ডায়রিয়া কি দাঁত ওঠার কোনও লক্ষণ?

ডায়রিয়া কি দাঁত ওঠার কোনও লক্ষণ?

আপনার ছোট্ট সোনার প্রথম দাঁতটি দেখতে পেয়ে আপনি উল্লাসিত হয়ে উঠবেন।কিন্তু দাঁত ওঠাটি শিশুর ক্ষেত্রে একটি অস্বস্তিকারক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে,বিশেষ করে যখন সে আপনার কাছে তার কষ্ট ও যন্ত্রণাটিকে ব্যক্ত করতে অসমর্থ হয়।বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সাথে অনেকগুলি লক্ষণ ও উপসর্গ জড়িত রয়েছে,যেগুলির মধ্যে একটি হল ডায়রিয়া।যদি দাঁত ওঠার সময় আপনার বাচ্চাটি ডায়রিয়ায় ভুগে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনি কি করতে পারেন সে সম্পর্কে জানতে এখানে পড়ুন

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে কেন?

দাঁত ওঠার সাথে ডায়রিয়ার যোগসূত্রটি প্রবর্তিত,কারণ অনেক মাবাবাই তাদের সন্তানের মধ্যে এটি হতে লক্ষ্য করেছেন।তবে এক্ষেত্রে এমন কোনও প্রমাণ নেই যা এর সত্যতাকে সমর্থন করে যে,দাঁত ওঠার সাথে ডায়রিয়া অনিবার্যভাবেই সম্পর্কিত।দাঁত ওঠার সময় ডায়রিয়া হওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে আবার শিশুর দাঁত ওঠার সময়কালে তার মুখ থেকে লালা ঝরার ঘটনাটিকেও ভাবা হয়ে থাকে।দাঁত ওঠার সময় বাচ্চাদের মুখের ভিতরে লালা উৎপাদনটি আরও বেড়ে যায় এবং এই পর্যায়ে শিশুরা তাই প্রচুর লালা গিলেও ফেলে,যা গ্যাস্ট্রিক সিস্টেমের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং পরিণাম স্বরূপ তাদের মধ্যে ডায়রিয়া দেখা দেয়।তবে এটিকেই শিশুদের ডায়রিয়া হওয়ার একদম সঠিক কারণ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে না।

বর্তমানে যা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে তা হল এই দুটি ক্রিয়াই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত তবে পরোক্ষভাবে,যা প্রায় সমকালীন সময়েই হয়ে থাকে কিন্তু তাই বলে তা একেবারেই অদ্ভুতও নয়।একটি ছোট্ট শিশুর কাছে তার দাঁত ওঠার পর্যায়টি হল একটা কঠিন সময় পর্ব।মাড়িগুলিতে হয়ে চলা অবিরাম জ্বালা যন্ত্রণা তাদের বিভিন্ন বস্তুগুলিকে হাতের নাগালে আনতে বাধ্য করে তোলে,যেগুলিকে সে তৎক্ষণাৎ মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে এবং চিবাতে চেষ্টা করতে থাকে।এই সকল বস্তুগুলি আবশ্যিকভাবেই সবসময়ের জন্যই পরিষ্কার নাও থাকতে পারে এবং সেগুলির উপর বিভিন্ন রোগজীবাণুগুলিও থেকে থাকতে পারে,যা তার পেটে গিয়ে তার ডায়রিয়া হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।যেহেতু শিশুদের মধ্যে সবকিছুকেই তাদের মুখের ভিতরে পুরে ফেলার একটা প্রবণতা থাকে,তাই শিশুর দেহের ভিতরে ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রবেশের সম্ভাবনাও প্রবল থেকে যায়,আর সেই কারণে তাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকতে পারে।যেহেতু শিশুরা এখনও তাদের বিকাশের পর্যায়ে থাকে তাই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সেভাবে সম্পূর্ণরূপে এখনও উন্নত না হওয়ার ফলে তাদের দেহ ব্যাকটেরিয়া এবং সংক্রমণগুলির বিরুদ্ধে সেভাবে লড়াই করতে পারে না ,তার ফলে তাদের মধ্যে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে

যদিও এই ব্যাখ্যাটি কিছুটা সন্তোষজনক মনে হতে পারে,তবে এটি বাচ্চার জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।শিশুর জন্মের প্রথম দিকের বছরগুলি এমন ঘটনায় পরিপূর্ণ থাকে যেখানে দেখা যায় যে,প্রায় সব সময়েই তা্রা সংক্রমণের কবলে জর্জরিত হয়ে থাকে,তা সে অন্ত্রের সংক্রমণই হোক কিম্বা কানের সংক্রমণ,একটি শিশু অনবরত সেগুলির সাথে সংগ্রাম করতে থাকে যতদিন না সেগুলির সাথে মোকাবিলা করে সেগুলির অবসান ঘটানোর মত তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি উন্নত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।ডায়রিয়া যেটি কিনা বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় প্রকাশ পায় বা দেখা দেয়,সেটি আবার এমনকি প্রকৃত সংক্রমণের এক ছদ্মবেশী লক্ষণও হয়ে থাকতে পারে।একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে একটি অবহেলিত এবং অযথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণও আবার পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার মত অন্ত্রের আলগা গতির কারণ হয়ে থাকতে পারে,এমনকি এটি আবার এমন কিছু জোরালো সংক্রমণের উপস্থিতিকেও ইঙ্গিত করতে পারে,যেখানে অবিলম্বে চিকিৎসাগত মনোনিবেশের প্রয়োজন।

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে কেন?

