাচ্চার কোনও রকম ঝুঁকি থাকে না।
PUPPP র্যাশগুলি খুব সম্ভবত প্রথম গর্ভাবস্থায় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে হয়ে থাকে। PUPPP র্যাশগুলি মারাত্মক চুলকানির সৃষ্টি করে যা অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে।এগুলি আপনার উরু এবং এমনকি স্তনেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
সুতরাং,PUPPP র্যাশের নিরাময়টি কি?
আপনার সন্তান প্রসব করার পর মোটামুটি 1-2 সপ্তাহের মধ্যেই PUPPP র্যাশগুলি সাধারণত উধাও হয়ে যায়।আপনি এগুলির উপর প্রয়োগ করতে পারেন ময়েশ্চেরাইজার,টপিকাল স্টেরয়েড,অ্যান্টিহিস্টামিনগুলি এবং এছাড়াও আবার আপনি বেকিং সোডা অথবা ওটমিলের সহিত চুলকানি উপশমকারী আরামদায়ক স্নানগুলিও সেরে নিতে পারেন।এগুলি ছাড়াও আরও বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যেগুলি আপনি ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারেন অসহ্য চুলকানি থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য আপনার পীড়িত ত্বককে প্রশমিত করার ক্ষেত্রে।
২. গর্ভাবস্থার প্রচন্ড চুলকানি বা প্রুরিগো
এটি গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে একটি অ-নির্দিষ্ট চুলকানির র্যাশ।এটিকে আবার গর্ভাবস্থার প্রাথমিক প্রুরিগোর সূত্রপাত,গর্ভাবস্থার জনপ্রিয় ডার্মাটাইটিস চুলকানি এবং গর্ভকালীন প্রুরিগো হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি প্রতি 300 টি গর্ভাবস্থার মধ্যে 1 টিতে হয়ে থাকে এবং সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় প্রদর্শিত হয়।বর্তমানে এই র্যাশগুলির জন্য দায়ী প্রভাবকটি এখনও অজ্ঞাত।গর্ভাবস্থার প্রুরিগো রোগটি ডার্মাটাইটিসের বিভিন্ন চিকিৎসা পরীক্ষা সঞ্চালনার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।
সুতরাং,কীভাবে গর্ভাবস্থার প্রুরিগো নিরাময় হয়?
যদিও এই অবস্থাটির জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই,আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করতে পারেন এবং বেনজয়েল পারক্সাইড, ওরাল অ্যান্টিহিস্টামাইনস এবং টপিকাল স্টেরয়েড মলম এবং ক্রীমের মতো ওষুধগুলি উপসর্গগুলির কমাবার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।এছাড়াও আবার আপনি চুলকানির অঞ্চলটিকে প্রশমিত করতে ঘরে প্রস্তুত বেকিং সোডার পেস্ট,তুলসী পাতার পেস্ট অথবা লেবুর জল ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
গর্ভাবস্থার প্রুরিগো অবস্থাটি সাধারণত মিলিয়ে যায় আপনার সন্তান প্রসবের পরে,যদিও র্যাশগুলি বিদায় হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে বেশ কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাসও লাগতে পারে।প্রতিটি গর্ভাবস্থার সাথে এই র্যাশগুলির পুনরাবৃত্তির তারতম্য থাকে,তবে স্বস্তির বিষয় হল,এক্ষেত্রে আপনার বাচ্চা কোনও ঝুঁকির মধ্যে থাকে না।
৩. ইমপেটিগো জেস্টাসিওনিস বা গর্ভাবস্থায় ইমপেটিগো
এটি গর্ভাবস্থার সহিত সংযুক্ত একটি বিরল স্বয়ংক্রিয় অনাক্রম্যতাজনিত বা অটোইমিউন ত্বকের রোগ,ইমপেটিগো জেস্টাসিওনিসকে চিহ্নিত করা যায় চুলকানিযুক্ত র্যাশের মাধ্যমে যা পরিশেষে ছোট ছোট ফোসকায় রূপান্তরিত হয়।এই শর্তটি আপনার গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা দেয়।আগে এই শর্তটি হারপিস জেস্টাসিওনিস বা গর্ভাবস্থাকালীন হারপিস নামে পরিচিত ছিল।তবে এর সাথে হারপিস ভাইরাসের কোনও সংযোগ নেই।
