গর্ভাবস্থাকালীন অ্যামনিওটিক তরল প্রাকৃতিকভাবে কীভাবে বাড়ানো এবং কমানো যায়

অ্যামনিটিক ফ্লাইউড

আপনার শিশু জরায়ুতে তরল ভরা একটি থলির ভিতরে বিশ্রাম নিচ্ছে। এই থলিটিকে অ্যামনিওটিক থলি বলা হয় এবং তরলটিকে অ্যামনিওটিক তরল বলা হয়। অ্যামনিওটিক তরল সাহায্য করে:

  • আপনার শিশু জরায়ু প্রাচীরে আঘাত করলে তার প্রভাব কমাতে
  • আপনার শিশুর পাচনতন্ত্র এবং ফুসফুসের বিকাশ ঘটাতে
  • আপনার বাচ্চাকে যে কোনও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে

যদি আপনার শরীরে অ্যামনিওটিক তরল খুব বেশি বা খুব কম থাকে তবে এটি গর্ভাবস্থায় একটি প্ল্যাসেন্টা ফেটে যাওয়া থেকে শুরু করে অকাল প্রসব শ্রম পর্যন্ত বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক তরলের সূচকটি 8 – 18 হওয়া উচিত।

কম অ্যামনিওটিক তরলের কারণগুলি কী কী?

যখন আপনার অ্যামনিওটিক তরলের সূচক পাঁচ অথবাছয় হয়, তখন আপনি নিম্ন মাত্রার অ্যামনিওটিক তরলের অবস্থা বা অলিগোহাইড্র্যামনিওসে ভুগছেন। অ্যামনিওটিক তরলের ঘাটতি আপনার সন্তানের হাত, পা, ফুসফুস, অঙ্গ এবং খুব কম ক্ষেত্রে, তার মুখমন্ডলকেও প্রভাবিত করতে পারে। অলিগোহাইড্র্যামনিওস বা কম অ্যামনিওটিক তরলের কারণগুলি হ’ল:

  • জল ভেঙে যাওয়া
  • মায়েরআগে থেকে থাকা দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস
  • প্রসবের আগে প্লাসেন্টার জরায়ুর অভ্যন্তরের প্রাচীর থেকে দূরে সরে যাওয়া, যার ফলে বাচ্চা পুষ্টি এবং অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়
  • অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরকারী বা কনভারটিং এনজাইম (এসিই) ইনহিবিটারের মতো ওষুধের ব্যবহার
  • শিশুর কিডনি বা মূত্রনালীতে সমস্যা
  • ভ্রূণের কম বৃদ্ধি

অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ বাড়ানোর কৌশল

গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা কীভাবে বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে এখানে কিছু পরামর্শ:

1. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন, এটি অ্যামনিওটিক তরলের সূচককে বাড়ানোর অন্যতম সহজ উপায়। আপনি যদি আপনার শরীরে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করেন তবে অ্যামনিওটিক তরলটির মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি ভেবে ভেবে চিন্তিত হন যে কীভাবে গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে অ্যামনিওটিক তরল বাড়ানো যায়, তবে উত্তরটি হল আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।

2. যে খাবারগুলিতে জল উচ্চ মাত্রায় রয়েছে সেগুলি আপনার আহারে থাকা উচিত। এমন কিছু খাবার যা গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক তরল বাড়ায়:

  • শাকসবজি যেমন শসা, লেটুস, আইসবার্গ লেটুস, পালংশাক, মূলা, ব্রোকলি এবং ফুলকপি
  • ফল যেমন স্ট্রবেরি, তরমুজ, টমেটো, ফুটি / খরমুজ, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল

3. অ্যালকোহল পান করবেন না। গর্ভাবস্থায় আপনার অ্যালকোহল এড়ানো উচিত কারণ এটি আপনার গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়। অ্যালকোহল ডিহাইড্রেশন বাড়ায় এবং আপনার দেহে অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা কমায়।