দাঁত ওঠার সময়ে হয়ে থাকা ডায়রিয়া কতদিন ধরে চলতে পারে?

শিশুদের মধ্যে দাঁত ওঠার আচরণটি শুরু হওয়ার সময় যদি তাদের মধ্যে ডায়রিয়াটি প্রাথমিকভাবে দেখা দেয়,তবে সেক্ষেত্রে সঠিক সাবধানতা অবলম্বন করার কিছু দিনের মধ্যেই সাধারণত এই উপসর্গগুলি চলে যাওয়া উচিত।তবে সমস্যাটি যদি প্রায় এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে একইরকম হতে থাকে কিম্বা প্রতি মাসে সেটির পুনরাবৃত্তি হওয়ার প্রবণতা থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলি করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

ছোট্ট শিশুদের দাঁত ওঠার সময় হয়ে থাকা ডায়রিয়া মোকাবিলা করার পরামর্শগুলি

আপনার সন্তানের দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াটি চলার সময় হয়ে থাকা ডায়রিয়াটি তার পক্ষে বেশ অস্বস্তিকারক হয়ে ওঠে,কিন্তু এর জন্য কোনও একক নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন নেই।তবে আপনার ছোট্ট সোনাটির যদি কয়েকদিনের থেকেও বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া হয়ে থাকে এবং একেক দিনে প্রায় 5-6 বার করে তরল মল অপসারণ করতে থাকে,সেক্ষেত্রে সে ব্যাপারে আপনার অবিলম্বে চিকিৎসাগত হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।আপনার সন্তানের যদি ডায়রিয়া হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার যা কিছু করণীয় তার বিশদ এখানে উল্লেখ করা হলঃ

1. আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন

শিশুর দাঁত ওঠার সাথে হয়ে থাকা ডায়রিয়ার সমানভাবে উপস্থিতিটি যত দ্রুত সম্ভব আপনার ডাক্তারবাবুর নজরে নিয়ে আসা উচিত।এক্ষেত্রে এটি দেহে হয়ে থাকা অন্য কোনও সংক্রমণের কারণহেতু একই উপসর্গগুলি হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণে এবং তা নিবারণে প্রয়োজনমত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করে থাকে।সময় বিশেষে,এই অবস্থাটির অথবা ব্যাকটেরিয়াগুলির প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কিছু ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।ডায়রিয়া আপনার শিশুটিকে জলশূণ্য করে তুলতে পারার কারণে এক্ষেত্রে তাকে আবশ্যিকভাবে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করা হয়।

2. স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন

দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াটি শিশুর মাড়িতে অপরিমেয় যন্ত্রণা এবং অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে।যদিও অধিকাংশ শিশুই এটির কারণে কান্নাকাটি করে,তবে আবার এমন কিছু শিশুও আছে যারা তাদের মাড়িতে কামড় দিয়ে অথবা তাদের হাতে পাওয়া যেকোনও শক্ত বস্তুর উপর কামড় দিয়ে যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করে নিজেদের শান্ত করে তোলার চেষ্টা করে।সেগুলি হতে পারে তাদের খেলনা অথবা এমনকি তাদের দাঁতের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বিশেষভাবে ক্রয় করা অন্য কোনও সামগ্রী।যদি সেগুলি পরিষ্কার রাখা না হয় বা নিয়মিত নির্বিষকরণ না করা হয়,তবে সেটি তার দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশের এক উন্মুক্ত সাদর আমন্ত্রণ হয়ে উঠতে পারে,যা তার মধ্যে সংক্রমণগুলি আরও মাথা চাড়া দিয়ে বাসা বাঁধার এবং তার স্বাস্থ্যকে আরও খারাপ করে তোলার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

3. আপনার সন্তানের ডায়েটে সামঞ্জস্য আনুন

আপনার শিশু যদি তার দাঁত ওঠার সাথে ডায়রিয়ায় ভুগে থাকে,সেক্ষেত্রে তার ডায়েটে একটা সামঞ্জস্য বিধান করার মাধ্যমে তার শরীরের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে।স্তন পান করানো কিম্বা ফরমূলা খাওয়ানোর ব্যবধানটি বাড়ানো শুরু করুন।তাকে হাইড্রেট রাখতে পর্যাপ্ত তরল দিন।আপনি আবার তাকে বিভিন্ন সবজির যেমন আলু,গাজর এবং কাঁচা কলার পিউরি বা মণ্ডও খাওয়াতে পারেন।ভাতের ফ্যানও দেওয়া যেতে পারে।এই সমস্ত খাবারগুলি ডায়রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।আবার আপনি যদি আপনার সন্তানকে গরুর দুধ অথবা অন্য কোনও জ্যুস দিয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার হয়ে থাকা ডায়রিয়াটি পুরোপুরি সেরে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে সেগুলি দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখুন।

উপরে উল্লিখিত পরামর্শগুলির দ্বারা আপনি হয়ে থাকা ডায়রিয়াকে প্রথম জায়গা থেকে প্রতিরোধ করতে পারেন।দাঁত ওঠা হল শিশুর বিকাশের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং ডায়রিয়া হওয়া হল তারই একটি উপসর্গ মাত্র।তবে ভয় পাবেন না,কারণ আপনার শিশুটি কয়েকদিনের মধ্যেই একদম ভাল হয়ে যাবে।তবে যদি সমস্যাটি দীর্ঘ সময় ধরে একই রকম রয়ে যায়,সেক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করুন।