আমাদের এই পৃথিবী ক্রমাগত বিবর্ধিত হয়ে চলেছে, এটা বলা ভুল হবে না যে, নারী অধিকারের অভিমুখটি এখন এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছে।এর মধ্যে বাচ্চা নিতে চাওয়া বা না চাওয়ার পছন্দের অধিকারটিও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, অন্য কথায় আবার তা ব্যক্তিগত পছন্দ যেমন হয়ে উঠেছে তেমনি আবার অনেক সময় তা বাধ্য হয়েও বেছে নিতে হয়।গর্ভপাতের ব্যাপারে আপনি যেখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন না কেন, এটা বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কীভাবে সেগুলি কাজ করে, বিশেষ করে, এটা জানা খুবই জরুরি যে, গর্ভপাতের বড়িগুলি আদৌ নিরাপদ কিনা এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে আপনি পিলগুলি ব্যবহার করতে পারেন এবং সে ব্যাপারে আপনার আর অন্য কোনও বিকল্প আছে কিনা…এইসব ব্যাপারগুলি।
গর্ভাবস্থার ক্রম বিকাশকে সফলভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার বা তার সমাপ্তি ঘটাবার সবচেয়ে সাধারণ এবং দ্রুত উপায়গুলির মধ্যে একটি হল মিসোপ্রোস্টল এবং মাইফেপ্রিস্টোনের মত নির্ধারিত পিল বা বড়িগুলির ব্যবহার, যা গর্ভপাতের জন্য ব্যবহার করা হয়।এই সকল পিল বা বড়িগুলি সাধারণত মর্নিং আফটার পিলের মত গর্ভনিরোধক বড়ির সাথে বিভ্রান্ত হয়ে যায়।গর্ভপাতের বড়িগুলি কিন্তু গর্ভনিরোধক বড়ির কোনও রূপ নয় এবং মর্নিং আফটার পিল যা কিনা গর্ভধারণের পথে অন্তরায়ের কাজ করে, তার থেকে এগুলি আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে, অন্যদিকে তেমনি গর্ভপাতের বড়িগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে কোনও ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু সফলভাবে নিষিক্ত হওয়ার পর সেই গর্ভাবস্থাকে সফলভাবে সমাপ্তি ঘটানোর কাজে।
একটি পিল বা বড়ি দ্বারা কোনও গর্ভাবস্থার সমাপ্তি তখনই করা যেতে পারে যদি ভ্রূণটি পর্যাপ্ত বিকশিত না হয়।তার অর্থ হল এই যে, আপনি পিলটি ব্যবহার করার সময় 60-70 দিনের মধ্যে অপেক্ষা করতে পারেন, তবে তা সত্ত্বেও যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে পিলটি ব্যবহারের পরামর্শই দেওয়া হয়।গর্ভাবস্থার সমাপ্তি ঘটাতে আপনি নিরাপদ ভাবে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি একটি পিল গ্রহণ করতে পারেন গর্ভধারণের প্রথম 10 সপ্তাহের মধ্যে এবং আপনার শেষ মাসিকচক্র হওয়ার এক সপ্তাহ পরে।
গর্ভধারণের 70 দিন পরে গর্ভাবস্থাটির সমাপ্তি ঘটাতে, একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বা শল্য চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে গর্ভপাত ঘটানোর কথা বিবেচনা করার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়, এর কারণ এইক্ষেত্রে ভ্রূণটি আরও কিছুটা বেড়ে ওঠায় পিলটি নিরাপদ নাও হতে পারে এবং সেটি হয়ত গর্ভপাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।গর্ভপাতের জন্য শল্য চিকিৎসা বা অস্ত্রপচারের বিকল্প সম্পর্কে জানতে এবং কোন ধরণের অ্যাবর্শন বা গর্ভপাত করানোটা আপনার পক্ষে সঠিক সে ব্যাপারে অবহিত হতে দয়া করে আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের সহিত আলোচনা করুন ও মতামত নিন।
গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের পিলগুলির দাম মারাত্মক বেশি হতে পারে, এগুলি মূলত নির্ভর করে ফার্মাসিউটিক্যল অ্যাসোসিয়েশনের ব্র্যান্ডের উপর।ভারতবর্ষে, এই পিলগুলির মোটামুটি দাম হতে পারে ভারতীয় মূল্যে 3000-5000 টাকার মধ্যে।আর সার্জিকাল বা অস্ত্রপচার পদ্ধতিটির ক্ষেত্রে এর জন্য ব্যয় হতে পারে ভারতীয় মূল্যে 30,000 টাকা মত, আবার এমনকি সেটি আবার 50,000 টাকাও ছাড়িয়ে যেতেও পারে।