4. ভেষজ পরিপূরকগুলি এড়িয়ে চলুন যা আপনাকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। এই ভেষজ পরিপূরকগুলি ডাইইউরেটিকস (ওষুধ যা আপনাকে আরও ঘন ঘন প্রস্রাব করায়) হিসাবে কাজ করে। আপনি যত বেশি প্রস্রাব করবেন তত বেশি আপনি ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়বেন। আপনার দেহে অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা বজায় রাখতে এবং বৃদ্ধি করতে আপনার সর্বদা হাইড্রেটেড থাকা খুব জরুরি।

5. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। আপনার প্রতিদিন চল্লিশ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত (ওজন তোলা চলবে না)। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে। যদি প্ল্যাসেন্টা এবং জরায়ুতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় তবে আপনার দেহে অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রাও বাড়বে।

বিঃদ্রঃ আপনার চিকিৎসক যদি সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ না দিয়ে থাকেন তবেই কেবল আপনার ব্যায়াম করা উচিত।

উচ্চ মাত্রার অ্যামনিওটিক তরলের কারণগুলি কী কী?

আপনার যখন অ্যামনিওটিক তরলের সূচক কুড়ি থেকে চব্বিশের মধ্যে থাকে, তখন আপনার অ্যামনিওটিক তরল উচ্চ মাত্রায় রয়েছে বা পলিহাইড্র্যামনিওস রয়েছে। অ্যামনিওটিক তরলের উচ্চ মাত্রার ফলে প্লাসেন্টার ছেদন, অকাল প্রসব বেদনা, প্রসবোত্তর রক্তপাত এবং সিজারিয়ান প্রসব হতে পারে। পলিহাইড্র্যামনিওসের কয়েকটি কারণ হ’ল:

  • মায়ের ডায়াবেটিস
  • শিশুর পরিপাক(পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্তের নালী) নালী বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে জন্মগত ত্রুটি
  • হুবহু একরকম যমজ গর্ভাবস্থার জটিলতা যার মধ্যে একটি শিশু খুব বেশি রক্ত পায় এবং অন্যটি খুব কম পরিমাণে পায়
  • শিশুর লোহিত রক্ত কণিকারঘাটতি
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণ
  • মা এবং শিশুর মধ্যে রক্তের অসঙ্গতি

উচ্চ পরিমাণে অ্যামনিওটিক তরলের কারণে কী জটিলতা দেখা দিতে পারে?

পলিহাইড্র্যামনিওস নিম্নলিখিত গর্ভাবস্থা জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে:

  • প্ল্যাসেন্টার ছেদন
  • সিজারিয়ানসেকশন প্রসব
  • অকাল প্রসব
  • ঝিল্লির অকালে ফেটে যাওয়া
  • আম্বিলিকাল কর্ডের স্থানচ্যুতি
  • মৃত শিশুর জন্মদান

অ্যামনিওটিক তরল কমানোর কৌশল

গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ কীভাবে হ্রাস করতে হয় তার কয়েকটি কৌশল এখানে রইল:

  1. অন্তর্নিহিত রোগের চিকিত্সা: কখনও কখনও, অ্যামনিওটিক তরলের বর্ধিত মাত্রা আপনার কোনো রোগের কারণে হতে পারে। সুতরাং, রোগেরচিকিৎসা অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
  2. অ্যামনিওসেন্টেসিস: এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনার দেহের অতিরিক্ত অ্যামনিওটিক তরল বের করে দেয়। অ্যামনিওসেন্টেসিস হল সর্বশেষ ধাপ যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি অকাল প্রসববেদনা এবং অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে।
  3. ডাক্তার বাবুআপনাকেইনডোমেথাসিনদিতেপারেন।এটিঅ্যামনিওটিকতরলেরমাত্রাহ্রাসকরতেসহায়তাকরেএবংসাধারণতপ্রসবের31 সপ্তাহআগেসেটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অ্যামনিওটিক তরলের একটি যথাযথ মাত্রা প্রয়োজনীয়। আপনার অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা পরীক্ষা করে নিন এবং নিশ্চিত হন যে এটি যেন সর্বদা 8-20 এর মধ্যে থাকে।