গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়াটা জরুরি।এর অর্থ হল গর্ভধারণের আগে আপনি যে জিনিসগুলি করে এসেছেন সেগুলির ব্যাপারে এই সময় আপনার সাবধানতার সাথে চিন্তা করা দরকার।চা কিম্বা কফি পানের মত অতি সাধারণ জিনিসগুলির ক্ষেত্রেও সাবধানতার সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।এই একই কথা স্নান করার ব্যাপারেও বলা যেতে পারে।এই বিষয়টি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, স্নানের সময় জলের তাপমাত্রাটা আপনার গর্ভাবস্থাকে ভাল কিম্বা বাজে ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।এটার অর্থ এও বোঝায় যে, আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে, গর্ভবতী থাকাকালীন প্রথম ত্রৈমাসিকে উষ্ণ জলে স্নান করার সাথে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে স্নান করের মধ্যে পার্থক্যটা কি, এর তাপমাত্রাটি কীভাবে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে, যদি সেটা সব দিক থেকে নিরাপদ হয়ে থাকে, তবে উষ্ণ জলে স্নান করাটা কখন নিরাপদ হতে পারে।
নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে এবং গর্ভাবস্থার সময়কালের উপর নির্ভর করে উষ্ণ জলে স্নান করা নিরাপদ।আপনার গর্ভদশার সময়কালের উপর নির্ভর করার কারণ হল, শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াটি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক হয়ে থাকে।প্রথম ত্রৈমাসিকে একটি গর্ভস্থ শিশুর পূর্ণরূপে বিকশিত অঙ্গাণুগুলি নাও থাকতে পারে।আর এটাই আবার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পরিবর্তন হয়ে যায়।আর সেই মত স্নানের জলের তাপমাত্রারও পরিবর্তন হওয়া উচিত।গর্ভাবস্থায় আপনাকে উষ্ণ জলে স্নান করে চলার সাথে সংলগ্ন থাকার উচ্চ পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ সেটি একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ নির্দেশিকা হতে পারে।এই পরিস্থিতিতে, চিকিৎসকেরা এমন তাপমাত্রার জলে উষ্ণ স্নানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যেখানে জলের তাপমাত্রা 100 ডিগ্রী ফারেনহাইট বা 38 ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়ে থাকা প্রয়োজন।এটি অতিরিক্ত তাপের ফলে হৃদ্স্পন্দনের হার বৃদ্ধি না করাকে নিশ্চিত করে ফলস্বরূপ যা আবার রক্ত সঞ্চালন এবং রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।এক্ষেত্রে, উষ্ণ জলে স্নানকে এমন একটা স্নান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা তুলনামূলকভাবে আপনার দেহের তাপমাত্রার কাছাকাছি।
ঘরের তাপমাত্রার পরিবর্তে দেহের তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রার জলে স্নান করার বহুবিধ উপকারিতা আছে।সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হলঃ
উপরের উল্লেখানুযায়ী, গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে উষ্ণ জলে স্নানের জন্য আদর্শ তাপমাত্রাটি হল তাদের দেহের তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় থাকা জল।এটির সুপারিশ করা হয় কারণ প্রচণ্ড গরম কিম্বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা জল হৃদ্স্পন্দনের হার বাড়িয়ে তুলতে পারে।পরিণামস্বরূপ যা আবার আপনার দেহের মধ্যে রক্ত সরবরাহকে বিঘ্নিত করতে পারে ও গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।আর তাই গরম জলে স্নান করার ক্ষেত্রে আপনাকে হয় ঘরের তাপমাত্রায় রাখা জলে, যা মোটামুটি 23 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হয়ে থাকে অথবা দেহের তাপমাত্রায় থাকা জলে স্নান করার সুপারিশ করা হয়, যা সাধারণত মোটামুটি 38 ডিগ্রী সেলসিয়াস মত হয়ে থাকে।
আপনার গর্ভদশার পর্যায়ের উপর নির্ভর করে, আপনাকে সর্বাধিক 10-15 মিনিটের মধ্যে স্নান সারার বা স্নানের জলে গা ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।এটি আপনার দেহকে অতিরিক্ত উত্তপ্ত হতে না দিয়ে আপনার উপকার করা নিশ্চিত করে।তাপমাত্রা নির্বশেষে, 15 মিনিটের বেশি সময় ধরে স্নানের জলে ডুবে থাকলে তা বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।গর্ভবতী হলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি দুর্বল হয়ে থাকে, আর তাই এই সময় খুব বেশি সময় ধরে জলের মধ্যে থেকে স্নান করলে তা থেকে আপনার জ্বর আসতে পারে।অসুস্থতাকে একপাশে রেখে, খুব বেশি সময় ধরে স্নানের জলে থাকলে তা আবার আপনার মধ্যে অবসন্নতা এবং ক্লান্তিও নিয়ে আসতে পারে।
যদিও গরম কিম্বা উষ্ণ জল আপনার দেহ প্রশমিত করার জন্য পরিচিত, এটি কিন্তু আবার ডিহাইড্রেশনেরও একটি চূড়ান্ত উৎস হিসেবেও সর্বজনবিদিত।ডিহাইড্রেশন সাধারণভাবে মারাত্মক বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর, তবে সেই ঝুঁকি গর্ভাবস্থায় তার দ্বিগুণ হয়ে ওঠে কারণ এটি অসংখ্য অসুস্থতার কারণ হতে পারে এবং সংক্রমণ এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনার শরীরের লড়াইয়ের ক্ষমতাকে বাধা দিতে পারে।আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রেশনটির সর্বোত্তম স্তর সম্পর্কে কোনও চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে জেনে নেওয়ার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করে নিন।সারাদিন ব্যাপী আপনার নিজেকে হাইড্রেট রাখার ব্যাপারটিকেও সুনিশ্চিত করুন।আপনার জল পান করা এবং স্নান করতে যাওয়ার মাঝে সময়ের একটা ব্যবধান রাখুন।জল পান করার পর এবং স্নান করতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে আধ ঘন্টা ব্যবধান রাখার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় একটা জ্যাকুজির মধ্যে স্নান না করা কিম্বা একটা হট টাবে স্নান না করার জন্য উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করার কারণগুলি হলঃ
স্নানের ব্যাপারে যদি একটা সনা অপরিহার্য হয়ে ওঠে, তবে সেক্ষেত্রে তাতে স্নান করার আগে চূড়ান্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন।এ ধরণের স্নান করার আগে মনে রাখার প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু টিপস বা পরামর্শ এখানে উল্লেখ করা হলঃ
গরম বা উষ্ণ স্নান উপশমের একটা চমৎকার উৎস হয়ে উঠতে পারে।একটি উষ্ণ স্নান সারার পূর্বে আপনার দেহ পর্যবেক্ষণ করার এবং ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়ার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়।স্নানের সময় কিম্বা স্নানের পরে আপনি যদি অস্বস্তি অনুভব করেন, তৎক্ষণাৎ আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে তা নিয়ে আলোচনা করুন।