এ ব্যাপারে এটি কেনার ক্ষেত্রে প্রেশক্রিপশনটিকে আপনার সাথে রাখা নিশ্চিত করুন, কারণ যেহেতু এ জাতীয় পিল বা বড়িগুলি ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ হিসেবে বিক্রির জন্য বিবেচিত নয়।আর এই অ্যাবর্শন পিলের দামের একটা পরিষ্কার চিত্র পেতে দয়া করে আপনার মেডিকেল প্রফেশনাল বা চিকিৎসা পেশাদারের সাথে আলোচনা করুন।
গর্ভপাতের পিল বা বড়ি গ্রহণ করার প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন, প্রথমেই চিকিৎসকেরা আপনাকে বলবেন এমন এক দায়মুক্তির চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার কথা যেখানে লেখা থাকবে যে আপনার এই পরিস্থিতে এটি করানোর সিদ্ধান্ত কেবল আপনি নিজেই গ্রহণ করেছেন এবং এই গর্ভপাত করানোর পুরো দায়টিও আপনার উপরেই আরোপিত থাকবে।একবার এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়ে গেলে, ডাক্তারবাবু আপনাকে 2 টি বড়ি দেবেন, যা 3 দিন সময়ের মধ্যে নিতে হতে পারে, তবে উভয় পিলই অবশ্যই করে ডাক্তারবাবুর উপস্থিতিতেই গ্রহণ করতে হবে।অন্য সকল ওষুধের মত এই পিল দুটি কিন্তু কেবলই ঢক করে গিলে নেওয়াটা উচিত নয়, পিলটাকে জিভের তলায় নিয়ে রাখতে হবে এবং সেটি লালার সাথে নিজে থেকেই মুখে মিলিয়ে না যাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে, আর এটা হতে মোটামুটি 30 মিনিট মত সময় নেবে।এই পিল বা বড়িটি কীভাবে তাঁদের তত্ত্বাবধানের অধীনে খাওয়া উচিত তা ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিন।
কিছুক্ষেত্রে আবার, আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে একটি যোনি পিল দিতে পারেন, এটি এমন একটি পিল যেটি আপনার ডাক্তারবাবুই আপনার যোনির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেবেন গর্ভপাত করানোর জন্য, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে মলদ্বারে প্রবেশ করানো পিলের মতই অনুরূপ এটি কাজ করে।এই সময় আপনি হয়ত খিঁচ লাগা এবং রক্তক্ষরণ হওয়ার মত কিছু ঘটনার মুখোমুখি হতে পারেন, তবে সেটি যদি মারাত্মক হয় অথবা 1-2 দিনের বেশি সময় ধরে থেকে যায়, অবিলম্বে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।
অ্যাবর্শন বা গর্ভপাতের পিলের কার্যপদ্ধতিটির নির্দেশিকা ধাপে ধাপে নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
এক্ষেত্রে পিলটি কাজ না করার একটা সম্ভাবনা সর্বদাই থেকে যায় এবং সেক্ষেত্রে আপনার অস্ত্রপচার বা শল্য চিকিৎসা ব্যবস্থাটিকে বেছে নিতে হতে পারে, তবে এটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম কারণ ভ্রূণের ক্রমবিকাশ হয়ে চলাকে বন্ধ করতে এই পিলের ক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা কেবল 4-6% –ই রয়েছে।
যদিও পিলগুলি কয়েকদিন ধরে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে গর্ভপাতের পুরো প্রক্রিয়াটির সর্বোচ্চ সীমাটি নির্ধারিত হয়ে থাকে একবার ডাক্তারখানায় আসার পরেই, যেখানে ডাক্তারবাবু নিশ্চিত করেন যে, সেই গর্ভপাত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে 3 সপ্তাহ মত সময় লাগতে পারে।প্রথম এবং দ্বিতীয় পিলটি এক দিন বা দুই দিন বাদে নেওয়া দরকার, আর আপনার গর্ভ থেকে ভ্রূণের গর্ভপাত হতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তবে চিকিৎসকরা তবুও প্রক্রিয়াটিকে অসম্পূর্ণ বলে বিবেচনা করে থাকেন কারণ দ্বিতীয় পিলটি গ্রহণের পর 2-3 সপ্তাহের মধ্যে যেকোনও সময় গর্ভপাতটা যে হয়ে যাওয়া উচিত তা নিশ্চিত করার জন্য একটা পরীক্ষা করানোর দরকার। একবার যখন আপনার ডাক্তারবাবু এ ব্যাপারে আপনাকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেবেন যে, আপনার দেহ সংক্রমণ এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য সকল প্রকার বিপদ মুক্ত, তখন জানবেন যে, গর্ভপাতটি শেষ পর্যন্ত আপনার সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হয়ে গেছে।
