পাঁচ সপ্তাহেই আপনি আপনার গর্ভধারণের দ্বিতীয় মাসে প্রবেশ করেছেন।অনেক মহিলা তখনো জানতেই পারেন না যে তারা গর্ভবতী কিন্তু যারা জানেন তাদের জন্য,তাদের খাদ্য মেয়াদে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে।দ্বিতীয় মাসটিও প্রথম মাসের মতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টি হল এই পর্যায়ের প্রাথমিক গুরুত্ব যেহেতু ভ্রূণ নিউরাল টিউবের বিকাশ ঘটায় যা পরবর্তী কালে শিশুর ব্রেনে,মেরদন্ডে এবং স্নায়ুর মধ্যে বিকাশ পায়।এছাড়াও ভ্রূণটি এই পর্যায়ে প্রাথমিক সংবহনতন্ত্র এবং হৃদস্পন্দনের বিকাশ ঘটায়।ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ ,প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি সমৃদ্ধ একটা ডায়েট গ্রহণ এই পর্যায়ে অত্যাবশ্যক।এই পর্যায়ে কোন খাবারগুলিকে খেতে এবং এড়িয়ে চলতে হবে তার সম্পূর্ণ বর্ণনা খুঁজে পেতে পড়ুন।
যখন গর্ভবতী হন প্রথম ত্রৈমাসিকের সময় খাওয়া খাবারগুলো শিশুর বিকাশে সমর্থন করে।মর্নিং সিকনেস এবং বমি বমি ভাবের মত সমস্যাগুলি আপনাকে ভালোভাবে খাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য নাও করতে পারে,কিন্তু আপনি অবশ্যই চেষ্টা করেন যত বেশি রকমের সম্ভব পুষ্টিকর খাবারগুলি গ্রহণ করতে গর্ভধারণের দ্বিতীয় মাসের খাদ্য তালিকার অংশ হিসেবে।কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান এবং খাদ্য যেগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত উল্লেখ করা হল।
1.ফলিক অ্যাসিড: এটি গর্ভধারণের সপ্তম সপ্তাহে ডায়েটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ,ভিটামিন B এর উদ্দেশ্যে ফলিক অ্যাসিড পরিবেশন করা হয়। যখন আপনি গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা করেন এবং তখন প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে 5 মিলিগ্রাম মত ফলিক অ্যাসিড সম্পূরক সুপারিশ করা হয়।ফলিক অ্যাসিড অজাত শিশুর নিউরাল টিউবের ত্রুটিগুলির বিকাশ হওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি, ডিম, ফল, ড্রাইফ্রুট (আমণ্ড, আখরোট),ডাল এবং মসূর এগুলি সবগুলিই হল ফলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পূরক গর্ভবতী মহিলার জন্য।
2.আয়রণ :গর্ভধারণের পঞ্চম মাসের ডায়েটের অপর আরেকটি অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদান, আয়রণ–এটা হল স্বভাবিক রক্ত সংবহণের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই পর্যায়ে একজন মায়ের দেহে প্রয়োজন হয় শক্তিশালী রক্তপ্রবাহের, মর্নিং সিকনেস এবং অবসাদ যেগুলি তার গর্ভধারণের সাথে সাথে হয়ে থাকে সেগুলির সাথে মোকাবিলা করার জন্য।বিভিন্ন ফল,সবজি যেমন পালং শাক,মেথি গাছ,বীট পালং,চিকেন,মাছ এবং ড্রাই ফ্রুটের মত আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারগুলির সাথে সংলগ্ন থাকুন।
3.ক্যালসিয়াম :গর্ভধারণের দ্বিতীয় মাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, একজন মায়ের জন্য একটা 1000 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া অপরিহার্য।এই পর্যায়ে ভ্রূণের হাড়গুলো তৈরী হতে থাকে, এবং যদি শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ক্যালসিয়াম সরবরাহ না হয়,তাহলে বিদ্যমান ভাণ্ডার থেকে তা সরবাহিত হয় ফলে অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।সবজি যেমন বীট,বাঁধাকপি,সবুজ শাক সবজি এই সবগুলিই হল ক্যালসিয়ামের দূর্দান্ত উৎস সম্ভার।
4.প্রোটিন :গর্ভধারণের সূত্রপাত থেকেই প্রোটিন অপরিহার্য।পোলট্রি জাতীয় খাবার যেমন চিকেন,ডিম,দুধ ও মাছ এবং মসূর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনগুলি সরবরাহ করে। এই পর্যায়ে একজন প্রত্যাশিত মায়ের কমপক্ষে 75 গ্রাম করে প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।
6.ফ্যাট :ফ্যাট সবসময়ের জন্যই খারাপ হয় না,কিন্তু আপনি এমন ধরণের ফ্যাট খান যা আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর বিকাশকে নির্ধারণ করবে।এখানে কোনো সন্দেহ নেই যে ভাজা খাবার এবং চর্বি যুক্ত খাবার আপনার এবং আপনার বাচ্চার উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। কিন্তু ভাল ফ্যাটগুলিকে যদি ঘি এবং ক্রিম রূপে স্বাস্থ্যকর ভাবে খাওয়া হয় সেগুলি চোখের,মস্তিষ্কের এবং অমরার,কলার বৃদ্ধির বিকাশ ঘটাবে এবং শিশুর জন্মের সময় যেকোনও রকমের অস্বাভাবিকতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আনবে।
