শিশুর ঘুমের সমস্যা সমূহ- সেগুলির সাথে মোকাবিলা করার কার্যকর পরামর্শগুলি

শিশুর ঘুমের সমস্যা সমূহ- সেগুলির সাথে মোকাবিলা করার কার্যকর পরামর্শগুলি

একজন নতুন অভিভাবক হিসেবে আপনার হয়ত মনে হতে পারে যে আপনার শিশুর সাথে করে থাকা প্রতিটি একক কাজই একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়সেটি তাকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কঠিন মনে হতে পারে, তার কান্না থামানোটিও কঠিন হয়ে উঠতে পারে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তাকে ঘুম পাড়ানোটি মারাত্মক মুশকিল হয়ে উঠতে পারে।নবাগত শিশুদের জন্য ঘুমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর সেই কারণেই শিশুদের প্রাথমিক বছরগুলিতে যাতে তারা পর্যাপ্ত ঘুমায় তা নিশ্চিত করা মাবাবাদের চেষ্টা করা উচিত।

আপনার শিশুর ঘুমের ধরণগুলি আপনার বা আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে বলে যদি আপনার মনে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে শিশুটির ঘুমের সমস্যা থাকতে পারে।ঘুমের কিছু সাধারণ সমস্যা এবং শিশুর সুবিধার জন্য মাবাবারা কীভাবে সেগুলির সমাধান করতে পারেন আসুন সেই দিকেই এবার দৃষ্টি দেওয়া যাক।

ঘুমের সমস্যা কি?

শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধানের প্রথম পদক্ষেপটি হল তার ঘুম নিয়ে কোনও সমস্যা আছে কিনা তা শনাক্ত করা। তার জীবনের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে, রাতের অদ্ভুত সময়গুলিতে ঘুম থেকে জেগে ওঠাটা শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।সব কিছুই নতুন হওয়ার কারণে প্রথম দিকের মাসগুলিতে মানিয়ে নেওয়ার সাথে শিশুটির সম্ভবত পরিপোষণ এবং সান্ত্বনার প্রয়োজন হবে এবং এই সকলগুলির অভিব্যক্তি হয়ত কোনও সমস্যার ফল নাও হতে পারে।শিশুটির ঘুমের এই ধরণগুলি আবার অর্ধ বছর পরে পরিবর্তিত হয়েও যেতে পারে, তাই শিশুটির কোনও নির্দিষ্ট রকমের ঘুমের সমস্যা আছে কিনা তা বলা মাবাবার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

তবে ছয় মাসের বেশি বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও যদি শিশুটির মধ্যে এই তিনটি উপসর্গের কোনও একটিও হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে শিশুটির সমস্যা আছে বলে আপনি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনঃ

  • যদি শিশুটি রাত্রে তিন বারের থেকেও বেশি অবিচলিতভাবে জেগে ওঠে।
  • জেগে ওঠার পর পুনরায় আগের মত ঘুমানোর মত স্থির হওয়ার ক্ষেত্রে যদি শিশুটি আধ ঘন্টারও বেশি সময় নিয়ে থাকে।
  • তার ঘুমানো এবং স্থির হওয়ার মধ্যে যদি সাধারণ সমস্যাগুলি থেকে থাকে, এবং একজন মা হিসেবে তা যদি আপনাকে অনেক মুশকিলে ফেলে।

আপনার শিশুটির রাত্রে ঘুমাতে সমস্যা হয় কিনা সে ব্যাপারে আপনি যদি এখনও নিশ্চিত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে তাকে আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

শিশুদের ঘুমের সাধারণ সমস্যাগুলি তার সমাধান সহযোগে

শিশুদের মধ্যে মাবাবাদের দেখে থাকা কিছু সাধারণ ঘুমের সমস্যার সমাধানগুলি এখানে দেওয়া হলঃ