স্বয়ংক্রিয় অনাক্রম্যতাজনিত রোগগুলিতে,কোনও ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি তাদের নিজস্ব কলার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া করে।এই শর্তটি হল একটি অটোইমিউন ফোসকাজনিত অসুস্থতা এবং ইমিউনোগ্লোবউলিন টাইপ G অটো অ্যান্টিবডিগুলি আবার PG ফ্যাক্টর নামেও পরিচিত,যা পেমফিগয়েড জেস্টেশন হওয়ার জন্য দায়ী।
অ্যান্টিবডিগুলি ত্বকের এপিডার্মিস স্তরে BPAG2 প্রোটিনকে সংশ্লেষ করে প্রদাহ সৃষ্টি করে স্তরটিকে পৃথক করে।বিচ্ছিন্নতার কারণে সৃষ্টি হওয়া স্থানটি তরল দ্বারা পূর্ণ হয়ে ওঠে,তার ফলে ত্বকের বাইরের পৃষ্ঠে ফোসকাগুলি গড়ে ওঠে।
পেমফিগয়েড জেস্টেশনের লক্ষণগুলি কি?
পেমফিগয়েড জেস্টেশনের প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে অন্তর্গত হল চুলকানি,নাভির চারপাশে লালা ফুসকুড়ি।অবশেষে ধীরে ধীরে র্যাশগুলি উরু,স্তন এবং তলপেট সহ শরীরের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।র্যাশগুলি দেখা দেওয়ার 2-4 সপ্তাহ পরে সেগুলি তরল পূর্ণ বড় টানটান ফোসকা রূপে গড়ে ওঠে।
বেশ,এর কোনও নিরময় হয় কি?
পেমফিগয়েড জেস্টেশনের ক্ষেত্রে একটি স্কিন বায়োপ্সি করানোর প্রয়োজন হয় যা ত্বকের এপিডার্মিস স্তরের ফোসকাগুলিকে নির্দেশ করে।সাধারণত বাচ্চার জন্মদান করার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই অবস্থাটি কেটে যায়।তবে কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি কয়েক মাস ধরে কার্যকর রয়ে যায় এমনকি কয়েক বছর ধরেও হয়ত থাকতে পারে এবং ঋতুচক্রের সূচনা অবস্থাটিকে হয়ত আরও প্রসারিত করে তুলতে পারে।
উপরের শর্তটিতে মূলত ফোঁড়া এবং সংক্রমণের মত ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গের জন্য চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।এর অস্বস্তি থেকে আপনাকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু অথবা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারা সাধারণত টপিকালকর্টিকোস্টেরয়েডস, ওরালকর্টিকোস্টেরয়েডসএবংওরালঅ্যান্টিহিস্টামাইনগুলি আপনার জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে।র্যাশগুলিতে চুলকানি এবং আঁচড়ে ফেলার প্রবণতা থেকে উপশম পেতে অ্যালোভেরা জেল এবং ওটমিলের দ্বারা স্নানের মত প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকারগুলিকেও আবার আপনি প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে পারেন।
৪. ইমপেটিগো হারপেটিফর্ম
ইমপেটিগো হারপেটিফর্ম হল একটি বিরল অবস্থা।এটি এক ধরনের সোরিয়াসিস যেটি হয়ে থাকে যখন একজন মহিলা গর্ভবতী হয়ে থাকেন।এই সোরিয়াসিসটি সাধারণত তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় বিকাশলাভ করে তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশ তাড়াতাড়িও শুরু হতে পারে।এই শর্তটিতে ভুগে থাকা মহিলাদের মধ্যে ছোট ছোট পুঁজ পূর্ণ ফুসকুড়ি হয় যা শরীরের একটা বৃহৎ অংশকে লালাচে করে রাখে।স্বাভাবিকভাবেই ফুসকুড়িগুলি বড় হয়ে,সাদা পুঁজ পূর্ণ ফোঁড়াতে রূপান্তরিত হয়।
দেহের কোন অঞ্চলগুলি ইমপেটিগো হারপেটিফর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এর সাধারন লক্ষণগুলিই বা কি?