7.তন্তু :এটি হজম করানোর এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান,খাবারের সাথে ফাইবার বা তন্তুর সংযোজন ভীষণ ভাবে সুপারিশ করা হয়।তন্তু সমৃদ্ধ একটা খাদ্য তৈরি হয়ে থাকে বিভিন্ন সবজি যেমন গাজর, বাঁধাকপি, দানাশস্য,ফল যেমন কমলালেবু এবং কলা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গর্ভাবস্থাকালীন ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন কম করে 14 গ্রাম করে ফাইবার খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।
খাদ্যে অন্তর্ভূক্ত যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলি হল–
1.লিস্টেরিয়া যুক্ত স্প্রেড মাংস :স্প্রেড মাংসের মধ্যে লিস্টারিয়া থাকে যা গর্ভাবস্থাকালীন পর্যায়ে খুবই ক্ষতিকারক। এটি আপনার সন্তানের বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলে এবং অবশ্যই সম্পূর্ণ রূপে এটিকে এড়িয়ে চলতে হবে।
2.সফট চীজ :সফট চীজ যেমন ব্রেই এবং কামেমবার্ট খাওয়ার জন্য একেবারেই সুপারিশ করা হয় না যেহেতু এতে E কোলি ব্যাকটেরিয়া থাকে যা গর্ভাবস্থায় নানান সমস্যার সৃষ্টি করে।
3.কাঁচা ডিম :কাঁচা ডিম থেকে সারা শরীরে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যেতে পারে যে কারণে আপনার উপর ক্ষতিকারক প্রাভাব পড়ে এবং তা আপনার সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশে গুরুতর বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।যখন আপনি ডিমগুলিকে খাবেন সেগুলিকে অবশ্যই ভালোভাবে সম্পূর্ণরূপে সেদ্ধ বা পোচ করতে হবে এবং এমনকি অর্ধসিদ্ধ বা অর্ধ রান্না করা ডিমও পছন্দের তালিকায় রাখবেন না।
4. প্রক্রিয়াজাত মাংস :প্রক্রিয়াজাত মাংস দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশেষ ধরণের তাকের উপর সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যাকটেরিয়া বহন করার ঝুঁকি থেকে যায় যা আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতিকর।গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে স্বাস্থের অবনতিকে এড়িয়ে চলার জন্য এই সকল প্রক্রিয়াজাত মাংসগুলি থেকে দূরে থাকারই সুপারিশ করা হয়।
5.কাঁচা মাছ :সীফুড যেমন কাঁকড়া, চিংড়ি, শ্রিম্প (ছোট একধরণের সামুদ্রিক মাছ) ইত্যাদি এগুলিতে থাকে মার্কারি নামক উপাদানটি, যা গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকে।এগুলি প্রোটিন সমৃদ্ধ নয় এবং শরীরে কোনও প্রয়োজনীয় পুষ্টিও সরবরাহ করেনা।
6.অ–পাস্তুরাইজড দুধ :অ–পাস্তুরাইজড দুধ খাবেন না কারণ এতে থাকে মাইক্রোঅর্গানিজম, প্যাথোজেন এবং সালমোনেলা যা আপনার শরীরের জন্য ও আপনার সন্তানের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক।
7.অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্য :এই সময়ে অ্যালকোহল কঠোরভাবে অননুমোদিত কারণ এটি আপনার স্বাস্থে নানারকম সমস্যা ঘটাতে পারে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল শিশুর বৃদ্ধি।আপনার সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা জুড়েই অ্যালকোহলকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
আপনার পেশী গঠন করতে ও এনার্জি বা শক্তি পেতে তাজা ফল,সবজি,সম্পূর্ণ রূপে রান্না করা খাবার এবং প্রোটিন খান।আপনার ক্যালোরি বৃদ্ধির জন্য মিষ্টি খাবারের তুলনায় বেশি শর্করা যুক্ত খাবার খান।
যদি আপনি ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠেন তবে উপমা, ভেলপুরি, ধোকলা ইত্যাদির মত কিছু স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার অল্প পরিমাণে খান।ভাজা খাবার গুলিকে এড়িয়ে চলুন এবং আপনার ক্ষিদের দ্বারা পরিচালিত হন।খুব বেশি খাওয়া খাওয়া করবেন না যেহেতু অনেকেই জোরাজুরি করতে থাকেন যে এই সময়ে আপনার দুজনের জন্য খাওয়া প্রয়োজন।মানুষের বিশ্বাসের বিপরীত কথাটি হল আপনি দুজনের জন্য প্রশ্বাস নিন কিন্তু দুজনের জন্য খাবেন না।আপনি অবশ্যই কেবলমাত্র একজনের জন্যই খাবার খান এবং সেটিকে যথেষ্ট পুষ্টিকর রাখুন দুজনের বেঁচে থাকার জন্য।
মনে রাখবেন, আপনার পুষ্টি লাভ করা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে আপনি কোন খাদ্য নির্বাচন করছেন তার উপর, অতএব বিজ্ঞতার সঙ্গে নির্বাচন করুন। আপনার খাদ্য গ্রহণের মধ্যে ফ্যাটি বা তেলযুক্ত খাবার, মিষ্টি খাবার, ভাজাখাবার এবং যে খাবারগুলিতে উচ্চমাত্রায় ক্যালোরি আছে সেগুলিকে সীমিত করা নিশ্চিত করুন যেহেতু এগুলি আপনার সন্তানকে কোনো রকম পুষ্টি প্রদান করেনা।ফলিক অ্যাসিড ভ্রূণের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আপনি অবশ্যই ফোলেট সমৃদ্ধ খাবারগুলি খাবেন ডাক্তারের নির্ধারিত সম্পূরকগুলি ছাড়াও।