In this Article
আপনার শিশুকে শান্ত ভাবে ঘুমাতে দেখতে পাওয়া খুবই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।ঘুমের সময় কিম্বা অন্য যেকোনো সময়ে শিশুর মধ্যে অস্বস্তি প্রকাশ হৃদয় যন্ত্রণাদায়ক এক অনুভূতি।ঘুমন্ত শিশুকে ঘামে ভেসে যেতে দেখে যদি আপনি জেগে ওঠেন তবে কি করবেন? রাত্রিবেলায় ঘুমের মধ্যে বাচ্চাকে ঘামে ভিজে থাকতে দেখাটা বাবা মায়ের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি কৌতুহলী হয়ে উঠতে পারেন বাচ্চাদের রাত্রিকালীন ঘাম স্বাভাবিক কি অস্বাভাবিক তা জানার জন্য।এই প্রবন্ধের মাধ্যমে ছোট্ট শিশুদের রাত্রিকালীন ঘামের কারণ সংক্রান্ত আপনার সব প্রশ্নের উত্তর আমরা দেব।
রাত্রিকালীন ঘাম কি?
যখন শিশুরা রাত্রিবেলায় অস্বাভাবিক ভাবে ঘেমে যায় তাদের ঘুমের মধ্যে, তখন তাকে বলে রাত্রিকালীন ঘাম।এই একই ঘটনার পিছনে বিভিন্ন কারণ আছে যা অবশ্যই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ঘুমের মধ্যে শিশুর ঘেমে যাওয়া কি স্বাভাবিক ?
ঘুমের মধ্যে ঘেমে যাওয়া শিশুদের খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা।কিন্তু আপনার সন্তান যদি ভীষণ ভাবে ঘেমে যায় যখন সে ঘুমায়,এটি সংক্রমণের একটি লক্ষণ হতে পারে যেটিতে ভুগছে আপনার বাচ্চা সুতরাং এটি অবশ্যই অবহেলা করা উচিত নয়।
ঘুমের মধ্যে আপনার শিশুর ঘেমে যাওয়ার কারণ গুলি কি?
কিছু কারণ যেগুলি শিশুদের রাত্রিকালীন ঘামের জন্য দায়ী সেগুলি নিম্নরূপ—
- যখন শিশুরা গভীর নিদ্রাযাপন করে,তাদের ঘেমে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে যেহেতু তারা বড়োদের মত অত ভালোভাবে অঙ্গসঞ্চলনা করতে পারে না।যখন শিশুরা একই অবস্থানে একই ভাবে দীর্ঘ সময় জুড়ে শুয়ে থাকে তখন তাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং শরীরের ঘাম ঝড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।
- সাধারণত শিশুদের ঘর্মগ্রন্থি গুলো তাদের মাথার কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থান করে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মত নয়,এটি রাত্রিবেলায় তাদের অতিরিক্ত ঘামের কারণ,বিশেষ করে তারা রাত্রিবেলায় ঘুমের মধ্যে তাদের মাথাটির অবস্থান বিশেষ পরিবর্তন করতে পারে না যতটা তারা জেগে থাকার সময়ে করতে পারে,সেই কারণে তাদের ঘাম স্বাভাবিক ভাবেই বেশী হয়ে থাকে।যেহেতু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে,একই অবস্থানে একই ভাবে ঘুমানো শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির এবং ঘাম ঝড়ার কারণ হতে পারে ,এবং সেটি নিয়ন্ত্রিত করা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
- ঘরের উচ্চ তাপমাত্রাও শিশুদের রাত্রিবেলায় অস্বাভাবিক ভাবে ঘামিয়ে তুলতে পারে।
- গ্রীষ্মকালেও একটি হালকা কম্বল ঢাকা দিয়ে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সাধারণ অভ্যাস ভারতবর্ষে অনুসরণ করা হয়ে আসে।এটি শিশুদের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং যার ফলে ছোট শিশুদের অস্বাভাবিক ঘাম ঝড়তে থাকে।
ছোট শিশুদের মাথা অস্বাভাবিক ঘেমে যাওয়ার কারণ
যদি আপনার শিশু অস্বাভাবিক ভাবে ঘেমে যায় যখন সে রাত্রে ঘুমায়,তখন সেক্ষেত্রে আপনার কিছুটা চিন্তার বিষয় হতে পারে।এক্ষেত্রে কিছু স্বাস্থ্যগত শর্ত আছে যার কারণে শিশুদের অস্বাভাবিক ঘাম হতে পারে যখন তারা রাত্রে ঘুমায়।
- যে সকল শিশুরা জন্মগত হৃদরোগে ভুগে থাকে তারা রাত্রিবেলায় ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক ঘেমে যেতে পারে।এই অস্বাভাবিকতা বিকাশ পেতে থাকে এমনকি যখন তারা গর্ভে থাকে তখনও।এই সকল বাচ্চাদের চূড়ান্ত মাত্রায় ঘাম ঝড়ার প্রবণতা থাকে এমনকি যখন তারা খায় বা ঘুমায় তখনও।
- শিশুদের মধ্যে সনাক্ত করতে পারা স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায় রাত্রিবেলায় ঘুমের মধ্যে তাদের অত্যাধিক ঘেমে যাওয়ার।এই অবস্থায়,কিছু সময়ের জন্য শিশুদের দেহে শ্বাসকার্য বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে ঘুমের মধ্যে বাচ্চার শরীরে অস্বাভাবিক ঘাম হতে থাকে।যেসব শিশুরা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভোগে তাদের মধ্যে অন্যান্য লক্ষণও প্রকাশ পায়,যেমন নীলাভ ত্বক এবং রাত্রিকালীন ঘামের পাশাপাশি কষ্টকর সশব্দে শ্বাস গ্রহণ।