প্রভাবিত এলাকাগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হল উরু,কুঁচকি,নাভি,স্তন এবং বগল।ইমপেটিগো হারপেটিফর্মের সাধারণ লক্ষণগুলি হল জ্বর,বমি বমি ভাব,ঠাণ্ডা লাগা এবং ডায়রিয়া।
ইমপেটিগো হারপেটিফর্মের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়?
ইমপেটিগো হারপেটিফর্ম হল একটি সামান্য জটিল অবস্থা। এই ক্ষেত্রে মা এবং অনাগত শিশুকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় কারণ এক্ষেত্রে প্রসবের সময় কিছুটা জটিলতা থাকতে পারে।এখানে চুলকানি থেকে মাকে আরাম দেওয়ার জন্য, সিস্টেমিক কর্টিকোস্টেরয়েডগুলি ব্যবহার করা হয়। প্রসবের পরে ফুসকুড়িগুলি নিজে থেকেই উধাও হয়ে যায় তবে পরের বার আপনি গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলি আবার দেখা দিতে পারার সম্ভাবনা থেকে যায়।চুলকানি থেকে সাময়িক স্বস্তি আনতে মহিলারা সাধারণত ঠাণ্ডা কমপ্রেস ও শীতল ঝরনা বা ওটমিল ব্যবহার করে স্নান করার মত কৌশলগুলি ব্যবহারের প্রয়াস করেন।এগুলি সবই হল প্রাকৃতিক প্রতিকার যা দুর্বল ত্বককে প্রশমিত করে প্রশান্তি দেয় এবং চুলকানো এবং আঁচডড়ানো থেকে মুক্তি দেয়।
৫. ইন্ট্রাহেপ্যাটিক কোলেস্ট্যাসিস অফ প্রেগনেন্সি (ICP)
ICP হল একটি গুরুতর অবস্থা।ICP অথবা অবস্টেট্রিক কোলেস্ট্যাসিস (OC) হল লিভারের একটি ব্যাধি যেটি গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে।এটি মায়ের জন্য ক্ষতিকারক নয় তবে অনাগত শিশুটিকে বহু গুরুতর জটিলতার ঝুঁকির মধ্যে রাখে।এক্ষেত্রে শিশুর অকাল জন্মের অথবা এমনকি মৃত সন্তানের জন্ম হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভাবস্থার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক কোলেস্ট্যাসিসে লিভারের লবণ থেকে উদ্ভুত পিত্ত খাদ্যকে হজম করার জন্য প্রবাহিত হওয়ার পরিবর্তে আপনার দেহের অভ্যন্তরে জমে উঠতে থাকে। OC বংশানুগতিক বলে বিশ্বাস করা হয় তবে এটি বংশগত ছাড়াও কারুর মধ্যে প্রথম বার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ ভালই থাকে।ভারতীয় এবং পাকিস্তানী মহিলাদের মধ্যে OC হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল মহিলাদের মধ্যে OC রয়েছে তাদের মধ্যে অকাল শিশু অথবা মৃত শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে।এই কারণে যে সকল মহিলার মধ্যে OC রোগটি নির্ণীত হয়ে থাকে তাদের 37 সপ্তাহের পরে অস্ত্রোপচার বিভাগটিকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ICP এর লক্ষণগুলি কি?
ICP এর প্রভাবশালী লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্গত হল পায়ের পাতার উপর র্যাশ-হীন চুলকানি।এই লক্ষণটি প্রকাশ পায় গর্ভাবস্থার 28 তম সপ্তাহের আশেপাশে।অন্য উপসর্গগুলির মধ্যে উল্লেখ্য জন্ডিস,গাঢ় প্রস্রাব এবং ধীর অন্ত্রের গতিবিধি।
এর কোনও প্রতিকার আছে?