1.শিশুটি কেবল তখনই ঘুমায় আপনি যদি তাকে খাওয়ান

এটি মায়েদের একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে।এর কারণ হয়ে থাকতে পারে যে শিশুটির মধ্যে খাওয়ানোর সাথে ঘুমানোর একটি যোগসূত্র গড়ে উঠেছে, আর সেই কারণেই সে কেবল ঘুমিয়ে পড়ে তখনই যদি তাকে খাওয়ানো হয়।

সমাধানঃ

এটির সমাধানের একমাত্র উপায় হল শিশুর মন থেকে খাওয়ানোর সাথে ঘুমিয়ে পড়ার যোগসূত্রটি ধীরে ধীরে দূর করে।এটি করা যেতে পারে ঘুমের সময় থেকে খাওয়ানোর সময়টিকে অনেকটা বেশি সরিয়ে নিয়ে, যাতে খাওয়ানোর সময় শিশুটি সহজে ঘুমিয়ে পড়তে না পারে।এটিকে একটি রুটিনের ব্যাপার করে ফেলুন যাতে আপনার সন্তান খাওয়ানোর সময় না ঘুমানোর ব্যাপারটিতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে।

2.শিশুটি কেবল তখনই ঘুমাতে পারে যখন আপনি তাকে দোলনার মধ্যে নিয়ে দোলা দেন

শিশুটি কেবল তখনই ঘুমাতে পারে যখন আপনি তাকে দোলনার মধ্যে নিয়ে দোলা দেন

এটিও উপরে উল্লিখিত সমস্যারই অনুরূপ, শিশুটির মনের মধ্যে আন্দোলনের সাথে একটি যোগসূত্র গড়ে ওঠার কারণে এটি হয়ে থাকে।দোলনায় কিম্বা ঝোলায় মৃদু হিন্দোলের সাথে শিশুটি তার ঘুমকে একসূত্রে গেঁথে ফেলে, আর তাই সে দ্রুত ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরতে সমর্থ হয়।

সমাধানঃ

প্রথম সমস্যাটির অনুরূপ, এটিরও একমাত্র সমাধান হল আপনার শিশুকে অন্য উপায়ে ঘুমাতে শিখান।এর অর্থ হল এই যে অন্তত কয়েকটা দিন আপনার শিশুকে দোলা না দিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন কোনও রকম আন্দলন না করে তাকে আপনার বাহুর মধ্যে সধারণ ভাবে ধরে রাখার সাহায্যে।

3.আপনার ছোট্টটি কেবল তখনই ঘুমায় যদি আপনি তাকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে রাখেন অথবা কোনও কিছুর দ্বারা তাকে আলতো করে জড়িয়ে রাখেন

এটিও কোনও অনুষঙ্গের ফল হিসেবে ঘটে এবং 6 মাস বয়সী শিশুর একটি সাধারণ ঘুমের সমস্যা।আপনার শিশুটি শুধুমাত্র তখনই ঘুমাতে সমর্থ হবে যদি আপনি তাকে কাছ থেকে ধরে রাখেন অথবা তাকে যদি কোনও কিছুর মধ্যে জড়িয়ে রাখা হয়।

সমাধানঃ

এই সমস্যাটিরও সমাধান হল তাকে অন্য ভাবে ঘুমাতে শেখানো এবং মাকে না জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে শেখানো।সে না ঘুমানো পর্যন্ত আপনি আপনার সঙ্গীকে তাকে ধরে রাখার কথা বলতে পারেন অথবা পরিবারের অন্য কাউকে সহায়তা করার জন্য বলতে পারেন।এছাড়াও তাকে নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়া শিখাতে আপনি আবার তাকে একবার কোলে তুলে নিয়ে আবার সেখানে রেখে দেওয়ার পদ্ধতিটিও প্রয়োগ করতে পারেন।