- SIDS বা সাডেন ইনফ্যান্টডেথ সিন্ড্রোম(হঠাৎশিশু মৃত্যু লক্ষণ)অপর একটি কারণ শিশুদের দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পিছনে বিশেষ করে যখন তারা রাত্রে ঘুমায়,যার ফল রূপে রাতের বেলায় তাদের অসম্ভব ঘামতে দেখা যায়।
- অনেক সময় ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সত্ত্বেও শিশুদের রাতের বেলায় ঘামতে দেখা যায়।এই অবস্থাটি হওয়ার আরেকটি কারণ হল হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া।যে সকল শিশুরা হাইপারহাইড্রোসিসে ভোগে তাদের হাত ও পায়ের পাতা খুব ঘেমে যায়।কিন্তু এটি খুব গুরুতর অবস্থা নয় এবং এটি নিরাময় করা যায়।এর চিকিৎসাটি হতে পারে অস্ত্রোপচার পদ্ধতির দ্বারা অথবা অস্ত্রপচার ছাড়াই কোনও মলম প্রয়োগ করে অথবা মৌখিক ঔষধের পরিচালনায়।আপনার শিশুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত ভাবে স্থির করতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন।
ঘুমের সময়ে নবজাতক শিশুদের ঘামের সাথে মোকাবিলা করার কিছু পরামর্শ
এখানে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ তালিকাভুক্ত করা হল যেগুলি আপনি অনুসরণ করতে পারেন শিশুদের রাত্রিকালীন ঘাম পরীক্ষা করার জন্য।
- সবার প্রথমে,ঘরের তাপমাত্রা সব সময় ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন(20-22 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে)।সুতরাং, দয়া করে অপ্রয়োজনীয় কম্বল এবং ঢাকা দেওয়ার অন্যান্য সব কিছু শিশুশয্যা থেকে সরিয়ে দিন এবং আপনার সন্তানের আরামদায়ক একটি নিশ্ছিদ্র গভীর ঘুম নিশ্চিন্ত করুন।
- আপনার শিশুকে ঘুম পাড়াবার আগে তাকে ভালোভাবে হাইড্রেট করানো অপরিহার্য।এটি সাহায্য করে তার ঘেমে যাওয়ার কারণে শরীরে কমে যাওয়া তরলকে পূরণ করতে।
- আপনার শিশুকে সব সময়ে প্রশ্বাস গ্রহণ যোগ্য হালকা পোশাক পরাতেই মনে রাখবেন।এটি আপনার বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং রাতের বেলায় ঘামের পরিমাণ কিছুটা কমবে।নির্বিশেষে আপনার বাচ্চার রাত্রিকালীন ঘামের সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, তাকে জামা কাপড় পরানোর সময় তার একটি গভীর ঘুম নিশ্চিত করার জন্য তাকে সবসময় আরামদায়ক বস্ত্র পরিধান করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখার বিষয়গুলি
- উপরে উল্লেখিত সাবধাণতাগুলি অবলম্বন করার পরেও যদি আপনার বাচ্চাটি রাত্রে ঘুমের সময় ঘামতে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন।
- আপনার বাচ্চার অন্যান্য লক্ষণ গুলো যেমন মাথা ঠোকা বা দোলানো,দাঁত কিড়মিড় করা,নাক ডাকা বা চিঁচিঁ শব্দ করা খেয়াল করুন।যদি আপনার বাচ্চা রাত্রে ঘুমের সময় ঘামতে থাকার সাথে সাথে এই লক্ষণ গুলিও দেখতে পান তাহলে অবশ্যই আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
- মাথা ঠোকাঃ এটা বোঝায় যে শিশুটির যন্ত্রণা হচ্ছে। কানে ব্যাথা বা দাঁতে ব্যাথা হল মাথা ঠোকার প্রাথমিক কারণ।তবে শিশুটি বড় হবার সাথে সাথে এটা কমতে থাকে।কিন্তু যদি 3 বা 4 বছর অবধি এটা চলতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটা বিকাশ জনিত সমস্যা এবং তার মূল্যায়ন করতে হবে।
- দাঁত কিড়মিড় করাঃ দাঁত ওঠবার জন্য যন্ত্রণা বা কানের যন্ত্রণা অথবা বন্ধ নাকের জন্য প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হলে শিশুটি দাঁত কিড়মিড় করতে পারে।
- দোলাঃ এটা হল শরীরের নিজে থেকে শীতল করার প্রক্রিয়া, তাই এটা নিয়ে ভাববার কিছু নেই।
- নাক ডাকা কিম্বা চিঁ চিঁ শব্দ করাঃ ঠান্ডা লাগার ফলে যেসব বাচ্চাদের নাক বন্ধ হয়ে যায় তারা ঘুমের সময় নাক ডাকে বা চিঁ চিঁ শব্দ করে।
- শুষ্ক মল এবং শুষ্ক ত্বকের সাথে যদি বাচ্চাটির মাথাটি খুব ঘেমে যায় তাহলে বাচ্চাটির কিডনি বা বৃক্কের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে।এই ক্ষেত্রে আপনাকে অতি দ্রুত ডাক্তারের মতামত নেবার জন্য পরামর্শ দেওয়া হল।
উপসংহার
অতএব আপনি আপনার বাচ্চার রাত্রিকালীন ঘুমের বিষয়টি ভালভাবে জানলেন,এবার অপনার শিশুটি যাতে নিশ্চিন্তে আরামে গভীর নিদ্রা দিতে পারে তার জন্য করনীয় সমস্ত কিছু আয়োজন সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে হবে।যদি এ বিষয়ে কোনোপ্রকার সন্দেহ থাকে তাহলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে ভুল করবেন না।