দুঃখের সাথে না।OC এর কোনও নিরাময় নেই তবে সন্তান প্রসবের পরে অবস্থাটির সমাধান হয়।যত্নের সহিত আপনার চিকিৎসা এবং পারিবারিক ইতিহাস অধ্যয়ন করার পাশাপাশি আপনার লিভারের কার্যকারিতা বা LFT পরীক্ষা করানোর পরেই আপনার রোগ নির্ণয় করা হয়।
এই স্পষ্ট লক্ষণগুলিকে বাধা দান করতে ক্যালামাইন লোশনের মত অয়েনমেণ্ট বা ক্রীমগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।কিছু ডাক্তার আবার ওষুধও লিখে দেন যা কিছুটা হলেও পিত্তের লবণকে হ্রাস করে। যদি আপনারও ICP হয়েছে বলে সন্দেহ হয়ে থাকে তবে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
যদিও উপরিল্লিখিত ক্ষেত্রগুলি বেশ কিছু জটিল পরিস্থিতি,আপনিও সেগুলির মধ্যে কোনওটিকে হয়ত নিজের মধ্যে বিকশিত করে তুলছেন এধরনের চিন্তা করে নিজের মধ্যে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করবেন না।চুলকানি নিম্নলিখিত সাধারণ কারণগুলির জন্যও হয়ে থাকতে পারে,যেগুলি নিরাময়যোগ্য এবং ভীতিকারক নয়।
- একজিমার কারণেও আপনার সারা দেহ চুলকাতে পারে।কনুই,হাঁটুর মত আপনার ত্বকের ভাঁজ হওয়া অঞ্চলগুলিতে আপনার চুলকানির আঁচড় থাকতে পারে।একজিমাকে প্রশমিত করার জন্য আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর নির্ধারিত অয়েনমেন্টগুলি ব্যবহার করতে পারেন।আপনার গর্ভাবস্থায় চলাকালীন ওষুধের সাথে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা এড়াতে যেকোনও ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করে নেবেন।
- মাইট(অতি ক্ষুদ্র পরজীবী কীটবিশেষ)গুলির দ্বারা স্ক্যাবিস হয়ে থাকে,গর্ভাবস্থায় চুলকানির জন্য সেটিও একটি কারণ।ডাক্তারের নির্ধারিত ওষুধের দ্বারা এগুলি নিরাময়যোগ্য।
- যদি আপনার যোনিতে চুলকানি অনুভূত হয়,হতে পারে আপনার মধ্যে হয়ত থ্রাশ হিসেবে পরিচিত একটি ফাংগাল সংক্রমণ বাসা বেঁধেছে।আপনার ডাক্তারবাবু অথবা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থ্রাশের নিরাময়ের জন্য আপনাকে সঠিক চিকিৎসার দিকে পরিচালিত করবেন।
আপনার দেহের চুলকানি নিরাময়ের জন্য আপনি আবার ঘরোয়া প্রতিকারগুলির দিকেও যেতে পারেন।এগুলি কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই 100% প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য ও সামর্থযোগ্য।গর্ভাবস্থায় চুলকানির তীব্র খোঁচাগুলি থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি এগুলি ব্যবহারের প্রয়াস করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় চুলকানির চিকৎসার জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি
১. ওটমিলের স্নান
ওটমিলের স্নান করা হল চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি বিশ্বাসযোগ্য অনুশীলন।কেবল এক বাটি ওটমিল নিয়ে সেটিকে হালকা গরম জলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটিকে দেহের যেকোনও চুলকানি অংশের অস্বস্তি ও জ্বলন প্রশমিত করতে ব্যবহার করুন।
২. একটি ঠাণ্ডা কমপ্রেসের ব্যবহার
