গর্ভাবস্থায় ডাবল মার্কার টেস্ট

গর্ভাবস্থায় ডাবল মার্কার টেস্ট

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলাকে অনেক পরীক্ষা করাতে হয়। হবু-মা এবং সন্তান উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসকরা যদি কোনও সমস্যা আছে বলে সন্দেহ করেন তবে অন্যান্য পরীক্ষা করানোর সুপারিশ করেন। ডাবল মার্কার পরীক্ষা দ্বিতীয় বিভাগের মধ্যে পড়ে।

ডাবল মার্কার পরীক্ষা কী?

একটি ডাবল মার্কার পরীক্ষা হল একটি নির্দিষ্ট ধরণের রক্ত পরীক্ষা যা শিশুর কোনও ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা সনাক্ত করতে পরিচালিত হয়। ক্রোমোজোমে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে মারাত্মক স্বাস্থ্য অবস্থা এবং ব্যাধি হতে পারে যা গর্ভস্থ ভ্রূণে অথবা এমনকি পরবর্তী জীবনে শিশুর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই পরীক্ষার সাহায্যে, ডাউনস সিনড্রোম, এডওয়ার্ডস সিন্ড্রোম ইত্যাদির মতো নির্দিষ্ট ব্যাধিগুলির উপস্থিতি বা সম্ভাবনা সম্পর্কে আগেই কেউ জানতে পারবেন।

ডাবল মার্কার পরীক্ষাটি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ গর্ভাবস্থার 8 থেকে 14 সপ্তাহের মধ্যে করা হয়। সাধারণত 35 বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি সুপারিশ করা হয় কারণ তারা ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। তবে, অল্প বয়সী মহিলাদেরও আজকাল এই পরীক্ষাটি করতে বলা হয়, বিশেষত যাদের পরিবারে জন্মগত অক্ষমতার ইতিহাস রয়েছে।

ডাবল মার্কার পরীক্ষার সুবিধা কী কী?

ডাবল মার্কার পরীক্ষা ভ্রূণের ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করতে সহায়তা করে। তবে এই পরীক্ষাটি পরিচালনার এটিই শুধু একটি কারণ। চিকিৎসকরা কেন এই পরীক্ষার পরামর্শ দেন তার আরও কয়েকটি কারণ নীচে উল্লেখ করা হয়েছে:

ডাবল মার্কার পরীক্ষাটি একটি খুব নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা এবং বেশিরভাগ সময় এটি কোনও অস্বাভাবিকতা বা সমস্যা সঠিকভাবে সনাক্ত করতে সহায়তা করে।

পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ, ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা সনাক্ত হলে, সমস্যা নির্ধারণের জন্য আরও নির্ণয়মূলক প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই পরীক্ষাটি অসঙ্গতিগুলিকে শীঘ্র সনাক্ত করতে সহায়তা করে।

চিকিৎসকরা সাধারণত এই পরীক্ষাটি চালানোর পরে শিশুর ডাউনস সিনড্রোম বা এডওয়ার্ডস সিনড্রোম পরীক্ষা করার জন্য একটি উন্নত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এই পরীক্ষাটি করার ফলে তা, একজন চিকিতসককে এর কোনও সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং খুব বেশি দেরী হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কোর্সের চিকিৎসা শুরু করে দিতে সহায়তা করে।

যদি পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হয় এবং স্নায়বিক অবস্থা নির্ণীত হয়, তবে আপনি গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে জটিলতা ছাড়াই গর্ভাবস্থা সমাপ্ত করা বেছে নিতে পারেন।

পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়

যেহেতু ডাবল মার্কার পরীক্ষা মূলত একটি রক্ত পরীক্ষা, আপনার দিক থেকে কোনও নির্দিষ্ট প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না। তবে, যদি আপনি গর্ভাবস্থায় কোনও ওষুধে থাকেন তবে আপনার ডাক্তারকে এটি সম্পর্কে অবহিত করুন। বিরল ক্ষেত্রে, পরীক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত, আপনাকে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, যদি আপনার কোনও অ্যালার্জি বা চিকিৎসাগত অবস্থা থেকে থাকে তবে আপনার ডাক্তারবাবুকে সেটি সম্পর্কে জানান।

এই পরীক্ষাটি কীভাবে সম্পাদিত হয়?

ডাবল মার্কার পরীক্ষা একটি রক্ত পরীক্ষা যা একটি আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে সঞ্চালিত হয়। রক্তের নমুনা নেওয়া হয়ে গেলে, সেটিতে ফ্রি-বিটা এইচসিজি এবং গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত প্লাজমা প্রোটিন এ (পিএপিপি-এ) হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করতে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই গ্লাইকোপ্রোটিন হরমোনটি গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা দ্বারা বিকশিত হয়। ফ্রি-বিটা এইচসিজির উচ্চ মাত্রা ডাউনস সিনড্রোমের উচ্চতর ঝুঁকি নির্দেশ করে। অন্যদিকে, নিম্ন মাত্রার প্রোটিন ডাউনস সিনড্রোমের ঝুঁকি তৈরি করে।

পরীক্ষার ফলাফলগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়?

