In this Article
“বিশপের উইড বা বুনোলতা বিশেষ” অথবা “থাইমল সীড বা বীজ” নামেও পরিচিত এই আজওয়াইন বা জোয়ান(ক্যারম বীজ)শুলফা(মৌরী জাতীয় সুগন্ধি লতা), অ্যানাইস (মৌরি গাছ) এবং মৌরির মত একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত।জোয়ানের সুগন্ধ, দারুণ স্বাদ এবং এর রোগ নিরাময়কারী বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি অধিকাংশ ভারতীয় খাদ্যপদগুলি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যবহৃত একটি মশলায় রূপান্তরিত হয়েছে।জোয়ান দানা যখন কাঁচা খাওয়া হয় তখন সেটি হয় তিতকুটে অথবা ঝাল লাগতে পারে।তাই এগুলি সাধারণত বিভিন্ন সবজি বা তড়কা রান্না করার সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এছাড়াও আবার এটিকে মুখশুদ্ধি হিসেবে খাওয়ার জন্য শুকনো খোলায় ভেজে নিয়ে বিটনুন এবং লেবু সহযোগে প্রস্তুত করে নেওয়া যেতে পারে।
জোয়ান আবার এর ঔষুধি গুণের জন্যও পরিচিত।বিভিন্ন অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ জোয়ান খেলে তা গ্যাস এবং অন্যান্য হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।জোয়ান সেবনে তা আবার হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষুধাও বাড়িয়ে তোলে।এছাড়াও জোয়ান বৃক্ক এবং শ্বসনতন্ত্রের যথাযথ কার্যকারিতার জন্যও উপকারি।সুতরাং,গর্ভাবস্থায় জোয়ান সেবনের দ্বারা গর্ভবতী মহিলারাও নানা উপকার পেয়ে থাকতে পারেন।
গর্ভাবস্থাকালে জোয়ান সেবন করা কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিমাণে জোয়ান সেবন করা সাধারণত নিরাপদ বলেই বিবেচনা করা হয়।তবে সেবনের জন্য সেটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণের দ্বারা যত্ন নেওয়া উচিত।আপনি যদি কাঁচা জোয়ান দানা না খেতে পারেন তবে আপনি সেগুলিকে জলের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে সেই জোয়ানের জলটি পান করতে পারেন।
গর্ভদশায় জোয়ান খাওয়ার কারণগুলি
গর্ভাবস্থাকালে জোয়ান খাওয়া কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্যঃ
1.হজম শক্তি বাড়ায়
অনেক গর্ভবতী মহিলার মধ্যে তাদের বর্ধিত জরায়ুর কারণে ব্লটিং বা ফোলাভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি বা অম্লতা এবং বদহজমের মত সমস্যাগুলি দেখা দিয়ে থাকে, যা তাদের হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে তুলতে পারে।আজওয়াইন বা জোয়ানের মধ্যে রয়েছে থাইমল যা হজমের গতি বাড়িয়ে তুলতে পারে, অন্ত্রের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে এবং পেটের সমস্যা থেকে স্বস্তি আনতে পারে।
2.কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে মুক্তি দেয়
গর্ভদশা কোনও মহিলার অন্ত্রের গতিবিধির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিণ্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে।গর্ভাবস্থায় জোয়ান সেবন করলে তা হজম শক্তিকে বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে তুলতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য হেকে মুক্তি আনে।
3.বুকে সর্দি বসা থেকে স্বস্তি আনে
গর্ভাবস্থায় জোয়ান সেবন করলে তা ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি–কাশি নিরাময় করে এবং শ্লেষ্মা দূর করে।
4.কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, জোয়ান আবার খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারয়েডের মাত্রা হ্রাস করতে ও ভাল কোলেস্টেরলের(HDL) মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
জোয়ান দানার মধ্যে আবার রয়েছে অবিশ্বাস্য ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ছত্রাক বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি এবং এর মধ্যস্থ সক্রিয় যৌগগুলি সালমনোলা এবং ই কোলাই এর মতো ব্যাকটিরিয়াগুলির বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যা প্রাথমিকভাবে খাদ্য বিষের জন্য দায়ী।এছাড়াও এর পাশাপাশি জোয়ান আবার সেই সকল লোকেদের জন্যও উপকারী যাদের মধ্যে প্রদাহজনিত সমস্যাগুলি বিদ্যমান।
জোয়ান সেবনে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
জোয়ানের গুণের পূর্ণ সুবিধা পেতে গর্ভাবস্থায় এটি সঠিক পরিমাণে সেবন করাই হল বিচক্ষণতার কাজ।তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করার ফলে তা আবার কয়েকটি নির্দিষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।গর্ভাবস্থায় মাত্রাধিক পরিমাণে জোয়ান সেবনের ফলে তা দেহের তাপমাত্রাকে তীব্র করে তুলতে পারে, যা গর্ভাবস্থার উপর একটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।গর্ভবতী থাকাকালীন খুব বেশি পরিমাণে জোয়ান খেলে তা আবার গর্ভবতী মহিলার মাথা ঝিমঝিম করার কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং তার মধ্যে বমি বমি ভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে জোয়ানের অন্তর্ভূক্তিকরণ
আপনি আপনার গর্ভাবস্থাকালীন খাদ্য তালিকার মধ্যে জোয়ানকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন সরাসরি সেগুলির গোটা দানা হিসেবে, পাউডারের ন্যায় গুঁড়ো করে অথবা জোয়ানের জল রূপে।বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারাই তাদের গর্ভাবস্থায় জোয়ানকে তার জোয়ান জল রূপেই সেবন করতে পছন্দ করেন কারণ এটি গ্রহণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
গর্ভাবস্থায়, সঠিক মাত্রায় জোয়ান বা আজওয়াইন সেবন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে এর মধ্যে কোনও প্রলম্বিত সন্দেহ যদি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে সর্বদাই বুদ্ধিমত্তার কাজ হল আপনার খাদ্য তালিকায় জোয়ান অন্তর্ভূক্ত করার আগে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ গ্রহণ করা।