চুলকানিকে দূর করতে আপনি আবার একটি ঠাণ্ডা বরফের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।যদি আপনার শরীরের কোনও অংশে প্রদাহ এবং জ্বলন থেকে থাকে বিশেষ করে সেই সকল জায়গাগুলিকে প্রশমিত করার জন্য ঠাণ্ডা কমপ্রেস ভীষণ ভাবে সহায়ক।এর ঠাণ্ডা অনুভবটি আপনাকে তৎক্ষণাৎ স্বস্তি দেবে।এটি বিশেষত গ্রীষ্মকালের জন্য খুবই সাহায্যকারী হয়ে ওঠে।
৩. চুলকানি দূর করতে ভেষজের ব্যবহার
ড্যান্ডেলিয়ন মূল এবং মিল্ক থিশলের মত ভেষজগুলি চুলকানির প্রশমনে বিস্ময়কর ভাবে কাজ করে।কলেস্টেরলের মত লিভার সমস্যার জন্য এগুলি হল প্রাকৃতিক চিকিৎসা।
৪. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল একটি বহুমুখী প্রাকৃতিক পণ্য।এটি ত্বকের বিভিন্ন অবস্থার চিকিৎসার জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়ে থাকে।কেবল জেলটিকে প্রভাবিত এলাকায় এবং চুলকানিপ্রবণ অঞ্চলগুলির উপর প্রয়োগ করুন।জেলটি প্রাকৃতিকভাবেই জ্বলন, ঘা,ব্যথা এবং আঁচড়ানোর তাগিদ হ্রাস করবে।তাছাড়াও জেলটি আবার এমন একটি স্তরও গঠন করে যা আচড়ে চুলকানোর সময় কোনও ক্ষতি হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
৫. প্রদাহযুক্ত অঞ্চলগুলির উপর ঠাণ্ডা ভিজে তোয়ালের প্রয়োগ
ভিজে ঠাণ্ডা তোয়ালে গর্ভাবস্থায় ত্বকের রণনকে প্রশমিত করতে সহায়তা করে।একটি ছোট তোয়ালেকে এক বাটি ঠাণ্ডা জলের মধ্যে ভিজিয়ে নিওয়ার পর সেটিকে মুড়িয়ে নিন।এবার সিক্ত তোয়ালেটিকে র্যাশের ক্ষতযুক্ত অঞ্চলগুলির উপরে স্থাপন করে শিথিল হন।আপনি আগের থেকে অনেক বেশি ভালবোধ করবেন এবং অন্তত কিছু সময়ের জন্য আপনার সেগুলিকে আঁচড়ে চুলকানো বন্ধ হবে।
৬. ক্যালামাইন লোশন
PUPPP সিন্ড্রোমে ভুগে থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যালামাইন লোশন হল একটি দুর্দান্ত প্রতিকার।প্রভাবিত এলাকার উপর লোশনটিকে প্রয়োগ করে দেখুন আপনি জ্বলন এবং চুলকানির অস্বস্তি থেকে তৎক্ষণাৎ উপশম পাবেন।গন্ধহীন বডি পাউডারগুলিও একই ভাবে চুলকানি হ্রাসে কাজ করে থাকে।
৭. ক্যালেন্ডুলা ক্রীম
ক্যালেন্ডুলা লোশন এবং ক্রীমগুলি গর্ভাবস্থায় চুলকানি থেকে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অবকাশ এনে দেয় এবং এগুলি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।আপনি খুব সাধারণ ভাবে প্রদাহযুক্ত অঞ্চলের উপর লোশটিকে ঘষে দিতে পারেন।
৮. বেকিং সোডার পেস্ট
গর্ভাবস্থায় চুলকানি প্রতিরোধের অপর একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার হল বেকিং সোডা।সম পরিমাণ জল এবং বেকিং সোডা নিয়ে একত্রে মিশ্রিত করে একটি পেস্ট প্রস্তুত করে নিন এবার চুলকানির অস্বস্তি লাঘব করার জন্য ওই পেস্টটিকে প্রভাবিত এলাকাগুলির উপর এবং দেহের যেই অঞ্চলগুলিতে চুলকানির প্রবণতা বেশি থাকে সেই জায়গাগুলির উপর ভালভাবে প্রয়োগ করুন।
৯. মালিশের জন্য তেল
যে সকল গর্ভবতী মহিলাদের ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে তাদের কাছে চুলকানি যেন একটা দুঃস্বপ্ন।আপনি আপনার পেট,উরু,স্তন এবং শরীরের অন্যান্য অংশে যেখানে যেখানে জ্বলন এবং অস্বস্তি অনুভব করেন সেই জায়গাগুলির উপর ল্যাভেন্ডার তেলের পাশাপাশি জলপাই এবং আমণ্ড বাদামের মত অপরিহার্য তেলগুলিকে মালিশের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।তবে এই অপরিহার্য তেলগুলি ব্যবহার শুরু করার পূর্বে নিশ্চিত ভাবে আপনার ডাক্তার বাবুর পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