পরীক্ষার ফলাফলগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়?

ডাবল মার্কার পরীক্ষার ফলাফলগুলি সাধারণত দুটি বিভাগে পড়ে: স্ক্রিন পজিটিভ এবং স্ক্রিন নেগেটিভ। পরীক্ষার ফলাফল কেবল রক্তের নমুনার উপর নির্ভর করে না, মায়ের বয়স এবং আল্ট্রাসাউন্ডের সময় পর্যবেক্ষণ করা ভ্রূণের বয়সের উপরও নির্ভর করে। এই সমস্ত বিষয়গুলি ফলাফল নির্ধারণে এক সাথে কাজ করে। ফলাফল অনুপাত আকারে উপস্থাপন করা হয়। 1:10 থেকে 1: 250 এর অনুপাতকে “স্ক্রিন পজিটিভ” ফলাফল হিসাবে অভিহিত করা হয়, যা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে থাকে।পক্ষান্তরে 1: 1000 বা তারও বেশি অনুপাতকে “স্ক্রিন নেগেটিভ” ফলাফল হিসাবে অভিহিত করা হয়, যা কম ঝুঁকি তৈরি করে।

এই অনুপাতগুলি শিশুর কোনও ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকার সম্ভাবনা বোঝার ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসাবে কাজ করে। প্রতিটি অনুপাত অসংখ্য গর্ভাবস্থায় শিশুর ব্যাধি থাকার সম্ভাবনা চিত্রিত করে। একটি 1:10 অনুপাতের অর্থ 10টি গর্ভাবস্থার মধ্যে 1টি সন্তানের ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা যথেষ্ট বেশি। একটি 1: 1000 অনুপাত মানে 1000টি গর্ভাবস্থার মধ্যে 1টি সন্তানের ব্যাধি থাকবে, যা নগন্য।

যদি পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হয়, তবে অনুপাতের ভিত্তিতে আপনার ডাক্তার আপনাকে আরও ডায়াগনস্টিকসের, প্রধানত অ্যামনিওসেন্টেসিস বা কোরিওনিক ভিলাস নমুনা দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

পরীক্ষার স্বাভাবিক মানগুলি কী কী?

ডাবল মার্কার পরীক্ষার স্বাভাবিক পরিসর নিম্নরূপে চিত্রিত করা হয়েছে।

মার্কার

বয়স

পরিমাণ

ফ্রি-বিটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন সমস্ত বয়সের গ্রুপ প্রতিমিলিতে25700 থেকে288000 এমআইইউ

ডাবল মার্কার পরীক্ষার কোনও অসুবিধা আছে কি?

এই পরীক্ষার অসুবিধাগুলি জানা যায়নি। যেহেতু চিকিৎসকেরা এই পরীক্ষা করানোর কেবল তখনই পরামর্শ দেন যখন তারা এটিকে প্রয়োজনীয় মনে করেন, যদিওসমস্ত শহরে এই পরীক্ষাটি করার সুবিধা নাও পাওয়া যেতে পারে। যদি আপনার চিকিৎসক এই পরীক্ষার পরামর্শ দেন তবে আপনাকে এর জন্য অন্য কোনও শহরে ভ্রমণ করতে হতে পারে।

পরীক্ষার খরচ কত?

বিভিন্ন শহর ও হাসপাতালে ডাবল মার্কার পরীক্ষার খরচ আলাদা হবে। পরীক্ষার জন্য খরচ হবে মোটামুটি 1000 টাকা থেকে 5000 টাকা পর্যন্ত হয়, অনেক শহরে এই পরীক্ষার গড় খরচ প্রায় 2500 টাকা।

গর্ভবতী থাকাকালীন, আপনি আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য ব্যতীত আর কিছুই প্রার্থনা করেন না। আপনার বাচ্চা যাতে সুস্থ থাকে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য বেড়ে ওঠে তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনীয় জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি আনতেহবে এবং নিজেকে ও তার সাথে আপনার গর্ভস্থ শিশুটিকেও সুরক্ষিত রাখার সঠিক প্রচেষ্টা করতে হবে। তবে এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে সঠিক কাজ করার পরেও পরীক্ষার ফলাফলগুলি শিশুর মধ্যে একটি ব্যাধির উপস্থিতির দিকে নির্দেশ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনার বাচ্চাকে রাখতে চান কিনা তা আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনা করা উচিত। গর্ভাবস্থা সমাপ্ত করার সিদ্ধান্তটি স্পষ্টতই কঠিন হবে তবে আপনাকে পরিণতিগুলি বিবেচনা করতে হবে। আপনি যদি সিদ্ধান্তে আসতে না পারেন, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন, তিনি আপনাকে কী করা উচিত তা পরামর্শ দেবেন।