4.গাড়িতে চড়ার সময় অথবা গাড়ির আসনের মধ্যেই কেবল আপনার ছোট্ট সোনাটি ঘুমায়

গাড়িতে চড়ার সময় অথবা গাড়ির আসনের মধ্যেই কেবল আপনার ছোট্ট সোনাটি ঘুমায়

এটি অপর একটি আন্দোলনের অনুষঙ্গ এবং যেসব বাবামা প্রচুর ভ্রমণ করেন তাদের শিশুদের মধ্যে এটি হওয়া বেশ সাধারণ।সাধারণত এটিকে 12 মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সমস্যা হিসাবে দেখা হয়।এটি রিফ্লাক্স বা GERD এর মতো গ্যাস্ট্রিক সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে যার ফলস্বরূপ গাড়ির আসনটি সন্তানের পক্ষে বিশেষভাবে আরামদায়ক হয়।

সমাধানঃ

যদি সমস্যাটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণে হয়েছে বলে জানা যায়, আপনার সে ব্যাপারে আপনার শিশুর যত্ন নেওয়া উচিত এবং যত শীঘ্র সম্ভব অবস্থাটির চিকিৎসা করা প্রয়োজন।অন্যথায় সর্বোত্তম কাজটি হল অন্যগুলির মত এই বিষয়টি থেকেও তাকে সরিয়ে নেওয়া।

5.বিছানায় আপনার পাশে থাকার পরই শুধুমাত্র আপনার শিশুটি ঘুমায়

এটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, শিশুটি যখন অল্প কিছুটা বড় হয়ে ওঠে, যেহেতু এটি শিশুর মধ্যে জোর করে গড়ে তোলা একটি অভ্যাস মাত্র।সে আপনার ঠিক পাশেই ঘুমাতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠার কারণে সে অন্য আর কোথাওই ঘুমাতে সমর্থ হয় না।

সমাধানঃ

একসাথে ঘুমানোটা সাধারণ ব্যাপার, সুতরাং করণীয় সবচেয়ে ভাল জিনিসটি হল আপনার কাছ থেকে দূরে বা আপনার সংসর্গ ছাড়াই আপনার ছোট্টটিকে ঘুমাতে অভ্যস্থ করান।এ ব্যাপারে অনেকগুলি পরিবর্তনযোগ্য পরিকল্পনা আছে যা আপনার শিশুর জন্য খুব বেশি কান্নাকাটির পরিস্থিতি তৈরী না করেই এটিকে চালিয়ে নিতে আপনাকে সহায়তা করতে পারে।

6.ঘুমের সময় শিশুটির ঘুম হয় না

ঘুমের সময় শিশুটির ঘুম হয় না

আপনার সন্তান হয়ত রাত্রে ভালভাবেই ঘুমিয়ে থাকতে পারে কিন্তু তার পরেও আপনি তাকে হয়ত তার ঘুমের সময় ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পরতে দেখে থাকতে পারেন। এর কারণ হল দিনের বেলায় ঘুম এবং রাতের বেলায় ঘুমগুলি তার মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে হস্তক্ষেপ করে থাকে, সুতরাং একটা সময় ভালো ঘুম হওয়ার অর্থ অনিবার্যভাবে এই নয় যে আপনার সন্তান যখন খুশি ঘুমিয়ে পড়তে পারে।

সমাধানঃ

আপনি যদি আপনার শিশুর মধ্যে ঘুমের সমস্যা হতে দেখে থাকেন সেক্ষেত্রে তাকে ঘুমের প্রশিক্ষণ দেওয়াই হল একমাত্র করণীয়।

7.শিশু যদি রাতের বেলায় অনবরত জেগে ওঠে

আপনার শিশু ঘুমিয়ে পড়লে তাকে যদি আপনি যথেষ্ট ভালভাবেই ঘুমাতে লক্ষ্য করে থাকেন কিন্তু তারপরেই যদি আবার সে রাতের বেলায় অনেকটা সময় ধরে জেগে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে এটি ঘুমের একটি সমস্যাকেই চিহ্নিত করে।

সমাধানঃ

শিশুটি কেন জেগে উঠছে সেটা আগে আপনাকে বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।যদি বাচ্চাটি ক্ষিধের জন্য জেগে ওঠে তবে তার খাওয়ানোর সময়টির মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে অন্যথায় এটি ঘুমের সাথে জড়িত অন্য কিছুর ফল হতে পারে যার সাথে সঙ্গতি রেখে আপনাকে প্রয়াস করতে হবে।