১০. চুলকানি থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য তুলসীর চা
তুলসী ভারতীয় রান্না ঘরের এক জনপ্রিয় ভেষজ যা আবার একটি দুর্দান্ত চুলকানি বিতাড়ক।ভেষজটিতে ইউজেনল নামে একটি যৌগ রয়েছে যা চুলকানি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।তুলসীর যাদু শক্তি ব্যবহার করতে,কয়েকটি তুলসী পাতাকে ফুটন্ত জলের মধ্যে ফেলে দিন।একবার মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একটি নরম সুতির কাপড়ের টুকরোকে তার মধ্যে ভিজিয়ে নিয়ে সেটিকে প্রভাবিত এলাকার উপরে স্থাপন করুন।আপনি আবার এর কয়েকটি পাতা নিয়ে সেগুলিকে আপনার খাদ্যের সাথেও আত্মসাৎ করতেই পারেন।
১১. চুলকানিযুক্ত ত্বকের জন্য পুদিনা পাতা
এই শীতল ভেষজটি গর্ভাবস্থায় চুলকানি থেকে স্বস্তি আনে।ঠিক তুলসী পাতার মতই কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফুটন্ত জলের মধ্যে দিয়ে দিন এবং তরলটিকে ব্যবহার করুন সেই জায়গাগুলিতে যেখানে চুলকানি রয়েছে।এটিকে পেস্ট আকারে সরাসরি ত্বকের উপর প্রয়োগ করবেন না কারণ সে ক্ষেত্রে ত্বকে জ্বালা করতে পারে।চুলকানি থেকে অবসর পেতে আপনি আবার থাইম পাতাগুলিকেও ব্যবহার করতে পারেন।
১২. লেবুর রস
লেবু হল প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকারের রাজা!কোনও সংশয় নেই যে এটি গর্ভাবস্থাকালে চুলকানির ক্ষেত্রে খুব ভাল ভাবে কাজ করে।লেবুর রসটিকে জলের সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে সেটির মধ্যে তুলোর বলকে ডুবিয়ে প্রভাবিত এলাকার উপর প্রয়োগ করুন।এটি তৎক্ষণাৎ চুলকানিকে আয়ত্তে এনে আপনাকে শিথিল করে তুলবে।
১৩. জুনিপার বেরী লোশন
জুনিপার বেরীগুলিতে রয়েছে এর প্রদাহ বিরোধী গুণ।যদিও এটি পাওয়া খুবই কষ্টকর,আপনি যদি এটির সাথে লবঙ্গ,যার মধ্যে রয়েছে ইউজেনল-সমন্বিত করেন,আপনি তবে চুলকানির জন্য একটি শক্তিশালী নিয়ামক পাবেন।একটি উপযুক্ত পেস্টের জন্য কিছুটা লবঙ্গ এবং জুনিপার বেরী গুঁড়োর সাথে মৌচাকের মোম মিশ্রিত করুন।এবার চুলকানিযুক্ত অঞ্চলগুলির উপর এই পেস্টের কিছুটা প্রয়োগ করে হালকা করে ঘষে দিন এবং দেখতে থাকুন এই সামাণ্য পেস্টের অসামাণ্য বিস্ময়কর কর্মকাণ্ড।
১৪. ব্যাসন
একটি বাটির মধ্যে ব্যাসনের সহিত নির্দিষ্ট অনুপাতে জল যোগ করে একটি উপযুক্ত পেস্ট তৈরী করুন,এবার এটিকে চুলকানিগুলির উপর সরাসরি প্রয়োগ করুন।এতে আপনার ত্বক কেবল চুলকানি মুক্তই হবে না,এটি তরতাজা এবং শিশুর ত্বকের ন্যায় কোমল হয়ে উঠবে।
১৫. শীতল ঝরনা