এক্ষেত্রে যদিও ছোট–খাট বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি রয়েছে, অবে গর্ভপাতের পিল বা বড়ি থেকে দীর্ঘমেয়াদে হয়ে থাকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বিরল, যে ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির অভিজ্ঞতা আপনার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এখানে সেগুলি উল্লেখ করা হলঃ
অন্য যেকোনও ধরণের ওষুধ গ্রহণের মতই, গর্ভপাতের পিল বা বড়িগুলি গ্রহণের সময়েও এর সাথে কিছু ঝুঁকি থেকেই থাকে, সেগুলি হলঃ
অনেকগুলি চিকিৎসা পদ্ধতির মতই, গর্ভপাতের বড়ি বা পিল গ্রহণের আগেও অবলম্বন করা প্রয়োজন, এরকম কতগুলি সাবধানতা রয়েছে, যেগুলি হলঃ
আপনি ওষুধের দোকানে শুধুই মুখে বলে কিন্তু ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ হিসেবে গর্ভপাতের পিল কিনতে পারবেন না, কারণ এটি একমাত্র ডাক্তারের নির্ধারিত প্রেসক্রিপশনের দ্বারা বিবেচিত ওষুধের মধ্যেই পড়ে এবং ক্রেতাকে সেটি তখনি বিক্রয় করা হয় য্ষন তার সাথে একজন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকে।তাছাড়াও, কীভাবে একটা গর্ভপাতের পিল বা বড়ি পাওয়া যেতে পারে, এ কথা যখন বিবেচনা করা হয়, তখন এটা মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যে, আইনত আপনি কোনও ডাক্তারের উপস্থিতি ছাড়া সেই পিল গ্রহণ করতে পারেন না, আর সেইজন্য, অনেক ক্ষেত্রেই, চিকিৎসকরা হয়ত এই ধরণের ওষুধের বরাদ্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে নিজেরাই তা সরবরাহ করতে পারেন, যাতে এটির অপব্যবহার না করা হয়।
ভবিষ্যতে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে একটা গর্ভপাতের বড়ির ঝুঁকির সম্ভাবনা যৎসামান্য তবে তা বিদ্যমান।তাই আপনাকে সবসময় এই পরামর্শ দেওয়া হয় যে, আপনি এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথা খোলাখুলি কথা বলে ভালভাবে জেনে ও বুঝে নিন, ভবিষ্যতে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এই পিলের প্রভাব পড়া সংক্রান্ত সকল ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে।
দুর্ভাগ্যবশতঃ, একবার এই পিল গ্রহণ করা হয়ে গেলে, তার কার্যকারিতা এবং প্রভাবগুলিকে উলটে দেওয়াটা অসম্ভব।তাই গর্ভপাতকে বেছে নেওয়ার আগে আপনি পেতে পারেন এমন সকল উপলভ্য বিকল্পগুলি সম্পর্কে আগে আপনি ভালভাবে জেনে নিন।গর্ভপাতের ঝুঁকি এবং তার চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে আগে ভালভাবে বুঝুন এবং এর মাধ্যমে আপনার সন্তানের অবসান ঘটানোর আগে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা–ভাবনা করে আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন, আর গর্ভপাত পরবর্তী আপনার যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আপনার ডাক্তার প্রদত্ত নির্দেশাবলীগুলি যথাযথ অনুসরণ করার জন্য আপনাকে উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করা হয়।নিয়মিত চেক–আপের মধ্যে থাকতে আপনার অ্যাপয়মেন্টগুলি বাদ দেবেন না এবং পিল গ্রহণের আগে আপনার মধ্যে থাকা ভয়গুলি নিয়ে ভালভাবে আলোচনা করে সেগুলির ব্যাপারে সমাধান করে নেওয়াটা নিশ্চিত করুন।মাথায় রাখবেন যে, গর্ভপাত করানোর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কিন্তু কোনও হালকা কাজ নয়, এটা কিন্তু শরীরের উপরেও একটা বেশ ভালমত চাপ ফেলতে পারে।মানসিক চাপ, হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাই দয়া করে গর্ভপাতের পরে একজন থেরাপিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।
কোনও মহিলাকেই গর্ভপাত করানোর জন্য জোর করাটা উচিত নয়, মনে রাখবেন যে এটা আপনার শরীর আর পছন্দটাও আপনারই, গর্ভে বাচ্চা রাখা বা না রাখার ক্ষেত্রে সর্বদা নিজের অধিকারটি প্রয়োগ করুন।কোনও মহিলাকে জোর করে গর্ভপাত করানো কিম্বা তার মতের বিরুদ্ধে জোর করে তার মধ্যে বাচ্চাকে বড় করে তুলতে বাধ্য করা অবৈধ এবং একটা দণ্ডণীয় অপরাধ, তাছাড়াও এটি তাদের শরীরের পক্ষেও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে থাকে।