8.রাতের অদ্ভুত সময়ে শিশু খেতে চায়

এটি অন্য আরেকটি সাধারণ সমস্যা, এটি সাধারণত একটি নবজাত শিশুর ঘুমের সমস্যা।এটির কারণ হতে পারে যে শিশুটি হয়ত দিনের বেলায় বেশি ঘুমিয়ে থাকে এবং তারপর ঘুমের পর রাতের বেলায় জেগে উঠে খেতে চায়।

সমাধানঃ

এক্ষেত্রে আপনি যেটি করতে পারেন তা হল তার দিনের বেলায় ঘুমের সময়সীমাটিকে খর্ব করতে পারেন এবং তার খাওয়ার সময়সীমাটিকে আরও ঘন ঘন করে তুলতে পারেন দিনের বেলাতেই যাতে সে রাতের বেলা কম জেগে ওঠে।

9.শিশু আপনার ঘুমানোর আগে জেগে ওঠে

এটি সাধারণত তিনটি সমস্যার যেকোনও একটির কারণে হয়ে থাকতে পারেশিশুকে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়ানো বা খুব দেরী করে ঘুম পাড়ানো হলে কিম্বা দিনের বেলায় সে খুব বেশি ঘুমিয়ে নিলেখুব বেশি দেরী করে ঘুমানোর ক্ষেত্রে শিশু অতিরিক্ত মাত্রায় ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়তে পারে আর কাজেই সে মায়ের ঘুমানোর আগেই ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে।

সমাধানঃ

আপনি ঘুমানোর আগেই আপনার শিশুর জেগে ওঠার কারণটিকে শনাক্ত করার পরে যে কাজটি আপনাকে অবশ্যই সবার আগে করতে হবে তা হল তার সমাধানটিকে খুঁজে বের করা।তারপর ধীরে ধীরে তার শোয়ার সময় এবং ঘুমের সময়সূচীগুলি পরিবর্তন করতে হবে যাতে সে শেষ পর্যন্ত আপনি ঘুমানোর আগেই জেগে না ওঠে।যে সকল শিশুদের দুপুরের ঘুমটি ভালভাবে বজায় থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি একটি সাধারণ সমস্যা হওয়ার কারণে আপনি তার দুপুরের ঘুমটিকে খর্ব করতে অথবা তার ঘুমের সময়সূচী থেকে সম্পূর্ণভাবেই সেটিকে অপসারিত করতে পারেন।

10.আচমকাই শিশুর ঠিকমত ঘুম না হওয়া

এটি প্রচুর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং যেকোনও সময়েই সেটি হতে পারেএকটি 7 মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সমস্যাগুলিও এগুলিরই একটি অংশ।দাঁত ওঠার ব্যথা, দুর্বল স্বাস্থ্য বা সাধারণ ঘুমের প্রত্যাগতিগুলি শিশুর ঘুমের সময়সূচীর তীব্র পরিবর্তনের কারণ হয়ে থাকতে পারে।

সমাধানঃ

এটি কেন হচ্ছে সেটির কারণটিকে আপনার খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিতএটি তার চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তন হওয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে অথবা পটি প্রশিক্ষণটি শুরু হয়ে যাওয়ার কারণেও হয়ে থাকতে পারে।

আপনার ছোট্ট সোনাটির ঘুমের সমস্যাগুলি কেন হয় তার পিছনে অনেক কারণই থাকতে পারে এবং কোনটিই যে তার প্রকৃত কারণ তা নিশ্চিত করাও কঠিণ হয়ে উঠতে পারে।এগুলির সাথে আপনি নিজে মোকাবিলা করতে পারবেন না বলে যদি আপনার মনে হয়ে থাকে তবে আপনার উচিত একজন ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করা এবং তাঁর সহযোগিতা নেওয়া