উষ্ণ আবহাওয়ার কারণেও আপনি চুলকানি অনুভব করতে পারেন।আর এই সময় শীতল ঝরনার তুলনায় কোনওকিছুই সংবেদনশীল ত্বককে প্রশমিত করতে পারে না।আপনি কেবল একটি অপরূপ অনুভূতিরই সাক্ষ্মী হবেন না আপনার ত্বক চুলকানি থেকে মুক্তিও পাবে যদিও সেটি সাময়িক কালের জন্য।আমরা আশা রাখি এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনার নিজেকে আঁচড়ে ফেলার ঝোঁককে নিয়ন্ত্রিত করতে সহায়তা করবে।যদিও চুলকানি গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা খুব সাধারণ একটি বিষয়,তবুও নিয়মিত চেক-আপের সময় আপনার ডাক্তারবাবুকে সকল উপসর্গগুলিই বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা নিশ্চিত করুন যাতে সাধারণের বাইরে হয়ে থাকা যেকোনও কিছুরই সঠিক ভাবে অণ্বেষণ করা যেতে পারে।
এখনও সন্দেহ আছে?কিছু সাধারণ প্রশ্নের অণ্বেষণ মায়েদের কাছে বিস্ময়কর হয়ে উঠবেঃ
১. আমি সব সময় চুলকানি অনুভব করি,এটি কি আমার বাচ্চার ক্ষতি করবে?
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই,না।চুলকানিটি সাধারণ ব্যাপার এবং এটি না আপনার,না আপনার সন্তানের,কারুরই ক্ষতি করে না।তবে উপসর্গগুলি যদি না কমে একই অবস্থায় রয়ে যায় সেক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের জন্য ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
২. কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে চুলকানি কি আমার সন্তানের লিঙ্গের পূর্বাভাস দিতে পারে?
এটি হল প্রাচীন মহিলাদের একটি গল্পকথা।চুলকানি হল একটি শারীরিক উপসর্গ যা রক্তের মাধ্যমে আপনার প্রসারিত ত্বকে পৌঁছায় এবং কোনওভাবেই এটি আপনার সন্তানেরে লিঙ্গ অনুমান করতে পারে না।কিছু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় যে,কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় চুলকানি আপনাকে হয় একটি পুত্র বা কন্যা দিতে পারে কিন্তু এটি শুধুমাত্র একটি কুসংস্কার এবং সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ভিত্তিহীন একটি ধারণা।
৩. যদি প্রায় বার বার চুলকাতে থাকে আমার কি সত্যি ডাক্তার দেখানো উচিত?
আপনার চুলকানির অনুভূতি হলে যদিও অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুকে সবকিছু বলা উচিত,তবে ত্বকের কোনও অন্তর্নিহিত অবস্থার জন্য বিশেষ লক্ষণগুলির সন্ধানেও থাকুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই,নির্ধারিত ওষুধের জন্য সাধারণত এটি এমন কিছুই হয়ে থাকে না অথবা সামাণ্য প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।তবে চুলকানিটি যদি ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে ও প্রদাহযুক্ত অঞ্চলের চারপাশে ছোট ছোট লালচে ফোঁড়া গড়ে ওঠে,এবং কিছু ক্ষেত্রে যদি আবার সেগুলি পুঁজে পূর্ণ হয়ে ওঠে অবিলম্বে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্য পরীক্ষকের পরামর্শ নিন।
৪. গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা ত্বকের অন্যান্য সাধারণ পরিবর্তনগুলি কি?
গর্ভাবস্থায় আপনার হয়ত ব্রণ কিম্বা প্রসারিত চিহ্নের দাগগুলি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে পারে।এছাড়াও আবার আপনি ত্বকের উপর পিগমেন্টেশন জমতে দেখতে পারেন অথবা ত্বকের রঙের পরিবর্তনের পাশাপাশি ভগ্ন শিরাও লক্ষ্য করতে পারেন।এই সব কিছুই হল আপনার দেহের অভ্যন্তরে একটি নতুন জীবনের পরিচর্যার জন্য হরমোনের ক্রমাগত পরিবর্তনের একটি অংশ বিশেষ।